আমি খুব ভাল ভাবে জানি, তাঁর জন্য লেখা হবে না কোন গদ্য-কবিতা, শহীদ হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবেনা মানুষটির নাম, মানবাধিকারের বুলি কপচিয়ে মুখে ফেনা তুলবেনা কোন আন্তর্জাতিক অধিকারবেশ্যা, সুশীল-কুশিল, ডান-বাম, উপর-নিচ সবাই মুখে কুলুপ এঁটে নিজেদের নিরপেক্ষতা জাহির করবে নিশ্চিত, তাঁর জন্য মিছিল হবেনা, কোন স্লোগান হবেনা, হবেনা অবরোধ-হরতাল। রাজনীতির খেলায় আবুল কাশেম একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র।
১।
আমার জন্ম খুব সাধারণ পরিবারে। কঠোর ইসলামিক ধ্যানধারণা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পর্কে তীব্র সচেতনতা এর কোনটাই আমার পরিবারে ছিল না। স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রথম হাতেখড়ি হয় বাবার কাছ থেকে আর বাকিটা বই পড়ে কিংবা সিনেমা দেখে। তবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ দুই সরকারের সময়েই স্কুলে পড়ার কারণে স্কুলের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের দুই রকম ইতিহাস পড়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে। এটা দু:খজনক একটা ব্যাপার তবে বড় একটা অংশ বাদ দেয়া ছাড়া বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভয়ংকর কোন ম্যানিপুলেশন ছিল না। যেমন, রাজাকার নামটা বাদ ছিলো, বলা হতো এদেশীয় দোসর তবে রাজাকাররা দেশ রক্ষার চেষ্টা করছিল এমন কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না। অন্তত দশ এগারো বছরের কিশোর হিসেবে ওই বইগুলো থেকে এতটুকু বুঝতাম যে মুক্তিযুদ্ধ আসলে বিশাল একটা ব্যাপার।
আদর্শ আর নীতি নিয়ে ওদের অনেক বড়াই ছিলো
ওদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ‘দুই কুকুরের লড়াই’ ছিলো!
চিরকালই এই দাদারা ইহার উহার লেজুড় ছিলো
এই দাদাদের পোটলায় লাল খোর্মা এবং খেজুড় ছিলো!
স্কুলে যাওয়ার পথে এক পাগলের সাথে প্রায়ই দেখা হত। নির্ঝঞ্ঝাট-নির্বিবাদী মানসিক ভারসাম্যহীন সিধা সাধা মানুষটা বিড়বিড় করতো আর বাতাসে আঙ্গুল নেড়ে কি জানি হিসাব করত। স্কুল ছাড়ার পরে আর কখনও তাকে দেখিনি। সে কিসের হিসাব মিলানোর চেষ্টা করতো কখনও জানা হয়ে উঠেনি। তবে তার চেহারায় একটা অদ্ভুত হাসি লেগে থাকতো সেটা এখনও মনে পড়ে।
দেখ যায় পেরিয়ে যুগের পরে যুগ কত!
আছে অপেক্ষাতে তিরিশ লক্ষ আত্না তো।
জানি বঙ্গবন্ধু পঁচাত্তরে বাঁচলে ঠিক,
অনেক আগেই শুয়োরগুলো দেখতো শিক।
তখতে তখন পাকিস্তানি আত্নারা,
দেশপ্রেমিক আর আমজনতায় বাকহারা।
তারপরে এক মেজর সাহেব নাম করা,
করলে শুরু রাজনীতিতে মশকরা!
পাকিস্তানি ভূতের পূজা হয় শুরু,
গোলাম আজম ফিরল দেশে, তার গুরু?
সংবিধানের কাঁটাছেড়ায় ধর্মবিষ,
ঢুকিয়ে দিলেন মেজর সাহেব, ধানের শীষ।
এইচ এস সি পাশ করার পরে একটা যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছিলাম - ভর্তি যুদ্ধ। আমাদের কাছে সেটা সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধ ছিল কারণ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরম তোলা, ফরম জমা দেওয়া এবং ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পড়েছিল মোটামুটি একই সময়ে। আমাদের তো মাথায় হাত দেয়ার মত অবস্থা!
জনতার প্রচন্ড ভীড় থেকে অস্থির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে, বেশিরভাগই হতাশামাখা। কি যে হয়ে গেলো এতো দ্রুত অনেকেই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারলোনা।
একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে তারা বলছে, ''হায়! তিনি কোথায় চলে গেলেন''
একজন বলছে, ''আমি ঘোর পাপী, তাই ঈশ্বর আমাকে দেখা না দিয়েই চলে গেলেন''
ভীড় ঠেলে বের হয়ে এসে কেউ একজন সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ''এই ভর দুপুরে ঈশ্বর কোথায় যেতে পারেন বলে মনে হয়?''
প্রথম প্রেম যেমন ভুলা যায়না, ঠিক তেমনি প্রথম জনসেবার ইচ্ছা থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতাও আমি ভুলিনি। প্রিয় ব্লগার চরম উদাসের 'মাইক' পড়ার পর সেটা নিয়ে লেখার ইচ্ছা জাগলো। ভালো লিখতে পারিনা, তাও ভাবলাম লিখি, অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। যতোটুকু লিখতে চেয়েছিলাম তার শুরুটা একই রাখছি, কিন্তু ঘটনাচক্রে সমাপ্তিটা অন্যভাবেই টানতে হচ্ছে। যাই হোক, প্রারম্ভিকা টেনেটুনে লম্বা না করি।
প্রাক-কথনঃ লেখার ঘটনাকাল অক্টোবর ১১ থেকে অক্টোবর ১৮। দেশের অস্থির এক সময়ে লিখছি এই লেখা। সামনের দিনগুলো যে আরও অস্থির যাবে তা বলার জন্য খুব একটা মাথা খাটাতে হয় না।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সবকিছুর শুরু একটা ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে।