বই মেলার প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে কড়কড়ে নতুন বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছিল সুমন। একটি মেয়ে এসে দাঁড়াল ওর সামনে। তাকে সুমন আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে চেনাজানা আছে দু’জনের।
‘কি সৌভাগ্য আমার! আমার সাথে দেখা করতে এসেছে স্বনামধন্যা শুভ্রা! এ আনন্দ কোথায় রাখি?’ সুমন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।
(গ্রীক দার্শনিক ইউরিপিডিস)
গতকাল রাতে যখন প্রথম খবরটা পেলাম তখন ছিলাম একটি অনুষ্ঠানে। আজকালকার যুগে ব্রেকিং নিউজের উৎস হচ্ছে ফেসবুক বা টুইটার। খারাপ খবরগুলো দ্রুত আসে সেখানে। তারমধ্যে আক্রান্ত চারজনই আমার ফেসবুক বন্ধু, এবং তিন সচল ব্যক্তি জীবনেও পরিচিত। লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের অফিসে আক্রমণ এবং টুটুল ভাই, রণদা ও তারেককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে মনটা খুব অস্থির ছিল। দ্রুত বাসায় চলে যাবার পরই দীপনের খবর আসে। এরপর সারা রাত শুধু নেটে খবর খুঁজেছি - আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার খবর নিয়েছি - ঘুমাতে পারিনি। জানিনা আর কত নির্ঘুম রাত রয়েছে সামনে। কারণ যুদ্ধ এবার শুরু।
গতকাল সচলায়তনের তিনজন ব্লগার শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, তারেক রহিম ও রণদীপম বসু ও সামহয়ানইনের ব্লগার জাগৃতি প্রকাশনের ফয়সাল আরেফিন দিপন উপমহাদেশীয় আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন আনসারুল্লাহর হামলার শিকার হন। টুটুল, তারেক, রণদীপম কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও দিপন বাঁচতে পারেননি। যারা বেঁচে গিয়েছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আমাদের কর্তব্য যারা কলমের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন এবং যারা এই লড়াইয়ে যোগ দিয়ে হুমকির মুখে আছে তাদের পাশে দাঁড়ানো। কলম ও চাপাতির লড়াই পৃথিবীর প্রাচীনতম লড়াইগুলোর একটি। পৃথিবী এতোদুর এগিয়ে আসতো না যদি চাপাতি ক্রমাগত জিতে যেতে থাকতো। কলম জয়ী হবে, চাপাতির কোপ গায়ে নিয়ে হলেও।
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ গোটাতে হবে- সরকার তথা আওয়ামী নেতৃবৃন্দের এমন মনোভাবেরই খবর পাওয়া গেছে। মঞ্চ যেন তাদের বাপ দাদার তালুক- ব্যাপারটা এমনই। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কি আওয়ামী লীগের কথায় হয়েছে? নাকী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই “ ক তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার” বলে মঞ্চের খুটিখানা গেড়ে দিয়েছিলো? আওয়ামী লীগ-বিএনপির ডাকে আজকাল কেউ কি আসে?
…
(১)
ইদানিং মজার একটি বিষয় নিয়ে খুব শোরগোল শুরু হয়েছে দেশের সবক’টি পর্যায় থেকে। বিষয়টি আর কিছু নয়, নাস্তিক্যবাদ। তবে যারা এটিকে নিজেদের মতো করে উদ্দেশ্যমূলক নাড়াচাড়া করছেন, তা যে খুব খারাপ অর্থেই বা লক্ষ্য নিয়ে করছেন এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনে মনে হয়, কোন সংক্রামক ব্যাধির মতোই নাস্তিক্যবাদ নামের অতি জঘন্য একটি জিনিসের দ্রুত প্রাদুর্ভাব ঘটে এই দেশ এই জাতি বুঝি রসাতলে ডেবে যাচ্ছে। সত্যি কি তাই ?
ব্লগ কী জিনিষ চিনিস ব্যাটা? ব্লগে কী হয় জানিস?
গাধার মত বললে কথা সবাই হাসে মানিস?
ব্লগার কারা? কাজ কী তাদের? বিন্দুমাত্র তোদের
নেই ধারণা; অজ্ঞ থেকেই পথ আগলাস ওদের!
ব্লগে সবাই লিখতে পারে নেই কোন তার বাধা
হোক সে মানুষ কিম্বা ছাগু কিম্বা গরু-গাধা।
মত প্রকাশের স্বাধীনতার এক মাধ্যম এটা
ব্লগার মানেই নাস্তিক নয় শোন মুর্খের ব্যাটা।
যার যার মত প্রকাশ করে ব্লগে যে যার মত
জামাতের কোন পদক্ষেপই ভুল বা হঠকারী সিদ্ধান্ত না, এটা জেনে রাখুন। আজকে ব্লগার থাবা বাবার হত্যাকান্ড একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। আর এর পেছনে কাজ করেছে জামাতের দুর্দান্ত কিছু স্ট্র্যাটেজি।
একটা জিনিস চিন্তা করুন, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে একজন মানুষের মতামতের জন্য তাকে হত্যা করা আপনি কি সমর্থন করেন? যদি কোন কারণে সমর্থন করেন তাহলে এই লেখাটা আর পড়ার দরকার নেই। আর যারা সমর্থন করেন না তারা পড়ুন।