আমি বরাবরই জনহিতৈষী মানুষ। সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছি কিভাবে মানুষের জন্য কাজ করবো। ছাত্রজীবন থেকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কর্মজীবনের মধ্যাহ্নে প্রবেশ করেছি তবু জনহিতকর কর্মে নিয়োজিত হবার সুযোগ পাইনি। গ্রামে গেলে গরীব মানুষের ক্লিষ্ট মুখের দিকে তাকিয়ে বুকটা হু হু করে ওঠে। কিন্তু শেখ মুজিবের মতো গায়ের চাদর খুলে শীতার্ত মানুষটার গায়ে পরিয়ে দিতে পারি না। আসলে আমার গায়ে তো চাদরই নেই। গ্রামে গেলে লেদার জ্যাকেট
বড় হইতে হইলে হয় অতীত ভুলিয়া গিয়া নবজীবন লাভ করিতে হয়, নতুবা অতীতের পশ্চাদদেশে পদাঘাত করিয়া সম্মুখে আগাইয়া যাইতে হয়। আমি দ্বিতীয়টা বাছিয়া লইয়াছিলাম। ফলাফল- ছিলাম নৌকার মাঝি, হইয়া পড়িলাম জাহাজের সারেং। পুরাতন মাঝিমাল্লা বন্ধুদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করিয়া নতুন জীবনের স্বাদ লইতে লইতে নিজের নাম আর বাপের নাম বাদে বাকী সব ভুলিয়া গেলাম। আমার এখন নিত্য ওঠাবসা জাহাজওয়ালাদের সাথে।
ঢাকা শহরে হোটেলগুলি একটি অলিখিত রুটিন মাফিক চলে। ভোরবেলা পাঁচটার দিকে সবাই হঠাত ঝাঁপ খুলে রুটি বেলতে বসে যায়। হালকা সবজি রান্না চলে পিছনে, সামনে বিশাল ব্যাসের ফ্ল্যাট কড়াইতে পাশাপাশি ভাজা হয় পরোটা আর ডিম। বেশুমার পরোটা ভাজি ডিম সবজি আগের রাতের মাংসের তরকারি উড়ে যায় মিনিটে মিনিটে। দশটা বাজে। এইবার সকলে শুরু করে গণ সিঙ্গাড়া ভাজা। আচমকা দোকানের সামনে ঝুড়ি উপচে সঙ্গাড়া সমুচা হাজির হয়। রামপুরার আবুল হোটেল অথবা নীলক্ষেতের চিপা দোকান, সায়েদাবাদ অথবা মীরপুর যেখানেই থাকুন দুপুর এগারোটায় হোটেলে গেলেই দেখবেন ঝুড়িভর্তি সিঙ্গাড়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। এই সিঙ্গাড়ারা সকাল দশটার আগে অনুপস্থিত। এদের জন্ম দশটায় মৃত্যু একটায়। স্বল্পস্থায়ী একটি অর্থপূর্ণ জীবন।
সুবা বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ ছিলেন একটি মহামূর্খ। দূরদর্শিতা ও বুদ্ধির অভাব এবং শরাবে ডাইলুটেড ঘিলু নিয়ে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি। কিন্তু তার টার্গেট ছিল সঠিক, বেনিয়া ইংরেজ যে হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল তা তিনি নানা আলিবর্দির মতই ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সিরাজ আলিবর্দি ছিলেন না। ইংরেজকে টাইট দিতে গিয়ে নিজেরই হালুয়া টাইট হয়ে যায় তার। সেই পুরান পোকার খেলার নীতি, ইউ হ্যাভ টু নো ওয়েন টু হোল্ড ইয়োর কার্ড অ্যান্ড ওয়েন টু ফোল্ড। সিরাজ কখন কার্ড ফোল্ড করতে হয় জানতেন না, তিনি বেট মেরেই চলেছিলেন। নভিস খেলোয়াড়।
আজকের পর্ব দীর্ঘ পর্ব, পাঠক চা নিয়ে বসুন। গত পর্বে আমরা দেখেছি কাশিমবাজার কুঠি ঘেরাও হবার পথে। আজ দেখব নবাবের কাশিমবাজার দখল ও কোলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম আক্রমণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ে আসুন আলোচনা সেরে নেই মূল অনুবাদ পড়ার আগে।
“সিরাজ উদ্দৌলা, সিংহাসনে অধিরুঢ় হইয়া, মাতা মহের পুরাণ কর্ম্মকারক ও সেনাপতিদিগকে পদচ্যুত করিলেন। কুপ্রবৃত্তির উত্তেজক কতিপয় অল্পবয়স্ক দুষ্ক্রিয়াসক্ত ব্যক্তি তাঁহার প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন হইয়া উঠিল। তাহারা প্রতিদিন তাঁহাকে কেবল অন্যায্য ও নিষ্ঠুর ব্যাপারের অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতে লাগিল। সেই সকল পরামর্শের এই ফল দর্শিয়াছিল, যে তৎকালে প্রায় কোন ব্যক্তির সম্পত্তি বা কোন স্ত্রীলোকের সতীত্ব রক্ষা পায় নাই।”
শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাঙ্গালার ইতিহাস।
….....................
