৫ রাত হল টানা শিফট করছি রাতে। ১২ ঘন্টার শিফট, সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ৭ টা। আজকে শেষ রাত, তার পর তিনদিন কাজ নাই। অবাক ব্যাপার হলেও পুরা বিল্ডিংয়ে আমি একা কাজ করছি। কিছু হয়ে গেলে দেখার কেউ নাই। খরচা কমানোর যুগে এরকমটাই হয়তো স্বাভাবিক। কর্মী আউটসোর্সিং করতে করতে এখন তিরিশ জনের মত বাকি আছি। তাই 'স্বাস্হ্য ও নিরাপত্তা নীতি'র সাথে ঠিক না গেলেও একজন দিয়ে রাতে কাজ চালানোটা এরা বৈধ করে ফেলেছে। আমাদেরও কিছু
মুখের উপর দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিল তনিমা। আমি আবার নক করতে লাগলাম। ওর সাথে কথা বলাটা ভয়ঙ্কর জরুরি। রাগ করে ফোন ধরছিল না ও, তাই ওর বাসায় আমায় আসতে হল। দরজা না খুললে আমি হয়ত ভেঙ্গে ফেলব দরজাটা।
মিনিট খানেক বাদেই তনিমা দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াল।
-তুই কি পাগল?
-আমি জানতে চাইছি গানটা তোর কাছে কীকরে এলো?
১।
রুপোলী জরির মতন ফিনফিনে জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আছে আমার রাত্রি বাগানে, আকাশে ঝমঝম করে তারারা। ঝোপঝাড়ের ভিতর থেকে ঝিঁঝিঁদের সম্মিলিত অর্কেস্ট্রা। অদ্ভুত নেশা ধরানো এই সঙ্গীতসভা।
এমন রুপোজরি জ্যোৎস্নারাতেই চলে গিয়েছিল টিপু, শেষবারের মতন দেখা করে গিয়েছিল এইরকম এক রাতেই। জ্যোৎস্নারাতে বাগানে বসে থাকলেই টিপুর কথা মনে পড়ে।
বি সি এস পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন পাশের রুমের এক বড় ভাই। প্রায় এক ঘন্টা চন্ডীদাস , জ্ঞানদাস, কানাহরি দত্ত পড়তে পড়তে হঠাৎ করে বলে উঠলেন,‘শালার হিন্দুগুলা এত্ত কিছু লিখে গেল কেন? নাম মনে রাখাই তো কষ্ট !‘ আমি হাসি চাপতে না পেরে বললাম,‘ভাই, সাহিত্য কি গুলে খাওয়ার জিনিস? আনন্দ নিয়ে পড়েন, দেখবেন এমনিতেই মনে থাকবে।‘
১.
সারাবছর যে বন্ধুর সাথে কাটাই তাকে বিশেষ কোন দিবসে আলাদা করে শুভেচ্ছা দিতে কেমন বিব্রত লাগে। সৌজন্য বস্তুটা বন্ধুতার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান। বন্ধুর কোন কাজ করে দিলে যদি ধন্যবাদ পেতে হয়, সেই কাজটা ছোট হয়ে যায়। ঠাট্টা বাদে সিরিয়াস শুভেচ্ছা বা ধন্যবাদ কখনো দেইনি বন্ধুকে। যেমন দেইনি বিশেষ দিবসের কোন রঙিন কার্ড। তার চেয়ে ক্যামেরায় একটা ক্লিক করে ছবিটা বন্ধুর কাছে পাঠাই। নইলে সাদা খাতায় আঙুল বুলিয়ে কিছু আঁকিবুকি। আমার তেমনি ভালো লাগে। খুব সাদামাটা কিছু। অথবা ছোট্ট কোন রেস্তোঁরায় বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে মুচমুচে পিয়াজু সালাদ। সাথে খানিকটা বৃষ্টি হলেও হতে পারে, না হলে কিছু মেঘের দল ভাসতে ভাসতে দক্ষিণ সমুদ্র থেকে উত্তর হিমালয়ের পথে চলে যেতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে, ইতোমধ্যেই। সচলে একটা লেখা এসেছে, তবুও বলি। কারণটা হলোঃ আমি দুটো প্রশ্ন সবখানে দেখেছি, শুনেছি।
(ক) কিছু তো একটা দিয়েছে, এতে ক্ষতি কি? লাভ না হোক, ক্ষতি কি?
(খ) তুমি কি করেছো সারাজীবনে? কি দিয়েছো? এখন কেউ কিছু করলেই জ্বলে?
