চক্রাতা - স্বর্গ যেমন হয়

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: রবি, ০২/০৫/২০১০ - ১২:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আসলে ঠিক ছিল "লা কোয়েন্টা" প্রোজেক্টের অমিতাভদের সাথে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে যাব ২০০৬ এর ২৬শে জানুয়ারীর ছুটিটায়। তাই ২৭শে শুক্রবার, ছুটিও নিয়ে রেখেছিলাম। ২৩ তারিখ অমিতাভ বলল ওদের গ্রুপের একজনের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই ওরা কেউই যাচ্ছে না। যা: তাহলে কি হবে? আমার তো মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তৈরী হয়ে আছে যাবে বলে। কি করা যায়? শুরু করলাম খোঁজখবর। কিন্তু খুব বেশী সুবিধা হল না। অত কম নোটিশে জিম করবেট ব্যবস্থা করা, তাও একলা একলা, প্রায় অসম্ভব।

ধুত্তোর নিকুচি করেছে। "যদি তোর ডাক শুনে ------ " ইত্যাদি প্রভৃতি --- যে কোন একটা বাসে উঠে দেরাদুন কিম্বা উখীমঠ চলে যাব, তারপর দেখা যাবে। জানা গেল NCR এ বাসেরা সব "বাস-আড্ডা"য় জমা হয় এবং গুরগাঁওতে এরূপ একটি আড্ডা আছে। সেখান হইতে ভোর ৬টা ৪৫মিনিটে দেরাদুনের বাস ছাড়ে। সকাল ৬ টায় যখন বেরোলাম বাড়ী থেকে, তখনও চারিদিকে গভীর অন্ধকার। পূবদিক নাকি একটু একটু আলো হয়ে থাকে এইসময়? লোকে যে বলে! কিন্তু কোনটা যে পূবদিক সেটাই ঠিক করে উঠতে পারা গেল না। সবদিকই সমান অন্ধকার, কোনদিকেই আলোর কোন আভাস নাই। রাস্তায়ও নাই কোন যানবাহন। বাস অবশ্য সকাল সাতটার মধ্যেই ছেড়ে দিল। তখন আকাশে দিব্বি চালধোয়া জলের রঙ। মোদিনগর অবধি গিয়েই বাস কেতরে পড়ল। প্রচুর যাত্রী, যারা হরিদ্বার এর আগে কোথায়ও যাবেন, নেমে হরিয়ানা রোডওয়েজের অন্য বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলে গেলেন। আমার বাপু অত কৃচ্ছ্রসাধনের অভ্যেস নেই, অতএব বসেই রইলাম, যতক্ষণ না বাসটা ঠিক হয়। আরে বাবা বাসকে তো দেরাদুন পৌঁছতেই হবে, নাহলে ফিরবে কি করে? তা সে গেল--- বেলা ৩ টে নাগাদ দেরাদুন ISBT তে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।

সেখানে জানা গেল 'চক্রাতা' যাবার সরাসরি কোন বাস নেই। ওখান থেকে যেতে হবে বিকাশনগর, সেখান থেকে ট্রেকারে চেপে চক্রাতা। ট্রেকার!! ওরে বাবা! তাতে তো ছাদখোলা যানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়! ঐ পাহাড়ী পথ দিয়ে! তার থেকে ট্যাক্সি অধিকতর নিরাপদ অপশান৷ তা এই ঠান্ডার সময়ে তাতে কোন অসুবিধা হল না। তখন তো আর জানতাম না দিল্লীর বাস যেখানে গিয়ে দাঁড়ায়, সেখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটাপথে অন্য আর একটা বাসস্ট্যান্ড আছে, সেখান থেকে চক্রাতার বাস ছাড়ে৷

