বর্ষকালের দিনটা একটু বড়ই হয়। বিশেষ করে যে দিন বিকেল নাগাদ একটা ঝুম বৃষ্টি হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টার ঝরঝরানি। আকাশ কালো করা মেঘ বিকেল না পেরুতেই রাত নামিয়ে দেয়। ঘড়ি ধরে গৃহস্থের দিন চলে না। বরং আকাশের গায়ে শম্বুকগতিতে গড়িয়ে চলা সূর্যের রকমফের বুঝিয়ে দেয় কখন কী করতে হবে। তবে বর্ষার দিনে তেমনটা হবার জো নেই। একটানা বৃষ্টি হলে যদিও ঘড়ি দেখে বেলা আন্দাজ করে নিতে হয়। কিন্তু যখন ‘খেকশিয়ালের বিয়ে’ টাইপের বৃষ্টি হয় তখন সময়ের মর্জি বোঝা বড় দায়। মুষল ধারের বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় হয়তো গৃহিনীরা রাতের ভাত চড়িয়ে বসে আছে, গৃহকর্তার মুখে হাসি, যাক বাঁচা গেল, আজ আর বাজারে বেরুনো যাবে না, জন-মায়েন্দারের পাওনাটা অন্তত আরো একদিন টেনে নিতে পারবে, পাওনাদার মুনিষ-চাষাদের চোখে যখন অন্ধকার ঘিরে ধরেছে, আজ রাতেও উপোষ থাকতে হবে, হাঁস-মুরগী আর গৃহপালিত পশুগুলো যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘরে ওঠার, তখনই হয়তো গৃহস্থের হাসি মুখে ঝামা ঘষে, চাষা-ভূসাদের অবয়ব উজ্জ্বল করে শেষ বিকেলের সোনারোদ ছড়িয়ে পড়ে ভেজা উঠনে, বৃষ্টিধোয়া মাঠের বুকে, ভূখা চাষিদের ভাঙা চালের ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলিয়ে। শিমুল তুলোর মতো বাতাসে উড়ে বেড়ানো ছেঁড়া ছেঁড়া শুভ্র কিছু মেঘ ছাড়া গোটা মহাকাশে নীলের হরষ। জন-মায়েন্দাররা বেরিয়ে পড়ে পাওনা আদায়ে, গৃহস্থ কাঁথার তলায় দেহটা সেধিয়ে জর-সর্দির দোহায় দিয়ে হাট কামাইয়ের অজুহাত খোঁজে, গৃহপালিতারা ছুটে বেরিয়ে পড়ে অলিতে গলিতে।