১
--
এ: যত তাড়াতাড়িই কর না কেন, সেই সন্ধ্যে হয়ে এলো ----- খুব বিরক্ত হয়ে ছবির মা আকাশের দিকে একবার তাকাল, যদি মেঘ করে বেলা ছোট লেগে থাকে৷ কিন্তু না: আকাশ তকতকে নীল, সন্ধ্যেই হয়ে আসছে৷এখনও লালবাড়ির বাসনমাজা আর মুনি দের বাড়ি বাসন মাজা, বারান্দামোছা বাকী৷ তারপর বাড়ি গিয়ে কাপড় ছেড়ে এসে মুনিদের বাড়ির পুজোর বাসন মাজতে হবে৷ মুনির দিদা পাঁচবাড়ির বাসনমাজা কাপড়ে পুজোর বাসন মাজতে দেয় না৷ আর বুড়ীর চোখও বলিহারি, ঠিক বুঝে যায় কাচা কাপড় না ছেড়ে রাখা কাপড় পরে এসেছে৷ তবে বুড়ী বকাবকি করে টরে না৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু বলে 'ঠাকুর তুমি দেখো'৷ ঐ শ্বাস আর বলার মধ্যে কি যেন থাকে, ছবির মা'র ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়৷ দুই একদিন হয়েছে এরকম৷ তাড়াহুড়োতে ছবির মা আর কাচা কাপড় না খুঁজে হাতের কাছে আগের ছেড়ে রাখা কোন কাপড় পরে চলে এসেছে, আর ঠাকুরের বাসন নিয়ে মাজতে শুরু করার পরে মুনির দিদা দেখতে এসেই জিগ্যেস করেছে 'আইজ তুমি কাসা কাপড় পর নাই ছবির মা? এইডা তো আগের ছাইড়্যা থোওন কাপড় মুনে অয়'৷ আর তারপরই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে 'ঠাকুর তুমি দেইখ্যো' বলে আস্তে আস্তে কুয়োতলা থেকে চলে যাওয়া৷ প্রথমবার ছবির মা ভয়ের চোটে কেঁদেই ফেলেছিল৷ ছোট বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘর করে, ঠাকুরের অভিশাপ লাগলে আর দেখতে হবে না৷ এখন খেয়াল করে সকালে রোজ একটা আর দুপুরে করে চান করে খেতে আসে সময় আর একটা কাপড় কেচে দিয়ে যায় ছবির মা, যাতে বিকেলে অন্তত একটা কাপড় শুকিয়ে যায়৷ তা, এই বাড়িতে কাজ করছে আজ চোদ্দো বছর হল, সবারই রীতধর্ম জানা হয়ে গেছে ওর এতদিনে৷
লালবাড়ির বাসন মাজা শেষ হতে হতেই আকাশ বেশ অন্ধকার হয়ে গেল৷ ছবির মা প্রায় দৌড়ে ঢুকল মুনিদের বাড়ি৷ আগে বারান্দা মুছে দিয়ে বাসন মাজতে বসবে৷ বড় বড় দুটো বারান্দা৷ বিকেলে শুধু নীচের বারান্দাদুটো মুছতে হয়৷ ভাগ্যিস! দোতলায় আরো দুটো বড় বারান্দা আর একটা ছোট বারান্দা আছে, তবে সেগুলো একবেলা মুছলেই হয়৷ ন্যাতা বালতি নিয়ে ভেতরের বারান্দায় যেতেই বড়বৌ রান্নাঘর থেকে ঝঙ্কার দিয়ে ওঠে 'হ্যাঁ গো তোমার এতক্ষণে সময় হল? কি আক্কেল গো! কালকে বাড়িতে পুজো, ঐ অতগুলো বাসন মাজবে কখন? রাত হয়ে গেছে এখন ঠিক করে দেখতে পাবে না, আর আজকাল তোমার কাজের যা ছিরি হয়েছে! বাসনের কালি উঠবে না'৷ ছবির মা'ও ঝঙ্কার দিয়ে ওঠে 'তা তোমরাই বা অমন কেপ্পন কেন গা? পাতকোতলায় একটা লাইট লাগাতে পার নি? আমাদের ছোটলোকের ঘরেও তো আজকাল