রাত অনেক। ওতাকু বাড়ি ফিরছিলো। কিয়োতো'য়, রাস্তার এক পাশে তার বাড়ি। এখনো অনেক দূরের পথ। সারাটা শহর কবরের মত নিশ্চুপ হয়ে আছে।
কিইয়ো কি এখনো অপেক্ষা করে আছে বাড়িতে?
ঝড় থেমে গিয়েছিল পরদিন সকালেই। সূর্য ওঠার কিছুক্ষন পরেই ফেরীর মাঝি যখন ঘাটে আসলো, দেখল জ্ঞানহীন মিনোকিচিকে.. পড়ে আছে মৃত মোসাকুর পাশে। তাকে বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছিল আরো অনেকদিন। সে রাতের ঠান্ডায় বেশ কাবু হয়ে গিয়েছিল সে। মোসাকুর মৃত্যুতে অনেক ভয় পেয়েছিল। কিন্তু সে কাউকেই বলল না সে রাতের কথা, সেই তুষার সাদা মেয়েটির কথা। আস্তে আস্তে যখন সে আবার সুস...
অনেক আগের কথা। মুসাহি প্রদেশের এক গ্রামে মোসাকু আর মিনোকিচি নামে দুই কাঠুরে বাস করত। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় মোসাকু বুড়িয়ে গিয়েছিল, আর তার শিষ্য মিনোকিচি ছিল আঠারো বছরের এক ছেলে। প্রতিদিন তারা গ্রাম থেকে পাঁচ মাইল দূরের বনটায় কাঠ কাটতে যেত। যাবার পথে বড় একটা নদী পড়ত যার সাথে ছিল ফেরী পারাপারের নৌকা। অনেকবার ফেরীর জায়গাটায় ব্রীজ বানানো হলেও বন্যার টানে ভেঙ্গে পড়ত ওগুলো। নদীর ও জায়গাটা এতোই খরস্রোতা ছিল যে কোন সাধারণ সাঁকোও টিকত না।
১ম পর্ব
.................
হইচি যখন ফিরলো তখন সকাল হয়ে গেছে । বুড়ো সন্ত অনেক দেরী করে ফিরেছেন তাই তিনি কিছু বুঝলেন না । তিনি মনে করেছিলেন হইচি হয়ত ঘুমিয়ে আছে তার ঘরেই । রাত জাগবার ফলে হইচি ঘুমালো বেশ সকাল পর্যন্ত । কাউকে কিছুই বলল না তার সেই অদ্ভুত অভিযান সম্পর্কে । মধ্যরাতে আবার এলো সেই সামুরাই, নিয়ে গেল হইচিকে তার প্রভুর মহলে । হইচি আবারও শুনাল তার গান । কিন্তু এইবার ধরা পড়ে গিয়েছিল ও । রাতে যাবার সময় ওকে দেখে ফেলেছিল কোন মঠ ভৃত্য । সকালে যখন ও ফিরে এলো বুড়ো সন্ত ডেকে পাঠালেন ওকে, বললেন , “আমরা তোমার জন্য অনেক চিন্তা করছিলাম । তুমি অন্ধ, এত রাতে তোমার একলা ঘুরে বেড়ানো ঠিক না । তোমার উচিত ছিল কাউকে সাথে নিয়ে যাওয়া । কিন্তু তুমি এতো রাতে গিয়েছিলে কোথায় ?”
অনেক দিন আগের কথা । সেইদিন দান-নো-উরা’র কাছে, শিমোনোসেকির সরু পথে শেষ হয় হেইকি গেঞ্জিদের যুদ্ধ । তীর আর বর্শায় ছেয়ে গিয়েছিল আকাশ সেদিন, সাগরে উথাল পাথাল করছিল রক্তলাল ঢেউ । হেইকি বীরদের রক্ত .. তাদের স্ত্রী শিশুদের রক্ত এবং তাদের শিশু রাজার । চারশ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো সাগরে ভেসে আসে হেইকিদের হাহাকার ।
বেলা গড়িয়ে এসেছে । বুড়ো আশিটাকা বিড়বিড় করে উঠলো, ‘আহ ছায়া সব লম্বা হল যে! কই হে ওতোমো সেরে ফেলো তোমার হাতের কাজ !’ আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা লোকটা কেঁপে উঠল হঠাৎ, ‘আ-আমাকে মাফ করুন, এ একেবারেই ঠিক হচ্ছে না .. একেবারেই না ! এ-এমন আর হবে না .. একবার সুযোগ দিন, আমি একটা রামগাধা ..একটা আস্ত গাধা ! আমার জন্যই সব হয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছা করে করিনি , দয়া করুন ! একবার দয়া করুন ’ বলে উঠল ও । পিছমোড়া বাঁধা হাতে একবার চেষ্টা করল পিঠে লেগে থাকা তীক্ষ্ণ পাথরটা সরাতে, বস্তা থেকে বের হয়ে ছিল । পানির বালতি আর পাথরে ভরা বস্তাগুলো দিয়ে ঠেসে রাখা হয়েছিল ওকে, নড়তে পারছিলো না এতটুকু ।
হোকি প্রদেশের কুরোসাকা গ্রামের ধারে ইউরেই-দাকি নামে একটা পাহাড়ী ঝর্না আছে । ইউরেই-দাকি মানে ভুতেদের ঝর্না । এমন অদ্ভুতনামী ঝর্নাটির ঠিক নীচেই আছে একটা ছোট শিন্তো মন্দির ( লৌকিক দেব-দেবীর মন্দির ), দেবতা টাকি-দাইমিয়োজিনের মন্দির । বিশ্বাসীদের প্রণামী নেবার জন্য মন্দিরের সামনেই আছে কাঠের তৈরী একটি টাকার বাক্স । আর বাক্সটিকে ঘিরে আছে একটি গল্প ।