মর্মর পাথরের মূর্তিটা অনেকদিন ছিল আমাদের শহরে। খুব বড়সড় কোন ভাস্কর্য নয়, একটা আবক্ষ মূর্তি। পথের ধারের এই মূর্তিটা রাজশাহী শহরে আসা যে কারো চোখে পড়েই যেত, কেননা এটা রাখা ছিল একেবারে রাজশাহীর হৃৎকেন্দ্র অর্থাৎ সাহেববাজারের ঠিক মোড়ের উপর।রাজশাহী শহরের নানা ভাঙ্গা গড়া, নানা পরিবর্তনের মধ্যে মূর্তিটা অনেক সময়ই বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সব সময়ই মূর্তিটা ছিল সোনাদীঘির মোড়ের উপরেই। আমা
পদ্মার চরে ঘড়িয়াল দেখি নি আমরা কোনদিনই, আগে গেলেই শুশুকের দেখা মিলত, এখন কালেভদ্রে উঁকি দিয়ে আমাদের ধন্য করে পদ্মার এই ডলফিনেরা। বন্যপ্রাণী বলতে দেখেছি কেবল শিয়াল, বেজি, গুইসাপ, বাদুড়, সাপ আর পাখি। তাই ১৯১৬ সালে ছাপা L S S O’malley রচিত রাজশাহী গ্যাজেটর-এ রাজশাহী অঞ্চলের সেই আমলের নানা পশু-পাখির কথা পড়ে ভাবলাম অসাধারণ কিন্তু করুণ সেই ইতিহাস বাংলা করেই ফেলি, অন্তত জানিয়ে রাখি কী হারিয়েছি আমর
আমাদের পাশের পাড়ার নাম সাগরপাড়া, সেই পাড়ার নামে রাজশাহীর মানুষ যত না চিনত, তার চেয়ে ঢের বেশি চিনত সাগরপাড়ার বটতলার কথা বললে। বিশাল ঝাঁকড়া এক বটগাছ ছিল রাস্তার মোড়ে, ছোট থেকেই দেখেছি তাঁর নিচে চায়ের স্টল, রিকশার স্ট্যান্ড, মানুষের ভিড়। সরু সরু রাস্তা তখন জালের মত বিছিয়ে ছিলে শহরময়, সাথে খোলা কুৎসিত ড্রেন। রিকশার টুংটাং-এ মুখরিত থাকত রাজশাহী, অটো রিকশার গো গো হর্ন তখনো আসে নি। একদিন সেইসব অলিগলির
ছোটবেলায় প্রথম পূজো দেখার স্মৃতি আব্বার হাত ধরে, রাজশাহী শহর থেকে আধা ঘণ্টার দূরত্বে, পুঠিয়ায়। দুর্গাপূজোর ছুটিতে বাসে চড়ে পুঠিয়ার রাজবাড়ি দেখতে গিয়ে পুজামণ্ডপও ঘুরে দেখা হয়েছিলো, সেটা মনে হয় ক্লাস থ্রি বা ফোরে। তার আগে ঢাকায় থাকতে এ সুযোগ হয়নি। এরপরে শহরের অলিতে গলিতে ঢাক-বাদ্য আর মণ্ডপের আলোকচ্ছটা দেখেছি বহুবার।
প্রায় এক দশকের বেশি সময় ঘুরে ঘুরে পূজো দেখা হয়নি। ২০১১-তে ঠিক করে রেখেছিলাম প্রতিমা তৈরি দেখতে হবে। ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয়ে গেলাম গণকপাড়ার বৈষ্ণব সভার দোরে, ভেতরে কারিগরেরা তখন মহাব্যস্ত।
শাহবাগে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ অবস্থান নিতে শুরু করার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠছিলাম। একেতো হরতাল, ঘর থেকে বের হওয়া হয়নি, ফেসবুক বা বন্ধুবান্ধব পরিচিতজনদিয়ে রাজশাহীতে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশের কোন আওয়াজই যেন ছিলো না অন্তত প্রথম দিনটা।
এটা ঠিক রাজশাহীতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নড়াচড়াও যেন ঢাকার হাইকমান্ড না পাওয়া পর্যন্ত ঠিক শুরু হয়ে ওঠে না তা আজ বছর তিরিশেক ধরেই। বাবা-মাদের তরুণ যুগের রাজশাহী আর এখনকার শহরে অনেক ফারাক। তা সেই ফারাকটা মনে হয় জেনেরেশন গ্যাপ-ই হবে, শুধু আমার শহর না, পুরো দেশ জুড়েই। সবখানেই যেন আমরা আমাদের প্রজন্ম 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' করে পাশ কাটিয়ে যেতে চাই সব ইস্যুকেই।
যখন বেশ ভালো রকমের বিরক্তি নিয়ে নিজেদের দম ফেলার ছোট্ট পরিসর ‘আমাদের রাজশাহী’ গ্রুপে জিজ্ঞেস করছি, “ঘটনা কী, জাগো বাহে, কুন্ঠে সবাই? “ হুট করেই চোখে পড়লো রাজশাহীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের তৈরি করা দু’টো ছোট্ট ইভেন্ট। আলুপট্টির মোড়ে কসাই কাদের মোল্লাসহ সকল রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে সমবেত হতে ৭ তারিখ দুপুর আর ৮ তারিখ বিকেলে আহ্বান জানানো হচ্ছে রাজশাহীবাসীকে।
বাংলার আদি ঐতিহ্য ও সভ্যতার পন্ড্রুবর্ধন বা বরেন্দ্রভূমি এই রাজশাহী। যুগ যুগ ধরে বিশাল পদ্মার তীর ধরে পৃথিবীর কত প্রান্ত থেকে কত মানুষ এসে বসতি গড়েছে এখানে, রেখেছে স্ব স্ব ঐতিহ্যের ছাপ। রাজশাহির আনাচে কানাচে নানা উপজাতির বাস, তাদের ভিন্ন জীবন প্রণালী আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা প্রাচীন নিদর্শন তারই সাক্ষ্য বহন করে।
রেড ড্রাগন
আমাদের ছোটবেলায় খুব বেশি রেস্টুরেন্ট-টেন্ট ছিল না, আর মানুষের মাঝে বাইরে খেতে যাবার মানে যাকে বলে eating বা dining out এই প্রবণতাটা ছিল দুর্লভ। এখন যেমন অনেকেই রুচি বদল করতে বা ছোটখাটো উদযাপনে রেস্তোরাঁয় যান মাঝেমাঝেই, পনের-কুড়ি বছর আগে সেরকম চিন্তাভাবনা মধ্যবিত্তের মাঝে বেশ কম দেখা যেত। একটা কারণ মনে হয় সে সময়ে সাধ্যের মাঝে ভালো ভালো খাবার জায়গা ছিল কম, স্কয়ার ফিট মাপা অ্যাপার্টমেন্ট বাড়িও ছিল কম, কাজেই বাড়িতে দাওয়াত দিলে অতিথিদের স্থান সঙ্কুলানের সমস্যা হবে এমনটা কেউ ভাবতে পারতো না। ছোটখাটো অনুষ্ঠান তো বটেই, বিশালাকার বৈবাহিক যজ্ঞও সকলে নিজের বাড়িতেই সুসম্পন্ন করতেন।