ওহাব ভাই জ্ঞানী লোক এবং ওজনদার লোক। আমাদের আড্ডার দু’টো বেঞ্চের একটা সম্পূর্ণ তার জন্যই বরাদ্দ থাকে। কারণ ঐ যে বললাম ওজনদার লোক, তার বিশাল বপুর জন্য একটা গোটা বেঞ্চিও কম পড়ে যায়। তার ওজন যে কত সেটা বলা মুশকিল। একবার একটা ছোটখাটো ওজন মাপার মেশিনে দাঁড়িয়ে বললেন “দেখতো দেখি কত বলছে?” ঢাউস ভুঁড়িটার জন্য নিজে যে ঝুঁকে দেখবেন সে উপায় নেই। আমরাই ঘাড় নিচু করে দেখতে চেষ্টা করি, কিন্তু কাঁটাটা একেবারে শেষ
(ছবির ক্রেডিট লেখকের। ২০১৪ সনে জুরিখের ফিফা হেডকোয়ার্টার থেকে তোলা।)
ঘটনা এবারের বিশ্বকাপের প্রথম দিকের। ঠিক তারিখ মনে নেই, কিন্তু তখনও গ্রুপ স্টেজের খেলা চলছে, সম্ভবত প্রথম সপ্তাহের কোন এক দিন। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে ওয়ালমারট গিয়েছিলাম। কিছু টুকিটাকি জিনিস কেনার ছিল। কিনে বের হয়ে আসার পথে দেখি এক বয়স্ক সাদা ভদ্রলোক ৫৫ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কি মনে হতে তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম। ভদ্রলোক খাস টেক্সান, কাউবয়দের দক্ষিনা টানে ইংরেজি বলেনঃ
‘He was mistakenly born in Bangladesh’—Otto Pfister
আজকের দিনে হাজারো ক্রিকেটারদের ভিড়ে মনে পড়ে গেল, বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগের অসাধারণ ফুটবলার মুন্নার কথা। যারা তার খেলা দেখেনি বোঝা সম্ভব না তিনি কী অসাধারণ একজন ফুটবলার ছিলেন!!
পৃথিবীর মানুষের স্মরণশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে নাকি জানি না, তবে ধৈর্য্য যে কমে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। গত ১টি মাসের কথায় ধরুন না, অন্যগ্রহের ফুটবল খেলে যাচ্ছে যে দল গত ৪টি বছর ধরে তাদের গত ১ মাসের পারফরমেন্স দেখেই সবাই বলাবলি শুরু করলো ‘নাহ, শেষ। বার্সা যুগ শেষ’। এটাকে স্মরণশক্তির দূর্বলতা বলুন আর ধৈর্য্যের অভাবই বলুন একটা কিছুর অভাব যে আমাদের হচ্ছে সেটা আপনাকে মানতেই হবে। তবে কি আমাদের
বাপ-দাদাদের মুখে শুনে আর পেপার পত্রিকা পড়ে জেনেছি আগের দিনে আবাহনী মোহামেডানের খেলা হলে নাকি সারা দেশে ফুটবলের অন্তত কিছুও যারা জানে তারা নাকি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত। খেলার সপ্তাহখানেক আগে থেকে চায়ের টেবিলে, দোকানের বেঞ্চে, স্টেডিয়াম পাড়ায় চলত ম্যাচের গবেষনা আর ম্যাচের পর সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে চলত ম্যাচের পোস্টমর্টেম। এখনকার প্রজন্মের খুব কম ছেলেমেয়েই আছে যারা বাংলাদেশের ফুটবল তথা ঘরোয়া ফুটবলের কোন খোজখবর রাখে। জানি না সুদূর ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে কিনা যখন তরুন ছেলেমেয়েরা আদৌ বিশ্বাস করবে আমাদেরও একটা ফুটবল ঐতিহ্য ছিল এবং সালাহউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী, আসলাম, কায়সার হামিদ, সাব্বিররা একেকজন এমন সেলিব্রেটি ফুটবলার ছিলেন যাদের খেলা দেখতে তো বটেই প্র্যাকটিস দেখার জন্য পর্যন্ত মাঠে ভীড় জমত।
আমি ফুটবলবোদ্ধা নই। আমি খুব সাধারন একজন ফুটবলপ্রেমী। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেশের ফুটবলের নিয়মিত খোজখবর রাখার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয় আমাদের ফুটবল একটা গন্ডি থেকে কেন যেন বের হতে পারছে না। দশ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল এখন তার থেকে উন্নতি তো হয়নিই বরং আরো খারাপ হয়েছে। যদিও সেই ছোটবেলা থেকে হোমড়াচোমড়া কর্মকর্তাদের মুখে শুনে আসছি অচিরেই বাংলাদেশের ফুটবল এশীয় মানে পৌছাবে। আমি একজন খুব সাধারন দর্শক বা সমর্থক হিসেবে চিন্তা করি আমাদের ফুটবলের এই হাল কেন। খুব গভীর গবেষনায় না গিয়ে সাদামাটা কথায় আমি কিছু চিন্তাভাবনা তুলে ধরি। সচলায়তনে দেশের অনেক সমস্যা নিয়ে অনেক লেখা নিয়মিত আসে। সেই তুলনায় এই বিষয়টি সামান্য। তবে এটাও ঠিক যে খেলাধুলাই একমাত্র জিনিস যা আমাদের পুরো জাতিকে একসাথে হাসাতে পারে অথবা একসাথে কাঁদাতে পারে। আর আমাদের যে একটা ফুটবল ঐতিহ্য ছিল যা এখন মূমুর্ষ অবস্থায় আছে সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নাই।
খবরটা অনেক জায়গাতেই চাউর হয়ে গেছে--পেপ গোয়ার্দিওলা আর বার্সিলোনা ফুটবল দলের কোচ থাকছেননা। আর কিছুদিনের মধ্যেই এই মৌসুম শেষ হবে, আর তার সাথেই বিদায় নেবেন এই কোচ। বার্সা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তার মন ফেরানোর, তবে তার না থাকাটা এখন প্রায় শতভাগ নিশ্চিত।
প্রার্থনার শক্তি ও সামর্থে আমি মোটামুটি আস্থাশীল। আমার মনে আছে, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে এসে গোটা বাঙালীর সমস্ত আবেগ আর ভালোবাসা যেন কেন্দ্রীভূত হয়েছিলো ১১টি দামাল ছেলের মাঝে। নিজের অজান্তেই আমরা সবাই সেদিন এই ছেলেগুলোর জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। চোখের জলে হয়তো ভিজে গেছি আমরা, কিন্তু শেষ বলটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রার্থনা করে গেছি। বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্য কিংবা দেশীয় কোন ক্ল