বোলিঙ ক্লাবের ঘুঁটির মতো বারান্দার রেলিং ঘেঁষে বীয়ারের সারি। শেষ দুটো বীয়ার নামিয়ে রেখে খালি বোতলগুলি তুলতে গেলে সোহাগ বলে,
- থাক ওগুলি সকাল পর্যন্ত। ভালো একটা ডেকোরেশান লাগতাছে।
- হ...এই দুইটা খালি হইলে ছবি তুইলা রাখতে হইবো।
কেইসের শেষ দুই বোতলের ঢাকনা খুলে সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে "প্রৌস্ট" (চিয়ার্স!) করলো দুই বন্ধু।
দশটা বাজতে তিন মিনিট বাকি। এতক্ষণ...
- নয়টা সাতাইশ।
মোবাইলের ঘড়ি দেখে মাকসুদ জানালো।
- আমার মনে হয়...
আরেকটা বীয়ার খুলতে খুলতে সোহাগ বলে,
- আমরা আপাতত সময় গোনা বাদ দেই। বীয়ার আছে আর ছয়টা। ওগুলা শেষ হওয়া পর্যন্ত যেই কয় পর্ব বানাইতে পারি বানাই। তারপর বাইরে গিয়ে ড্যোনারফোনার কিনা আনুমনে .... নাইলে ঘরে ডিমডুম দিয়া কিছু এক্টা করা যাইবো।
- ওকিডোকি। তবে আমি ভাবতেছিলাম অন্যকথা। একটা জার্মান গান যেইটা...
আরো একটা বীয়ার খুলে মাকসুদ বেশ মুন্সীয়ানার সাথে গ্লাসে ঢালে। বারে কাজ করতে গেলে প্রথমেই যে কয়েকটা জিনিস শিখতে হয় তার মধ্যে ফেনা সামলে গ্লাসে বীয়ার ঢালা একটি। সোহাগ বিড়ি ধরিয়ে ভক্ করে কিছু ধোঁয়া ছাড়ে। রিং বানাবার আরো একটা ব্যর্থ চেষ্টা। ঘড়িতে বাজে রাত সোয়া নয়টা। আরো এক ঢোঁক বীয়ার আর তারসাথে আরো এক খাবলা ধোঁয়া ছেড়ে সোহাগ বললো,
- প্রথম পর্বটা বানাইতে তো...
- প্রথম পর্বটা কেমনে শুরু করি....
- এইখানে আটকাইলে জীবনেও আর আগে বাড়া হৈবো না। প্যাটভর্তি আইডিয়া লইয়া ভুদাই হইয়া মরতে হৈবো।
- তাইলে এইবার সামনে আসুক প্রথম দৃশ্য....
- টাইটেল সঙটঙ দিবি না?
- পরে দিমু। আগে কয়েকপর্ব হোক।
- ও.কে. পাগলা মুভ! ......
প্রথম পর্ব
(প্রথম দৃশ্য)
প্রথম বলটা লেগস্ট্যাম্পের উপর আসতে আসতে মাঝপথে আউটসুইঙ করে অফস্ট্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে গিয়...
-ডেইলী সোপ। হুম.....সমস্যা কী জানোস?
- কী?
- সমস্যা হৈলো ডেইলী সোপ বানাইতে গেলে কম্পক্ষে বিশ-পঁচিশটা পর্ব আর আরো চল্লিশটা পর্বের প্ল্যান রেডি রাইখা মাঠে নামা লাগে।
- এইখানে তো আর আমাগো মাঠে নামার কোন ব্যাপার নাই। আমরা এখন নয় তলার বারান্দায়, রেলিঙ পার হৈলে সোজা দোজখ। শুরু করলেই করা হয়।
- উহু...আমি ভাবতাছিলাম অন্য কথা। এই প্লটটা ঠিক কোথা থিকা শুরু হৈয়া কোন দিকে ...
সোহাগ মাকসুদের বাল্যবন্ধু। একেবারে ক্লাস ওয়ান থেকে হরিহর আত্মা। দেশ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে, প্রবাসে এসে একই শহরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ভাগ্য খুব বেশী মানুষের হয় না। আপাদমস্তক ভাগ্যবিপর্যয়াক্রান্ত হলেও মাকসুদকে এই একটা ব্যাপারে ভাগ্যবান বলা যেতে পারে।
দুই কেজি পেঁয়াজের পোটলাটা টেবিলে তুলে মাকসুদ বললো, দেখি কাঠ আর ছুরিটা দে। পিঁয়াইজ ক...
সোহাগের বাসার প্রধাণ আকর্ষন বারান্দা। হেসেন প্রদেশের উত্তর সীমান্তের এই ছোট্ট শহরটার দারুন একটা ভিউ পাওয়া যায়।
- আরে কেইজে বীয়ার আছে আরো চোদ্দটা। আইজকা গজব টানা টানুম।
- সাবাশ
দুই বোতল বীয়ার হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সোহাগ আর মাকসুদ।
- প্রোস্ট! (চিয়ার্স)
- শুভ বেকারত্ব !
দুই দোস্ত চুপচাপ বীয়ার টানে। সোহাগ একটা মার্লব্রোর প্যাকেট খুলতে খুলতে জিজ্ঞা...
ওলগা। ওলগা ফ্লাইশহাকার। অনেকদিন পরে নামটা মনে পড়লো। একসাথে পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন আর স্থাপত্যের ছাত্রী ছিল। মাথায় পৈতে বামুন টাইপ টাক। চান্দির আধা বিঘৎ নিচে ইঞ্চি খানেক চুলের আভাস। বামপন্থী গ্রীনের সমর্থক ছিল তখন। পরে কর্মী হয়েছিল। এক লিটারের বড় গ্লাসে জীবনে সেই প্রথম চুমুক। জার্মান ভাষায় যাকে বলে মাসেন ক্রুগ। গ্লাসের চুড়া ছেড়ে আড়াই ইঞ্চি পর...
মালিক অবশ্য কাটা ঘায়ের জন্য খানিক মলমের ব্যবস্থাও করেছেন। এমাসের পারিশ্রমিকটা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবেন দু-একদিনের মধ্যে। তাতে হয়তো আগামী মাসের ঘরভাড়া, হেলথ ইনসুরেন্স, টেলিফোন বিল হয়ে যাবে। তারপর কী হবে ইবলিসও জানে না।
ব্যাগ থেকে তামাকের ঠোঙ্গা আর সিগারেটের খোল বের করে একটা সিগারেট বানানো গেল। তামাক যা আছে তাতে মেরে কেটে সর্বোচ্চ আর তিনটি সিগারেট...
কাঁচা শাকসব্জিতেও বিশ্বায়ন এসে গেছে, নর্ডপোল থেকে বের হয়ে গট্শ্লাকস্ট্রাসের মিনি চৌরাস্তা পর্যন্ত এসে সেরকমই মনে হয় মাকসুদের। নর্ডপোল থেকে চৌরাস্তার মোড়ে ৫৫ ডিগ্রি কোণে কামালের দোকান। তুর্কিরা বলে কেমাল। একেবারে ৪০৯ নম্বর সেমিনার রূমের গা ঘেঁষে। টমেটো, শসা, শ্রীচন্দন, ফুলকপি, বাঁধাকপি সব কিছুই সেখানে চিৎকাৎ হয়ে শোভা পাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আঁটি বাঁধা অ্যাসপারাগাস, জার্মান ভাষা...