বনানী ব্রিজের ওপরে বসে আছি৷
বসে আছি বলতে বাইকের পেছনে বসে আছি। হাতির ঝিল থেকে ১১ নাম্বার রোড পুরোটা জ্যাম। শালা তিনদিনের ছুটিতে পুরো ঢাকা শহর রাস্তায় নেমে গেছে নাকি!
বাইকার ব্যাটা উসখুস করছে। কর, আমার কী! জ্যাম কি আমি লাগাইসি!
ফুরফুরে বাতাস। ভালোই লাগছে। ভাবসিলাম আজকে সকাল সকাল বাসায় ফিরে একটা ঘুম দিব৷ কাল থেকে আবার রোজা, ভোররাতে উঠতে হবে৷
গেল ছাতার ঘুমটা।
তপন বাবু হালকা গড়নের ছোটোখাটো একজন লোক। চেহারাটা বেশ ধাঁরালো, বিশেষ করে নাকটা। তাঁর চোখ দুটি একেবারে অমায়িক, সবসময় হাসিহাসি একটা ভাব। তাঁকে কেউ কখনো খুব রাগতে দেখেছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বেশ রসিক লোকও বটে, তা নাহলে কি আর অফিসে নিজের বাড়ন্ত ভুঁড়ি নিয়ে সহকর্মীদের সাথে নিজেই হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠেন?
মাঝ-দুপুরে এক অতি গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একা যাচ্ছিল নয়ন। বেলা যে মাঝ-দুপুর তা কে বলবে? বড় বড় ঘন গাছের কারণে পুরো জঙ্গলে গা ছমছমে অন্ধকার। যেন সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। দুরু দুরু ভয় আর শঙ্কা নিয়ে নয়ন জোর কদমে হাঁটতে থাকে। আর মনে মনে নিজেকে সাহস দেয় – ভূত-প্রেত বলতে দুনিয়ায় কিছু নাই। সব দুর্বল মনের কল্পনা।
আগ্নেয়গিরির মতো ধীরালয়ে মুখ থেকে এক রাশ ধোয়া উদগিরণ করে গম্ভীর গলায় আব্দুর রাজ্জাক বললেন,"আরেকটা কথা রাসেল... ।"
টাকার ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল রাসেল। ঘুরে দাঁড়িয়ে সে বলল,"জ্বি, স্যার।"
ডেস্কের উপর কাঁচের গ্লাসে গলে যাওয়া বরফে মিলেমিশে হুইস্কির রঙ হয়েছে হাল্কা বাদামি। তাতে হাতে ধরা চুরুট খানা ডুবিয়ে দিলেন আব্দুর রাজ্জাক। ছ্যাঁত করে শব্দ হলো।
"আমি একটা খেলা খেলছি।" বললেন আব্দুর রাজ্জাক।
বড়শি ফেলে বসে আছে লোকটি। নদীর পরিষ্কার পানিতে মাছখানা দেখা যাচ্ছে। বড় এক সরপুটি। লোকটার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। মনেমনে সে বলে,"ধরা তোকে দিতেই হবে।"
এক জোড়া নীল চোখ সমুদ্রের বিশাল ঢেউ তুলে সুনামির মতো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘটনার শুরু দু'মাস আগে।
রাত এগারোটায় আমার কাজ শেষ হয়। তার দশ মিনিট পরই আমার রুটের বাস এসে থামে। আমার কাজ থেকে ঠিক দুই স্টপ পরেই মেয়েটিও উঠে নিয়ম করে।
তার মাথায় দীঘল সোনালী চুল। তার অদ্ভুত কমনীয় ত্বকে ঝর্ণার পানির সতেজতা। সে যখন হেটে এসে আমার সামনের সিটটায় বসে তখন তার সোনালী চুলগুলো আরব দেশীয় ঘোড়ার কেশরের মত ঢেউ খেলতে থাকে। আর তার সুগভীর অয়াত নীল চোখে মহাশুন্যের কালো গহ্বরের গভীরতা। কে জানে সেখানে হারিয়ে গেছে কত পুরুষ!
নদীতে নতুন পানি এসেছে। বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলে সে পানি। তার মধ্য দিয়ে ভেসে যায় কত কি? জমাট বাধা খড়ের টুকরো। বিচ্ছিন্ন কচুরিপানা। নোংরা পলিথিনের ব্যাগ। গাছের গুড়ি। আর- আর সে।
সে ভেসে যায়। নাল্লাপাড়ার বাজারের ব্রিজের নীচ দিয়ে। মসৃণ গতিতে। পানিতে মাথা ডুবিয়ে মাছ খোজা কোন শিকারী পানকৌড়ির মতো।
১
অধ্যাপক লতিফ সাহেব চায়ের দোকানে বসে আছেন। গলির সেলুনে সিরিয়াল দিয়ে এসে বেশ কিছুক্ষণ হল এখানে বসেছেন। শেভ করে বাসায় ফিরবেন। এরই মধ্যে পাশের বাসার জামান সাহেব এশার নামাজ শেষ করে এসে তার সাথে যোগ দিলেন। এক গলিতে থাকলেও তাদের মাঝে যে খুব কথা হয়, তেমন নয়। এটা-সেটা নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় ছেলেমেয়ে নিয়ে কথা উঠল।
পরী রাজ্যের মিস ওয়ার্ল্ড হাফসা বানু একটু জিরিয়ে নেবার জন্য বটতলা গ্রামের বটগাছের নীচে বসে নিজের পাখা চুল্কাচ্ছিল। তার যে কি রুপের বাহার তা বলে বোঝাবার নয়। রুপ হবেইবা না কেন? সেতো আর যেনতেন পরী নয়। পরীদের মিস ওয়ার্ল্ড বলে কথা।
১
অণুগল্প কেন লিখি প্রশ্নটি করার আগে সম্ভবত যে প্রশ্নটি করা উচিত তা হলো আমি কেন লিখি?
আমি কেন লিখি? বিশেষ কোন লাভ-ক্ষতির জন্য আমি লেখালেখি করিনা। আমি লিখি কারণ এতে আমার মনের শান্তি হয়। আনন্দ লাগে। লেখার পর মনে হয় ভাল কিছু একটা করলাম। অনেক কিছু নিয়েইতো লেখা যায়। তবে কেন অণুগল্প লেখা?
শ্রমসাধ্য কাজের ফল প্রায় সময়ই বেশ তুষ্টিকর হয়। অণুগল্প লেখা শ্রমসাধ্য ব্যাপার। আপনার ভ্রু কুঁচকে ওঠার আগেই বলে রাখি- অণুগল্প আকারে ছোট বলেই যে লেখা সহজ তা নয়।