নবাব আলিবর্দি মারা যাবার পর তাকে গোর দেবার আগেই সিরাজউদ্দৌলা তখতে লাফ দিয়ে বসেন। বসেই তিনি প্রথম কলকাঠি নাড়া আরম্ভ করেন খালা ঘষেটি বেগমের ঘষটামি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। ঘষেটি তার অঢেল পয়সাকড়ি নিয়ে মতিঝিল প্রাসাদে থাকতেন। প্রাসাদের চতুর্দিকে পানি, শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভিতরে ঘষেটি বেগম তার লাভার নাজির আলি আর কয়টা সিপাই। কিন্তু ফাইট হলনা, আলিবর্দির বিধবা স্ত্রীর অনুরোধে ঘষেটি আত্মসমর্পণ করেন। নাজির আলিকে কানে ধরে দরবার থেকে বের করে দেয়া হয়, ঘষেটিকে চালান করা হয় হেরেমে আর তার পয়সাকড়ি চালান করা হয় কোষাগারে। এ সবই হয় আলিবর্দি দেহরক্ষার দশ দিনের মধ্যে। নবাব কিছুটা চিন্তামুক্ত এখন। তবে পুর্ণিয়ার নবাব, শওকত জং আর ইংরেজের সাথে বোঝাপড়া বাকি।
মারাঠা যন্ত্রণা কিছুটা কমে আসার পর আলিবর্দি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানান ফ্যামেলি ঝামেলি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তার অতি আদরের ধন সিরাজ গদি পাবার জন্য লাফঝাঁপ আরম্ভ করে দেয়, ১৭৫০ সালে সে বিদ্রোহও করে বসে। তরুণ গর্দভটিকে আলিবর্দি ক্ষমা করে দেন, বৃদ্ধ নবাবের এই নাতিটির প্রতি অসীম ভালবাসা ছিল। সেই ভালবাসার সুযোগ নিয়ে সিরাজ ইচ্ছেমত পাইকারি বজ্জাতি চালিয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় ঐতিহাসিক গুলাম হুসেন খানের মতে,
“ভালমন্দের বাছবিচার না করে, আদব লেহাজের ধার না ধেরে তিনি যখন যা খুশী তাই করতেন। ছোট বড় মেয়ে মদ্দ কারুরই ছাড় ছিলনা তার সামনে। অতি অল্প সময়ে মিশরের ফারাও এর মতই তিনি ঘৃণ্য হয়ে উঠলেন, আর তাকে দেখা মাত্র লোকে মনে মনে ভাবত ও আল্লা বাঁচাও ডরাইসি!”
[justify]এই প্রশ্নটা মুখ ফুটে অনেকে করেন না। কিন্তু বিবর্তন আর ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের (আইডি) তর্কটা যারা বোঝেন, এআই নিয়ে ভাবতে গেলে তাদের একবার হলেও প্রশ্নটা হয়তো মাথায় আসে। বিবর্তন তত্ত্বানুসারে সকল প্রাণী তাদের বুদ্ধিমত্তা সমেত প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে। কোনো বুদ্ধিমান কর্তার হস্তক্ষেপ বা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন ছা
প্রথম পর্ব । দ্বিতীয় পর্ব । তৃতীয় পর্ব
মারাঠারা তাদের রীতি অনুযায়ী যুদ্ধে আগে বাড়ার আগে শত্রুপক্ষের সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে মত্ত হল। আলিবর্দি তাদের ফাইট দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার সাথের আফগানেরা বেঁকে বসে। তাঁবুর পেছন দিক দিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে মারাঠা ঘোড়ার দল, অগুণতি সিপাই ঘিরে ধরে ক্যাম্প। আলিবর্দি পড়লেন বাটে। তিনি দূত পাঠিয়ে বললেন আচ্ছা যাও যাও চৌথ বাবদ দশ লাখ রূপী চাইছিলে তা দিয়ে দিচ্ছি। মারাঠা জেনারেল তখন ফট করে দাম বাড়িয়ে দশ লাখ নয় এক কোটি রূপী চৌথ হেঁকে বসলেন।
[justify]একটা খুব প্রাচীন প্রশ্ন হচ্ছে, মন কি বিজ্ঞান দিয়ে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব? এই ধরনের প্রশ্ন পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যতোটা সন্দেহ নিয়ে করা হয়, তার চেয়ে বেশি সন্দেহ নিয়ে করা হয় মনোবিজ্ঞান, নিউরোবিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে। এর কারণ যতোটা না মনের জটিলতা, মানুষের আচরণের জটিলতা, তার চেয়ে অনেক বড় কারণ হলো মানুষের ব্যক্তিক, প্রথম পুরুষের দিক থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা। একটা সিস্টেম জটিল হবার অর্থ এই নয় যে সেটা বিজ্ঞানসাধ্য নয়। কিন্তু মানুষের প্রথম পুরুষগত অভিজ্ঞতাটি জটিলতার চেয়েও বেশি কিছু। এর সাথে পর্যবেক্ষণসাধ্যতা ও পুনরুৎপাদনযোগ্যতার প্রশ্ন জড়িত, যেগুলো বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। মানুষের ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার প্রকৃতিটাই এমন, যার সাথে বৈজ্ঞানিকতার অসঙ্গতি আছে।