বছর দুই আগে একটা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ সিরিজ লিখেছিলাম। তিক্ততা দিয়ে শুরু, ভালোর পূর্বাভাস দিয়ে শেষ। সেই ভালোটা পর্যায়ক্রমে ভালোলাগা এবং পরে কিভাবে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিলো, সেই গল্প না বললে জায়গাটার ওপর অবিচার করা হবে।
মাত্র ছয়দিনের ছুটি, চোখের নিমেষে ফুরিয়ে গেল। ২২শে মে ঢাকায় গিয়েছিলাম, ২৮শে মে লুজানে চলে এলাম। ইয়ান চলে গেছে, কাজেই বাসা খালি। আমার রুমের দরজা অর্ধেক খোলা যেত কেবল, আগেই বলেছি। গভীর রাত, ক্লান্ত শরীরে সেখানেই শুয়ে পড়লাম তিনজনে, বাসা ঠিকঠাক পরে করা যাবে।
জীবনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কি? ওয়েল, এটাই মনে হয় জগতের সবচেয়ে বেশিবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন। উত্তর পাওয়া সহজ নয়, যারা পেয়ে যান তাঁরা মহামানব। নিজেকে দিয়ে বলতে পারি, মানুষের চাওয়ার শেষ নেই। খুব ছোটবেলায় ভাবতাম, বড় হয়ে খালি চা খাব। আরেকটু বড় হলে ভাবতাম, কেউ যদি ভুল করে একব্যাগ টাকা ফেলে যেত আর আমি কুড়িয়ে পেতাম, তাহলে অনেক সুতো কিনে মাঞ্জা দিতাম, বারবার ঘুড়ি কেটে গেলেও সুতোয় টান পড়ত না।
আমার বন্ধুভাগ্য নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত। যাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে দাবী করি, তারা যে শুধু খুব চমৎকার মানুষ তাই নয়, অসম্ভব নিঃস্বার্থ এবং উদারমনা, আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী । আমার শত বিপদেও তারা বিন্দুমাত্র দূরে সরে যায় নি, প্রবল সুখেও তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি নি।
বাংলাদেশ ছেড়ে বাইরে থাকা যুগপৎ সুখের এবং বেদনার ব্যাপার। সুখ এইজন্য যে, আয় এবং ব্যয় সঙ্গতিপূর্ণ। সুখ এইজন্য, কারণ লোডশেডিং নেই। সুখ এইজন্য, সরকারী অফিসগুলো ঘুষ ছাড়াই কাজ করে দেয়। সুখ এইজন্য, কথায় কথায় স্থানীয় প্রভাবশালী মাস্তানেরা ধমক দিয়ে যায় না। এতসব সুখের ভীড় ছাপিয়ে কেবল দুঃখটাই প্রবল হয়ে ওঠে, নিঃসঙ্গতা। চেনা মানুষগুলো কেউই যে পাশে নেই!
(ডিসক্লেইমারঃ গত পর্বে লিখছিলাম ভিনদেশে আমার প্রতিবেশীদের ধারাবাহিক অত্যাচারের গল্প। অস্বস্তির সাথে জানাচ্ছি সেটা এ পর্বেও চলবে। বিরক্তবোধ করলে লেখাটি এড়িয়ে যেতে পারেন অথবা বিস্তারিত জানতে আগেরটি পড়ে আসতে পারেন)
বেশ ব্যস্ত কিছু সময় পার করলাম গত এক মাসে। এই কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা আমার ধারাবাহিক স্মৃতিচারণকে অন্ততঃ এক পর্ব বাড়িয়ে দেবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ যেখানে সেটা হলো, পাঠক ধৈর্য ধরে আরো পড়বেন কি না। প্রথম দুই পর্বে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলাম। অপ্রিয় বিষয় নিয়ে কথা বললে তিক্ততাই বাড়ে শুধু, তাই ঠিক করেছি ফাঁকে ফাঁকে অন্য বিষয় জুড়ে দেব, যাতে পাঠক একঘেয়েমিতে না ভোগেন।
সুইজারল্যান্ড বেশ ছোট দেশ, আয়তন মাত্র ১৫,৯৪০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা এখনো কোটি ছাড়ায়নি (৭৯ লক্ষ, উইকিপিডিয়া)। বড়লোকের দেশ বলে আর জমির স্বল্পতার কারণে জায়গার দাম আকাশচুম্বী। তার ওপর সুইস সরকার জমি হাতবদলের ব্যাপারে অ্যালার্জিক, তারা জমির বিক্রয়মুল্যের লাভের অংশের উপরে উচ্চহারে করারোপ করে রেখেছে, ফলে সাধারন জনগন প্রপার্টি কেনাবেচায় খুব একটা উৎসাহী নয়। এত টাকা দিয়ে জমি/বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট না কি
জায়গাটা প্রথম থেকেই একদম পছন্দ হয়নি আমার। সারাজীবন শুনে এসেছি, সুইজারল্যান্ড হচ্ছে পৃথিবীর বুকে স্বর্গের নমুনাবিশেষ। আশা ছিল, না জানি কি দেখব। মোটামুটি হতাশই হলাম। দীর্ঘ বিমানযাত্রা অবশ্য একটা কারন হতে পারে। জোহানেসবার্গ থেকে জুরিখ পর্যন্ত সাড়ে এগারো ঘন্টা, তারপর একঘন্টার বিরতিতে জেনেভার দিকে উলটোপথে আরেকটা ফ্লাইট, জেনেভা থেকে পৌণে একঘন্টার ট্রেন জার্নি, সবমিলিয়ে ক্লান্তির চূড়ান্ত সীমায় প