ক্যাসান্ড্রা- গ্রীক মিথলজির এক বিয়োগান্তক চরিত্র। তিনি ছিলেন ট্রয়ের রাজা প্রায়াম এবং রানী হেকুবার কন্যা। ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী আর বলতে পারতেন ভবিষ্যতের কথাও। কিন্তু দুর্ভাগ্যটা ছিলো- তার ভবিষ্যতবাণী কেউ বিশ্বাস করতেন না! কিভাবে তিনি ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা পেয়েছিলেন আর কেনোইবা তার কথা কেউ বিশ্বাস করতেন না- সেটার পিছনের কারণ ছিলেন দেবতা এপোলো।
মারসায়াসের সাথে সুরের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে এপোলো তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু দেবতা প্যানের সাথে ভিন্ন আচরণ করলেন। হয়তো দেবতা বলেই প্যানকে মারসায়াসের ভাগ্য বরণ করতে হয়নি!
এপোলো প্রথম দিকে সুরস্রষ্টা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। ছিলো না তার কাছে লায়ার বা বীণা। সঙ্গীতের দেবতা হিসেবে এপোলোর গল্পের আগে ঘুরে আসতে হবে অলিম্পিয়ান দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর হার্মিসের এক কাহিনীতে।
হার্মিস ছিলেন জিউস এবং মাইয়ার (সবচেয়ে বড় প্লেয়াডেস) সন্তান। হার্মিস মায়ের সাথেই পাহাড়ের গুহায় বাস করতেন। একদিন, হার্মিস সবে হাঁটতে শিখেছেন, সূর্যের আলোয় গুহার সামনে খেলা করছিলেন, হঠাৎ করেই দেখতে পেলেন ঘাসের উপর পড়ে আছে একটি কচ্ছপের শক্ত খোলস। তিনি জিনিসটি দেখে খুব মজা পেলেন এবং গুহায় নিয়ে আসলেন। এরপর খোলসটির প্রান্ত ধরে ফুটো করতে লাগলেন, ভিতরের দিকে ফাঁপা নলখাগড়ার মতো বানিয়ে ফেললেন, চামড়া ও রজ্জু দিয়ে তৈরী করলেন লায়ার, এক বীণা। এভাবেই তৈরী হলো বিশ্বের প্রথম বীণা, যার ভিতর লুকিয়ে আছে অসাধারণ এক সুর।
“দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রীক”- বলা হয়ে থাকে যে দেবতাকে, গ্রীকরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি এবং অকৃত্রিমভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করতো সেই দেবতাকেই- ফিবাস এপোলো, যিনি এক সুদর্শন দেবতা, মহান সুরস্রষ্টা – সোনালী বীণা বাজিয়ে মাতিয়ে তুলতেন অলিম্পাস পর্বত। তিনি ছিলেন রূপালী ধনুকের প্রভু, ধনুর্বিদ্যার দেবতা, সুনিপুণ তীরন্দাজ, নিরাময়ের দেবতা – মানুষকে যিনি শিখিয়েছিলেন নিরাময়বিদ্যা। এইসব চমৎকার বিদ্যার অধিকারী হওয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন আলোর দেবতা, সত্যের দেবতা।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানব, শক্তিশালী শিকারী ছিলেন অরিয়ন। অরিয়নকে নারীরা যেমন ভালোবাসতো, ঠিক তেমনি তার সুন্দর ব্যবহার এবং মনের জন্য পুরুষরাও ভালোবাসতো। অরিয়নকে নারীরা ভালোবাসতো, যেমন তারা ভালোবাসে তাদের ভাইকে। পুরুষরা ভালোবাসতো, যেমন ভালোবাসে তাদের প্রেমিকাকে। এমনকি দেব-দেবীরাও তাকে লক্ষ্য করেছিলেন, এবং তার সাহচর্য উপভোগ করতেন। কিন্তু এই সৌভাগ্যই তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, ঠেলে দেয় কিংবদন্তীতুল্য নিয়তির দিকে, ঠিক যেভাবে বীরদের পরিণতি ঘটে।
(ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা রইলো। ঈদ হয়ে উঠুক ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর ঈদের অবসরে সময় কাটাতে আপনাদের জন্য রইলো গ্রীক মিথলজির ২১তম পর্ব। এপোলো এবং আর্টেমিসের জন্মকাহিনী নিয়ে এই পর্ব।)