চাট্টে পাঁজটা করে লাইট থাকে ইদিক উদিক৷ আমি তো একটা মানুষ নিকি? লাইট নেই দেকে মশায় কাটে সমানে'৷' বড়বৌ তাড়াতাড়ি বলে 'আচ্ছা আচ্ছা নাও নাও হাত চালাও৷ আজ আর সামনের বারান্দা মুছতে হবে না, কাল ভোর ভোর এসে মুছে দিও৷ ভেতরের বারান্দার এই কোণাটা মুছে, যাও বাসনগুলো মেজে আনো'৷ এঁটো বাসন মাজা শেষ করতে করতেই অন্ধকার গভীর হয়ে সব বাড়ীতে শাঁখ বাজান হয়ে গেল৷ আবার দৌড়ে বাড়ি গিয়ে কাচা কাপড় পরে এসে ঠাকুরের বাসন নিয়ে মাজতে বসে ছবির মা৷ বড় বড় পিতলের গামলা, ডেকচি, হাঁড়ি, কলসি, কাঁসার থালা, বাটি, পঞ্চধাতুর প্রদীপ, তামার এই অ্যাত্তবড় টাট, কোষাকুষি সব পরিস্কার করতে হবে৷ কাল পূর্ণিমা, সত্যনারায়নের সিন্নী হবে, গোপালের ভোগ হবে৷ ওদিকে ছেলেপিলেরা ন্যাড়া পোড়াতে শুরু করেছে৷ আগুনের লকলকে শিখা দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে৷ ছেলেদের হইহুল্লোড় আর রাঙা আলুপোড়ার ভাগ নিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি শোনা যাচ্ছে পাশের মাঠ থেকে৷ পিতলের ডেকচি ঘষতে ঘষতে ছবির মা'র মনে পড়ে যায় ওরাও খুব ঝগড়া করত ছেলেদের সাথে আলুপোড়ার ভাগ নিয়ে৷ ছবির মা ছোটবেলায় যাকে বলে গেছো মেয়ে, তাই ছিল৷ গেছো আর খরধর ছিল বলেই ছবির বাবা মারা যাওয়ার পর এই চাট্টে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি না গিয়ে এখানেই থেকে গেছে৷ জ্ঞাতিদের সাথে ঝগড়া করেই নিজের ঘর, দাওয়া আর উঠোনটুকু টিকিয়ে রেখেছে৷ নাহলে কবেই ওকে বের করে দিয়ে ওটুকু দখল করে নিত দেওররা৷
সব শেষ করে ছবির মা যখন আবার বাড়ির দিকে রওনা হল, ততক্ষণে শ্রীদুর্গা মিলের রাতের ভোঁ পড়তে আর বেশী বাকী নেই৷ ন্যাড়াপোড়া শেষ করে সবাই যে যার বাড়ি চলে গেছে৷ কাল নিরামিষ খাওয়া তাই ওবাড়ির মেজবৌ দুপুরের বেঁচে যাওয়া তিনখান মাছ আর কিছুটা আলু দেওয়া ঝোল দিয়েছে একটা কাঁসিতে করে৷ ছেলেমেয়েদের দুখানা মাছ ভাগ করে দিয়ে আরেকটা মাছ চাপা দিয়ে রেখে দেবে, ভাবল ছবির মা৷ বড়ছেলে কাল যদি ডিউটিতে যায় তো খেয়ে যাবে খনে৷ বড়ছেলে বড়বাজারের একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করে, ট্রেনে করে যায় আসে রোজ৷ আজকে মেজবৌ আর বড়বৌ ওকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল৷ 'নাকি ওটা 'ন্যাড়াপোড়া' নয় 'ম্যাড়াপোড়া'৷ হ্যাঁ: অমনি বললেই হল!! ছোট থেকে শুনে এলো 'ন্যাড়াপোড়া' আর এখন এই এনারা এলেন 'ম্যাড়াপোড়া' শেখাতে৷ ঝটকা মেরে আঁচলটা ঘুরিয়ে পিঠে ফেলে পেনুদের পুকুড়পাড় দিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালায় ছবির মা৷
২
--
আজ সক্কাল সক্কাল ঘুম ভেঙে গেছে মুনির৷ জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে আকাশ একেবারে ঝকঝকে নীল, রোদ্দুর তখনও তেমন ওঠে নি৷ সুপুরি গাছের একেবারে মাথার দিকে একটু একটু রোদের দাগ৷ মুনি দিদার সাথে শোয়৷ দিদা যাথারীতি ধারেকাছে নেই, সেই চারটের সময় উঠে গেছে নির্ঘাত্৷ মুনি আস্তে আস্তে মশারি সরিয়ে চৌকি থেকে নামে৷ ইজেরটা টাইট করে বেঁধে দাদুর ঘরে যায়৷ দাদু এখনও খাটে বসে জপ করছে, নামে নি৷ ওদিকে রান্নাঘর আর কুয়োতলা থেকে ব্যস্ততার আওয়াজ আসছে, বাসনের ঝনঝন, জল ঢালার আওয়াজ, শলার ঝাঁটার ছপাত্ ছপাত্ আওয়াজ৷ মুনিকে দেখে দাদু ইশারায় ডাকে, জপের মধ্যে তো কথা বলবে না৷ অন্যদিন মুনি গিয়ে দাদুর কোলঘেঁষে শুয়ে পড়ে আবার৷ কিন্তু আজ শুলে চলবে না, তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে খেয়ে নিতে হবে, নাহলে সবাই রং খেলতে বেরিয়ে পড়বে আর ও তখনও হাঁদার মত বাড়িতে থেকে যাবে৷ মুনি পায়ে পায়ে ভেতরের বারান্দায় যেতেই মকরধ্বজ ওকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে 'মুনি মুনিই খেতেটেতে দিবি না?' মুনি তাড়াতাড়ি বাথরুমের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মকরধ্বজ খাঁচার ভেতর থেকে চেঁচিয়ে যায় আর উত্তেজিত হয়ে শিকগুলো ঠোকরাতে থাকে৷ পাখীটার চীত্কারে বড়বৌ রান্নাঘর থেকে বেরিয়েই মুনিকে দেখতে পায় আর অমনি রেগে ওঠে৷ 'তুই এত সকালে উঠেছিস কেন? যা হিসু করে আরেকটু শুয়ে থাক গিয়ে'৷ মুনি মনে মনে রেগে যায়৷ ভারী পাজি এই টিয়াপাখীটা৷ মুনি যখনই কিছু একটা চুপি চুপি করতে চায়, তখনই মকরধ্বজ ওর নাম ধরে চেঁচাতে থাকে৷ কি করে যে টের পায়! এইসময় দোতলা থেকে নতুনমা নেমে এসে মুনিকে অপ্রস্তুত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডান হাতে জড়িয়ে ধরে বাথরুমে নিয়ে যায়৷ দাঁত মাজার ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দিয়ে হেসে বলে 'কিরে এত সকালে উঠেছিস কেন? রং খেলার এখনও অনেক দেরী তো'৷ মুনি একটু লজ্জা পেয়ে বলে' না না এমনি এমনিই ঘুম ভেঙে গেল তো৷' তারপরই চুপি চুপি জিগ্যেস করে 'নতুনমা বড়কাকু কাল পিচকিরি এনেছে?' মুনির বড়কাকু আর ছোটকাকু হল যত রাজ্যের খেলনা কিনে দেওয়ার আবদারের লোক৷ কাকুমণি খালি গাদা গাদা বই কিনে দেয়৷ কাকুমণি নিজেও যতক্ষণ বাড়ীতে থাকে একটা না একটা বই মুখের সামনে নিয়ে বসে থাকে আর ওর জন্যও কিনে আনে৷ ওর অত বই ভাল লাগে না৷ পিচকারির জন্য বড়কাকুর কাছে আবদার করে রেখেছিল মুনি৷ নতুনমা মুখটিপে হেসে বলে 'আমাকে তো বলে নি রে'৷ মুনি কিন্তু হাসিটা দেখেই বুঝে যায়৷