ট্যাক্সিই নিলাম৷ কালসী অবধি গিয়ে এক ঘন্টার বাধ্যতামূলক স্টপ। পাহাড়ী রাস্তায় একমুখী যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে "ঘাট" ব্যবস্থা চালু আছে৷ দিনরাতের নির্দিষ্ট সময়ে সেখান থেকে একদিকের যানবাহন চলতে দেওয়া হয়৷ একটি ঘাট থেকে পরের ঘাটে পৌঁছনো পর্যন্ত অন্যমুখী গাড়ীগুলো থেমে থাকবে৷ ওদিকের ঘাট ছাড়লে আবার এদিকেরগুলো পরবর্তী ঘাটের জন্য অপেক্ষা করবে৷ কালসীতে ওপরে যাবার পরের ঘাট ছাড়বে সাড়ে পাঁচটায়। ততক্ষণ অপেক্ষা৷ ঘাট ছাড়ল যথাসময়েই, শুরু হল সমতল ছেড়ে পাহাড়ী রাস্তা৷ সরু রাস্তা, চুলের কাঁটা বাঁক, হঠাত্ রাস্তায় ৩০-৪০ টা ছাগল, কানফাটানো বাইক ----- আর মাঝে মাঝে সেই ভীতিকর ট্রেকার৷ তার খোলা চাতালে হাসিখুশী নারীপুরুষ ----- কাজ শেষে ফিরছে কোন পাহাড়ী গাঁওতে। একটু করে উঠছে গাড়ী আর হিমালয় দেখাচ্ছে তার একটু করে পাহাড়ের সারি। তখনও পর্যন্ত কোন 'আদিম মহাদ্রুম'এর দেখা নেই, নিতান্তই কচি দ্রুম সব। পাহাড়ের খাতে নদীগুলির অবস্থা করুণ। জল প্রায় নেই বললেই চলে, রুক্ষ পাথরে ভর্তি। 'সেউনি'তে আবার থামতে হল ঘাটের জন্য। যোয়ান দেওয়া আলু পরোটা খেতে খেতেই গাঢ় অন্ধকার ঝাঁপিয়ে নামল পৃথিবীতে, আর ঘাটও ছাড়ল। রাস্তায় বাড়ল বাঁকের সংখ্যা, আর সাথে সাথে বাড়ল গাড়ীর গতি। কারণস্বরুপ চালক বললেন ওপরের দিকে ছোটখাট জন্তুজানোয়ার পা চুলকোলে পাথরের টুকরো গড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের গা দিয়ে, পড়ার সম্ভাবনা থাকে গাড়ীর ছাদে। জোরে চালালে নাকি এই সম্ভাবনা এড়ানো যায়। শুনে যে খুব একটা স্বস্তি পেলাম, তা নয়, তবে আমার হাতে নাই স্টিয়ারিং।কাজে কাজেই ----- কেউই জানে না আমি চক্রাতা আসছি, মা জানে আমি জিম করবেটে গেছি অমিতাভদের সাথে, বন্ধুবান্ধবেরা জানে কোথায়ও একটা যাব---ডানদিকে এবড়ো খেবড়ো খাড়া পাহাড়, পাথরের গায়ে জায়্গায় জায়গায় দেওয়া চুনের দাগ গাড়ীর হেডলাইটের আলোয় দাঁত খিঁচিয়ে যাচ্ছে। বাঁ দিকে নি:সীম গভীর কালো অন্ধকার, সামনে শুধু গাড়ীর হেডলাইটের আলো--- আগেপিছে কিচ্ছু নেই----- অনেকটা চলার পরে অনেক দূরে কোন পাহাড়ের গায়ে জোনাকির মতই মিটমিটে এককুচি আলো দেখা দিয়েই ভোঁ---- গাড়ীর আওয়াজ ছাড়া এই পৃথিবীতে নাই আর কোন শব্দরাজি---এই চালক বোধহয় মহাকালের রথেরই সারথী৷

আদিম মহাদ্রুম

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার ঘোর অন্ধকারে যা বোঝা গেল, চক্রাতা আসলে খুবই ছোট্ট একটা জায়গা৷ সাত হাজার ফুট উচ্চতায় ট্যুরিস্ট বিশেষ আসে না - এই শীতে তো আরোই নয়। চালক জিগ্যেস করে কোথায় থাকব? আরে তার আমি কি জানি!? নিয়ে চল কোন একটা হোটেলে। সূর্য্যের সাথে জেগে ওঠা জনপদ তখন লেপের আদরের খোঁজে। 'হিমগিরি ট্যুরিস্ট লজ' ---- সামনের ঘরটিতে চেয়ার টেবিলের পাশে একটি সিঙ্গল বেড। তাতে বসে এক গাড়োয়ালী যুবক মাটিতে রাখা তামার পাত্রের জ্বলন্ত আগুনের তাতে হাত সেঁকছে। জালের ঢাকনির নীচে লালচে আগুনও শীতের প্রকোপে একটু যেন ম্রিয়মান৷ জানা গেল ঘর পাওয়া যাবে। ৩ তলার ঘরটাই মোটামুটি পছন্দ হল। না হলেও কোন উপায় ছিল না অবশ্য। ঘরে রুম হীটার না থাকলেও বাথরুমে গীজার আছে দেখা গেল, আর বিছানায় দুটো লেপ। দেখা গেল এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই৷ জানা গেল সীমান্ত এলাকা বলে এখানে একমাত্র বি এস এন এল-ই মাঝেমধ্যে সিগনাল পাওয়া যায়৷ আমার এয়ারটেলের সিগনাল পাওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই৷

