কুরুযুদ্ধের একটা বিশাল অংশ জুইড়া আছে লোহার অস্ত্রপাতি; অথচ মহাভারতের ঘটনার সময় পর্যন্ত দুনিয়াতে লোহাই আবিষ্কার হয় নাই। অবশ্য তামা আবিষ্কার হইছে আরো বহু আগে; খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে চাইর হাজার বছরে। ড.
কুরুযুদ্ধে নাকি অংশ নিছিল ১৮ অক্ষৌহিণী সৈনিক; যাগো লগে হাতিঘোড়াও আছে আরো আছে জোগানদার কবিরাজ দাসদাসী বাদ্যকার বাবুর্চি পশুরাখাল দোকানদার এমনকি বেশ্যাও। তো ১৮ অক্ষৌহিণীরে বর্তমান সংখ্যা দিয়া কনভার্ট করলে খাড়ায় ৪৭ লক্ষ চব্বিশ হাজারের মতো। এর সাথে অন্য লোকজন যোগ দিলে পুরা যুদ্ধে বলতে হয় আছিল ৫০-৫৫ লক্ষ লোক; এবং তারা নাকি যুদ্ধ করছে একটা মাঠেই...
যুদ্ধ শেষ হইয়া গেছে। বাকিসব খুচরা আবেগ আর হিসাব নিকাশও শেষ। ভাই আর পোলাদের দুঃখ সামলাইয়া উইঠা দ্রৌপদী এক দফা দাবি জানাইছিল পাণ্ডবগো কাছে- অশ্বত্থামারে হত্যা কইরা তার মাথার মুকুটের মণি আইনা দিতে হবে তারে। অন্যথায় সে আত্মঘাতী হইয়া পোলা আর ভাইদের সাথে যাবে...
অবশেষে কর্ণ আর অর্জুন মুখামুখি...
সতেরা নম্বর দিন শেষ বিকালে বিনা ঘোষণাতেই দুইপক্ষের সকল অস্ত্র থাইমা যায়। কেউ কাউরে মারে না; সকলে দর্শকই হইয়া আইসা খাড়ায় দুই যোদ্ধার লড়াই দেখতে...
বড়ো বেঘোরে অসম্মানের মরা মরলেন দ্রোণ। নিজের শিষ্য তার চুলের মুঠায় ধইরা তলোয়ার দিয়া মাথাটা আলগা কইরা ফিককা ফালাইল কুরুক্ষেত্রের মাঠে। শত শত লাশের ভিড়ে শেষ পর্যন্ত তার নিজের পোলায়ও শেষকৃত্যের লাইগা খুইজা বাইর করতে পারল না দ্রোণের দেহখান...
যে কুমারী কন্যারে সমাজের আড়ালে পরের বাড়িতে সন্তানের জন্ম দিতে হয় চিক্কুর চাইপা রাখার অভ্যাস তার এমনিতেই থাকে। প্রসব চিৎকার চাইপা রাখার অভ্যাসে কুন্তী আইজ চাইপা রাখে গর্ভপাতের গোঙানি। ...তার গর্ভের প্রথম পোলায় আজ নামব গর্ভের শেষ সন্তানের সামনে। মৃত্যুপণে। ...মায়ের পেটের ভাই জাইনাও কর্ণ অস্ত্র চালাইব অর্জুনের দিকে আর শত্রু জাইনা অর্জুন মারব কর্ণরে....
কৃষ্ণের পাঞ্চজন্য শঙ্খের লগে অর্জুনের দেবদত্ত শঙ্খ আর তার উত্তরে ভীষ্মের শঙ্খের নাদে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু হইয়া যায়। মাঠের পশ্চিমে কুরু আর পূর্বে খাড়ায়া আছে পাণ্ডব-পাঞ্চাল। দুই রঙের পোশাকে দুই পক্ষ দাঁড়াইছে যাতে পরিষ্কার চিনা যায় পাট্টি আর বিরোধীদল। হাতির সামনে হাতি; ঘোড়ার সামনে ঘোড়া; পায়দল খাড়া পায়দলের সম্মুখে; গদারু গদা বাগাইয়া আছে গদারুর দিকে; তিরন্দাজ-তিরন্দাজ মুখোমুখি আর বর্শাতি-ভল্লব খাড়া
কুন্তীবুড়িটা বহুত হতভাগি হলেও ভাবতে পারে নাই যে নিজের সবচে বড়ো দুর্ভাগ্যটা নিজেরই গর্ভে জন্ম দিছে সে...
কুরুসভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। যুধিষ্ঠিরের লগে আলোচনা কইরা সিদ্ধান্ত জানাইব কইয়া সিদ্ধান্তের লাইগা কৃষ্ণ এখন বইসা আছে কুন্তীর সামনে। কারণ কর্ণের বিপক্ষে পাণ্ডবদের সে যুদ্ধে জড়াবে কি না সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারে একমাত্র কুন্তী....
উত্তরার লাগে ছোটো ভাই অভিমন্যুর বিবাহে দ্রৌপদীর পাঁচ পোলা প্রতিবিন্ধ্য- সুতসোম- শ্রুতকর্মা- শতানীক আর শ্রুতসেনও আইসা হাজির হইছে বিরাটের দেশে। কিন্তু শৈশব থেকে তেরো বচ্ছর দূরে বড়ো হইয়া জোয়ান পোলারা যেমন না পারে মায়েরে মায়ের মতো ভাবতে তেমনি দ্রৌপদীও পারে না ফিরাইয়া আনতে তেরো বচ্ছর আগে হারাইয়া ফেলা মাতৃত্বের রূপ। তাই অভিমন্যুর বিবাহেও দ্রৌপদী নেহাত পাণ্ডববধূরূপে রূপের ঝলকানি দেওয়া সাজগোজ করে...