প্রস্ফুটিত ফুলের মতোন কথারও বিভিন্ন রং আছে
কখনও গোলাপী, কখনও জবাকুসুম, কখনও হাসনাহেনা
নিখাদ ভালোবাসায় ফুটে থাকে ফুল হৃদয়ের আঙিনায়
ফুরফুরে মৌ সহসা খুলে দেয় মনের জানালা।
চুপিচুপি এসে যেদিন হঠাৎ বললে- ভালোবাসি তোমায়
বুকের বাগান ভরে গেলো সুবাসিত ফুলে ফুলে
সুনীল আকাশ মেলে দিলো উদার দিগন্ত
আরেকটি বিকেলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলো
ধূপছায়া অহংকার আমার সময়।
অরণ্যে কমছে শ্বাপদ, বাড়ছে জনপদে
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে খুন, আছে হিংসা প্রতিপদে।
নিজেদের কেউ কখনও পড়লে বিপদে
তেড়ে আসে পশুরাও তার প্রতিরোধে
আসে না মানুষ শুধু বাঁচাতে স্বজাতে!
কাক কোনোদিন খায় না কাকের মাংশ
মানুষেরা মানুষের খায়
গ্রেনেড গুলি, বুকেতে ছুরি, শিরচ্ছেদে
কতো আদমের প্রাণ যায়!
দ্যাখো বিশ্ব চরাচরে মানুষে বিদ্বেষ
বাড়ছে নিষ্ঠুর নৃশংসতা
কাঁদছে নীরবে মানবতা একা ঘরে
নিরালা দুপুর কাঁদে ঝমঝম বৃষ্টির ধারায়
ভেজা কাক কাঁপে কদমের ডালে, দমকা হাওয়ায়
সুসবুজ পাতার অন্তরে বেঁধে সূচালো বৃষ্টির শর
ঠিক আট বছর আগের এমনই দুপুর বেলা
চলে গেছে সে কাঁপিয়ে এই মগ্ন চরাচর।
খুব বেশি স্মৃতিচিহ্ন রাখিনি এ ঘরে
তবু দিনরাত বেসামাল বেশুমার
মাকড়সার জালের মতো অজান্তে উঠছে বেড়ে
ছাদের পলেস্তারায়, দেয়ালে দেয়ালে সবই
নিরুদ্দেশ দিবসের সেই স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
কালো মেঘ ছুঁয়ে গেলো জানালার কাঁচ
দৃষ্টির পাখিরা বিপর্যস্ত দিগ্বিদিক ঝড়ে
ভাঙচুর সময় হাঁটে কণ্টক পথে বেসামাল
জানে না সে কতো দূরে নীলাঞ্জনাদের বাড়ি!
একটা কাজলা দিঘি ছিলো এই পথে হেঁটে যেতে
বুক জুড়ে ছিলো অগণন শ্বেতপদ্মের হাসি
হাওয়ায় মেঘেরা উড়ে এসে দিতো ছায়া দিনভর
হিজলতলায় পাশাপাশি বসা দুজনার চোখেমুখে।
জানে কি সে কতো ঝড় গেলে মিলবে শিমুলতলী গ্রাম
প্রণয়ের শাড়ি খুলে দেখো সব আজ বিরহ উদাম!
বেজে ওঠে না-বলা গানের কলি, ছিঁড়ে যায় মননের তার
কংক্রিটে, পীচঢালা পথে পথে সারাক্ষণ আটকে থাকে পা
সমস্ত চরাচরে অদম্য কোলাহল অগণন সুর ভিন্নতার
ঘরপোড়া বাউল খোঁজে বসন, রুদ্রাক্ষের মালা, একতারা
মমতার চাদরে জড়িয়েছে সে সোনার অঙ্গ, সম্পর্ক সুর
জানে না পথের দিশা, মেঠোপথে নেচে চলে অজানা নূপুর।
পরিশ্রান্ত ভুলের উঠোনে ঢেউ খেলে সংসার সমুদ্র জল
দিকভ্রান্ত নাবিকের হাল কাঁপে বিরহের ঝড়ে অবেলায়
কোকিল ডেকেই চলে মগডালে
কোকিলারা আসে না শিমুলতলে!
