“তোমার সাথে দাবা খেলে হারতে হারতে আমি শেষ হয়ে গেলাম, তুমি মাঝে মধ্যে একটু খারাপ খেলে আমাকে জিততে দিতে পারো না? তোমার কি কোন ভদ্রতা জ্ঞান নাই?”, চিংকু ওর বিরক্তি প্রকাশ করল।
“নিজের ইচ্ছায় জোর করে আমি হারতে পারি না, কিভাবে জেনে বুঝে হারতে হয় সেটাও আমি জানি না, কাজেই তোমাকে আমার চেয়ে ভালো খেলেই জিততে হবে”, এলিসের সোজাসাপ্টা জবাব।
বিশ্রী একটা অনুভূতির বোঝা হঠাৎ চেপে বসে যখন ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি শহরটাকে ভিজিয়ে দেয় বিকেলের খানিক পর। মানুষগুলো তখন অসম্ভব ধন্দে পড়ে যায় আর একটু একটু করে রাস্তাগুলোয় জমে উঠে জঘণ্য কালো কাদা। এই ষোল তলা দালান থেকে দেখা যায় অদূরে ঝাপসা আরেকটা শহর। আসলে ঠিক অন্য শহর নয়, এ শহরেরই উপকন্ঠ। ক্লাসের দিকে এগুবো বলে যেই নীচে নেমে এসেছি, খেয়াল হল আমার বাদামী-সাদা প্যান্ট। সুতরাং পুরোটা এলিফ্যান্ট রোড আমি হেঁটে
এক দুপুরের বৈশাখ ও কিছু মর্মান্তিক অনুভূতি
[justify]-আদর আলী-ই-ই-ই।
-ইয়েস স্যার।
-এদিকে আসো। দেখি তুমার জামাকাপড় ঠিক আছে কিনা। ইউনিফর্ম পইরা আইছো তো?
-জ্বি স্যার।
-জুতায় ময়লা ক্যান? হালচাষ করছো নাকি ক্লাসে আসনের আগে? প্যারেডে যাওয়া বাদ দিয়া?
-না, স্যার। প্যারেডে লেফট-রাইট করার সময় ধূলো উড়ে ময়লা হয়ে গেছে বোধহয়।
_ও, আচ্ছা। কিন্তু প্যারেডে পা না নাড়াইয়া লাত্থি দেওনের লাহান ঝাকাইলে তো ধূলা উড়বোই। অন্য কারও পায়ে তো তুমার লাহান ময়লা দেহি না। তা শরীল কীরম আছে? রাইতে ভালা ঘুম হইছে?
-জ্বি স্যার, হয়েছে।
-আর লেহাপড়া? নাকি জুতমতো ঘুমাইতে গিয়া ভুইলা গেছো?
-না, স্যার। পড়াশুনাও করেছি।
-হুম, তা দেহি কী পড়লা। যাও বই নিয়া আইসা শুরু করো কাইল যেইহানে শ্যাষ হইছিলো ঐহান থাইকা।
[justify]মেঘলা আকাশ, সাগর জল
মেঘলা দিনে মেঘের ঢল।
মেঘলা জমিন, বাঁশের ঝাড়
মেঘে ভাসছে নদীর পাড়।
মেঘলা দুপুর, ছায়ার রঙ
মেঘবরণে ধরছে সঙ।
মেঘলা পাহাড়, ঝরণা ধারা
মেঘে নাচছে বাঁধনহারা।
[justify]১
গালে হাত দিয়ে তন্দ্রা মন খারাপ করে বসে আছে সোফায়। পাশে আম্মু। আব্বু আর ভাইয়া উঠে গেছে নিজনিজ ঘরে। এত্ত মনখারাপ হয়েছে যে কী করবে তন্দ্রা খুঁজে পাচ্ছেনা। মন খারাপ হবেই না বা কেনো। কী চমৎকার একটা নতুন পর্ব দিয়েছে আজ টম এন্ড জেরির; আর আম্মু এসে বলা নেই, কওয়া নেই, খুট করে দিলো চ্যানেল বদল করে। আম্মু, আম্মু কিংবা না, না, বলে চিৎকারের সময়ও পায়নি সে। তার আগেই আম্মু বললো, লক্ষীসোনা, রাতে খাওয়ার সময় দেখো বাকিটুকু। এখন আমি নাটক দেখি। নাস্তা ঝটপট খেয়ে গিয়ে ততক্ষণে হোমওয়ার্ক সেরে নাও। আর নাস্তা খাওয়া। তন্দ্রা গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো কিছুক্ষণ।
[justify]আঁধারের পরে যে অন্ধকারে নিয়ে যায় আপনাকে
ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া অতীত, চেতনার মুখ
পূর্বাশার আলোতে ধরা পড়ে ছায়ার নিদারুণ আকুতি
কখনওবা উপেক্ষায় প্রাপ্তির সবটুকু সুখ।
