…
সপাং করে পিঠের ওপর জালিবেতের তীব্র বাড়িটা পড়তেই শার্টের নিচে চামড়াটা যেন ঝলসে উঠলো অপুর ! অবিশ্বাস্য চোখে রহমান স্যারের এমন ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে শিউড়ে ওঠলো সে। বড় বড় চোখ দুটো ডিমের মতো ঠেলে বেরিয়ে আসছে তার ! চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাশ টিচার রহমান স্যারের এমন উগ্র রূপ আগে কি কখনো দেখেছে সে ! কিছুতেই মনে করতে পারলো না।
[ ইরম চানু শর্মিলা কে নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে লেখার পরে একজন পাঠক অনুরোধ করেছিলেন মনিপুরের থাংজাম মনোরমা ও পেবম চিত্তরঞ্জনকে নিয়ে লেখার জন্য। এই দুজনই ভারত সরকারের "Armed Forces (Special Powers) Act (AFSPA)"/ "আফসা" এর নির্যাতনের ভয়াবহতার সাক্ষী। সংঘাতপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলগুলো- অরুনাচল, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরাতে এই আইন
ক্লাসের জন্য ঘুম থেকে উঠার কথা চিন্তা করলেই মনের ভিতর একটা অনুভূতিই কাজ করে আর সেটা হল উফফফফ! কি যন্ত্রণাটাই না দিয়েছে পুরা ছাত্রজীবন জুড়ে। আর এই কষ্টটা প্রকটাকার ধারণ করে বুয়েটে আসার পরেই। প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার জন্য একবার করে সুইসাইড করা-এটাই হচ্ছে মূলনীতি। শুনেছি ঘুম আর মৃত্যুর মাঝে নাকি পার্থক্য অনেক কম। নিজের মৃত্যু থেকে নিজেই নিজেকে জাগিয়ে তুলে ক্লাসে যাওয়া- এতো আর যা তা ব্যাপার নয়। নাকি?
স্কুলে থাকতে শিখিয়েছিলো জড় পদার্থকে ডাকাডাকি করার দরকার হলে নাকি স্ত্রীবাচক শব্দ দিয়ে ডাকতে হয়। জড় পদার্থ যেহেতু, সেহেতু ‘জ্বী স্যার’ বলে সালাম ঠুকে দাঁড়াতে পারবেনা বলেই জানতাম, তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম এদের ডাকাডাকি করার দরকারটা কী! বেশী প্রশ্ন করা বাচ্চাদের কেউ দেখতে পারে না, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নাই, তাই মিনি দাবড়ানির সাথে ‘এটাই নিয়ম’ এই উত্তরেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো তখন! নিয়ম মানবো বলেই হয়তো তখন থেকেই আমি আমার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিকে স্ত্রীবাচক সম্বোধনের সাথে সাথে ওদের সাথে গল্পগুজব করাও শিখে গেলাম! স্কুল থেকে এসে অবশ্য এর বেশী কিছু করারও থাকতো না। সবাই ব্যস্ত থাকতো আর আমার সারাদিনের স্কুলের কতশত গল্প শোনার সময় কারো হতোইনা! তাই আমার বড় পুতুলটাকে একপাশে বসিয়ে পেন্সিল বক্স থেকে শুরু করে চাইনিজ গল্পের বইগুলোকে পর্যন্ত লাইন ধরে সাজিয়ে গল্প করতাম, গোলমরিচ গুড়ো দিয়ে ডিম সেদ্ধ আর গ্লাস ভর্তি দুধ ভাগাভাগি করে খেতাম সবার সাথেই। আঁকার খাতায় ছবি এঁকে পেনসিলটাকেই বলতাম, ‘দেখেছো, আমি আর তুমি মিলে কতো সুন্দর ছবি আঁকি?’ সেই অভ্যাস আজও আছে।
লাল টিপ ছবির ব্যাপক প্রচার প্রচারনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং দেশীয় চলচিত্রের উন্নতি সাধনের মহান ব্রত নিয়ে বলাকা সিনেমা হলে দেখে আসলাম লাল টিপ। আধা প্যারিস আধা ঢাকা-ধামরাই এ ধারনকৃত লাল টিপ ছবি দেখে যা মনে হল তা বলার ভাষা নেই! ছবি দেখে যে টিপের কথা মনে হল সেটাই কার্টুনে আঁকাবার চেষ্টা করলাম!
এক দেশে এক দুরন্ত-ধুরন্ধর সেনাপতি ছিলেন।
সেই সেনাপতি সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একদিন হঠাৎ রাজা হয়ে গেলেন।
রাজা হওয়ার পর সে স্বৈরাচারী শাসন শুরু করলেন।
সেই রাজা আবার খুব রমণীমোহন পুরুষ ছিলেন।
তার পৌরুষ-শৌর্য-বীর্য নিয়ে লোকমুখে অনেক মুখরোচক কাহিনী প্রচলিত ছিলো।
কথিত আছে তার পৌরুষের প্রভাবে ও ক্ষমতায় পুরুষ বাঁদরও সন্তান গর্ভধারণ করতে পারতো।
১
বরবাদটা এখনও ঘুমায়নি তাহলে। কালকে আটটায় ক্লাস সেদিকে হুঁশ আছে? বলতে বলতে মাহিন বালিশের পাশে রাখা ল্যাপটপের স্ক্রিনের উপর ঝুঁকে পড়ে। ফেসবুকে সে তখনও অনলাইন, লগ আউট করা হয়নি। প্রোফাইল অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হাসানের সঙ্গে ঘন্টা দেড়েক আগেই কথা হচ্ছিলো নেটে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে। পরে ঘুম চলে আসায় আস্তে করে গান ছেড়ে দিয়ে হাসানকে “যাইগা দোস্ত্” বলে ঘুমিয়ে পড়ে।
আমরা জাতি হিসেবে অনেক কৃতিত্ব এর দাবীদার, আমরা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, স্বাধীনতা যুদ্ধ করে অর্জন করেছি, স্বৈরশাসক এর পতন ঘটিয়েছি তরুণ রক্ত দিয়ে, জাতি হিসেবে আমরা বীরের জাতি, এই দাবি করতেই পারি। কিন্তু একটা দাবি আমরা করিনা, সেটা কি?
- তানভীর আহমেদ।