আমার বাবার নাম মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। প্রজন্ম চত্বরে ঘটে যাওয়া গণজাগরণের আগেই স্থীর হয়েছিল, বাবা ১২ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পাবনা যাবেন সেখানে বই মেলা উদ্বোধন করতে। কিন্তু এরই মধ্যে শাহবাগ চত্বরে আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের "দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ"। আপনারা হয়ত জানেন আমার বাবার তীব্র মৌলবাদ ও শিবির-বিরোধী অবস্থানের কথা। বাবার এই অবস্থান বহু বছরের পুরনো। গণজাগরণ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকেই বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পাবনার সরকারী এডওয়ার্ড কলেজে যাবেন এবং কলেজটিকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করবেন। এডওয়ার্ড কলেজ শিবিরের একটি শক্ত ঘাঁটি। আপনারা নিশ্চই জানেন পাবনা যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী এলাকা যেখানে সে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা সোবহানেরও বাড়ি এই এলাকাতেই। নির্বাচনে পরাজিত হলেও শিবিরের আধিপত্য পাবনায় কমেনি। এডওয়ার্ড কলেজকে 'শিবিরমুক্ত' ঘোষণা করলে পাবনার মানুষের মাঝে আরো সাহস সঞ্চারিত হবে, এমনটাই বাবা ভেবেছিলেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন,বাবা তাই করতে পেরেছিলেন এডওয়ার্ড কলেজে ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখ দুপুরে। সেদিন আমিও বাবার সাথে ছিলাম। সন্ধ্যায় পাবনার গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবা পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী-বিরোধী অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার পরপরই আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হই। তখনই ফোনে খবর আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের ছাত্র আব্দুল মালেকের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যুর দুঃসংবাদ।