বরফ পাহাড়

গাড়ীর চালক আসার পথেই জানিয়েছিল, যেহেতু আমাকে আবার গাড়ী ভাড়া করে ফিরতে হবে, সে ওখানে থেকে যেতে প্রস্তুত, আশেপাশের ৮-১০ কিলোমিটার যা আমি ঘোরাঘুরি করব, সে তার জন্য কিছুই নেবে না৷ আমিও তাতে আপত্তির কিছুই দেখি নি, যদিও মা' পরে এই কথা শুনে এত ভয় পাবে যে--- সে যাকগে-- সে তো আরো দিন তিনেক পরের কথা৷ তা সে-ও সেখানেই কোথায়ও থাকবে। গাড়োয়ালী যুবক জানায় তার রিস্তেদার সকলেই কারো শাদী উপলক্ষ্যে উ-ই পাহাড়ের গাঁওতে গেছে। হাত জোড় করে জিগ্যেস করে আমি 'সম্পুর্ণ শাকাহারী' কিনা? আরে না না পাগল নাকি, চিকেন এনে দাও তো বাপু। না: চিকেন এখানে সহজলভ্য নয়, মাটন নাকি খুব ভাল, সে আমাকে মাটন কোর্মা আর খান আষ্টেক রোটি অফার করে। হায় আমাকে দেখে অনেকেই ভীমটিম গোছের কিছু একটা ভেবে নেয়! ভাতের সন্ধান করতে জানা গেল, এখানে তো বাসমতী চাল বিশেষ পাওয়া যায় না, এখন তো যাবেই না - ভাত কিন্তু একটু মোটা চালের হবে। তা তাই সই, নিয়ে এসো৷ ভাত আর মাটন কোর্মা এলে দেখলাম অমন স্বাস্থ্যবান ভাতের দানা আমি কস্মিন কালেও দেখি নাই। তবে সারাদিনের পাঁউরুটি, বিস্কুট, চিপস খাওয়া মুখ ও জিভের অবশ্য তার স্বাদগ্রহণে কোন অসুবিধা হয় নি।

পরেরদিন খুব সকালেপরেরদিন খুব সকালে

ঠান্ডার বহর দেখে দুটো লেপই গায়ে চাপানোই বুদ্ধির কাজ হবে মনে হল। কিন্তু সে লেপেদের টেনে খুলতে বা পাততে আরেকটা সাহায্যকারী বড়ই দরকার। অন্যথায় হাতে ব্যথা অনিবার্য। তো হাতের ব্যথা নিয়েই ঘুমিয়ে তো দিব্বি পড়লাম। হঠাত্ই ঘুম ভাঙ্গে দেওয়াল আলমারীর পাল্লার আওয়াজে। খুটখুট, টকটক, খসখস ---- কিসের আওয়াজ রে? আমি তো আলমারী বেশ চেপে বন্ধ করেছিলাম। আবছাভাবে মনে পড়ে স্বপনকুমারের গল্পে দেওয়াল আলমারীর মধ্যে থাকে গুপ্তপথ, খুনী আসে সেই পথ ধরে ভেতর থেকে পাল্লা খুলে --- নাকি সেটা দস্যু মোহনের গল্প? এদিকে অত ওজনদার লেপের নীচে নড়াচড়াও করা যাচ্ছে না --- বহুকষ্টে ছেঁচড়ে মেচড়ে অর্ধেকটা বেরিয়ে লাইট জ্বালানো গেল। ডানদিকে জানালার পরদা উড়ছে হইহই করে, বাঁদিকে পাল্লা মাঝেমধ্যেই দুলে উঠছে। ভুমিকম্প? কিন্তু খাট, চেয়ার টেবিল তো অনড় অচল। বিশেষ অনুসন্ধানের পর বোঝা গেল জানালার ভেতর থেকে জালের পাল্লা বন্ধ থাকলেও বাইরের কাঁচের পাল্লা খোলা, আর বাইরে প্রবল হাওয়া ও অল্পস্বল্প বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরপরে তো all set ৷ একঘুমে ভোর সাড়ে সাত।

ছোট্ট গ্রাম, ওপরের পাহাড় থেকে দেখা

জায়গাটা এমনিতে চীন সীমান্ত। বিদেশীদের নাকি সেথায় যেতে "পারমিট" লাগে। ওয়েবসাইটে দেখেছিলাম বটে, তবে নয়ন থেকে মরমে তা পশে নাই। চক্রাতা-বাজার আর পাঁচটা ছোট পাহাড়ী বাজারের মতই। মোটেও সুন্দর কিছু নয়, তাই অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তা ধরে হাঁটতেই মন চাইল। রাস্তা আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে উঁচু হচ্ছে। কিছু নেহাত্ বালকগোছের লোককে দেখি মিলিটারী পোষাক পরে কাঠের বোঝা নিয়ে আসছে। কেউবা আবার মস্ত বস্তা কাঁধে , খোদায় মালুম তাতে কি আছে। মস্ত মস্ত দেওদার গাছ আর সদ্য ঘুম থেকে ওঠা সুয্যিঠাকুর রাস্তাটিকে ভারী সুন্দর একটা চিকরিমিকরি জালিকাটা ছায়ায় ঢেকে রেখেছে। রাস্তার পাশের বেঁটে কার্নিস থেকে অনেকটা ঝুঁকে দেখলে তবে দেখা যায় দেওদার গাছেদের গোড়া, আর ঘাড় বেঁকিয়ে প্রায় আধশোয়া হয়ে গেলে তবে দেখা যায় গাছের ডগা। এঁরাই হলেন সব আদিম মহাদ্রুম। চালক মশাই জানিয়েছিলেন যেখানেই দেখিবে দেওদার, জানিবে সেখানেই তুষারপাত হইয়া থাকে। কেন যে অন্তত একটা ক্যামেরাও সঙ্গে আনলাম না, ভাবতে ভাবতেই "ম্যাডামজী, ম্যাডামজী-ঈ" এই আকস্মিক চিত্কারে চমকে উঠি।

সূর্য্যের আলোর প্রথম স্পর্শে

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক গাড়োয়ালী মিলিটারী, কিছু বোঝানো বা মনোযোগ আকর্ষণের আপ্রাণ চেষ্টায় লালচে গাল টুকটুকে লাল হয়ে গেছে। তিনি হিন্দী বলেন গাড়োয়ালী মেশা, আমি বাংলা মেশা। তবে কিনা 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' আর জগতে কমিউনিকেশানের কোন বিকল্প নাই - এই আপ্তবাক্যদের সত্যি প্রমান করে আমরা একসময় একে অপরের কথা বুঝেও ফেললাম। জানা গেল এটি মিলিটারী সংরক্ষিত এলাকা, অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়। গেটের কাছেই নাকি আমাকে আটকানোর কথা ছিল (আমি কিন্তু কোন গেট দেখি নি আসার সময়ে)। আমি কোথায় থাকি, কেন এসেছি জেনে তিনি ভারী অবাক হলেন। আমার কোন আত্মীয় বা বন্ধু মিলিটারীতে নেই, তাও আমি বেড়াতে এসেছি --- কি আশ্চর্য্য! কতরকমের "আজীব ইনসান"ই যে উপরওয়ালা পয়দা করেন , এই ভাবনায় তিনি বড়ই ভাবিত। সামনেই মিলিটারী ক্যান্টিন। ইতিমধ্যে কচিকাঁচা আরো খান পাঁচেক "মিলিটারী" জমা হয়ে গেছেন। তাঁরা কে? না 'মিলিটারী' --- ঐ তাঁদের পরিচয়। সবাই মিলে প্রচুর পীড়াপিড়ি, ক্যান্টিনে আমি যেন এক কাপ চা আর অন্তত দুটো আলু কিম্বা গোবির পরাঠা খেয়ে যাই। আমিও খাব না, তাঁরাও ছাড়বেন না, এদিকে যত বলি চীন বর্ডারটা একবারটি দেখিয়ে দাও, তার বেলা আর ভবি ভুলল না।

ফেরার সময়ে গেটটা দিব্বি দেখতে পেলাম, কারণ রাগী গেটম্যান আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কোথায় থাকি, কেন এসেছি জিগ্যেস করেই তাঁর ক্রুদ্ধ প্রশ্ন তাঁকে জিগ্যেস না করে ভেতরে গেছি কেন? আমি এবারে দেখলাম "ভোলি সি লড়কি'র ভান করাই ভাল। ভারী নিরীহ মুখে জানালাম গেটটা তো খোলাই ছিল, আর তিনিও ছিলেন না, আর অনুমতি যে নিতে হয় তা-ও জানা ছিল না, অগত্যা -----। আসলে তো অপেক্ষাকৃত ভাল একটা হোটেল খুঁজতে বেরিয়েছিলাম, তাও পেলাম না, আর চীন সীমান্তও কেমন সামনে এসেও ফস্কে গেল! হোটেলে ফিরে দু:খ করতেই তারা তাড়াতাড়ি হোটেলের ছাদে নিয়ে গেল, সেখান থেকেই ভিউফাইন্ডারে দেখা চীন সীমান্ত আর চারিদিকে অজস্র স্নো-পীকের সারি। "ওয়াগা বর্ডার" এর মত জমকালো নয়, ভারী নির্জন ছোট্ট একমেটেগোছের সীমান্ত। আশেপাশের পাহাড়গুলো পেরোবার ক্ষমতা থাকলে, "সীমান্ত"র গেটের ধারেকাছেও না গিয়েই দিব্বি এদেশ-ওদেশ করা যায়।

সূজ্জিমামার তাড়া খেয়ে কুয়াশাবুড়ি লুকিয়ে পড়ছে

এখানে বলে রাখি, এই অঞ্চল ভারতের একমাত্র অঞ্চল যেখানে পূজ্য দেবতা কৌরবেরা। বহুপতি প্রথা এখনও প্রচলিত। যৌন অভ্যাসও খোলামেলা। বিল আইটকেনের লেখা পড়ে জানতে পারি, এই একমাত্র ভারতীয় গ্রাম যেখানে তিনি খোলা ক্ষেতে প্রকাশ্যে চুমু খেতে দেখেছেন। এই অঞ্চলেই লাখমন্ডল যেখানে প্রবাদানুযায়ী বারাণাবতের জতুগৃহ।

টাইগার ফলস হেঁটে গেলে নাকি ৬-৭ কিমি, আর গাড়ীতে গেলে ১২-১৪। তা গাড়ীতেই তো যাব। গাড়ী নামতে থাকে ঘুরে ঘুরে। অনেকটা নামতে হবে। পথে হঠাত্ হঠাত্ দেখা যায় সেইসব ট্রেকারদের। ঠাসবোঝাই হয়ে চলেছে। ক্রমশ: উপস্থিত হওয়া গেল এক জনশূন্য পাহাড়ঘেরা জায়গায়। গাড়ী আর যাবে না। নেমে হন্টন। কিছুদুর তো দিব্বি গেলাম। তারপর দেখি আর কোনরকম রাস্তার বালাই নেই। একটা মাটির পায়েচলা পথ। দাঁড়িয়ে ভাবছি কি করব, এমন সময়ে এলেন এক বয়স্ক পাহাড়ী। জিগ্যেস করে জানা গেল ঐ খাড়া নেমে যাওয়া রাস্তাটাই টাইগার ফলসের রাস্তা। দেখেশুনে বেশ ভয় লাগল ---- পড়লে আর দেখতে হবে না, অথচ পড়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। তিনি জানালেন, তিনি ঐদিকেই যাচ্ছেন, আমি আসতেই পারি। তাও আমাকে নড়তে না দেখে, তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তরে যেই না বলেছি পড়ে যাবার ভয় --- সে কি রাগ তাঁর! ওটা নাকি পড়ে যাবার মত রাস্তাই নয়। তাতেও আমাকে সাহস করতে না দেখে, সামনের একটা বেঁটে মত গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙ্গে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন তাঁর পেছনে পেছনে আসতে। আর যা তাচ্ছিল্যের একটা দৃষ্টি ছুঁড়লেন, তার পরে আর দাঁড়িয়ে থাকা যায় না।

ওফ্ সে কী রাস্তা রে বাবা!! ঠিক একজন লোক যেতে পারে, আর প্রতি মুহুর্তে মনে হচ্ছে গড়িয়ে পড়ে যাব। ঐ টালমাটাল পায়ে টলতে টলতে কাঁপতে কাঁপতে ফলসের কাছে পৌঁছে ---- আহাহা ---- বেশ মাঝারী গোছের মোটাসোটা ফলস, অনেক জল নিয়ে ৫০ মিটার মত ঝাঁপিয়ে নামছে। ফলসের গা বেয়েও নামার রাস্তা আছে, জলের ছাঁটে ভেজা। নীচে তৈরী হওয়া সরোবরটায় পৌঁছানো যায়। ক'টি মেয়ে এসেছে সেই সরোবর থেকে জল নিয়ে যেতে। ওরা উঠে এলে জানলাম ওরা নাকি খায় না এই জল। এ শুধু অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করে। খাবার জল আনতে যায় আরো দুরে --- "হোগা করিব বিস পঁচ্চিস মাইল" নির্বিকার উত্তর। আশেপাশে বেশ ঘন গাছের সারি। দেওদার বা চীর বলে মনে হল না, এই দুটো ছাড়া অন্য কিছু হবে।

