৬ বছর বয়সী কেইতা বসে আছে স্কুলে ভর্তি-পরীক্ষার ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে।
প্রশ্ন: তোমার প্রিয় ঋতু কোনটি? কেইতা: গ্রীষ্মকাল প্রশ্ন: গ্রীষ্মের ছুটিতে কি করেছ তুমি? কেইতা: আমি বাবার সাথে ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছি। প্রশ্ন: তোমার বাবা কি ভাল ঘুড়ি উড়াতে জানে? কেইতা: আমার বাবা সবার সেরা।
পাশে বসে থাকা গর্বিত বাবার মুখে ফুটে উঠে আনন্দের হাসি।(ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ে ভালই মিথ্যে বলতে শিখেছে কেইতা)
টোকিওর বাসিন্দা সফল স্থপতি রিয়োতা(Ryota) পিতা হিসেবে কিন্তু অতটা খারাপ মানুষ না। পরিবারের সব অধিগম্য চাহিদাই তো মিটিয়ে এসেছে সবসময়। ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে ছেলের সাথে ঘুড়ি উড়ানোর মত সময় তাঁর নেই কিন্তু ক্যারিয়ারের এই সুবর্ণ সময়ে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠতে হলে অন্য বিষয়াদিতে এক-আধটু ছাড় তো দিতেই হবে। আজকের সিনেমা সেই রিয়োতার একটি বিশেষ ‘ছাড়’ দেবার গল্প যেখানে পিতৃত্বের দাবি আর রক্তের সম্পর্কের দোটানায় একজন সফল পিতা কি সে হতে পারবে?
অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে “একটা ভাল মুভির নাম বলতো, উইকেন্ডে দেখব”। জবাবটা ভেবেচিন্তে দিতে হয়, সব মুভি সবার জন্য নয়। আজকের মুভিটা অনেক বছর ধরেই আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও কারও সাথে শেয়ার করি না। দেখার পর কেউ যদি নীরস বদনে শুধু বলে “হ্যাঁ, ভালই তো….” এতেই আমার মন খারাপ হয়ে যাবে। কারণ এই সিনেমার প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি দৃশ্যের চিত্রায়ন আর অভিনয় শিল্পীদের পারদর্শিতা এককথায় অতুলনীয়। অনেকদিন বিরতির পর যখন আবার সিরিজটা শুরুই করলাম তো ভাল কিছু দিয়েই সূচনা হোক। নানান দেশের হরেক টাইপের আরও অনেক ভাল ফিল্ম দেখেছি গত পাঁচ বছরে কিন্তু শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে আজকের আয়োজনের এই ইসরায়েলি সিনেমা ‘লেমন ট্রি’।
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার গল্পের প্রধান উপাদান দরিদ্র মানুষের বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, আশা আর স্বপ্নভঙ্গের বাস্তবতা। দেশ-কাল-পাত্রভেদে চরিত্রের নাম হয়ত বদলে যায় কিন্তু সমাজের দারিদ্রসীমায় প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লড়তে থাকা মানুষগুলির বেঁচে থাকার গল্পে খুব বেশি পার্থক্য থাকে কি? সুদূর উরুগুয়ের মেলো শহরের বেতো নামের এক পুরুষের জীবন সংগ্রামের কাহিনীতে সুস্পষ্ট দেখতে পাই বাংলাদেশের খেটে খাওয়া হতদরিদ্র কোনও আদম সন্তানের মুখচ্ছবি।
আজকের সিনেমাটি যে দেশে চিত্রায়িত সেখানে নেই কোনও সিনেমা হল। পরিচালককে কিছু দৃশ্য চিত্রায়নে হাতে ওয়াকি-টকি নিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে বদ্ধ ভ্যান গাড়িতে। সিনেমা বানানোর সরকারী অনুমতি তো এসেছে দেশটির রাজপরিবারের সহযোগিতায় কিন্তু তারপরও ৫ বছর লেগে যায় শুটিং শেষ করতে। পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল সমাজের একটি সাধারণ শহুরে পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন আর ওয়াজদা নামের এক কিশোরী কন্যা সন্তানের প্রতিবাদী চরিত্রের গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন।