সম্প্রতি বাংলাদেশে খুব আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আমাদের অতি পরিচিত শাহবাগ মোড়ে এক জন দু'জন করে সমবেত হলো হাজার হাজার মানুষ। কে তাদেরকে ডেকে আনলো? দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পল্টনে জনসমাবেশ ডাকে- আমরা দেখি। সেখানে দলীয় ব্যনার হাতে, দলীয় শ্লোগান মুখে অনেক লোক হাজির হয়। তাদের ডাক ছাড়া এতো লোক একসাথে হতে পারে- ভাবাই যায় না।অথচ শাহবাগে সবার চোখের সামনে সেটাই ঘটলো।আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
শৈশবের সব স্মৃতিই মধুর তবুও তার মধ্যে আলাদা করে ভাবতে গেলে মনে পড়ে যায় প্রথম প্রভাত ফেরীতে যাবার ভোর বেলাটি। তখন বয়স ঠিক কত ছিল আজ আর মনে নাই, শুধু মনে আছে সেদিন রাত থাকতেই ছোট চাচা ঘুম থেকে টেনে তুলেছিলেন। ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে বলেছিলাম এখনও তো রাত। সেদিন বেশ ঠাণ্ডা ছিল রাজশাহীতে, ঘুম ভাঙ্গার পর লাল লাল ফুল তোলা ফ্লানেলের পোশাক পরে চাচার এক হাত ধরে বাইরে আসা। অন্য হাতে আগের সন্ধ্যায় চাচার সাথে শিরইল স্কুলে গিয়ে তোলা ফুল।
একুশ আমার রক্তস্নাত বর্ণমালা
দু:সময়ে দু:সাহসী যোদ্ধা বানায়।
একুশ আসে সমর সাজে
ঘুণে ধরা সমাজটাকে বিদায় জানায়।
একুশ প্রাণে আশার আলো
অত্যাচারের প্রতিবাদে কঠিন ভাষা।
দেশের লাগি ভাষার লাগি
বজ্র কঠিন শপথ নিয়ে সর্বনাশা।
একুশ ফাগুন রাঙা হয়ে
জনগণের অধিকারে আস্থা জানায়।
একুশ জরা জীর্ণতাকে ছুড়ে ফেলে
তরুন প্রাণে দিন বদলের বার্তা শোনায়।
একুশ শেখায় বাঁচতে হলে
বাঁচার মতই বাঁচতে হবে।
খবরটা পেলাম দুপুরের দিকে, ফেসবুকে। কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। প্রথমে ভাবলাম হয় আমি ভুল দেখছি না হয় যে শেয়ার করেছে সে ভুল করেছে। সাথে সাথে বিডি নিউজে চেক করে দেখলাম কাহিনী আসলেই এইরকম; বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে কসাই হারামজাদার ভি সাইন ওয়ালা ছবি দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তখনো শাহবাগের খবর পাইনি আমি। সেদিনই বই মেলায় যাওয়ার কথা ছিলো।
আটটার দিকে সি,এন,জি নিয়ে রওনা দিলাম। বার্ডেম পর্যন্ত এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। শ'খানেক মানুষ রাস্তা বন্ধ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছে। একজন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো কসাই কাদেরের রায়ের প্রতিবাদ চলছে। কি মনে করে আমিও বসে পড়লাম উনাদের সাথে। এখান থেকেই আমার শাহবাগ সংগ্রামের শুরু। তবে এদিন বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। মা সাড়ে দশটার দিকে ফোন দিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরিয়ে আনল। তখনও আমি জানতাম না পরবর্তী ৭২ ঘন্টা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তাল সময়।
এই তো সেদিন ছেলেটা পিচ্চি একটা বাবু ছিল; ধেই ধেই করে বড় হতে হতে আজ কত্ত বড় হয়ে গেছে চোখের সামনে, তবুও আমার কাছে সে বাবুই হয়ে আছে। যেন এক টুকরো সবুজ স্বপ্ন বড় এক পর্বতের শুভ্র শৃঙ্খ হতে চলেছে। আজকাল ছেলেটা কোথায় কখন কী করে, ভবিষ্যতে কী করবে- এইসব স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মাঝ দিয়েই ভোর-রাত পার করি। যদি দুই ভাই-বোনের জন্য সুস্থ সুন্দর একটা ভবিষ্যত্ না রেখে যেতে পারি, যদি এরা কষ্ট আর মলিন জীবন-যা
রাজীবের গলা চিরে ভেবেছিস হবে রোধ
জনতার জাগরণ? তোরা বড় নির্বোধ!
