৫।
“সূর্যের আলো থেকে ইলেক্ট্রিসিটি দিয়ে পানির হাইড্রলাইসিস থেকে তৈরি হয় হাইড্রোজেন । সেটাকে চিনির ভেতর দিয়ে চালিয়ে হয় মিথেন গ্যাস, আর সেটা জমা হয় একটা বোতলে।“
বুক চিতিয়ে বললো উদ্ভাবক।
“এটা দিয়ে কোনও খরচ ছাড়াই বাসায় রান্না করা যাবে । আর যতো বেশি বোতল, তত বেশি গ্যাস। “
১।
মেলায় স্টলগুলোর সামনে দিয়ে একবার ঘুরে এসে শমশের সাহেব যারপরনাই বিরক্ত হলেন। জনসমাগম ভালো, কিন্তু প্রধান অতিথির কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। জনা বিশেক স্টল, তার সামনে শ-খানেক মানুষ। বিজ্ঞান মেলায় এর চেয়ে বেশি আর কে আসবে? দু’জন বাদাম ওয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছে ইতস্তত। ব্যাবসা মনে হয় ভালোই। এক কোনায় একজন গ্যাস বেলুন বেচছে। বিজ্ঞান মেলা তো নয়, যেন ফাল্গুন উৎসব। যত্তসব। তিনি মুখ ভার করে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেন। দু’টোর সময় মেলা উদ্বোধন করার কথা ছিল। চারটা বাজে, এখনো প্রধান অতিথির খবর নেই। হাসিবকে একবার ফোন করে দেখবেন নাকি ভাবলেন। থাক, আগে কর্নেল ব্যাটা আসুক।
সোয়া চারটার সময় মাঠের মাঝখানে একটা সুদৃশ্য গাড়ি এসে থামল। কর্নেল সেয়ানা ভারিক্কি চালে গাড়ি থেকে নামলেন। রাগে তার মুখ থমথম করছে। শমশের সাহেব প্রমাদ গুনলেন। ছোটবেলা থেকেই সেয়ানার রাগ মারাত্মক। তিনি তাড়াতাড়ি তার বন্ধুর গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
“ব্যাটা”, ফিসফিস করে বললেন কর্নেল, কিন্তু গর্জনের মত শোনা গেল, “নিমন্ত্রণ দাও প্রধান অতিথির, কিন্তু গাড়ি পার্ক করার একটা জায়গা রাখোনা আশেপাশে। খুঁজতে খুঁজতে জান কাবার হয়ে গেল। জানো না, আমি লেট করাটা একদম পছন্দ করি না? ব্লাডি সিভিলিয়ান কোথাকার! “
রাজীব
“স্যার , চা খাবেন ?” ধাতব, কিন্তু মিষ্টি কণ্ঠে একটা প্রশ্ন ভেসে আসে।
“চা নিয়ে আমার মাথায় ঢাল , যত্তসব। রোবটের হাতে বানানো চা । চা তো না, যেন ফর্মুলা ।“
বর্ণালীর ওপর প্রচণ্ড একটা ক্ষোভ হঠাৎ দানা বাধতে শুরু করে রাজীবের মনে।
[আইজাক আজিমভ বা আর্থার সি ক্লার্ক আমাদের কাছে যতোটা পরিচিত, ফিলিপ কে ডিক ততোটা নন। আমি নিজেই তাঁর লেখা গল্পগুলো পড়া শুরু করেছি মাত্র কয়েক বছর আগে। তাঁর গল্পগুলোর মধ্যে নিতান্ত গড়মানের গল্প যেমন আছে, তেমনি পাঠককে স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো গল্পের সংখ্যাও কম নয়। আমার বিবেচনায় কল্পবিজ্ঞান ছোটোগল্পের মধ্যে সেরাগুলোর মধ্যে আর্থার সি ক্লার্কের "নাইন বিলিয়ন নেইমস অব গড" আর ফিলিপ কে ডিকের "সেকেণ্ড ভ্যারাই
১.
