মানুষ কেন বই পড়ে? জ্ঞানী হবার জন্য নাকি স্রেফ আনন্দের জন্য? অন্যদের কথা জানি না, আমি পড়ি আনন্দের জন্য। সেই ফাঁকে যদি দুয়েকটা জ্ঞানার্জনের পূণ্য অর্জিত হয় সেটা বাড়তি লাভ।
তো, এই পড়াশোনা ব্যাপারটা জ্ঞানার্জনের পাশপাশি মানুষের কল্পনাশক্তির প্রসারণ ঘটায় ব্যাপক ভাবে। আমি নিজে স্কুল বয়স থেকে আজ অবধি হাজার হাজার হাবিজাবি বই গিলে নিজের কল্পনাশক্তির বড়সড় এক পর্বত দাঁড় করিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জীবনে আর নতুন কিছু পড়ার নাই। কিন্তু কয়েকদিন আগে শেষ করা একটি অভিনব পুস্তকের কাছে আমার সমস্ত কল্পনাশক্তির পর্বতের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। আরেকটুর জন্য ধ্বসে পড়েনি।
মজার ব্যাপার হলো, আমি আগ থেকেই জানতাম আমি একটি কল্পকাহিনী পড়তে যাচ্ছি যার সাথে বাস্তবের কোন যোগসূত্র নেই। তবু এই হোঁচট খাবার কারণ কী?
জানতে হলে, পড়তে হবে।
কোন কিছু না জেনেই উপন্যাসটির দরোজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেছিলাম। ভেবেছিলাম কয়েক পাতা উল্টে রেখে দেবো। পরে সময় নিয়ে পড়বো। এই লেখকের একটি ছোটগল্প ছাড়া আর কিছুই পড়িনি আগে। কিন্তু উপন্যাসটির প্রথম পাতা শেষ করার পর টের পেলাম ফেলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আমাকে এমন একটা জগতে নিয়ে যাচ্ছে যে জগতের ভেতরটা দেখার আগ্রহ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সহজ সাবলীল ভাষা এবং ঘটনার ঘনঘটা দুটোর যোগফল আমাকে বইটার প্রথম অধ্যায়ের শেষে নিয়ে গেল। একই অবস্থা পরের অধ্যায়েও। কয়েকদিন টানা পড়ে শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে গেলাম। পড়া শেষ করে আবিষ্কার করলাম চেনা জগতের মধ্যে অচেনা এক পৃথিবীকে।
বইটা শেষ করার পর পপীপ আমাকে বলল, 'কী-ই? কেমন মনে হয়?'
আমি হাসি। জোরালো হাসি নয়, হালকা হাসি।
পপীপ জোর করে কথা আদায় করতে চায়। 'হাসলে হবে না, তোমাকে বলতে হবে।'
তাঁর অনন্ত যাত্রা আছে। শুরুও নেই--শেষও নেই এই নিঃসঙ্গ যাত্রার--নির্বাসন কালের।
একটি গাড়ি বহর চলেছে। মাটি নিয়ে দুনিয়াদারি নেই। পদ্মাতীরের কাটালিয়া গ্রাম থেকে পোখরা। ক্যারাভন চলতে থাকে--বিলুটি গোবিন্দপুর, নবাবগঞ্জ, কুতুবগঞ্জ, খয়েরডাঙা, মৌলাহাট।
সাতখানা গাড়িতে এই ঠাই বদল। স্ত্রী সাঈদা, অশক্ত মা, দুটো ছেলে--মেঝটি প্রতিবন্দি মণি আর ছোটটি শফি। আরও আছে বাজা গরু মুন্নি, ধাড়ি ছাগল বাচ...
০১.
৯৭ কি ৯৮ সাল। হাতে কী কারণে যেন অঢেল সময় ছিল। হন্য হয়ে খুঁজতে ছিলাম মাসুদ রানা। মাঠে, আমাদের গায়ের যে লাইব্রেরিটি আছে, সেখানকার রানা সিরিজের সব বই পড়া শেষ। আর অন্যান্য পদের প্রায় সবগুলো বই-ই পড়া হয়ে গেছে। এমনই সময়ে কী করে যেন অন্যদিনের ৯৭ সালের ঈদসংখ্যা আমার হাতে এসে পড়ে। আমি গোগ্রাসে গিলি হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস। সে উপন্যাসের নাম মনে নাই আজ। এদের সাথে আরো পড়ি ...
বইয়ের প্রচ্ছদ
বইটি পড়ে ছিল দেরাজে। কিছুটা অযত্নে। কবিতায় তেমন বুঝি না বলে হাত বাড়িয়ে তা চেখে দেখা হয়নি। বইটির স্রষ্টা দেয়ার সময় বলেছিলেন, একটু পড়ে জানায়েন কেমন লাগলো। বইয়ের স্রষ্টার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়, নানা বিষয় নিয়ে ভাবনার লেনদেন হয়। কিন্তু তার বই নিয়ে বলা হয় না কিছু। কারণ ওই যে ভয়, কবিতা না বোঝার। তাই পড়া হয়নি। এই সেদিন কী মনে করে ধুলির তরঙ্গ মুছে ফেলে হাতে নিই একবার। পাতা ...