সহযোদ্ধারা তার জেগে রাত কাটাবেই
"ফাঁসি চাই" চিৎকারে কন্ঠটা ফাটাবেই।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা অপূর্ব গানটিকে প্রতি বছর কত মধুর করে গাই আমরা, খালি পায়ে প্রভাত ফেরীতে পুষ্পমাল্য নিয়ে শহীদ মিনারে যাই, সারা পৃথিবীতে এক একটা অঙ্গনে রাতারাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় আমাদের প্রতীক শহীদ মিনার, কিন্তু আমাদেরই দেশে আমাদেরই ভাইদের মুখের ভাষা ক্রমশ যেন পায়ের নিচে মাটি হারায়।
আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির সন্তান, আমরা কি তা হতে দিতে পারি?
[justify]যেদিন নরপশু রাজাকার কাদের মোল্লার বিচারের রায় হল সেদিন সেই ৫ই ফেব্রুয়ারি ছিল আমার অসম্ভব ব্যাস্ততার দিন। খুব সকালেই কর্মস্থলে প্রবেশ, ইন্টারনেট তো অনেক পরের কথা মোবাইল ব্যাবহার করার সুযোগটাও পাইনি। রায় জানতে পারিনি দুপুর পর্যন্ত, কিন্তু রায় নিয়ে মনে কোন সন্দেহ ছিলনা। সাময়িক কাজের বিরতিতে যখন- একজনকে কেন মাত্র একবারই ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো যায়, একথা ভাবছিলাম তখনি এক বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া ফোনে বিরাট ধাক্কা। এটা কিভাবে সম্ভব, কাদের হারামিটার ফাঁসি হয় নাই ???
দার্শনিক ফুরিয়ের প্রগতির সম্ভাবনায় এতটাই আপ্লুত ছিলেন যে, ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, মানুষ একদিন স্বীয় ক্ষমতাবলে সমুদ্রকে পরিণত করবে লেবুর শরবতে, যখন পৃথিবীতে হোমারের মত কবি থাকবে তিন কোটি সত্তর লাখ, নিউটনের মত বিজ্ঞানী থাকবে তিন কোটি সত্তর লাখ, মলিয়ের মত নাট্যকার তিন কোটি সত্তর লাখ। ফুরিয়েরের ভবিষ্যতবাণীতে অতিশয়োক্তি রয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে স্বপ্ন, যার দৌলতে প্রগতির পথে পা বাড়াতে পারে চিরকালের
ফাল্গুনের হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছুটা বিস্রস্ত শাহবাগ প্রজন্ম চত্তর। ভোর হলেই শুরু হবে পিশাচের ঘোষিত সদম্ভ হরতালের সময়। আগের রাতেই নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন ব্লগার রাজিব। ব্যাক্তিগতভাবে না চিনলেও, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে মাঠে নেমেছিলেন বলেই তাকে যেতে হলো অকালে। শুধু হত্যায় থেমে থাকেনি তারা, অনলাইনে এবং কিছু চিহ্নিত সংবাদমাধ্যমে তার নাস্তিক পরিচয়, তার লেখা ব্লগকে (?) আলোচনায় এনে প্রমাণ করার চেষ্টা চালানো হলো