মকবুল স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে পর্যবেক্ষণ ডেস্ক থেকে উঠে পড়লো। তার মাথা টিপটিপ করে ব্যথা করছে, শরীরের কোষগুলো একটু পর পর যেন বিড়বিড় করে বলছে, এক কাপ কফি খাওয়া দরকার।
নভোতরী "টিম্বাকটু" একটা ছোটো স্কাউটশিপ, সর্বোচ্চ চারজন নভোনাবিকের জন্যে তৈরি করা। কিন্তু মকবুলের মিশন সঙ্গীবিহীন। শুধু সঙ্গীবিহীনই নয়, ফেলে আসা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগবিহীনও।
আরও তিন বছর তাকে কাটাতে হবে টিম্বাকটুতে।
[justify] [সাব্বির হত্যায় অভিযুক্তেরা পেয়েছে বেকসুর খালাস। সাব্বির কলেজে ছিলো আমাদের সাথেই। ওকে চিনতাম হুমায়ুন নামে, এর মানে সৌভাগ্যবান। ছেলেটা ছিলো বড্ড আবেগি আর খামখেয়ালি। এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোধহয় বেশ বিরলই ছিলো, যা তাকে কোন নিয়মে বাঁধতে পেরেছে। আমাদের মতো ছক-বাঁধা, একঘেয়ে জীবন কাটাতে চায় নি আমাদের মহাবিদ্যালয় থেকে মেধাতালিকায় ঠাঁই পাওয়া ছেলেটা। আমার শহরে প্রথম সাইবার ক্যাফেটা ছিলো তারই। মৃদুভ
১। নী
গোল জানালাটির সামনে এসে দাঁড়ায় নী। আস্তে আস্তে হাত বাড়িয়ে ছোঁয় নীল বোতামটাকে। এখন সে হাত পায়। কয়েকমাস আগেও অত উঁচুতে হাত যেতোনা নী'র। তখন ওর সঙ্গে ওরাককে আসতে হতো। কিন্তু নী'র ভালো লাগতো না, কেমন যেন মনে হতো একা আসতে পারলেই ভালো হতো।
সকালে জগিং করতে বের হই আজ রোজকার মত। হাতের ব্যান্ডে আইফোন। পডকাস্ট শুনতে শুনতে এক ঘন্টা, দৌড়াই বা জোরে হাঁটি। সাথে একটা নোকিয়ার ফোন থাকে যেটা ওয়াই-ফাই হটস্পট হয়ে আমার আইপড টাচকে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়। সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে আইপড বন্ধ হয়ে গেল। আইপড বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটু আগে যে পডকাস্টটিতে আগের রাতে ডাউনলোড হওয়া সংবাদ এপিসোড শুনছিলাম তাহল, স্টিভ জবস নেই। আই-গোত্রীয় হার্ডওয়্যার এবং সাথে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের জনক তিনি, এর আগে ম্যাকিন্টস বিপ্লব ইত্যাদির নির্মাতা তিনি। আইপডটা বেশ কয়বার অন করার চেষ্টা চালালাম। একি! আইপডটা ভিজে উঠছে কেন! রুমাল দিয়ে মুছে নিচ্ছি, তাও বার বার ভিজে যাচ্ছে। আর অনতো হচ্ছেই না।
আইপড, আইফোন, আইপ্যাডের সেদিন ছিল শোক দিবস। তাদের জনক স্টিভ জবস দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আজ কোন কাজ করবে না। প্রতিটি ডিভাইসই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়ায় তারা একত্রে এই সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছে।
১.
প্রফেসর দরবেশ মন দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছিলেন, চায়ে চুবিয়ে। সব কনফারেন্স শেষেই তিনি সংলগ্ন ক্যাফেতে ঢুকে তাদের চা আর বিস্কুটের মান পরখ করেন, তারপর মনে মনে একটা রেটিং দেন। যেসব ক্যাফের চা ভালো, যাদের বিস্কুট চায়ে চুবানোর পর ঠুস করে গলে ভেঙে চায়ে ডুবে আত্মহত্যা করে না, সেসব ক্যাফের সাথে সংশ্লিষ্ট কনফারেন্স এবং আয়োজকদের প্রতি তিনি প্রসন্ন থাকেন। যেসব কনফারেন্সে গিয়ে সাথের ক্যাফেতে, বলাই বাহুল্য, সুবাসিত চা এবং বলিষ্ঠ বিস্কুট মেলে না, সেসব কনফারেন্সকে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করেন। বিজ্ঞান কোনো না কোনোভাবে এগিয়ে চলবেই, কিন্তু দুবলা বিস্কুট সরবরাহকারী ক্যাফে মানবজাতিকে সবসময় পেছনদিকে টেনে নিয়ে যায়।
চায়ে চুবিয়ে বিস্কুট খাওয়ার কাজটাকে কিছুটা ঐকান্তিক মনে করেন প্রফেসর দরবেশ, অনেকটা প্রেমিকার সাথে ফিসফিস আলাপের মতোই। এ সময়ে কেউ কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে দুটো কাজেই ব্যাঘাত ঘটে।
"ডক্টর দরবেশ?" একটা পিলে কাঁপানো ভারি কণ্ঠস্বর মেঝের ছয়ফুট ওপর থেকে হেঁকে ওঠে।
১.
মোতালেবের মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। রিসার্চ গ্র্যান্টটা মিলে গেছে, তারপরও। ৎসাইলবের্গারের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা সে ভুলতে পারছে না কিছুতেই। বুড়ো বিরাট খচ্চর।
ধবধবে সাদা পেয়ালায় কফি খেতে খেতে বুড়ো শুধু বলেছিলো, "অসীম হচ্ছে একটা বিমূর্ত বালছাল। ভুলো না কিন্তু।"