ফিরতি পথে একাই। কি অদ্ভুত নিস্তব্ধ চারিদিক। নিজেরই জ্যাকেটের খসখস শব্দ আমায় সঙ্গ দেয়, আর মাথার ওপরে সুয্যিমামা। আচমকাই দেখা হয় এক বৃদ্ধের সাথে। তাঁর মুখের অজস্র ভাঁজ, যেন অনেক ওপর থেকে দেখা পর্বতশ্রেনীরই রূপ। কি যে বলেন, কিছুই বুঝি না ----আমার কথাও তিনি বোঝেন না ---- কিন্তু বলেই চলেন, কথার ভঙ্গী দেখে বেশ প্রীত মনে হয়। ইতিমধ্যে এসে গেছে এক যুবক গাড়োয়ালী। সে মোটামুটি ভাঙ্গা হিন্দী বলতে পারে। তাকে বৃদ্ধ খুব দ্রুত কিসব বলে যান। যুবক নিশ্চিত হয়ে নেয় আমি ভারতীয়। অন্য কোন দেশের লোক নই, তারপর সেও মহাখুশী হয়ে যায়। কিরে বাবা! ব্যপারটা কি? না ওঁরা অনেক বিদেশিনী মহিলাকে একলা একলা এখানে আসতে দেখেছেন, কখনও কোন স্বদেশিনীকে দেখেন নি। তাই আমি নিশ্চয় কোন দেবীর অংশ হব, এই তাঁদের বিশ্বাস। ক্কি সব্বনাশ!! ওরে বাবারে দেবী টেবীরা শুনলে ভয়ংকর ক্ষেপে যাবেন যে! এমনকি তাঁদের ভক্তকূলও প্রবল ক্ষেপবেন।

প্রায় গাড়ীর কাছাকাছি এসে পাওয়া গেল একদল বাচ্চাকে। মানে সাকুল্যে ৬টি। কোথায় থাকে? না "আপনা গাঁওমে"। কি নাম সেই গাঁওয়ের? হেসেই কুটিপাটি। যেন কি একটা অসম্ভব প্রশ্ন করেছি। স্কুলে যায় কিনা? না: যায় না। গাঁয়ের কেউ যায়? হ্যাঁ যারা অনেকটা করে হাঁটতে পারে, তারাই তো যায়। উল্টে জিগ্যেস করে ওরা অতদূর হাঁটবে কি করে? ওরা ছোট না? সত্যিই তো অনেকটা (হয়ত ২৫ কিম্বা ৩০ মাইল) হাঁটতে না পারলে যে এখানে স্কুলে যাওয়া যায় না --- এই বোধই তো শখ করে বেড়াতে আসা আমার ছিল না৷

দেওবন যেতে বড় গাড়ী লাগবে, যা পাওয়া গেল না। কানসর যেতে তেমন কোন সমস্যা নেই। অতএব সেদিকপানেই যাওয়া যাক। ৮৫৯৬ ফুট উচ্চতা আর চক্রাতা থেকে ২৬ কিমি মত দূর। দেরাদুন থেকে তিউনি যাবার রাস্তায় পড়ে কানসর। তিউনি থেকে সারা দেশে উচ্চমানের মার্বেলপাথর চালান যায়, তাই ট্রাক বা বাসের চলাচল ভালই, ফলে রাস্তাও বেশ পাকাপোক্ত।

কাঠবুড়ি, তোমাকে সেলাম!কাঠবুড়ি, তোমাকে সেলাম!

কানসরের বেশ কিছু অগে একটা বাঁক ঘুরেই --- সামনে ধু ধু সাদা বরফ। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা কোন জলধারা শীতবুড়োর অভিশাপে জমে গেছে। রাস্তার বেশ কিছু অংশ, পাহাড়ের ঢাল, যেখানে সূর্য্যের আলো পৌঁছায় না এপ্রিল মাসের আগে, সেখানেই পুরু বরফ। গাড়ী চলে টলে টলে হেলেদুলে। নারীপুরুষ নীচ থেকে পিঠে করে নিয়ে আসেন শুকনো কাঠ বা ঘাসের বোঝা।

প্রধান রাস্তা থেকে অল্প একটু নেমে গিয়ে কানসরের ফরেস্ট বাংলো। দরজা জানালা সব বন্ধ। চারিদিকে প্রচুর গাছ, কেমন কালচে সবুজ ছায়ায় ঢাকা এক মন্দির -- 'বাসিক দেব' এর মন্দির। বাসিক কি বাসুকী? কে জানে? মন্দির তালাবন্ধ। পুজারী আসবেন ঘন্টা ৩ বাদে। অতক্ষণ থাকব না। ঐ বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করা গেলে মন্দ হত না! কিন্তু কাউকেই দেখা গেল না কোত্থায়ও। চালক ভয় দেখায় এই জঙ্গলে নাকি অনেক চিতা আছে। বলে কিরে! আমি যে হো হো করে হেসে ফেলি নি, সে তো নিতান্ত ভদ্রমহিলা বলেই----- কিন্তু চালকমশাই মহা দায়িত্ববান। কিছুতেই আমাকে বেশীদূর যেতে দিলেন না। নাকি গাছ থেকে লাফ দিয়ে চিতা নেমে আসে! আমি কিন্তু গাদাখানেক হনুমান ছাড়া কিছুই দেখলাম না।