নির্বিকার পদচিহ্নে ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে
ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে আসা গন্তব্য,
অনুভূতিতে আঁকড়ে থাকে হারানোর ইতিহাস
আর শূণ্যতার স্বরচিত মৃতকাব্য।
[justify]তোমাদের এই শহরে একদা একটি রাস্তার পাশে একটি নাম না জানা বৃক্ষ ছিল। ইঠ-কাঠ-বালিতে ঠাসা এই শহরে রাস্তার পাশে বৃক্ষ থাকা নিতান্তই বেমানান। বৃক্ষ থাকবে না, থাকবে শুধু কিছু কান্ডহীন পাতাবাহারের সমাহার। তাও থাকবে রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডার কিংবা আইল্যান্ডে। অন্য কোথাও থাকার সুযোগে নেই। মানুষ সভ্যতার সবটুকু আবর্জনা নিজে শোষণ করে না কখনও। ফেলে যায় সেসব পাতার উপর জমে থাকা ধূলোর আস্তরণে প্রতিদিন। সময়ের ঘূর্ণিচক্রে তা মাটিতে মিশে যায়, হয়ত ফাল্গুনের শুরুতে কিংবা বর্ষার শেষে। এ শহরের পৃষ্ঠদেশ পুরোটাই প্রায় কংক্রিটের বর্মে আচ্ছাদিত। এ শহরের মাটিকে মানুষ সূর্যালোকের স্পর্শ দেয়না। সে পায়না কোনো বৃষ্টির স্নিগ্ধতা, বাতাসের ঘ্রাণ, বৃক্ষের শিকড়ের বাহুডোর, ফুলের পবিত্রতার ছোঁয়া। মাটির অপেক্ষায় অভাবে আস্তে আস্তে সেগুলো পচে গলে গলে গড়িয়ে যায় নর্দমার ঢাল বেয়ে, মানুষের উচ্ছিষ্টের সাথে। নর্দমাগুলো সে উদ্দেশ্যেই তৈরি।
[justify]বিকালবেলা সময় চারটার চৌহদ্দিতে ঢুকলেই মনটা আনচান শুরু করে। বারবার ঘড়ি দেখতে থাকি। অফিস শেষ সাড়ে চারটায়। তারপর যেতে যেতে আরও আধাঘন্টা কমপক্ষে, কাওরানবাজার থেকে শাহবাগ। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমার শাহবাগ ভ্রমণ প্রতিবার প্রায় প্রতিদিন ঘটতে থাকে। কারণ আর কিছুই নয়, বইমেলা। সাহিত্য কিংবা বই বিষয়ে আমার প্রাথমিক জ্ঞান নিতান্তই প্রাক-প্রাথমিক। তাই বলে এটা ভাববার কোনো অবকাশ নেই যে, আমি মূলত আমার জ্ঞানের কিংবা বই এর ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে বইমেলায় যাই। আসলে এক অন্যরকম অনুভূতির টানে যাই সেখানে। এত্তএত্ত বই মিলে সেখানে যেন এক অন্যরকম প্রাণের আবহ। এক একটি অবারিত জগত যেন আটকে আছে বর্ণিল মলাট আর গ্রাফাইটের ভাঁজে ভাঁজে। সেগুলোর দিকে চেয়ে দেখতেও কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। কেন করে জানিনা। তবে এই বইমেলাতে যাওয়ার সুবাদে এবং আমার কতিপয় অত্যন্ত পড়ুয়া বন্ধুর কল্যাণে আমি সাহিত্যের অনেক অজানা মনোমুগ্ধকর বিষয় কিছুকিছু অবলোকন করার সুযোগ পেয়েছি। আর এরই টানে আমি হয়ত এখন মাঝেমধ্যেই ছুটে যাই বই এর দোকানে। বই দেখি, পাতা উল্টাই, লেখার ভিতরে লেখকের সত্ত্বাটাকে চেনার চেষ্টা করি। মানিব্যাগ সম্মতি দিলে সাথে সাথে কিনে ফেলি। কখনওবা ব্যাগভর্তি বই নিয়ে হাঁটার সময় নিজে নিজেই চমকে উঠি, খাইছে! কতগুলো কল্পনার জগত আমার এই হাতের মুঠোয়। নিজেকে আকাশগঙ্গা ভাবতে থাকি। আর বাসায় এসে তার গ্রহ-নক্ষত্র, তারকারাজি আর নীহারিকাপুঞ্জ আবিষ্কার আর উপভোগে তন্ময় হয়ে যেতে থাকি।