“কত দিন কত রাত গেছে, সেই মায়া হরিণের পিছে
আমি যত ছুটে যাই কাছে, সে রয় বহুদূর”
কৈশোরে শোনা প্রিয় একটি গানের এই দুটি লাইন প্রায় দুই দশক পর নতুন করে আবার গুনগুন করে গাওয়ার ইচ্ছে জেগে উঠার রহস্যটা অবশেষে ধরতে পারলাম সেদিন। মায়া হরিণ আবার পাবো কোথায় এই দূর পরদেশে? উইকিপিডিয়া যতই বলুক না কেন এ হল ছাগল সদৃশ হরিণ, কিন্তু চতুষ্পদী এই প্রাণীর মায়া মাখা ওই দুচোখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে আমি তাকে হরিণ সদৃশ ছাগল মানতেই রাজি।
“আমি এমন কিছু করিনি, যার ফলে কেউ তা লিপিবদ্ধ করার মতো মূল্যবান বিবেচনা করতে পারে। আমি মরে পচে গেলে আমাকে বিস্মৃত না হওয়ার একমাত্র সুযোগ হতে পারে পড়ার মূল্যবান কিছু রেখে যাওয়া। বহু ঐতিহাসিক ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং সেইসব ঘটনাকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছি.................. এই আত্মজীবনী বয়োবৃদ্ধের সন্তানের মতো। এটি থেকে বেশি কিছু আশা করা যথার্থ হবে না। এর মধ্যে আছে কিছু গালগল্প, কিছু সুড়সুড়ি, কিছু খ্যাতি নাশ, কিছু বিনোদন............”
গ্রীষ্মকালে আমায় যখন কেউ প্রশ্ন করে, পাহাড়ে ক্যান যাস? জবাবে হাসিমুখে ভারিক্কি চালে বলে দিই “আমাকে জিজ্ঞেস করলে এই প্রশ্নের উত্তর কোনদিনই পাবিনা”। উক্তিটা আমার না, বিশ্বখ্যাত মার্কিন পর্বতারোহী এডমুণ্ড ভিশ্চাসের। শীতকালে পাবলিক যখন মুচকি হেসে শুধায় “কিরে ঘরে বসে আছিস ক্যান, পাহাড়ে উঠবি না?” তখন মুখ লুকিয়ে বলতে হয় মা’র পিটুনি আর বউর বকুনির ভয় ছাড়াও স্বীকার করতে হবে ওই তুষারআবৃত শৃঙ্গ জয়ের সাহস আমার নেই। এই বয়সে পিছলে পড়ে হাড়গোড় ভাঙার হুটকো ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইনা।
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে “একটা ভাল মুভির নাম বলতো, উইকেন্ডে দেখব”। জবাবটা ভেবেচিন্তে দিতে হয়, সব মুভি সবার জন্য নয়। আজকের মুভিটা অনেক বছর ধরেই আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও কারও সাথে শেয়ার করি না। দেখার পর কেউ যদি নীরস বদনে শুধু বলে “হ্যাঁ, ভালই তো….” এতেই আমার মন খারাপ হয়ে যাবে। কারণ এই সিনেমার প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি দৃশ্যের চিত্রায়ন আর অভিনয় শিল্পীদের পারদর্শিতা এককথায় অতুলনীয়। অনেকদিন বিরতির পর যখন আবার সিরিজটা শুরুই করলাম তো ভাল কিছু দিয়েই সূচনা হোক। নানান দেশের হরেক টাইপের আরও অনেক ভাল ফিল্ম দেখেছি গত পাঁচ বছরে কিন্তু শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে আজকের আয়োজনের এই ইসরায়েলি সিনেমা ‘লেমন ট্রি’।
“কোথায় হাঁটতে বেড়িয়েছিলে বাবা?”। সেপ্টেম্বরের এক ছুটির দিনে ভোর সকালের ট্র্যাকিং থেকে বাসায় ফিরে এসে দেখি সোফায় বসে ব্রেকফাস্ট করছে আমার পাঁচ বছরের ছেলে। জবাবে ‘কাম্পোফন্তানা’ বলতেই জিজ্ঞেস করল মারমোত্তা(marmotta) দেখেছি কিনা? উত্তরে ‘না’ জানাতেই অবাক হয়ে বলল “গত সপ্তাহেই না মারমোত্তার ছবি আমাকে দেখালে, আজকে কোথায় গেল ওরা?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলাম “মারমোত্তার দল ঘুমুতে গেছে, সে এক দীর্ঘ ঘুম………… ঘুম ভাঙবে বসন্তে, এখন শুধুই অপেক্ষার পালা”। সন্তানের বিস্মিত চেহারা দেখে শুরু করলাম মারমোত্তার গল্প, হাতের কাছে উইকিপিডিয়া তো আছেই।
১৯১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জগৎবিখ্যাত মানসিক রোগচিকিৎসক এবং মনস্তাত্ত্বিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মী কার্ল গুস্তাভকে চিঠি লিখল ‘…… আসছে গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার প্রয়োজন এমন এক লোকালয় যেখানে একটু একা থাকতে পারব শুধু ধারেকাছে অরণ্য থাকলেই চলবে’।
আগস্ট মাসে বন্ধুকে আবার চিঠি লিখে ফ্রয়েড জানিয়ে দেয় ‘...... রেননের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আমরা চমৎকার আছি, নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকার অপার আনন্দ আমি নিজের মাঝে খুঁজে পেয়েছি’।