আমাদের সমাজে এই নারী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি কি রকম? "ভালো" মেয়ে প্রশ্ন করে না, জোরে হাসে না, জোরে কথা বলে না, তর্ক করে না, প্রতিবাদ করে না, নিজের চাহিদার কথা মুখ ফুটে বলে না। সে জটিলতা বোঝে না, রাজনীতি তো নয়ই। তার শরীর তার লজ্জার বস্তু তাই নিজেকে আবৃত রাখে সে। পা ঢাকে, মাথা ঢাকে, তাতেও যখন হয় না তখন মুখ ঢাকে। একসময় নিজের মনুষ্যত্বটুকুও ঢাকে প্রাণপণে। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এণ্ডারসনের "লিটল মারমেইড" গল্পটির কথা মনে আছে কারো? সেই যে ছোট্ট জলপরী, রাজপুত্রের কাছে এবং তার সমাজের কাছে গ্রহনীয় হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে একটি একটি করে স্বকীয়তা হারায় সে? সবশেষে হারায় তার কণ্ঠস্বর।
(আমি মূলত একজন পাঠক। নারী সপ্তাহ উপলক্ষে একটি ছোট্ট গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। গল্পের প্রতিটি উপকরণ আমার নিজের জীবন অথবা আমার পরিচিত মানুষদের জীবন থেকে নেওয়া।)
হ্যালো...... এই যে ভাইয়া, শুনছেন?
আমাকে বলছেন?
জী, আপনাকেই বলছি।
বলুন।
এসেছি নিজের কথা বলতে। আমরা মেয়েরা আজীবন বাবার কথা, ভাই বোন, স্বামী সন্তান, সংসারের কথা বলি। নিজের যে দুটা কথা আছে তা আর বলা হয় না... কাওকেই না।
ছোটবেলা থেকেই শুরু করি।
সচলে আমার প্রথম লেখা। হাত কাঁপছে। সাত বছর ধরে সচল পড়ছি। লেখার সাহস করিনি কখনো। কত বড় বড় লেখক এখানে! কিন্তু 'নারী সপ্তাহের' আহবানে আজ আর পাঠক হয়ে বসে থাকতে পারলাম না। বানানে খুব কাঁচা আমি, বিশেষ করে 'র' আর 'ড়'। সময় অভাবে অভিধান দেখে ঠিক করে নিতে পারলাম না বলে দু:খিত। তাই সম্ভব হলে বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে তুলিরেখাকে অনুরোধ করব।
একদিন খবর পেলাম ছোট ফুপা মৌলবাদী হয়ে গেছেন। খবরটা শুনে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। কারণ আমার সেই সুদূর অতীতের কথা মনে পড়ে গেল।
দৃশ্য-এক
- হ্যালো অমুক, আমি তমুক বলছি, তোমার খালু কী বলেছেন আমি ফোন করবো আজ?
-বিস্ময় চাপা দিতে দিতে অমুকের প্রশ্ন -আমাকে কেন ফোন করতে হলো জানতে পারি?
- হোয়াট দ্য ***! তুমি আমার বায়োডাটা দেখোনি? ইমেলে এ্যাচাট করে পাঠিয়েছি তো।
এখুনি ইমেল খোলো।
তোমার নামটা পছন্দ হয়েছে বুঝলে? স্মার্ট নেম। আমার লাস্ট নেমের সাথে দারুণ মানাবে।
এই কথাগুলো কোনদিন কাউকে বলিনি খুব কাছের দুই একটা বন্ধু ছাড়া। আমার স্বামীও জানেনা। জানলে যে সে খারাপ ভাবে নেবে তাও না। সে যথেষ্ট উদার মনের মানুষ। কিন্তু বলতে পারিনি। যদি কোনদিন একবার রাগের মাথাতেও কিছু বলে ফেলে আমি মরে যাব। আর আমার মনে হয় ছেলেরা আসলে ব্যাপারগুলো বোঝেনা। হয়তো আমি ভুল। কিন্তু সাহস হয়না।
ফেইসবুকে একটি ইংরেজি কবিতা দেখে খুব ভাল লাগলো। একটি মেয়ে যাই রাঁধছে, যে কাজই করছে, তার স্বামীপ্রবরের সেটি মনমতো হচ্ছে না, কোনভাবেই স্বামীটির মায়ের সমকক্ষ মেয়েটি আর হতে পারছে না। ভাষা-দেশনির্বিশেষে বলতে গেলে সব বিবাহিত নারীকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই ভাবলাম বাংলা করে ফেলি।