মারসায়াসের সাথে সুরের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে এপোলো তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু দেবতা প্যানের সাথে ভিন্ন আচরণ করলেন। হয়তো দেবতা বলেই প্যানকে মারসায়াসের ভাগ্য বরণ করতে হয়নি!
এপোলো প্রথম দিকে সুরস্রষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। ছিলো না তার কাছে লায়ার বা বীণা। সঙ্গীতের দেবতা হিসেবে এপোলোর গল্পের আগে ঘুরে আসতে হবে অলিম্পিয়ান দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর হার্মিসের এক কাহিনীতে।
হার্মিস ছিলেন জিউস এবং মাইয়ার (সবচেয়ে বড় প্লেয়াডেস) সন্তান। হার্মিস মায়ের সাথেই পাহাড়ের গুহায় বাস করতেন। একদিন, হার্মিস সবে হাঁটতে শিখেছেন, সূর্যের আলোয় গুহার সামনে খেলা করছিলেন, হঠাৎ করেই দেখতে পেলেন ঘাসের উপর পড়ে আছে একটি কচ্ছপের শক্ত খোলস। তিনি জিনিসটি দেখে খুব মজা পেলেন এবং গুহায় নিয়ে আসলেন। এরপর খোলসটির প্রান্ত ধরে ফুটো করতে লাগলেন, ভিতরের দিকে ফাঁপা নলখাগড়ার মতো বানিয়ে ফেললেন, চামড়া ও রজ্জু দিয়ে তৈরী করলেন লায়ার, এক বীণা। এভাবেই তৈরী হলো বিশ্বের প্রথম বীণা, যার ভিতর লুকিয়ে আছে অসাধারণ এক সুর।
“দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রীক”- বলা হয়ে থাকে যে দেবতাকে, গ্রীকরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি এবং অকৃত্রিমভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করতো সেই দেবতাকেই- ফিবাস এপোলো, যিনি এক সুদর্শন দেবতা, মহান সুরস্রষ্টা – সোনালী বীণা বাজিয়ে মাতিয়ে তুলতেন অলিম্পাস পর্বত। তিনি ছিলেন রূপালী ধনুকের প্রভু, ধনুর্বিদ্যার দেবতা, সুনিপুণ তীরন্দাজ, নিরাময়ের দেবতা – মানুষকে যিনি শিখিয়েছিলেন নিরাময়বিদ্যা। এইসব চমৎকার বিদ্যার অধিকারী হওয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন আলোর দেবতা, সত্যের দেবতা।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানব, শক্তিশালী শিকারী ছিলেন অরিয়ন। অরিয়নকে নারীরা যেমন ভালোবাসতো, ঠিক তেমনি তার সুন্দর ব্যবহার এবং মনের জন্য পুরুষরাও ভালোবাসতো। অরিয়নকে নারীরা ভালোবাসতো, যেমন তারা ভালোবাসে তাদের ভাইকে। পুরুষরা ভালোবাসতো, যেমন ভালোবাসে তাদের প্রেমিকাকে। এমনকি দেব-দেবীরাও তাকে লক্ষ্য করেছিলেন, এবং তার সাহচর্য উপভোগ করতেন। কিন্তু এই সৌভাগ্যই তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, ঠেলে দেয় কিংবদন্তীতুল্য নিয়তির দিকে, ঠিক যেভাবে বীরদের পরিণতি ঘটে।
.......... আর্টেমিস শুনলেন তার প্রার্থনা। আরেথুসাকে রুপান্তরিত করলেন এক জলের ঝর্নায়। জায়গাটা ছিলো সিসিলির সবচেয়ে বড় শহর সিরাকুজের একটি অংশ, অর্টিজিয়া দ্বীপ সেটা। সেই ঝর্না ধরনীর বুকে প্রবাহিত হলো টানেল হিসেবে। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হলো না আরেথুসার। মিথে আছে দেবতা আলফিউসও একটি নদীতে রুপান্তরিত হয়ে ঐ টানেলে প্রবেশ করেন। নদীর জলের সাথে মিলে মিশে থাকলো ঝর্নার জল! ..........
"যে কেউ আত্মার দিক দিয়ে পবিত্র পুরোপুরি
সেই তুলতে পারে পত্রালি, পুষ্প এবং ফলের সম্ভার।
অসতী যে, সে কখনও নয়"।
-দেবী আর্টেমিসের ক্ষেত্রে কতটুকু সঠিক এটি?
(ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা রইলো। ঈদ হয়ে উঠুক ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর ঈদের অবসরে সময় কাটাতে আপনাদের জন্য রইলো গ্রীক মিথলজির ২১তম পর্ব। এপোলো এবং আর্টেমিসের জন্মকাহিনী নিয়ে এই পর্ব।)
দেব-দেবীদের কাছ থেকে মানবেরা যেমন অনেক সাহায্য পেয়েছেন, আবার ঠিক তেমনি কোনো কোনো কারণে তাদের ক্রোধেরও শিকার হয়েছেন। দেবী আফ্রোদিতি প্রেমের আর ভালোবাসার দেবী হলেও, সবসময় মানুষকে ভালোবাসা বিলোতে পারেন নি। কখনো কখনো কেউ কেউ তার প্রতিহিংসা বা ক্রোধের শিকার হয়েছেন। যেমন হয়েছিলেন সাইপ্রাস দ্বীপের প্রোপেওটাসের সুন্দরী কন্যারা। তারা দেবী আফ্রোদিতির পুজা – অর্চনা বন্ধ করে দিলে দেবী তাদেরকে চকমকি পাথরে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত লেমনস দ্বীপের নারীদের দিয়েছিলেন অন্যরকম এক অদ্ভুত শাস্তি।
গ্রীক মিথলজি ১৮ (ভালোবাসার গল্প- কিউপিড এবং সাইকী- প্রথম পর্ব) অনুযায়ী সাইকীকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভয়ংকর দানবের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য (শিল্পী- এডওয়ার্ড বার্নে জোন্স, ১৮৯৫ সাল)
পূর্বের পর্বের পর--
(বোসিস এবং ফিলোমোনের গল্পটি যদিও আফ্রোদিতি চক্রের মধ্যে পড়ে না, এটি মূলত জিউস চক্রের ভালোবাসার কাহিনী, তবুও এখানে দেওয়া হলো। )
অনেক দিন আগের কথা। দেবরাজ জিউসের স্বর্নসময় তখন। স্বর্গ থেকে মর্ত্য শাসন করছিলেন দোর্দন্ড প্রতাপে। স্বর্গে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেলে জিউস নেমে আসতেন মর্ত্যে, বেশিরভাগ সময় লিপ্ত হতেন কোনো মরণশীল নারীর সাথে কোনো অনৈতিক কাজে! কিন্তু জিউস যে শুধু মর্ত্যের নারীদের সাথে মিলিত হবার জন্যই মর্ত্যে আসতেন, তা কিন্তু নয়! তিনি মাঝে মাঝে মানুষেরা অতিথিদের সাথে কেমন ব্যবহার করে, সেটা দেখতেও মর্ত্যে আসতেন। জিউস ছিলেন অতিথিদের রক্ষক। তাঁর এইসব ভ্রমনে তাঁর সাথে থাকতেন দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত কিন্তু আমুদে হার্মিস।