আজকাল কোকিলারা বড়োই সংসারী
ভাল্লাগে না কোকিলের বাউলেপনা স্বভাব
নির্মল বাতাসে বসন্তের গান পৌঁছে না হৃদয়কোণে
গাছে গাছে ওড়াওড়ি, দিনভর একটানা গান- আদিখ্যেতা
বরং কাকের কা কা ডাক অনেক মধুর, অনেক সুরেলা
ছিমছাম পরিপাটি বাসায় এলানো যায় ক্লান্ত দেহ
পরিশ্রান্ত দিনের শেষে আনন্দ প্রহর, পরিতৃপ্ত সঙ্গম
কোকিলের কি আছে সে মুরদ বানাতে বাসা!
কিছুই ফেলনা নয় মানব জমিনে
অনন্ত সমাধি ঢেকে দিলে দেহের ফসিল
এ প্রাণের বায়ু মিশে থাকে মাটির নিভাঁজে
উর্বরা ধরিত্রী তাকে পোষে মায়াবতী বুকের কন্দরে
দ্যাখো, প্রাত্যহিক পরিত্যক্ত বিষ্ঠাও ফলায় সোনার ফসল
পরিতৃপ্ত সবার জিহ্বা ভরায় তাতে স্বাদের চুম্বন!
এ দেহের নিকানো উঠোন, রক্তমাংস, অস্থিমজ্জা, হাড়গোড়
সবই বিলিয়ে দিয়েছি সম্প্রদানের চুক্তিতে এক স্বাক্ষরে
মায়ামৃগের সন্ধানে একদিন অভয়ারণ্যে গিয়েছিলাম
এক হাতে ছিলো উদ্যত ধনুক অন্য হাতে তীর
পাকা শিকারীর বেশে ঘুরেফিরে সারা বন
অবশেষে যখন কংসের তীরে পৌঁছলাম
সন্ধ্যার আবির রাঙালো আকাশ, নদীজলে ক্লান্ত ঢেউ
আরেকটি দিবসের অপেক্ষায় রইলো উদ্ভ্রান্ত মন
আমার দুচোখে স্মৃতি দগ্ধময় রাত্রির প্রহর।
তুমি বলেছিলে- এই হাতে সূর্যোদয় হবে একদিন
দিনের আলোয় দেখাবে ভালোবাসার যাতো পথ
স্বপ্নগুলো আকাশছোঁয়া মেঘের ভিড়ে লুকায় কেন?
উড়ছে ধুলো, উড়ছে তুলো দূর দিগন্তে বাষ্প যেন
শৈশবেরই উঠোন থেকে কৈশোরেরই মেঠোপথে
গোত্তা-খাওয়া উড়ান ঘুড়ি জীবনযাপন উল্টোরথে
ভুলছে স্বনন, ভাঙছে মনন ঝর্ণা-পায়ের বহতা স্রোত
লক্ষ্যভেদী চলার আবেগ গড়তে অমোঘ সুখের তাবৎ।
লক্ষ্য যেন দূর আলেয়া আঁধার কালো বনের ধারে
পেয়ে তারে মুক্তাবাসে খুঁজি শুধুই কারাগারে
স্বপ্নগুলো মরে যায় জেগে থাকে শুধু আশা
আশার অপর নাম শ্বাস- বুকে যাওয়া-আসা।
উড়ায়ে রঙিন ঘুড়ি শক্তহাতে না ছাড়ি নাটাই
জীবন ছাড়ে না পিছু, যাপনের ঘোড়াটা ছোটাই
যাচ্ছে চলে নাছোড় ঘুড়িটা একেবারে দিগন্ত ওপারে
মাঝখানে ধূ ধূ মাঠ অবিরাম ওই পথের কিনারে।
ফিরবে কি ফিরবে না এই প্রশ্ন এখন বাতাসে
প্রতীক্ষার তারা জ্বলে ঘোরলাগা অমার আকাশে
যে ছিলো হৃদয়কোণে খুঁজি তারে অচেনা প্রান্তরে