দুপুর দুটো বেজে এক মিনিট। শুনছেন বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।
মোগল বাদশাদের সবসময়ই ধারণা ছিল সফরের সময় পাত্রমিত্রসিপাইসান্ত্রী কাঁধে নিয়ে ঘুরলে বিপদেআপদে কাজে আসবে। সফরের মূলমন্ত্র ছিল গতি, থামা চলবে না। বলা হত এমনকি চমৎকার দিলখোশ নদীর পারের সূর্যাস্তের ভিউওলা স্থানেও এক রাতের বেশী দুরাত আরাম করে তাঁবু গেড়ে বসা যাবেনা অযথা। আওরঙ্গজেব বলেনঃ “সম্রাটের কখনোই আয়েসে গা ঢেলে আরামে মত্ত হওয়া যাবেনা। এভাবেই একের পর এক দুর্বল রাজ্য হার মেনেছে। সবসময় চলার উপর থাকতে হবে যথাসম্ভব। উত্তম রাজা বহমান পানির ধারার মতই, থেমে গেলে সর্বনাশ।”
আওরঙ্গজেব এই সর্বদা দৌড়ের উপর থাকার পলিসি খাটিয়ে নিজের বাপকেও কোণঠাসা করে এনেছিলেন, পিতা শাজাহান আগ্রা আর দিল্লীতেই ছিলেন গ্যাঁট হয়ে বসা।
প্রতিদিন দুপুর বারোটায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুরাট কুঠির ইংরেজ অফিসারেরা বিরাট হলরুমে খেতে বসতেন লাইন ধরে। এক চাকর বদনা হাতে ঘুরে ঘুরে সকলের হাত ধুইয়ে দিত। ১৬৮৯ সালে জন অভিংটন নামে এক পাদ্রী খেতে বসেছিলেন ঐ খানাঘরে বাকীদের সাথে। ঝরঝরে চাউলের পুলাউ পরিবেশিত হয়েছিল, দানাগুলো একে অপরের সাথে লেগে ধরেনি আর তাতে মেশানো ছিল চৌদ্দরকম মশলা। টেবিলে আরো ছিল “দমপোখত”, মুর্গীর ভিতর কিসমিস বাদাম ঠেসে ভরে কড়াইয়ে ঘিতে চুবিয়ে রান্না হত এই খাবার। আরো ছিল কাবাব, নুন গোলমরিচ রসুন মাখা গরু আর খাসির গোস্ত তেলে ভাজা, যার “প্রতিটি টুকরার ভিতর মেশানো থাকত নানান মশলা।”
সতর্কীকরণ- নিজ দায়িত্বে পোস্টে প্রবেশ করবেন, যদি যৌনতা নিয়ে বেশী রক্ষণশীল হন তাহলে দেখার দরকার নাই।
১৬১৬ সালের ডেনমার্ক এক হাজার বছরের পুরোন সামুদ্রিক পরাশক্তি, আইসল্যান্ড আর গ্রিনল্যান্ড সহ উত্তর আটলান্টিক জুড়ে তাদের প্রতাপ। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডেনমার্ক রাজ্য জুড়ে ছিল বর্তমান নরওয়ে এবং বর্তমান সুইডেনের দক্ষিণাংশ। মূলতঃ কৃষিজীবী ছিল দেশটি, সুইডেন পোল্যান্ড আর বিবিধ জার্মান স্টেটের সাথে তাদের হরদম কাইজা লেগেই থাকত।
অন্যান্য ইয়োরোপীয় কোম্পানীর মতই ১৬১৬ সালে ড্যানিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী খোলা হয় পয়সা বানানোর ধান্দায়। তবে অন্যান্য কোম্পানী যেরকম পরে এই মূল লক্ষ্য থেকে ক্রমশ সরে গিয়েছিল ড্যানিশ কোম্পানীর ক্ষেত্রে তা হয়নি, এরা আগাপাশতলা বাণিজ্যেই শতভাগ মন দিয়েছিল। নানাবিধ দেশদখল মারামারি কাটাকাটিতে এরা যায়নি বললেই চলে। কোম্পানী ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছেও অবশ্য একারনেই।
নিউপোর্ট, রোড আইল্যান্ডের টমাস টিউকে ১৬৯২ সালে বারমুডায় দেখা যায়। সেখানে সে একটা ছোট পালতোলা নৌকা কেনে, পয়সা সে কোথায় পেয়েছিল কেউই নিশ্চিত না। তবে পরে এক কর্মকর্তা লিখে গেছেন যে সে অতীতে দুর্ধর্ষ পাইরেট ছিল। ১৬৯১ এর শেষে একই নামের এক দস্যু কেপ কডে লুটপাট চালায়। যদিও একথা প্রমাণিত না যে এই টিউই সেই ব্যক্তি, কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায়।
