প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে গান শুনি। একগান বারবার শুনি। আলগোছে, আগুণ, আগুণের পরশমণি, চেরুবিক, মুক্তির মন্দির, সন্ধ্যার মেঘমালা, বন্যা এগুলো হলো উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ারে সেভ করা কয়েকটা প্লে-লিস্টের নাম। ভীষণ পছন্দের সব গান এতে। ল্যাপটপে আর কতই বা জোরে শব্দ হয়! তবুও গান বাজানো শুরু করি যখন সাউন্ড একদম সবচেয়ে জোরে দিইনা। শুনতে শুনতে যখন হঠাত কোন ক্ষণে মনে হবে আরেকটু সাউন্ড বাড়ালেই বোধহয় গানটা আরো দূরে বা কাছে কোথাও ছুঁয়ে যাবে তখনকার সুযোগটা নেবার জন্যেই এই আবেগময় সংযম।
আমার জন্ম আজ থেকে দুই যুগের কিছু কম মতো আগে, কোন এক বিমর্ষ অক্টোবরে ! অক্টোবর আগে বিমর্ষ ছিল না, আমার জন্মের দুঃখে বিমর্ষ হয়ে গেল। আমার জন্মানো ছাড়া জন্ম সঙ্ক্রান্ত আমার আরও যে বৃহৎ আফসোসটা ছিল তা হলো আমার জন্মের সাথে বাংলাদেশের জন্মের কোন সম্পর্ক নেই। জাতীয় কোন দিবসে জন্মদিন হলে বন্ধুরা অনেক মজা টজা করে, যাকে আলোচিত কিংবা বিশেষত্বপূর্ণ জন্ম বলা যায় আর কি!
ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে ওবামা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে "Express concern against International War Crime Tribunal and Mob Justice in Bangladesh" নাম দিয়ে একটা আর্জি/পিটিশন পেশ করা হয় এইখানে (https://petitions.whitehouse.gov/petition/express-concern-against-international-war-crime-tribunal-and-mob-justice-bangladesh/6gg04svt)। পিটিশনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল এর বিপক্ষে। Mob এর বাংলা দাড়ায় হ
১: শাহবাগ আন্দোলনে সরকার কেনো টিয়ার গ্যাস মারে না, নিশ্চয়ই সরকারের সাথে শাহবাগের আতাত আছে।
ভিতরের কথা: সরকার পতন হবে, ট্রাইবুনাল বন্ধ হবে, আমার বন্ধু ছাইদি-ছাকা মুক্ত হবে।
২: লাকি আপাকে ছাত্রলীগ আহত করছে। এতেই তো বুঝা যায়, শাহবাগ কই যাইতেছে?
ভিতরের কথা: শাহবাগ যেইখানে মন চায় যাউক, আমি তো শাহবাগ যাবো না।
বাংলাদেশ আক্রান্ত।
দেশ মানে শুধু ক্ষেত নয়, পথ নয়, বাড়ি নয়, উপাসনালয় নয়, দেশ মানে মানুষও। সবকিছুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আজ আক্রান্ত।
।।১।।
শৈশব নিয়ে অনেক লিখেছি। আমার সব লেখাতেই সে উঁকি মারতে আসে, দেখে মনে হয় সব ব্যাপারেই তার কিছু অভিমত আছে; এমনই নাছোড়বান্দা সে। আজকে অনেকদিন পরে কলম (নাকি অভ্র?) ধরলাম – আর ধরা মাত্রই সেই ব্যাটা এসে হাজির। মেহদীকে জিজ্ঞেস করতে হবে, অভ্রের সাইড এফেক্ট হিসাবে এটার কথা উল্লেখ আছে নাকি কোথাও।
শাহবাগ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের জন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ থেকে। তারপর তা দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত বিশ্বের বাংলাদেশীদের মাঝে।
প্রথমেই বলি আমার ব্যক্তিগত প্রাপ্তিটি কি? সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে ইন্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউটে প্রথম “মুক্তির গান” দেখি। আমার কিশোর মনে প্রচন্ড দাগ কেটেছিলো “মুক্তির গান”। বাসায় ফিরে আমি ওই যোদ্ধাদের মত বলতে চেয়েছিলাম, জয় বাংলা। দুর্ভাগ্য আমার, কৈশোর পার হয়ে, যৌবনের শেষ প্রান্তে এসেও আমি দীপ্ত কন্ঠে স্লোগান তুলতে পারিনি। অবশেষে শাহবাগ আমাকে সুযোগ করে দিলো সেই অহংকারি উচ্চারনটির। আমি শাহবাগের কাছে চির-কৃতজ্ঞ।