আমি প্রথমটার উত্তর দেব। তবে সোজা বাংলায়, ক্ষতি নাই, কোন ক্ষতি নাই। তবে দুইখান কথা (আসলে দুখান না, লেজুড়-ওয়ালা একগাদা কথা) আছে, সেই কথাগুলোই বলবো আর কি। এই মতামত একান্ত ব্যক্তিগত, শিরোনামেই বলেছি, কেউ দাগা নিবেন না মনে।
আর দ্বিতীয়টা নিয়ে কিছু বলার নাই, মাফ করে দিয়েন। কিছু করি নাই, কিন্তু নীতিকথার ঝাণ্ডা উড়াই। কিন্তু ওইযে এক ব্যাটা ছিলো, সৈয়দ মুজতবা আলি, সেও অনেক ঘ্যানর-ঘ্যানর করতো, সেও জীবনে কিছু করে নাই, খালি নীতিকথার বুলি কপচাইসে। কিন্তু দেখেন এই যে ইউনুস সাহেব, খালি মুখে না, কাজেও দেখিয়েছেন। আমি পেরথম দলের লোক, কাজ-টাজ করি না, খালি বক বক এবং সেই জন্যেই ক্ষমাপ্রার্থী।
ভালোবেসেছি তোমায় বহুবার, দেখার আগেই,
মনে পড়েনি তবু একবারও, চিনিনি তো চাহনি তোমার,
কে বা খোঁজে নীলকণ্ঠ ফুল ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের রোদে?
গমের সুগন্ধের মত অধরা প্রেম ছিলে তাই।
অথবা আবছায়া ছিলে যেন জুনের ভরা জোছনায়
সুদূর আঙ্গলে, ধরে ছিলে পানপাত্র ঠোঁটের কোনায়,
একটি গল্প
এক জেলে সারা সকাল আর দুপুর মাছ ধরে, দুপুরের খাবার খেয়ে নদীতীরে গাছের ছায়ায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। দু’আঙ্গুলের ফাঁকে ধিকধিক জ্বলা বিড়ির মাথায় বেশ কিছুক্ষণের জমে যাওয়া ছাই আর মৃদু বাতাসে এলোমেলো ধোঁয়া সময়টাকে যেন আরো অলস করে তুলেছে। ঠিক ওই সময়ে ওই রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন এমন একজন মানুষ যিনি একাধারে একজন স্বনামধন্য দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, কলাম লেখক, টক শো’র জ্বালাময়ী বক্তা, নীতিনির্ধারক এবং বুদ্ধিজীবি। সহজ কথায় সুশীল সমাজের প্রতিভু। যথারীতি একজন মানুষকে এইভাবে অলস শুয়ে থাকতে দেখে তার মনে হল যে এই ভাবে অলস শুয়ে বসে থাকার কারণেই আজ এই জাতির “কিচচ্ছু” হচ্ছে না।
সেদিনটি ছিল বসন্তের শুরুর দিকের কোন একটি দিন। বাড়ি ফিরেছিলাম অন্য দিনের চেয়ে বেশ আগে। এখানে দীর্ঘ শীত কাটাতে হয় অন্তঃপুরে, তাই শীত চলে যাওয়ার ভাব হলেই বাইরে বেরিয়ে পড়বার ইচ্ছেটাকে আকাশে উড়িয়ে দেই। প্রতিদিন বাইরে ঘুরে ঘুরে শুকনো বাদামী পাতা আর ঘাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা নতুন সবুজ লতা পাতা, কাণ্ড এবং কুঁড়িদের দেখি আমি এসময়। চোখের সামনে শীতের ধুসর আর ছাই রঙা প্রকৃতি একটু একটু করে পেলব সবুজে ঢেকে যেতে দেখে আমার ক্লান্তি আসেনা কখনও। এই শীতের দেশে পত্রহীন চেরী, ফোরসাইথিয়া, ম্যাগনোলিয়া গাছের ডালপালা ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়ার ঐশিক সৌন্দর্যের কথা বাদ-ই দিলাম, সারা শীত ছাই, সাদা আর বাদামী দেখবার পর, আগাছার কচি সবুজ পাতা দেখলেও মন ভরে যায়।
তোর চোখেতে পড়লে এ চোখ
বিদ্ধ করে কোন্ শরে?
অচেনা এক শিহরণ, কেন
শরীর জুড়ে ভর করে?
নাকের ডগায় জমাট বাঁধা
বিন্দু বিন্দু শিশির-ঘামে,
ঘুম-ভাঙ্গা সব মেঘের মতো
পাখির ডানায় স্বপ্ন নামে।
তোর পায়ের ওই পায়েলখানি
বাজে যখন নম্র লাজে,
কেমন জানি একলা লাগে,
মন বসে না আর কাজে।
ডাগর দুটো আঁখির তারায়
সাত সাগরের ঢেউ খেলে,
তার বানেতে যাচ্ছি ভেসে
কেউ কি তা জানতে পেলে?
তোর ছোঁয়াতে গোলাপ ফোটে