পরীক্ষা নিয়ে আমি প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখি। এটা যে আমার একার সমস্যা তা নয় বোধহয়, আমার জানামতে আরও অনেকেই দেখেন, ছাত্রজীবনের গণ্ডি তারাও বহু আগেই পেরিয়ে এসেছেন। অথচ আমার এরকম হবার কথা নয়। পরীক্ষার ভয়কে জয় করা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল ও কলেজের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, অনেক আগেই। ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবার আগের এগারো সপ্তাহে আমাদেরকে এগারোটি মূল্যায়ন পরীক্ষায
১৯৯৭ সালের শুরুর দিকের কথা। বুয়েটের ক্লাস শুরু হয়েছে মাস দুয়েক হল। প্রথম সেমিস্টারেই পাঁচ টা কোর্স আর তিনটা সেশানাল নিয়ে অবস্থা কেরসিন... বিশেষ করে মেকানিক্স কোর্স নিয়ে তো রীতিমত হিমশিম অবস্থা। এর মধ্যে শুনলাম ইউকসু ইলেকশান হবে। বেশ একটা থ্রিল অনুভব করলাম। ডাকসু ইলেকশানের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি, ডাকসু নেতাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা পেপারে পড়েছি, বিবিসি বাংলায় শুনেছি। তো আমি একে ওকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম জানার জন্যে যে কে কোন দল থেকে ইলেকশান করছে, কে কেমন ইত্যাদি। জানতে পারলাম ইউকসু ইলেকশান হয় প্যানেল ধরে, সাতজনের একেকটা প্যানেল...ছাত্র দল একটা প্যানেল দেয়, ছাত্র লীগ একটা প্যানেল দেয়, ইউনিয়ন একটা প্যানেল দেয় ... এরকম। প্যানেল গুলো পরিচিত হয় ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থীর নামে। যাই হোক ধীরে ধীরে প্যানেল ঘোষণা করা হল প্রায় সব দলের। তারেক-কামাল-কল্লোল প্যানেল হল ছাত্রদলের... জাহিদ-খালেদ-তুহিন হল ছাত্রলীগের প্যানেল। অন্য আরও প্যানেল বোধহয় ছিল কিন্তু আমার মনে নাই। প্রচারনা শুরু হল। সারা বুয়েট ছেয়ে গেল পোস্টারে পোস্টারে। এরকম একটা পোস্টারে একটা চেনা মুখ দেখে তো আমি অবাক...... আনোয়ার জাহিদ ভাই। জাহিদ-খালেদ-তুহিন প্যানেলের জাহিদ যে আনোয়ার জাহিদ তা দেখে তো আমি অবাক। বছর খানেক আগের বুয়েটে ভর্তির কোচিং সুত্রে আনোয়ার জাহিদ আমাদের অতি প্রিয় মানুষ। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তখন পর্যন্ত ১০০% স্কোর করা একমাত্র পরীক্ষার্থী উনি। সান রাইজ কোচিং সেন্টারে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে আমাদের নিয়মিত ক্লাস নিতেন ইনি। আনোয়ার জাহিদ আমাদের ভোটে সেরা টিউটরও নির্বাচিত হয়েছিলেন সান রাইজের। আমি তো মহা খুশী এমন একজন গুনী মানুষ ইলেকশান লড়ছেন দেখে। একটু আশা জাগল মনে যে না ছাত্র রাজনীতি মানেই নষ্ট ছেলে আর ক্যাডারদের তাণ্ডব না। আমরা যারা লেভেল ১ টার্ম ১ এর নতুন ছাত্র ছাত্রী তারা তো প্রায় নিঃসন্দেহ যে জাহিদ ভাই ই জিতে যাচ্ছেন।
২০১০ সাল। ’০৯ ব্যাচের ক্লাস শুরুর এক কি দুই সপ্তাহ আগের কথা। বিকালে জনাকয়েক বন্ধু ক্যাম্পাসের হাফওয়ালে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি একটা কালো, রোগাপটকা, লম্বাচুলো ছেলে মাজা থেকে প্যান্ট খসে পড়ে পড়ে অবস্থায় ড্যাংড্যাং করে হেঁটে যাচ্ছে। তখন ছিল র্যাগের মৌসুম। বন্ধুদের কেউ একজন চিনত যে ও নতুন ব্যাচের। আর যায় কই, প্রথমে ক্যাম্পাসে এবং পরে হলে এনে ডাইনিংয়ের আগে পর্যন্ত টানা ৩-৪ ঘণ্টা র্যাগ দেয়া হল ওকে। দীপের সাথে সেই প্রথম পরিচয়।
