আইচ্ছা কর্ণ কি আদৌ কুন্তীর পোলা?
সন্দেহ হয় আমার। কওয়া হইছে যে কুন্তী তারে ভাসাইয়া দিবার পর সন্তানহীন সূত অধিরথ তারে কুড়াইয়া আইনা পোষে। কিন্তু অধিরথের তো আরো পোলাপান আছে। কুরুযুদ্ধেই তারা যুদ্ধ করে। বলা হয় তারে স্তন্যদান করে সন্তানহীন রাধা। কিন্তু সন্তানহীন বন্ধ্যা নারী কেমনে স্তন্য পান করায়?
ভূগোল নিয়া বহুত ঝামেলা পাকাইছে মহাভারত। মগধ সময়কালের মানচিত্র আর রাজনীতি যে মহাভারতে ঢুইকা গেছে সেই প্যাঁচালও আগে পাইড়া আসছি। এর বাইরে মহাভারতের মূল জায়গাগুলারে বর্তমান কালে চিহ্নিত করা গেছে ঠিকঠাকমতোই। কুরুক্ষেত্র আর হস্তিনাপুর আছিল হরিয়ানায়। দ্বারকা হইল বর্তমানের গুজরাট। মৎস্যদেশ হইল রাজস্থানের জয়পুর; তক্ষক নাগের রাজধানী তক্ষশিলা হইল রাওয়ালপিন্ডি; গান্ধার হইল কান্দাহার। মানে মূল ঘটনাটা ওই অঞ্চলে
মহাভারতমতে যাদব আর পাণ্ডব বংশ দুইটা শুরু হইছে ভৃগুমুনির পুত্র শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী এবং তার সতিন; রাজা বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠার গর্ভ থাইকা রাজা যযাতির ঔরসে। দেবযানী গর্ভজাত রাজা যযাতির বড়ো পোলা যদু থাইকা যাদব বংশ যার শেষ মাথায় পাই কৃষ্ণরে। শর্মিষ্ঠাগর্ভজাত যযাতির ছোট পোলা পুরু থাইকা পয়লা পুরু বংশ তার পর কুরু বংশ তারপর পাণ্ডব বংশ; যার শেষ মাথায় পাই পঞ্চপাণ্ডব। তো শর্মিষ্ঠার পোলা পুরু থাইকা
কুরুযুদ্ধের একটা বিশাল অংশ জুইড়া আছে লোহার অস্ত্রপাতি; অথচ মহাভারতের ঘটনার সময় পর্যন্ত দুনিয়াতে লোহাই আবিষ্কার হয় নাই। অবশ্য তামা আবিষ্কার হইছে আরো বহু আগে; খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে চাইর হাজার বছরে। ড.
কুরুযুদ্ধে নাকি অংশ নিছিল ১৮ অক্ষৌহিণী সৈনিক; যাগো লগে হাতিঘোড়াও আছে আরো আছে জোগানদার কবিরাজ দাসদাসী বাদ্যকার বাবুর্চি পশুরাখাল দোকানদার এমনকি বেশ্যাও। তো ১৮ অক্ষৌহিণীরে বর্তমান সংখ্যা দিয়া কনভার্ট করলে খাড়ায় ৪৭ লক্ষ চব্বিশ হাজারের মতো। এর সাথে অন্য লোকজন যোগ দিলে পুরা যুদ্ধে বলতে হয় আছিল ৫০-৫৫ লক্ষ লোক; এবং তারা নাকি যুদ্ধ করছে একটা মাঠেই...
যত দিন ধইরাই লেখা হউক আর যত মাইনসেই কাহিনি যোগ করুক না ক্যান; মহাভারতের কাহিনিখান এখনো প্রচারিত আছে একক মানুষ বেদব্যাস কৃষ্ণ দ্বৈপায়নের নামে; এবং মহাভারতের প্রধানতম ভজঘট হইলেন স্বয়ং এই বেদব্যাস কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। তো এই কৃষ্ণ দ্বৈপায়নের একখান কাব্যিক বর্ণনা দিছেন রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় তার অন্নদামঙ্গলের পাতায়:
[center]দাঁড়াইলে জটাভার
চরণে লুটায় তাঁর
কক্ষলোমে আচ্ছাদয়ে হাঁটু
পাকা গোপ পাকা দাড়ি
কবিরা যুক্তি মানেন না আর ধার্মিকেরা যুক্তি বানান। এতে কোনো ঝামেলা নাই কারণ কাব্যকাহিনি যারা পড়েন আর ধর্মকথন যারা মানেন তারা ভিন্ন ভিন্ন লোক; ভিন্ন ভিন্ন রঙের অন্তর নিয়া তারা বসবাস করেন ভিন্ন ভিন্ন জগতে; যদিও দুই দলই ভিত্তি করেন মূলত কল্পনায়। পার্থক্য শুধু এই যে কাব্যভক্তরা কল্পনারে কল্পনা জাইনা বিনোদিত হন আর ধর্মভক্তরা কল্পনারে সত্য জাইনা করেন বিশ্বাস...