গত কদিনে বেশ কয়েকজনকে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখলাম।এদের অনেকেই প্রথম থেকে এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। এখন তারা প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনের লাগাম কার হাতে এবং আন্দোলনে লাভটা হচ্ছে কী, এর গন্তব্য কোথায়?
ব্যাকগ্রাউন্ড:
১। "We the people" নামে whitehouse এর একটা ওয়েবসাইট আছে, যেখানে কি না লোকজন (মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক) পিটিশন করতে পারেন, এবং একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক স্বাক্ষর যোগাড় হলে whitehouse একটা অফিসিয়াল উত্তর দেয়। উত্তর প্রাপ্তির জন্য যেটা দরকার: To cross the second threshold and require a response, a petition must reach 100,000 signatures within 30 days.
২। শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন জানাবার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আহ্বান জানিয়ে একটা পিটিশন ওখানে দাখিল করা হয়েছে ১৩ই ফেব্রুয়ারী।
৩। এই লেখাটা পর্যন্ত (গত ৫ দিনে) এতে সাক্ষর পড়েছে প্রায় ১৫৫০০। এই হারে চললে উপরের ওই "থ্রেশহোল্ড ক্রস" করাটা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
রাজীবকে আমি চিনতাম না, তার লেখার সাথেও আমার পরিচয় ছিল না। যতদূর জানি রাজীব এমন কোন সুপরিচিত জনপ্রিয় ব্লগারও ছিল না জীবদ্দশায়। কিন্তু রাজীবের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ রাজীব শাহবাগ আন্দোলনের একজন কর্মী এবং শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম বলি। আমরা জানি না তাকে টার্গেট করার উদ্দেশ্য কি। রাজীবের চেয়ে বহুগুন বেশী জনপ্রিয় ব্লগার ছিল টার্গেট করার মতো। তাদের কাউকে না করে রাজীবকে টার্গেট করে প্রায়
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবীতে দেশজুড়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল শাহবাগে, তা এখন ভৌগোলিক সীমানা পার হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশী ও ভিনদেশী বন্ধুরা দাবীর সাথে সংহতি জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কেউ ফেইসবুক-টুইটারে আন্দোলন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করছেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখছেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে স্মারকলিপি পাঠাচ্ছেন, কেউ কেউ সংঘবদ্ধভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ কবি। তিনি ফেসবুকে একটা স্টেটাস লিখেছেন। সেখানে লিখেছেন-
১) একদিকে শাহবাগ সহ সারাদেশে আমজনতা অহিংস আন্দোলন করছে।
২) আরেকদিকে ধর্মব্যবসায়ী খুনিরা নির্বিবাদে খুন-জখম ক'রে যাচ্ছে।
৩) সরকার চুপচাপ ঘোলা পানিতে মাছ ধরছে।
এই তিন লাইনের মধ্যে কোনো কবিতা নেই। নিরীহভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থার একটা বিশ্লেষণ দিচ্ছেন।
…
(১)
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বিকেলের দিকে মোবাইলটা বেজে উঠতেই মনিটরে ভেসে উঠলো একটা সহজ-সরল যুবকের মুখ, থাবা বাবা। বেশ আগে কোন একদিন আড্ডা দিতে দিতে ছবিটা তুলে নম্বরের সাথে যুক্ত করে রেখেছিলাম।
দাদা আপনি কোথায়, অফিসে ?
হাঁ, অফিসেই।
সন্ধ্যায় আসবো দাদা ? গত দু’দিন শাহবাগে ছিলাম। হঠাৎ শরীরটা ভালো না থাকায় চলে এসেছি বাসায়। কিন্তু ভালো লাগছে না। ভাবছি আপনার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসবো। মনে হচ্ছে কতোদিন দেখি না আপনাকে !
অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগেই আমার ঘরেই কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে গেছে সে।
রাজীব হায়দার এর খুন হবার খবর জানার পর থেকেই গা কাঁপছে: আবার কি ১৪ই ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে? কিন্তু একটু চিন্তার পর মাথা একটু ঠান্ডা হয়েছে: আর একটা গণহারে বুদ্ধিজীবী হত্যার চেষ্টা ঠিক এখনই মনে হয় না করবে জামাত, এই চেষ্টাটা করা হবে শেষ আঘাত হিসেবে: ঠিক ৭১ এর মতই, হারাটা সুনিশ্চিত হবার পর। "হারা" মানে এ ক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি "নিষিদ্ধ হওয়া" (অথবা সাঈদীর ফাসী?)।
আমার বাবার নাম মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। প্রজন্ম চত্বরে ঘটে যাওয়া গণজাগরণের আগেই স্থীর হয়েছিল, বাবা ১২ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পাবনা যাবেন সেখানে বই মেলা উদ্বোধন করতে। কিন্তু এরই মধ্যে শাহবাগ চত্বরে আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের "দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ"। আপনারা হয়ত জানেন আমার বাবার তীব্র মৌলবাদ ও শিবির-বিরোধী অবস্থানের কথা। বাবার এই অবস্থান বহু বছরের পুরনো। গণজাগরণ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকেই বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পাবনার সরকারী এডওয়ার্ড কলেজে যাবেন এবং কলেজটিকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করবেন। এডওয়ার্ড কলেজ শিবিরের একটি শক্ত ঘাঁটি। আপনারা নিশ্চই জানেন পাবনা যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী এলাকা যেখানে সে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা সোবহানেরও বাড়ি এই এলাকাতেই। নির্বাচনে পরাজিত হলেও শিবিরের আধিপত্য পাবনায় কমেনি। এডওয়ার্ড কলেজকে 'শিবিরমুক্ত' ঘোষণা করলে পাবনার মানুষের মাঝে আরো সাহস সঞ্চারিত হবে, এমনটাই বাবা ভেবেছিলেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন,বাবা তাই করতে পেরেছিলেন এডওয়ার্ড কলেজে ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখ দুপুরে। সেদিন আমিও বাবার সাথে ছিলাম। সন্ধ্যায় পাবনার গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবা পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী-বিরোধী অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার পরপরই আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হই। তখনই ফোনে খবর আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের ছাত্র আব্দুল মালেকের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যুর দুঃসংবাদ।
জামাতের কোন পদক্ষেপই ভুল বা হঠকারী সিদ্ধান্ত না, এটা জেনে রাখুন। আজকে ব্লগার থাবা বাবার হত্যাকান্ড একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। আর এর পেছনে কাজ করেছে জামাতের দুর্দান্ত কিছু স্ট্র্যাটেজি।
একটা জিনিস চিন্তা করুন, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে একজন মানুষের মতামতের জন্য তাকে হত্যা করা আপনি কি সমর্থন করেন? যদি কোন কারণে সমর্থন করেন তাহলে এই লেখাটা আর পড়ার দরকার নেই। আর যারা সমর্থন করেন না তারা পড়ুন।
ইউরোপের যেকোন দেশের যেকোন রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাৎসীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে মানবাধিকারে চুপচুপে দুইটা কথা বলে দেখুন। গণতন্ত্রের ধ্বজ্জা উড়ানো ইউরোপিয়ানরা গণতন্ত্রের ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড খুলে সেটা আপনার পিছনে ঢুকিয়ে দিবে। মানবাধিকার বেঁচে খাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করুন নাজীদের রাজনীতি করার অধিকার দিচ্ছেনা অমুক সরকার, তমুক সরকার বলে, হলোকাস্টের বান্ডিল বান্ডিল ইতিহাস গিলিয়ে খাইয়ে তারপর আপনার নামে তারা একটা ভীষণ নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে দিবে।