চক্রাতা থেকে ফেরার পথে সেউনির ঘাট এড়াতে স্থানীয় লোকেদের পরামর্শে নেওয়া হল অন্য একটা রাস্তা, যা সরাসরি কালসীতে এসে মেশে। চলার পথকেই যদি রাস্তা বলা যায়, তাহলে এটাও রাস্তা। তবে আসলে অধিকাংশ জায়গায়ই মাটির, কোথায়ও কোথায়ও রাস্তা তৈরী হচ্ছে --- ব্যস। ফলে ৩ ঘন্টার যাত্রাপথে আর দ্বিতীয় কোন গাড়ীর দেখা পাওয়া গেল না। মানুষজনও বড়ই কম। শুধুই আলো ছায়া, রুক্ষ পর্বতশ্রেনী, সবুজ পর্বতশ্রেনী, দলছুট হনুমান, ঝাঁকড়া লেজ আর লাল চোখের পাহাড়ী কুকুর, ঝুম চাষের ছোট ছোট ক্ষেত, কোথায়ও বা শুধুই ছোট ছোট ধাপ কাটা, এখনও বোনা হয় নি তাতে কোন বীজ, শীর্ণকায়া নালা, যাকে বর্ষাকালে 'ঝর্ণা' বলা যাবে। আর তখনই হিমালয় দেখা দেয় এক প্রেমিক পুরুষের বেশে। তাম্রবর্ণ এক আদিম পুরুষ, যার পেশীবহুল কঠোর পৌরুষ তীব্র আকর্ষণে টানে, রুক্ষ প্রকৃতি দূরে ঠেলে, দেওদারের ছায়ায় মেঘের মায়ায় কোমল হয়ে আসে সেই প্রেমিক, কাছে টানে------।

এই যাত্রায় এমন কিছু দেখলাম কি যা আগে কখনও দেখি নি? না: তেমন কিছুই নয়। সবই কখনও না কখনও, কোথায়ও না কোথায়ও দেখেছি। তবে? বালিকা থেকে কিশোরীবেলায় যেতেই যে বাঁধন আস্তে আস্তে জড়িয়ে গেছে হাতে পায়ে, তার পাকগুলো খুলে যাবার সুখ, যেমন ইচ্ছে ঘোরার সুখ, পরিচিত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার আনন্দ, চাইলেও কেউ খোঁজ পাবে না ---- কোথায় আছি, কি করছি ---- তেমনই আমিও জানাতে পারব না কাউকেই, আ-আ-আ:---- প্রতিটি শিরা, ধমনী, প্রতি রক্তবিন্দুতে মুক্তির সুখ৷


মন্তব্য

নৈষাদ এর ছবি

পড়ে মুগ্ধ হলাম।

দময়ন্তী এর ছবি

শুনে খুশী হলাম৷ হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা। আমাদের একবার যাবার কথা হয়েছিল, শেষমেষ আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি। ছবিটবি দেখে অনেক লুল ফালাইলাম।

কৌস্তুভ

দময়ন্তী এর ছবি

আহা লুল ফেলে কী করবেন! ঘুরে আসুন বরং৷ হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ফারুক হাসান এর ছবি

দময়ন্তী, আপনার ভ্রমণ নিয়ে লেখার মহাভক্ত একজন পাঠক আমি। পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।

দময়ন্তী এর ছবি

লইজ্জা লাগে
অনেক ধন্যবাদ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছুটা নবনীতা দেবসেন, কিছুটা বাণী বসু, কিছুটা লীলা মজুমদারের লেখার ছাপ পেলাম, আভাসে।

তবে, প্রচুর বানান ভুল। পড়তে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলাম বারবার। আর বাক্যগঠনে তাড়াহুড়োর ছাপ সুস্পষ্ট। আরেকটু ঠান্ডা মাথায় লিখতে পারতেন।

তারপরও ভালো।

জিম করবেট পার্ক নিয়ে কোন লেখা পাওয়া যাবে?

