হঠাৎ করেই আমাদের লাল কুররটা বদহজমে মরে গেল। কুকুরটা সবার এতো প্রিয় ছিল যে, সিদ্ধান্ত হলো- আবার কুকুর পুষলে সেটা লাল রংয়েরই হবে। তো আমি আর আমার ছোট ছোট সব চাচতো ভাইয়েরা শীতকালের অপেক্ষায় রইলাম- শীতকালে নেড়ি কুকুরগুলো বচ্চা দেয় কিনা।
'হ্যালো, শফিক!' মোবাইলের অন্যপ্রান্তে রাণুর উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বর।
বিচলিত শফিক। 'কী হলো রাণু? কোনো সমস্যা?'
'নবীনকে...' কথা শেষ করতে পারে না রাণু। শফিক ওর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ অনুভব করে।
'কী হলো রাণু? 'নবীনকে' কী? কী হয়েছে নবীনের?' উত্তেজনা ভর করে শফিকের কণ্ঠেও।
উত্তর পায় না শফিক। রাণু ফোঁপাতে শুরু করেছে। শফিক বোঝে একমাত্র সন্তান নীবনের বড় কোনো অঘটন হয়েছে।
ভট্টাচার্যদের বটগাছে আবার সাধুবাবার আছর হয়েছে- সঙ্গে আছে কয়েকশ’ ভুত-প্রেত। ভুত-প্রেত কারো ঘাড় মটকায়নি। তবে মটকাতে কতক্ষণ! গাঁয়ের লোক তাই ভয়ে-আতঙ্কে তটস্থ। তাছাড়া ভয় পাওয়াটা আবহমান গ্রাম-বাংলার জীবনযাত্রারই অবিচ্ছেদ্য অংশ; মরণনেশা। আর এই নেশা নিয়েই নদীর ঘাটে চলে বিস্তর পর্যালোচনা।
নসরউদ্দিন চেয়ারম্যান ঠিক করেছেন এবার হজ্বে যাবেন। আল্লাহ তাকে দুই হাত ভরিয়ে দিয়েছেন। অঢেল টাকা-পয়সা, জমি-জিরাত, বহতুল দালান বাড়ি, ঝকঝকে গাড়ি, শানবাঁধানো পুকুর। তার এই যে শান-শওকত- সে নাকি পুকুর চুরির ফল। অন্তত কস্তুরী বেগম এ কথাটা তার মুখের ওপর প্রায়ই বলেন। অবশ্য আড়ালে আবডালে পাবলিকেও বলে। তবে সামনে বলার সাহস একমাত্র কস্তুরী বেগম ছাড়া কারো নেই।
ল্যাবরেটরিতে বসে একমনে কাজ করছেন ড. জামিল। হঠাৎ জগমোহন ঢুকল। জামিল মুখ তুলে তাকালেন ওর দিকে।
'সাহেব, ভীমকে দেখেছেন?' ওর চেহারায় উৎকণ্ঠা।
'না।' এক শব্দে জবাব দিলেন জামিল।
'সকাল থেকে ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় যে গেল!'
'চিন্তা করো না জগমোহন। সেখানেই থাক, ঠিক ফিরে আসবে।'
সকাল সাতটা থেকে মণ্ডপের গেটে মিষ্টির হাঁড়িটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মল্লিক চন্দ্র। এখন বিকেল তিনটা। একটু ভেতরের ঢোকার অনুমতির আশায় অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছে। কেউ ওর কথায় কান দেয়নি। আজ বিজয়া দশমী- মায়ের প্রস্থান দিবস। ওর দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত কোথায়!
টানা তিনদিন ল্যাবরেটরি ছেড়ে বের হননি ড.