এক দেশে থাকত এক রাজপুত্র আর এক কোটালপুত্র। দুইজনে ছিল বিরাট দোস্ত। তারা একত্রে থাকত, খেত, ঘুরত ফিরত। একদিন কোটালপুত্র এসে রাজপুত্রকে বলল, হে পিয়ারা ভাই আমার। এক কাজ করি চল। আমাদের নিজ নিজ শ্বশুরবাড়ি একটা ঘুরান দিয়ে আসা যাক। প্রথমে আমার শ্বশুর বাড়ি চল, আমি আমার শ্বশুরের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। পরে তুমিও না হয় তাই করলে তোমার শ্বশুরবাড়িতে।
রাজপুত্র ভারি খুশি হয়ে বলল, উত্তম প্রস্তাব! কেন নয়?
উইলিয়াম ম্যাকালক সম্পাদিত ১৯১২ সালে প্রকাশিত Bengali Household Tales অবলম্বনে আজকের গপ্পো পণ্ডিতের বিপদ।
…........................................................................
এক গাঁয়ে থাকত এক পণ্ডিত, সে ছিল বেজায় বুদ্ধু। তবে সারা গাঁয়ে সে এমন ভাব নিয়ে চলত যে সকলেই সেখানে মনে করত নাহ এই লোক কিছু জানে। গ্রামের লোক ছিল মূলত জেলে সম্প্রদায়ের লোক, পণ্ডিত ছিল তাদের গুরু। জেলেদের যখনই জানার দরকার ছিল যে সেইদিন চান্দ্রমাসের কয় তারিখ বা সপ্তাহের কোন দিন, তারা পণ্ডিতের কাছে যেত জানতে। গাড়ল পণ্ডিত কি আর এত হিসাব জানে, সে করত কি পূর্ণচন্দ্রের পরদিন সকাল থেকে প্রতিদিন ভোরে ঘরের চিপায় একটা করে নুড়ি রাখত। এরকম পূর্ণচন্দ্র থেকে নতুন চাঁদ পর্যন্ত তার পনেরোটা নুড়ি হত। নতুন চাঁদ থেকে পূর্ণচন্দ্রও সে ঠিক একই কাজ করত। এভাবে কেউ তারিখ জানতে চাইলে ঘরে ঢুকে নুড়ি গুণে পণ্ডিত বলে দিত কয় তারিখ।
উইলিয়াম ম্যাকালক সম্পাদিত ১৯১২ সালে প্রকাশিত Bengali Household Tales অবলম্বনে আজকের গপ্পো ছাগল, বাঘ আর হনুমানের কিচ্ছা।
…........................................................................
একপাল ছাগল নিয়ে কিছু লোক শহরে যাচ্ছিল বেচতে। পথে এক মাদী আর মদ্দা ছাগলের হল প্রেমপিরীতি। প্রেমিক ছাগল বলল, “হে ভালোবাসা। এই দুষ্টলোকেরা আমাদের নিয়ে বেচে দিবে বাজারে, তারপরে যারা কিনবে তারা বাসায় নিয়ে আমাদের কেটেকুটে ভুনা করে খাবে। গ্রামগঞ্জে পলায়াও লাভ নাই আবার এরা ধরে বেচে দিবে বা কেটেকুটে ভুনা কষাবে। হায় নিষ্ঠুর জীবন, বাঁচার উপায় কি?”
১৮৮৩ সালে প্রকাশিত রেভারেন্ড লাল বিহারী দে রচিত Folk Tales of Bengal বইতে গ্রামবাংলার কিছু লোককাহিনী পাওয়া যায়। সেই লোককাহিনী নিয়ে সিরিজের আজ দ্বিতীয় পর্ব, কোপ মেরো দেখেশুনে।
.........................................................................................................
এক রাজার ছিল তিন ছেলে। একদিন তার দরবারে প্রজারা এসে বলল, “হে মহানুভব, দেশ যে ভরে গেলো চোরডাকাতে! আমাদের ঘরবাড়ি হাঁড়িকুড়ি কিছুই যে আর নিরাপদ না, কিছু একটা করেন মহারাজ।” রাজা তার পুত্রদের বললেন, ওরে আমি নাহয় বুড়ো হয়েছি... তোরা তো এদিকে একটু নজর দিলে পারিস না কি?
১৮৮৩ সালে প্রকাশিত রেভারেন্ড লাল বিহারী দে রচিত Folk Tales of Bengal বইতে গ্রামবাংলার কিছু লোককাহিনী পাওয়া যায়। সেই লোককাহিনী নিয়ে সিরিজের আজ প্রথম পর্ব, গরীব বামুন।
….........................................................
এক ছিল গরীব ব্রাহ্মণ, তার এক বউ আর চার বাচ্চা। ভারি গরীব সে, খাওয়া জুটতো না তার। নিজের সহায় সম্পত্তি বলে কিছু ছিলনা, বড়লোকের দেওয়া দানের পয়সাতেই তার দিন চলতো। কারো বিয়েশাদী কি শ্রাদ্ধ থাকলে তার মেলা ইনকাম হত, কিন্তু দুঃখের বিষয় লোকে নিয়মিত বিয়ে করতো না আর প্রতিদিন দুচারটে লোকও মরতোনা। তাই বড় কষ্টে ছিল সে। বউ তাকে দিনে দুইবার আকাইম্মা বলে ঝাড়ি দিত, বাচ্চাগুলি ক্ষিধের জ্বালায় ঘ্যানঘ্যান করতো কানের পাশে। কিন্তু সে গরীব হলেও লুক ভালো, প্রতিদিন ঘড়ি ধরে পূজাপাঠে তার কামাই ছিলনা। সে ছিল শিবের সঙ্গী দেবী দূর্গার পূজারী। লাল কালিতে দেবী দুগগার নাম একশ আটবার না লিখে সে জলস্পর্শ করতো না। সারাদিন কথায় কথায় সে দেবী দূর্গার নাম মুখে নিত।