দু'হাতে জড়িয়ে রাখি রেশমী সুতো,
লুকিয়ে রাখি টুকরো টুকরো গোলকাঁচ
ঝুড়িতে রাখি মন্ত্রপাথর ও সুষমাচার-
উড়ে পালাতে থাকা রশ্মিকণারা
পালাতে পালাতে অবিরল হাসে।
ডানহাতের পিঠের কালচে বাদামী দাগটার উপরে হাত রেখে তুই জিজ্ঞেস করলি, "এটা কীসের দাগ রে তুরাইন?"
আমি হাত টেনে নিতে গিয়ে টের পেলাম তোর মুঠি ঘিরে ধরেছে হাত, ছাড়াতে পারি না। কিন্তু কী বলবো তোকে?
আমরা আগুন নিয়ে যখন প্রথম খেলতে শিখলাম, সেই সময়ের পোড়া দাগ এটা? তোর তো কিছু মনে নেই চিরল। তুই সব ভুলে গেছিস। ভালোই তো, ভালোই হয়েছে।
মুক্তধারায় বাঁধন পড়েছে। শত শত পাক, শত শত গ্রন্থি ! জলের নূপুরে বেজে উঠতো যে রহস্যকথাগুলো, তারা থেমে গেছে। ঘুমিয়ে পড়েছে যেন নর্মধাত্রী হাওয়াও। অন্ধ অন্ধকারে বাতির খোঁজ নাই। তবু ভোর হবে আবার, ভোর হবেই। মোহরলতার ফুলের মতন সোনালী ভোর।
তর্জনীতে রেখেছি আগুন,
অনামিকায় টুকরো আলো-
অস্থির ভিতরে ডমরুধ্বনি,
পিনাকপানি, তোমার পিনাকে আজো ওঠে টঙ্কার?
তবে এখনও কেন চুপ?
জানালার বাইরে বৃষ্টি নামে তপ্ত দীর্ঘ দিন শেষে, কতদিন ঐ শুকনো মাটিতে বৃষ্টি হয় নি! এতদিন পরে প্রথম বৃষ্টি নেমেছে, অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ উঠছে মাটি থেকে। বীণা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়, চারিদিক থেকে বৃষ্টিস্নাত বনগন্ধ ছুটে আসে, বৃষ্টির শব্দেরা ছুটে আসে। গভীর শান্তির অশ্রুতে ভরে আছে ওর দুই চোখ, বুক জুড়িয়ে দিচ্ছে হাওয়া।
মনে পড়ে স্বপ্নের সেই মেঘমানুষকে, যে ভেদ মানতো না, বলতো পৃথিবী তার মা আর আকাশ তার পিতা, বলতো সে ভালোবাসে আলো, ভালোবাসে নদী যার মধ্যে কিনা পূর্বজ-পূর্বজাদের আশীর্বাদধারা বয়ে গেছে। বলতো, সে ভালোবাসে সবুজ গাছ, পশুপাখি। বলতো, সে ভালোবাসে অন্য মানুষদের। সে বলতো সে ঘৃণা করে নিষ্ঠুরতা আর ঘৃণাকে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- কে তাকে র
মাইলের পর মাইল বালির সমুদ্র ভেঙে হেঁটে যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি। কি তীব্র শুষ্ক গরম হাওয়া! মস্ত ঝোলা পোশাকে উড়ুনিতে মুখমাথা দেহ ঢেকে আমরা চলেছি চলেছি।
আমার একটা স্বপ্নের জার্নাল ছিলো, তার পাতাগুলো সাদাই ছিলো, কোনোদিন কিছু লেখা হয় নি। আস্তে আস্তে বিবর্ণ হলদেটে হয়ে পাতাগুলো কেমন জীর্ণ হয়ে গেল, তখন একদিন সে কাগজগুলো আরো অনেক পুরানো খবরের কাগজের সঙ্গে জ্বেলে আগুন করলাম এক শীতের বিকালে। আগুনের সোনালী-কমলা শিখাগুলো ঘিরে বসে হাতের পাতা সেঁকতে সেঁকতে চা আর মুড়ি খাচ্ছিলাম আমরা।
মাঝে মাঝে মনে হয় হারিয়ে গেছি, যেখানে আমার থাকার কথা ছিলো সেখানে আমি নেই। বাড়ী ফেরার পথ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না, এদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার দিকদিগন্ত আচ্ছন্ন করে নেমে আসছে ঘুম-আসা চোখের পাতার মত। পথ খুঁজে আর কিকরে পাবো, আলো থাকতে থাকতেই পেলাম না, এখন এত অন্ধকারে কিকরে আর....
১।
"মোমরঙা সেই ভোরেরবেলা নীল সাগরে পাড়ি
বুকের ভিতর রুদ্রপলাশ সূর্যদীঘল বাড়ী....... "
প্রথম ভোর, নিমফুলী আভা। সূর্য উঠতে কিছু দেরি আছে এখনও। শুকতারা জ্বলজ্বল করছে স্বচ্ছ আকাশের কপালে টিপের মতন। সুরমা এগিয়ে মহাসাগরের জলরেখার কাছে দাঁড়ায়। জলরেখাটি ভিজা বালির উপর দিয়ে সরে যাচ্ছে দ্রুত, ভাসাভাসি ঢেউ হয়ে ফিরে আসবে বলে। বালিতে রেখে যাচ্ছে সূক্ষ্ম কারুকাজ।