মাক্তুব, ভাবল ও।
“আরে কী হলোটা কী, জিজ্ঞেস করো!” ইংরেজের কথায় সম্বিত ফিরে পেল সান্টিয়াগো।
মেয়েটির কাছাকাছি গেল ও। ইতস্তত করে একটু হাসল।
“আপনার নামটা জানতে পারি কি?”
“ফাতিমা,” চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল মেয়েটি।
“ও আচ্ছা... আমাদের দেশের মেয়েদেরও এই নাম হয়।”
এখন ভরা শীত। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আজকে শীত একটু কমই বলা যায়!
সূর্য উঠতে উঠতে সান্টিয়াগোর ঘুমও ভেঙ্গে গেল। যেখানে আগের রাতে চোখের সামনে তারার মত বিন্দু বিন্দু আলো দেখেছিল ও, এখন সেখানে শুধু সারি সারি খেজুর গাছ, যতদূর চোখ যায়।
“বাব্বাহ, আমরা শেষ পর্যন্ত আসতে পারলাম তাহলে!” বলল ইংরেজ, সেও উঠে পড়েছে।
মানুষ পাহাড়ের ওপরে এতদূর এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন দেখে একটা স্ফটিকের দোকানে চা বিক্রি হচ্ছে- চায়ে নাকি এরা আবার পুদিনা পাতাও মেশায়। চা খেতে দোকানে ঢুকে দেখে কী যে সুন্দর সুন্দর স্ফটিকের বাসন কোসনে করে এরা চা দিয়ে যায়!
আমি উঠে প্রবল অবিশ্বাসে আমাদের চুল, বালিশ, পোশাক শুঁকে শুঁকে দেখি
একান্ত নীরবতায় আমার বিস্ময়, বিহ্বলতা কাটিয়ে
ঘ্রাণটা কিসের, তাই ভাবি!
জানালার গাছ, পাতার গন্ধ, ফুলের গন্ধ নয়
কী নাম দেব সেই ঘ্রাণ, কী হতে পারে বন
ঘুমের ভেতর এ কোন ঘ্রাণের স্বপ্ন আরণ্যক?
উর্বর মাটি? মাটিরই মতো- কিন্তু মাটিও না,
গাছের কটিতে ঘর বাঁধা কোনো পাখির কচি পালক?
নিষ্প্রাণ কোনো শরীর?
সেবার গ্রীষ্মে আমরা গেলাম আরেকটু উত্তরে।
পরদিন, দুপুরে বুড়ো মেলখিযেডেকের সাথে দেখা করতে গেলো সান্টিয়াগো। ছ’টা ভেড়া এনেছে সাথে।
“খুবই অবাক হয়েছি, জানেন! আমার এক বন্ধু আমার ভেড়াগুলো মুহূর্তের মধ্যেই কিনে নিলো। বলল, ওর নাকি সারা জীবনের স্বপ্ন ও রাখাল হবে। আর আমার এই ভেড়া বেচার ব্যাপারটা, এটা নাকি তারই একটা নিশানা।”
মানুষের কাজই উদ্ভট সব কথা বলা, ভাবে সান্টিয়াগো। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভেড়ারাই ভালো, কোনো কথাবার্তা বলেনা, চুপচাপ থাকে। আর না হলে বইতো আছেই। যখন যেমন ইচ্ছা, বই থেকে কত অবিশ্বাস্য সব কাহিনী জেনে নেওয়া যায়! অথচ মানুষের সাথে কথা বলতে গেলেই যত সমস্যা, কেউ কেউ এমন কথা বলে, এমন আজব সব কথা যে আর আলাপ চালিয়ে যাওয়ার উপায় থাকেনা।
“আমার নাম মেলখিযেডেক,” বলল বুড়ো। “কতগুলো ভেড়া আছে তোমার?”
দিগন্ত জুড়ে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ছিল, সূর্যটা হঠাৎই উঠল। বাবার সাথে ওইদিনের আলাপের কথা ভাবল সান্টিয়াগো, খুশি খুশি লাগল। কত প্রাসাদ প্রতিম দালান দেখলো, কত মেয়ে দেখলো, কিন্তু যে মেয়েটার জন্য গত কয়দিন থেকে ও অধীর হয়ে আছে, তার সাথে কোনোকিছুরই তুলনা চলেনা।