অন্তর্বর্তী অথবা অন্তরবর্তী
মুহম্মদ জুবায়ের
১.
বাবা অনেকদিন আসো না, একবার এসে ঘুরে যাও। কবে আসবে?
দুই পুত্রকন্যা দূরদেশ থেকে নিয়মিত ফোন করে, তাদের মা চলে যাওয়ার পর আজকাল আরো বেশি করে। তখন অন্য যা কিছু বিষয় নিয়ে কথা হোক, অবধারিতভাবে আবদুর রবের কাছে এই অনুরোধ আসে, বাবা অনেকদিন আসো না, একবার এসে ঘুরে যাও।
অনেকদিন দেখা নেই। ঠিক কতোদিন হলে অনেকদিন হয়? শেষবার দেখা যখন মিতা আর মিথুন এসেছ ...
আমি সচল পড়ি অনেকদিন ধরেই। প্রথম প্রথম যাঁদের লেখা পড়তে আসতাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুহম্মদ জুবায়ের। উনার লেখা পড়েই জেনেছি যে উনি ডালাসে থাকেন। আমার শহর অস্টিন থেকে ডালাস খুব দূরে নয়, ওখানে বন্ধুবান্ধব আছে বিস্তর, মাঝেসাঝে যাওয়াও পড়ে। জুবায়ের ভাইয়ের মেয়ে ডোরা অস্টিনের ইউনিভার্সিটিতে (যেটা ইউটি অস্টিন বলে সবাই) পড়তে আসবে, জুবায়ের ভাই এটা নিয়ে একটা লেখা ল...
[পূর্বকথা: জুবায়ের ভাইকে আমি চিনেছি সচলে এসে। আমার সচলে আসার দিন যেহেতু খুব বেশি নয় তাই তাঁকে চেনার দিনও স্বল্প। সম্প্রতি তাঁর ল্যাপটপে পাওয়া লেখাটি পড়ে জানতে পারি তাঁর কি হয়েছিল। কেন কিভাবে কোন রোগ হয় সেটি জানার আগ্রহ আমার কেন জানি একটু বেশি বেশি। সেই আগ্রহ থেকেই জানার চেষ্টা করেছিলাম। যে কেউ চেষ্টা করলেই এই লেখাটির চাইতে অনেক বেশিই জানতে পারেন। তারপরও আমি যা জেনেছি তার সারমর...
ডোরা তার বাবাকে নিয়ে একটা লেখা লিখেছে। স্বচ্ছন্দে বাংলা বলতে পারলেও বাংলা লেখাটা সেভাবে শিখে ওঠা হয়নি বলে ওকে লিখতে হয়েছে ইংরেজিতে।
বাংলা ব্লগ সচলায়তনে ইংরেজি লেখা প্রকাশ করছি বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে।
Happiness is a state of mind
Dora Zubair
9-23-09
When I was asked to write something about the death of my father, I didn't know where to begin. It has been a year since he died and to say things have gotten easier would be untrue. In fact, I'm finding that the longer it gets, the more painful the reality of the situation becomes.
There are many things that I've been able to do...
(মুহম্মদ জুবায়েরের মৃত্যুর পর তাঁর ল্যাপটপে এই লেখাটি পাওয়া যায়।)
রোগের নাম Pulmonary Fibrosis। ফুসফুসের ক্ষত, যার প্রতিক্রিয়ায় টিস্যুগুলি ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। লক্ষণগুলি সবই আছে পুরোমাত্রায় – শ্বাসকষ্ট, দমকা কাশি এবং ক্লান্তিবোধ। এক্সরে এবং সিটি-স্ক্যান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই আমার রোগ।
উপশম আবিষ্কৃত হয়নি, যেহেতু আজও পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি মানুষ কেন এই রোগে ...
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
১০ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮
আজ অর্ণবের জন্মদিন। ওকে আগেই বোঝানো হয়েছে, এবার ওর জন্মদিনে কিছু করা হবে না। বাবা বাসায় আসবার পর এবং আপু অস্টিন থেকে ফিরবার পর ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হবে। অর্ণব তখন খুব সহজেই রাজি হয়েছিলো।
কিন্ত শিমুল ফোন করে জানালো, আজ সকালে ও খুব মন খারাপ করে চোখ মুছত...
৩১ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৮
আমরা প্রতিদিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খতমে খাজাগান পড়তাম। মাকসুদরা এটা খুব বিশ্বাস করে, ও-ই উদ্যোগ নিতো। রোজার মাস বলেই হয়তো সবাই ওর জন্য তারাবির পরে দোয়া করতো। শুধু ডালাসে নয়, যেখানে যত আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব আছে, সবাই ওর জন্য দোয়া করতো। প্রতিদিনই ও একটু একটু করে ইমপ্রু...
৩০শে আগস্ট, ২০০৮
ভোর সাড়ে তিনটা। ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
“হ্যালো?”
“মিসেস জুবায়ের?”
“জ্বী।”
“ইয়োর হাজব্যান্ড ইজ নট ডুয়িং ওয়েল। তার অক্সিজেন লেভেল নেমে যাচ্ছে এবং উই হ্যাভ টু পুট হিম ইনটু আ মেশিন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, হাসপাতালে আসুন।”
ডোর ম্যাটের নীচে চাবি রেখে, ঘুমন্ত অর্ণবকে খালি বাসায় একা ফেলে চলে গেলাম। ICU-এ পৌঁছে দেখি, ওর রুমে ডাক...
গত বছর এই মাসে জুবায়ের মারা যায়। আমি তার স্ত্রী। তার শেষ দিনগুলোর কথা ঘোরের বশে লিখতে শুরু করেছিলাম। ঠিক ডায়রি নয়, স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে পরে লেখা।
জুবায়ের ছিলো সম্পূর্ণ সচলঅন্তপ্রাণ। সচলায়তনের কাছ থেকেও সে পেয়েছে অকুণ্ঠ ভালবাসা আর শ্রদ্ধা। আর তাই একান্ত ব্যক্তিগত এই রচনাটি এখানে প্রকাশ করাটাই সমীচীন মনে হলো।
কিছু ইংরেজি শব্দ আর বাক্য লেখায় ব্যবহার করেছি – কিছু সংলাপে এবং...
(জানিনা, এই লেখাটি এখন সচলায়তনে পোষ্ট করা ঠিক হচ্ছে কিনা – মাঝে মাঝে পুরনো লিখা খুঁজতে গিয়ে, এমন সব অসমাপ্ত/অপ্রকাশিত লেখা পেয়ে যাই, ক্ষণিকের জন্যে হলেও থমকে দাঁড়াই । এই লেখাটিও তেমনি, লিখেছিলাম, জুবায়ের সাহেব প্রথম যখন হসপিটেলে যান, তখন –যদিও আর পোষ্ট করা হয়নি । জুবায়ের সাহেব চলে গেছেন, দিন থেমে থাকেনি, কারো জন্যই থেমে থাকেনা - তাঁর ছেলেমেয়েদের দিনও, যেকরেই হোক, চলে তো যাচ্ছেই ! আমার ...