খবরটা পেলাম দুপুরের দিকে, ফেসবুকে। কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। প্রথমে ভাবলাম হয় আমি ভুল দেখছি না হয় যে শেয়ার করেছে সে ভুল করেছে। সাথে সাথে বিডি নিউজে চেক করে দেখলাম কাহিনী আসলেই এইরকম; বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে কসাই হারামজাদার ভি সাইন ওয়ালা ছবি দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তখনো শাহবাগের খবর পাইনি আমি। সেদিনই বই মেলায় যাওয়ার কথা ছিলো।
আটটার দিকে সি,এন,জি নিয়ে রওনা দিলাম। বার্ডেম পর্যন্ত এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। শ'খানেক মানুষ রাস্তা বন্ধ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছে। একজন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো কসাই কাদেরের রায়ের প্রতিবাদ চলছে। কি মনে করে আমিও বসে পড়লাম উনাদের সাথে। এখান থেকেই আমার শাহবাগ সংগ্রামের শুরু। তবে এদিন বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। মা সাড়ে দশটার দিকে ফোন দিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরিয়ে আনল। তখনও আমি জানতাম না পরবর্তী ৭২ ঘন্টা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তাল সময়।
আপনি যদি ভাবেন, এই দাবী আদায়ের জন্য এভাবে ১৪ দিন রাজপথ আকড়ে না পড়ে থাকার দরকার ছিল না, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন । জামাত শীবিরের রক্তচক্ষু, বহির্বিশ্বের চাপ এবং রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অভিসন্ধিতে ভেস্তে যেত আমাদের এই প্রানের দাবী । এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ, জাতি, রাজনৈতিক দল, সারা বিশ্বকে জোর গলায় জানিয়ে দেয়ার দরকার ছিল এটা সমগ্র জাতির দাবী এবং এই ব্যাপারে কোন আপোষ আমরা মেনে নেব না। আইন পদ্ধতিতেই আমরা এই নরপশুদের ফাসি চাই এবং দিব। ধৈর্যহারা হয়ে অযৌক্তিক ভাবে "দ্রুত ফাসি চাই, এক্ষনি ফাসি চাই " বললে আমাদের নায্য দাবীও সবার কাছে মনে হবে বেআইনী, ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের আইন ব্যবস্থার সুনাম এবং সর্বোপরি আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে বলেই, উত্তাল শাহবাগের দোড়গোড়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকেও গোলাম আজমের গায়ে একটা ফুলও ( পড়ুন জুতা ) কেউ মারে না। আইনী প্রক্রিয়াতেই আমরা এই ঘাতক দালালদের বিচার করে ঝামা ঘষে দিব ডেভিড বার্গম্যানের মত সুযোগ সন্ধানীদের মুখে যারা " মব জাস্টিস " বলে উড়িয়ে দিতে চায় জনতার এই দাবীকে । তাই বলে কি রাজপথ ছেড়ে দিব ? কখনোই না। প্রশ্নই আসে না। আবার আসুন পেছনে ফিরে তাকাই । ৫২ তে ভাষা, ৭১ এ স্বাধীনতা , ৯০ এ গনতন্ত্র কিছুই কি এত দ্রুত পেয়েছি ? খুব কি সুখকর ছিল সেই দিন গুলো। ? তাহলে এত অল্পতেই কেন আমাদের এই হতাশা ? এত অল্পতেই কেন আমরা ক্লান্ত ?? আরো যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বিজয় আসবেই ।