সম্ভবত ১৯৭১ সালের পর বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী-স্রোত দেখছে পৃথিবীর মানুষ। এই হতভাগ্য মানুষগুলোর প্রায় সবাই মধ্যপ্রাচ্যের ইয়াজিদী, কুর্দী, বাঙালি, আরবীয়, শিয়া, সুন্নী আরও কত সম্প্রদায়ের মুসলিম, অমুসলিম; এক কথায় আদম সন্তান। আরবের রাজনীতি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, ইয়েমেনসহ সবদেশকে তছনছ করে দিয়
ঠিক আগের মাসে স্কুটি কিনেছিলাম। বেশ বড় অংকের খরচ গেছে তাতে। ইউরোপভ্রমণের সম্ভাবনা ঘুণাক্ষরেও জানা থাকলে এই খরচটা করা হতো না। ভ্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি খরচের ভাবনাটাও তাই বেশ জেঁকে বসল। সেই সাথে রয়েছে ছুটির দুশ্চিন্তা। অফিসে জনবল কম। চাইলেও ছুটি পাওয়া যায় না প্রায়ই। তার উপর প্রায় কাছাকাছি সময়ে আমার বসও যাচ্ছেন ইউরোপে। পরিস্থিতি দেখে তিনি আমাকে আগে ছুটির দরখাস্ত করতে বললেন। উনার ছুটির গ্যাঁড়াকলে য
মে মাস। ব্যক্তিগত, সামাজিক, পেশাগত অন্তর্দ্বন্দ্বের অথৈ সময় চলছে। কোনো এক সকালে হঠাৎ এসএমএস- "তোর ইমেইল আইডি দে। এক্ষুনি।"
দিলাম। দিয়ে বসে থেকে কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম- "তারপর?"
জানলাম জার্মান দূতাবাস থেকে ব্লগার খোঁজা হচ্ছে। তারা কিছু নাম চেয়েছে। বন্ধুটি আমার নাম সেখানে মনোনয়নের জন্য দিয়েছে।
কেন? কীসের জন্য?
উত্তর সাগর থেকে ভেসে আসা নোনা বাতাস শ্যাওলা ধরা জাহাজের কাঠের পাটাতনে মিশে এক ধরনের স্যাতসেতে ঘ্রান তৈরী করে। কাঠের জাহাজ কালের কাছে বিলীন হয়েছে। কিন্তু সমুদ্রচারী নীর্ভিক এক নাবিক জাতির জীবনসংগ্রামের এই ঘ্রান এখনও পাওয়া যায় সেই অঞ্চলে। এই ঘ্রান তারা জাহাজে করে বয়ে নিয়ে গিয়েছে আটলান্টিকের পশ্চিম প্রান্ত ধরে সোজা দক্ষিন দিকে। কাঠের জাহাজে ভেসে আরো পূব দিকের ভারত মহাসাগর ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয়
বাঙ্গালি বিদেশ যাওয়ার সুযোগ খুব বেশি পায় না। যারা পায় তাদের বৃহদাংশের (বাঙালি শ্রমিক গোষ্ঠী) মনের জমে থাকা কথাগুলো কেউ শোনে না, শুনতে চায় না, শুনতে ভালোও না। যাদের কথা/ অভিজ্ঞতা আমরা শুনি, তারা সমাজের সৌভাগ্যবান অংশটুকুর প্রতিনিধিত্ব করে। আরেকদলের মুখে বিদেশের ভাল ভাল কথা খুব শুনি, তারা হচ্ছে আদমবেপারি।
এদের দুইদলের কাছেই, বৈদেশ হলো স্বর্গ। সেখানে মানুষের পকেট চুইয়ে চুইয়ে টাকা পরে, রাস্তা দিয়ে দুধের (আর মদের) নহর বহে, আকাশ হতে স্বর্ণমুদ্রা ঝরে! এরা বিদেশের গুণগান গাইতে গাইতে মুখের ফেনা তুলে ফেলে।
তো বিদেশ আসলে কেমন? বেশিদিন হলো আমি আসিনি বাইরে, যা দেখেছি, তা দেখেই এ লেখার চেষ্টা। অবশ্যই বিদেশ ভালো, অনেক অনেক ভালো। কিন্তু বিদেশে কি ট্রেন-বাস লেট করে না, দুর্ঘটনা হয় না, মারামারি হয় না, রাস্তায় জ্যাম পরে না? সবকিছুই কি স্বপ্নের মত?
ভদ্র সমাজের সুশীলেরা বিদেশে আসে, বিদেশীদের কাছে দেশের বদনাম তো করেই, দেশে ফিরে যেয়েও বলতে থাকলাম, বিদেশে কি দেখে আসলাম! আর দেশে কি অবস্থা, ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা! এই দেশে মানুষ থাকতে পারে?
বছর দুই আগে একটা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ সিরিজ লিখেছিলাম। তিক্ততা দিয়ে শুরু, ভালোর পূর্বাভাস দিয়ে শেষ। সেই ভালোটা পর্যায়ক্রমে ভালোলাগা এবং পরে কিভাবে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিলো, সেই গল্প না বললে জায়গাটার ওপর অবিচার করা হবে।
ছোটবেলার থেকে আমার প্রাগে যাওয়ার শখ। লন্ডন মিউনিখ বার্লিন নিউ ইয়র্ক সিডনি আমাকে টানে না। আমি যেতে চাই প্যারিস, ভিয়েনা, প্রাগ, বুদাপেস্ট, যে শহর ঝকঝকে মসৃণ নয়, কিন্তু প্রতিটা পাথরে একটা করে গল্প আছে। ইউরোপে আসার পরেই, আমার কাজ হলো, কিভাবে কত বেশি জায়গায় ঘোরা যায়। আমার বন্ধুভাগ্য সুপ্রসন্ন, ব্রাজিলের এক ছেলের সাত্থে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো, যে আমার মতই কাধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে যায়, একটা পাউরুটি নিয়ে
সচলে ভ্রমণ কিংবা ছবি ব্লগ দেয়া একটা লজ্জ্বার বিষয় হয়ে গেছে আমার মত কিছু “আম” পাবলিকের জন্য। চোখ ধাঁধানো সব ছবি কিংবা দুর্ধর্ষ দুর্গম লোমহর্ষক রোমাঞ্চকর যাত্রা কাহিনী এখন ডালভাত। এভারেস্টে না উঠেও মহামতি তারেকাণু নিজেকে নিয়ে গেছেন এভারেস্ট উচ্চতায়, বাকিরাও সেখানে পৌঁছুবার পথ ধরেছেন।
মাত্র ছয়দিনের ছুটি, চোখের নিমেষে ফুরিয়ে গেল। ২২শে মে ঢাকায় গিয়েছিলাম, ২৮শে মে লুজানে চলে এলাম। ইয়ান চলে গেছে, কাজেই বাসা খালি। আমার রুমের দরজা অর্ধেক খোলা যেত কেবল, আগেই বলেছি। গভীর রাত, ক্লান্ত শরীরে সেখানেই শুয়ে পড়লাম তিনজনে, বাসা ঠিকঠাক পরে করা যাবে।