ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা আর কথার স্রোত আসে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার হ্যান এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ত্যান করতে হবে বলে গুণীজন১ এ মাসে অনেক উপদেশ, পরামর্শ আর হাহাকার উপহার দেন আমাদের। মার্চের এক তারিখে বাংলা ভাষা নিয়ে কথাবার্তাগুলো রোদে শুকিয়ে ন্যাপথলিন দিয়ে আবার তোরঙ্গে তুলে রাখা হয়, পরের বছরের জানুয়ারির তিরিশ-একতিরিশ তারিখ ফের বের করে রোদে দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ঠ্যাকা কাজ চালানোর জন্য। ফেব্রুয়ারি তাই এক অর্থে বাঙালির ভাষা-রমযান। আমার ইচ্ছা ছিলো ফেব্রুয়ারি বাদে বাকি এগারো মাস বাংলা ভাষার টুকিটাকি নিয়ে একজন আগ্রহী চর্চক হিসেবে ঘ্যানঘ্যান করার, কিন্তু বিধি বাম।
[justify]
১.
ব্যাঙ্কশাল থেকে বংশাল?
সুলেখক ও সম্পাদকোত্তম মীজানুর রহমান তেমনটাই লিখে গেছেন তাঁর স্মৃতিচারণগাথা "ঢাকা পুরাণ" গ্রন্থে। তাঁর কলমে,
[justify]শব্দ সম্পর্কে আমাদের সবার মনের দরজার ভেতরের কপাটে নিজস্ব (অনবশ্য স্বকীয়) একটা রায় পেরেক মারা আছে। যখন আমরা একটা অচেনা শব্দ (যেমন এর আগের বাক্যে অনবশ্য (= not necessarily, অনাবশ্যকের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না) পড়ি বা শুনি, মনের দরজা লাগিয়ে ঐ রায়টা আমরা একবার পড়ে নিই। প্রতিটি শব্দ আমাদের প্রতি জনের সে রায়ের জোরে বাঁচে, বন্দী থাকে, সমাহিত হয়, পুনর্জীবন পায়।
ছত্রাকের দৃশ্যমান অংশ দেখে টের পাওয়া যায়, আক্রান্ত অংশের কোথায় কতটুকু পুষ্টি আছে, কিংবা কোথায় নিয়মিত রোদ পড়ে। ভাষাও তেমনই, যেখানে তার পুষ্টির সংস্থান হয়, সেখানে সে বাড়ে, আর প্রবল বাধার মুখে শুকিয়ে যায়। আজ মহাকাশে নভোযানে চরিত্রদের গুঁজে দিয়ে জমজমাট কোনো কল্পবিজ্ঞান গল্প লিখতে গেলে কয়েক চরণ লেখার পরই হাত বাড়াতে হবে ইংরেজির ভাঁড়ারের দিকে, একটা দুটো শব্দ টোকানোর জন্যে। মহাকাশে বাংলা ভাষার পুষ্টির অভা
১.
ইংরেজিতে ভোজ্য প্রাণী আর তার মাংসের নাম দু'রকম। এ খিটকেল বাংলায় নেই। গরুর মাংসকে আমরা গরুর মাংস বলি, ঝামেলা শেষ। কিন্তু ইংরেজিতে গরু হচ্ছে কাউ, কিন্তু তার মাংস বিফ। বাছুর কাফ, কিন্তু তার মাংস ভিল। ভেড়া ল্যাম্ব, কিন্তু তার মাংস মাটন। হরিণ ডিয়ার, কিন্তু তার মাংস ভেনিসন। শূকর হগ/পিগ/বোর/সোয়াইন, কিন্তু তার মাংস পর্ক। সেদিন এক ভিডিওতে জনৈক পণ্ডিতের কাছে এর চমৎকার একটা ব্যাখ্যা পেলাম। ইংরেজিতে মাংসবাচক শব্দগুলো ফরাসি থেকে এসেছে, যখন ইংল্যান্ড শ'তিনেক বছর ধরে ফরাসি দখলে ছিলো। জ্যান্ত প্রাণীগুলোর নাম অ্যাংলো-স্যাক্সন রূপ নিয়ে রয়ে গেছে, কারণ ওগুলো পেলেপুষে সরবরাহের দায়িত্ব ছিলো বিজিত ইংরেজের। আর সে দুর্মূল্য পশু কেটেকুটে রেঁধে পরিবেশন করা হতো বিজয়ী ফরাসিভাষী কেষ্টুবিষ্টুদের। ছোটোলোক যোগানেওলার ভাষায় তাই জ্যান্ত প্রাণীর নাম টিকে গেলো, অভিজাত খানেওলার ভাষায় রয়ে গেলো মাংসবাচক নামগুলো।
১.
অশেষ স্বলেহনের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সহজে যূথচিন্তনের সুযোগও ফেসবুক খোলা রেখেছে। পরিভাষা নিয়ে চিন্তার জন্যে আগ্রহী কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গড়া এমনই এক যূথচিন্তনের জায়গায় সেদিন একটি প্রশ্ন দেখে থমকে গেলাম: "জেলিফিশের বাংলা কী হতে পারে?"
১.
চিরুনি অর্থ কী, এ জিজ্ঞাসার মোকাবেলা বালক জগদীশচন্দ্র বসু করেছিলেন "ফাড়ুনি" দিয়ে। দেখা বা শোনা নয়, পড়া কথা। জগদীশচন্দ্রের এই বাল্যকালীন প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে বাংলা শব্দের মহাদ্রুমের বীজ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে জিজ্ঞাস্য, চিরুনি কি আদপেই ফাড়ুনি? চিরুনিকে ফাড়ুনি বললে কি লোকে চিনবে? যদি শব্দের কাজ হয় ভাবসেতু নির্মাণ, তাহলে ফাড়ুনিতে গিয়ে কি ভাবজট তৈরি হবে না? কিন্তু ফাড়ুনিতে কী নেই, যা চিরুনিতে আছে?
শ্রোতার অভ্যস্ততা।
শব্দের প্রথম ও প্রধান কাজ নতুনকে বেধ করা, যেভাবে শুক্রাণু বেধ করে ডিম্বাণুকে। এরপর শব্দ আর নতুন মিলেমিশে এক ভ্রুণ জন্ম দেয়, যাকে আমরা বলতে পারি, "ধারণা"।
দ্রুম মানে বৃক্ষ। এই পোস্টটি গাছ নিয়ে, বা আরো খুঁটিয়ে নির্দেশ করতে গেলে, গল্পের গাছ নিয়ে; এর শিরোনাম তাই গল্পদ্রুমশব্দ রাখা যেতো। দ্রুমশব্দগল্প রাখলেও সম্ভবত ভুল হতো না।