[ ভাষাশহিদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই এই নির্মল ভোরে আমাদের বাঙালি মন গুমড়ে ওঠে নিবিড় শোকের ছায়ায়। আমরা শ্রদ্ধায় স্মরণ করি, স্মৃতি-তর্পণ করি ভাষা শহিদদের প্রতি। স্মৃতির মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা জানাই নিজের নিজের মতো করে। এই শ্রদ্ধার রূপ কেমন? আজ থেকে তেত্রিশ বছর আগের উদ্ভিন্ন তারুণ্যে সেই শ্রদ্ধার রূপটুকু গাথা ছিলো অনেক বেশি কাচা আবেগের আতিশয্যে হয়তো। তবুও সেই আবেগ যতো কাঁচা বা তরলই হোক, তখনও হয়তো এতোটা কৃত্রিমতা আমাদেরকে আক্রান্ত করতে পারেনি। কবিতা প্রয়াসের নামে এই ছোট্ট কাঁচা পঙক্তিই তার নমুনা হয়তো !]
ভ্যাংকুভারে আসার পর এখানের এক একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে যেয়েই প্রথম জানতে পারি যে রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম নামে নতুন প্রজন্মের যে দুইজন ভাষা সৈনিকের প্রশংসনীয় উদ্যোগে আমাদের 'শহীদ দিবস' 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তারা এখন এখানেই থাকেন। তখন থেকেই ব্লগের জন্য তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার একটি সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। মুস্তাফিজ ভাইরা ভ্যাংকুভারে চলে আসার পর আমাদের নানা ফর্মে
শৈশবের সব স্মৃতিই মধুর তবুও তার মধ্যে আলাদা করে ভাবতে গেলে মনে পড়ে যায় প্রথম প্রভাত ফেরীতে যাবার ভোর বেলাটি। তখন বয়স ঠিক কত ছিল আজ আর মনে নাই, শুধু মনে আছে সেদিন রাত থাকতেই ছোট চাচা ঘুম থেকে টেনে তুলেছিলেন। ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে বলেছিলাম এখনও তো রাত। সেদিন বেশ ঠাণ্ডা ছিল রাজশাহীতে, ঘুম ভাঙ্গার পর লাল লাল ফুল তোলা ফ্লানেলের পোশাক পরে চাচার এক হাত ধরে বাইরে আসা। অন্য হাতে আগের সন্ধ্যায় চাচার সাথে শিরইল স্কুলে গিয়ে তোলা ফুল।
দেশ, খুঁটি, মাটি। খুব অদ্ভুত রকম শক্তিশালী এক ধারনা। দেশ ছেড়ে দূরে সরে যাওয়া যায়, দেশের সাথে সকল সংস্রব ত্যাগ করা যায়, শুধু যায় না দেশের সাথে জড়িয়ে থাকা অস্তিত্বটুকু অস্বীকার করা। যত দূর পথ হাঁটি না কেন, যত উচ্চতায় আরোহণ করি না কেন, শিকড় তো আমাদের ছোট্ট দেশেই পড়ে আছে। বিদেশে এসে এই বোধটুকু প্রায় সবার মাঝেই অনেক গভীর হয়। বিশেষ করে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়গুলো এলে।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত কবিয়াল রমেশ শীলের কথা অনেকেই হয়ত জানেন। আঠেরোশ শতকে জন্ম নেয়া এই স্বভাব-কবি অজস্র গানের জন্ম দিয়েছেন। মাইজভান্ডারির গান তার হাত ধরে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শুধু কি তাই? তদানিন্তন সমাজ-ব্যবস্থা, গ্রাম-বাংলার রূপ-বৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক সঙ্কট হতে শুরু করে স্বদেশী আন্দোলন, আমাদের ভাষা আন্দোলন সবকিছুই তার কাব্যে গানে স্থান পেয়েছিল।
একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ নামটি প্রায় সবারই কমবেশি জানা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ঢাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষনের খবর শুনে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে বসে কবিতাটি রচনা করেন ভাষাসৈনিক কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী। একুশের এই কবিতার সাথে মিশে আছে অনেক আত্মত্যাগের ইতিহাস। আসুন, ফিরে ...