রাত্রি দ্বিপ্রহর। সুবাদার শাহবাজ খাঁর খাস তাঁবুর বাইরে দাঁড়ানো ছয়ফুটি তাগড়া পেয়াদাকে ফৌজদার আলী নকভী বললেন, সরে দাঁড়াও। হুজুরের সাথে আমার বিশেষ প্রয়োজন। মাথা নেড়ে পেয়াদা বলল, হুজুর ব্যস্ত। সকালে আসুন।
স্থির চোখে পেয়াদার দিকে তাকিয়ে ফৌজদার বললেন, আমার এখনই প্রয়োজন। চিটঠি এসেছে। হুজুরকে বল গিয়ে যাও।
তাঁবুর ভেতরে যাবার হুকুম মিলল। ভেতরে ঢিলে জামা পরা শাহবাজ ফৌজদারকে বললেন, রাতে আমার মাথা ভাল কাজ করেনা তুমি ভাল করেই জানো। হয়েছে কি?
বিক্রম বাজিতপুরে আমাদের হয়ে বিষ মেশানোর সাথে অন্য ধান্দা করছে হুজুর। সে তার গাঁ থেকে ধরে আনা আরো কয়টা দাসের সাথে পালানোর মতলব করছে।
শাহবাজের মুখ হাসি হাসিই থাকল, কেবল চোখ দুটি কঠিন হয়ে গেল।
গঙ্গার তীরে মুঙ্গেরের কোন এক জায়গা। সুবাদার শাহবাজ খাঁর কাফেলার তাঁবু।
সকাল।
তাঁবুর পাশে মাঠের চিপায় উবু হয়ে বসে মুর্গীর হাড্ডি কড়মড় করে চিবানোর পর থু থু করে করে ফেলে দিয়ে বিক্রম পাশে দাঁড়ানো পাইককে জিজ্ঞাসা করল, আর কতদিন এরম হাঁটাহাঁটি জানেন নাকি কত্তা?
চাঁদপুরের কাছে মেঘনা নদীর বুকে কোন এক স্থান। ভোররাত, ১৬৪৫ সাল।
নৌকার দুলুনি ছাপিয়েও পাটাতনের নিচে বসা বিক্রম টের পেল পাশের কিশোর ছেলেটি থরথর করে কাঁপছে। শিকলবাঁধা হাত নাড়ানো বেশ শক্ত তাই কনুই দিয়ে সে একটু ঠেলা দিয়ে বলল, এই কি হইসে?
হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি বলল, কানাই বলছে বেচার আগে আমাগো সবাইর নাকি বিচি কাইটা দিব? সত্য দাদা?