বিগত কয়েকবছরের ধারাবাহিকতায় এইবারের র্যাগ প্রোগ্রামটিও বিশৃংখল ঘটনা থেকে মুক্ত থাকতে পারল না। র্যাগ কনসার্টের পূর্বে প্রানজুড়ানো বৃষ্টিতে সবার যেখানে মাথা শীতল হওয়ার কথা, সেখানে ঝামেলা পাকিয়ে বসল প্রথমবর্ষের একছাত্র। ইঁচড়েপাকা জুনিয়র প্রপোজ করে বসল র্যাগব্যাচের এক ছাত্রীকে। তাও আবার একা নয়, যৌথভাবে। ছাত্রীর ভাষায় এবং অভিযুক্তদের পরবর্তী স্বীকারোক্তিতে যেটা ইভটিজিং হিসেবে গণ্য হয়েছে। এই ঘটনারই আরো বিস্তারিতে যাবার আগে আলোচনার সুবিধার্থে কিছু বিষয় অবতারণার প্রয়াস পাচ্ছি।
বুয়েটে এখন ১৪তম সপ্তাহের ক্লাস চলছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস চলবে আরো এক সপ্তাহ। আর নতুন ঘোষণা বলছে, আরো দুই সপ্তাহ ক্লাস বৃদ্ধির কথা। এই নিয়েই গত বেশ কয়েকদিন ধরে পরষ্পরবিরোধী অবস্থান বিরাজ করছে বুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। একদিকে শিক্ষার্থীরা চায় না আর ক্লাস বাড়ুক, অন্যদিকে শিক্ষকরা ক্লাস বৃদ্ধির দাবিতে অনড়। এই নিয়ে কয়েক দফার বৈঠক আর আলোচনাতেও কোনো ফল না আসায় উপাচার্যের প্রস্তাব দুপক্ষের দাবির মাঝামাঝি- এক সপ্তাহ ক্লাস বৃদ্ধি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এর আগে হরতালের কারণে তের সপ্তাহের টার্ম দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে পনের সপ্তাহ করা মেনে নিলেও এবার আর এক সপ্তাহও ক্লাস না বাড়ানোর দাবিতে অনড়।
বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে বুয়েটের সাম্প্রতিক আন্দোলনে বুয়েটের মর্যাদা রক্ষায় সবার একাত্মতা দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। দলমত নির্বিশেষে কেমন করে সবাই একসাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, সেটা দেখে গর্বিত হয়েছিলাম।
বুয়েটে পড়ি। আমাদের ডিজিটাল মুখপাত্র পলাশীর আলুর সুবাদে ছাত্রলীগকে আমরা মামাবাহিনী হিসেবে চিনি। হলে থাকার কারণে মামাবাহিনীর দু-একজন মামার সাথে আমার অল্পস্বল্প খাতির আছে। তাদের সাথে পথে-ঘাটে-মাঠে মাঝে-সাজে দেখা হলে কুশল বিনিময় হয়।
যে লেখাটা লিখতে যাচ্ছি, সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত অভিমত। এর সাথে বুয়েট কর্তৃপক্ষ, বুয়েট শিক্ষক সমিতি, বা আমার নিজ বিভাগের কোনও সংশ্লিষ্টতা নাই।
বাংলাদেশের ভাল ছাত্ররা কি বিদেশে চলে যাচ্ছে? এই নিয়ে আমি আগে বেশ কিছু লেখা পড়েছি। সচলায়তনের চটজলদি প্রোফাইল দেখলে ঘটনাটা সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায়। মোটামুটি বুয়েটিয়ান বলে যে ক'জনকে চিনি তারা সকলেই বিদেশে অবস্থানরত - হিমু জার্মানীতে, জাহিদ কানাডায় বা মুর্শেদ আমেরিকায়। দিনকয়েক আগে আমি নিজের লিঙ্কড-ইন প্রোফাইল আপডেট করার সময় দেখলাম লিঙ্কডইন সুন্দর পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পিছু। লিঙ্কডইনে আমার বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত পরিসংখ্যান লিখে নিয়ে বুয়েট-সংক্রান্ত হিসাব শুরু করলাম। যা হিসাব পেলাম তা নিয়েই পোস্ট।
বার বার ফোন বাজছে, কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না।
অবশেষে ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল।
"হ্যালো।"
"গৌতম'দা, আজকে কিন্তু আপনাকে মারতে পারে ওরা। তাড়াতাড়ি সরে পড়েন।হলে থাকবেন না।"
"কি করবে ওরা?করুক। আমি এখন ডাইনিং এ। খাওয়ার পরে কথা বলি।"
গৌতম খেতে বসে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই___
"বাঁচাও, আমাকে মেরে ফেললো ।"