ডিসেম্বর ১, ১৬২৭
দাক্ষিণাত্যের নিজামশাহী এলাকা
আমার পিতার চার স্ত্রী, কিন্তু যাকে তিনি সবচাইতে ভালোবাসেন আমি সেই আরজুমান্দ বানু বেগমের কন্যা। আমি নিজেও বেগম, রাজকন্যা। আমার নাম জাহানারা, খুররমের কন্যা, সম্রাট জাহাঙ্গীরের পৌত্রী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মোগল শাসক আকবরের প্রপৌত্রী, বাবুরের প্র-প্র-প্রপৌত্রী।
আমার রয়েছে পায়ের আঙুলের মত বড় হীরে আর গুবরে পোকার আকারের চুনিপাথর। রয়েছে সাঁইত্রিশ চাকরনফর আর আটটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হাতি শুধুমাত্র আমারই সেবা করার জন্য। আমার যা নেই তা হল স্বাধীনতা। আমরা সকলেই আটকঃ আমার মাতা, পিতা, ছোট ভাইয়েরা আর ছোট বোনটি। সোনার ঝালর দেয়া তাঁবুতে পান্নাখচিত পাত্রে আমরা পান করি অথচ আমরা নিছকই বন্দী।
আমি যে বহুতল ভবনে থাকি তার পাঁচটা লিফটের একটায় উঠতে গেলে বীজগণিত জানা লাগে। সূত্র y= (x+1)। Y হল যে তলায় পৌঁছাবেন, আর x হল যে তলার বাটনে চাপ দেবেন। আপনি ভাবছেন এ আবার কি হেঁয়ালি, যে তলা চাপব সেই তলাতেই তো লিফট থামবে। এতো সহজ নয়, এই লিফটের সূত্র আলাদা। দুই এ টিপলে তিনতলায় থামবে, বিশ এ টিপলে একুশ। সুতরাং মনে করি আপনি যাবেন ২৩ তলায়, অর্থাৎ y = 23। কিন্তু সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি y = (x+1), সুতরাং (x+1) =23 বা x = 22। অর্থাৎ লিফটে চাপতে হবে বাইশ। হুঁ হুঁ, অংক জানতে হয়।
ষাটের দশকে মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বময় ছড়িয়ে যাবার ফলে ব্রিটেনে ভারতীয় খাবার জনপ্রিয় হবার পথ আরো সুগম হয়। একদিকে দেখা গেল এশিয়াতে নতুন সৃষ্ট কিছু দেশে প্রচুর পরিমাণ গরীব মানুষের যেকোন উপায়ে টাকা রোজগারের ধান্দা... তারা কাজের পরিবেশ, কঘন্টা খাটতে হবে, গতর খাটাতে হবে কিনা ইত্যাদি উপেক্ষা করে টাকা কামাতেই উৎসুক ছিল। এর সাথে যুক্ত হল ব্রিটেনের শিল্পখাতের সম্প্রসারন, তাদের প্রচুর লেবার দরকার ছিল। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ এর মাঝে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আইনে পরিবর্তন আনা হয়। বাংলাদেশীরা এর ফলে ব্রিটিশ পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করতে পারল, আর ইউকে তে প্রতিষ্ঠিত লোকেদের তাদের পরিবারকে উড়িয়ে আনার অনুমতি মিলল।
ব্রিটেন ও আমেরিকায় পয়লা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খোলে সিলেটীরা। সিলেট ছোট জেলা, মুসলিমপ্রধান। জঙ্গলে ঘেরা, চা উৎপাদনের উপযোগী ছোট টিলায় ভরা জায়গা সিলেট, উত্তরপূর্বে আসাম। মোগল আমলে আওরঙ্গজেব লক্ষ্য করেন “সিলেট প্রদেশে, যা কিনা সুবা বাংলার অন্তর্ভুক্ত, রেওয়াজ ছিল পরিবারের কয়টি ছেলেকে খোজা বানিয়ে গভর্নরের কাছে ভেট পাঠানো হত খাজনার বদলে”। ইংরেজ আমলে সিলেট বিখ্যাত ছিল সুমিষ্ট কমলালেবুর জন্যে, কিন্তু রান্নাবান্নায় এদের তেমন তেলেসমাতির খবর পাওয়া যায়না। একটি খাবার নজর কেড়ে নেবার মত, তা হল পচানো পুঁটি মাছ।