---মহাস্থবির---

দময়ন্তী এর ছবি

আরে না না গরম মাথায় লিখবো কেন! এইটা ২০০৭ এ লিখেছিলাম৷ তারপর মাঝেমধ্যে টুকটাক পরিবর্ধন, পরিমার্জন করেছি৷

কী কী বানান ভূল, তার একটা তালিকা দিন৷ নিশ্চিত হলে বদলে দেব৷

করবেট ন্যাশনালে এখনও পর্যন্ত যাইই নি৷ কাজেই লেখার প্রশ্নই নেই৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বর্ণনা যে কেমন হয়েছে সেটা একটানে লেখাটা পড়ে ফেলাতেই বুঝেছি। কোথায় গিয়েছিলেন তার চেয়ে অমন একা একা যে গিয়েছিলেন সেটার জন্য হিংসিত।

ভ্রমণ নিয়ে স্বাদু লেখা লিখতে পারেন কমজন। এই সংক্রান্ত একটা মন্তব্য গতকালই ওডিনের পোস্টে করেছি। আপনার জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনি এত প্রশংসা করলে খুব লজ্জা পাই৷
অনেক ধন্যবাদ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

অসম্ভব ভালো লেখা। সচলে নিয়মিত লেখেন না ক্যানো??

----------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

দময়ন্তী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ৷
কিছুটা আলসেমি আর কিছুটা ব্যস্ততা হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ওডিন এর ছবি

মস্ত মস্ত দেওদার গাছ আর সদ্য ঘুম থেকে ওঠা সুয্যিঠাকুর রাস্তাটিকে ভারী সুন্দর একটা চিকরিমিকরি জালিকাটা ছায়ায় ঢেকে রেখেছে। রাস্তার পাশের বেঁটে কার্নিস থেকে অনেকটা ঝুঁকে দেখলে তবে দেখা যায় দেওদার গাছেদের গোড়া, আর ঘাড় বেঁকিয়ে প্রায় আধশোয়া হয়ে গেলে তবে দেখা যায় গাছের ডগা।

এই না হলে বর্ণনা! গুরু গুরু ^:-)^

আমার প্ল্যান আছে (ওয়েল আসলে আমি বিশাল পরিকল্পনাবিদ, খালি প্ল্যান করেই যাই) উত্তরাখন্ডের এইসব ছোটখাটো জায়গাগুলো, যেমন চোপতা, কৌশানি এইসব ঘুরে দেখার- কবে যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো কে জানে। মন খারাপ
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দময়ন্তী এর ছবি

হ্যাঁ কৌসানি, বিনসর এগুলো বড় ভাল জায়গা৷ কসৌলিটা আমার এখনও যাওয়া হয় নি৷ দেখি অগাস্টে লেহ-লাদাখ না পারলে পুজোয় অরুণাচল নির্ঘাত্ যাব৷ হাসি
আমিও কত কত পরিকল্পনা করি আর ছুটির অভাবে সেসব মায়া হয়ে যায়৷ মন খারাপ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আহ! দমুদিদি...আপ্নেরা এইসব কী শুরু করসেন মিয়া! ধুর! এখন কান্তে বইতে হইবো দেহি! আমি ছুডু তাই একলা কোত্থাও যাইতারিনা! কেউ আমারে নিয়াও যায়না! মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

দময়ন্তী এর ছবি

অয়ি বালিকে, কান্দে না কান্দে না সোনা৷ একবার কষ্ট করে ভারতে এসো৷ আমি যত্ন করে বেড়াতে নিয়ে যাব, গ্রান্টি৷ হাসি
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মূলত পাঠক এর ছবি

আমি ভ্রমণকাহিনীর ততোটা ভক্ত নই যতোটা ট্রাভেলগের, বাংলায় যে রকম ভ্রমণ কাহিনী হয় তাতে মন ভরে না। কিন্তু এইটা দুর্দান্ত লাগলো। বিশেষত এই রকম হুট করে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকেই সুরটা অনেক উঁচুতে বাঁধা হয়ে গেছে, এবং লেখা সেই রকমেরই হয়েছে। চমৎকার!

তবে নামকরণ একটু কম পছন্দ হলো, কোনো জায়গায় গিয়ে যদি মনে হয় এই কথা: "এই যাত্রায় এমন কিছু দেখলাম কি যা আগে কখনও দেখি নি? না: তেমন কিছুই নয়, সবই কখনও না কখনও, কোথায়ও না কোথায়ও দেখেছি", তবে সেই জায়গাকে কি আর স্বর্গ বলা যায়?

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যযোগ ধন্যযোগ৷ হাসি
আচ্ছা আপনি খণ্ড ত লেখেন কী করে? আমি লিখতে গেলেই ত'য় হসন্ত টাইপের কিছু একটা হয়ে যায়৷ সোলেইমানলিপি ফন্তে মনে হয় খণ্ড ত নেই৷

হুঁ নামকরণ ব্যপারটা আমার ঠিক জমে না৷ ঠিকই বলেছেন৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ধুসর গোধূলি এর ছবি
দময়ন্তী এর ছবি

ছবিগুলো বড় করলে প্রচুর গ্রেন আসতেছে গো আধুলিমশাই৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।