শ্রীদুর্গা মিলে যখন ন'টার ভোঁ বাজছে তখনই শীলা, মালা, টোটন, মল্লিরা মুনিদের বাড়ী এসে গেলো৷ সক্কলের হাতে ভরা পিচকিরি, সকলের মুখ, গলা আবীর মেখে লাল টুকটুকে৷ মুনি তাড়াতাড়ি ভর্তি পিচকিরি হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে৷ শীলাদের বাড়ীর দরজাটা একটু ভেতর দিকে, সামনে একটা সরু গলিমত বানানো৷ সেখানে বড় বড় বালতিতে রং গুলে রাখা রয়েছে৷ শীলার বড়দার তত্ত্বাবধানে বড় একটা গামলায় নানারকম রং আর তার সঙ্গে সোনলি, রূপালী চকচকে আরো কিসব মেশানো হচ্ছে৷ শীলার ছোড়দা, মুনির ছোটকাকু, পাড়ার অন্য কয়েকজন কাকু ফটাফট বেলুনে ভরে ফেলছে ঐ গামলার তরল৷ তলাপাত্রদের বাড়ীতে সকালের পুজো শুরু হয়ে গেছে কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে৷ শ্রীদুর্গা মিল, বেঙ্গল ফাইন, অ্যালকালি, হিউম পাইপ, সব ছুটি থাকে দোলের দিন৷ তাও কে জানে কেন, ন'টার ভোঁ টা অনেক কারখানাতেই বাজে৷ দাদু বলে ঐটা নাকি দোলখেলা শুরু হবার বাঁশি৷ কে জানে! হবেও বা৷ একটা গানের দল এসেছে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রার বর্ণনা গাইছে খঞ্জনী আর ঢোল বাঁজিয়ে বাজিয়ে৷ আর কয়েকজন একটা চাদর পেতে ধরে সব বাড়ী থেকে সিধা নিচ্ছে৷ লোকে চাল ডাল, কয়েকটা আলু আর কিছু টাকা পয়সা দিচ্ছে৷ ওরা সেগুলো একটা বস্তার মত বড় থলিতে ভরে ফেলে হরে-এ-কৃষ্ণ বলে পরের বাড়ীর দিকে রওনা হচ্ছে৷
দেখতে দেখতে বেলা বারোটা বেজে গেল্৷ বারোটা অবধি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকে, তারপর একটা একটা করে চলতে শুরু করে৷ রোদ্দুর এখন ঝাঁ ঝাঁ করছে, সকালের ঠান্ডাভাব একেবারে উধাও৷ শীলা মল্লিদের দলটা সারা পাড়া ঘুরে শেষে রেললাইনের দিকের শেষ বাড়িটার দিকে চলল৷ ওটা টিঙ্কুদের বাড়ি৷ টিঙ্কু আর তঙ্কু পাড়ার কারো সাথে খেলে না, নিজেরা নিজেরা আপন মনে খেলা করে৷ যখন রাস্তা দিয়ে যায় তখন শীলা, মল্লি, মুনি, টোটোনদের দিকে তাকায় বটে, কিন্তু ওদেরকে দেখতে পায় না৷ যেন দেওয়ালের দিকে তাকিয়েছে, এমনিভাবে বেরিয়ে যায়৷ শীলারা তাই ঠিক করেছে আজ ওদের বাড়ি গিয়ে দোল খেলতে ডাকবে৷ টিঙ্কুদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল ওদের গেটটা অর্ধেক খোলা, সামনে কেউ নেই৷ কেমন যেন চুপচাপ বাড়িটা৷ শীলারা একটু দমে যায়, ওরা এরকম দেখে অভ্যস্ত নয়৷ আজ সারা পাড়ার সকলের বাড়ির সামনে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে আছে৷ হয় লোককে রঙ দেবার জন্য, নয়ত এমনিই হইচই করার জন্য৷ সেই জায়গায় এরকম চুপচাপ একাবোকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি দেখে ওরা একটু ইতস্তত করে, ঢুকবে কি ঢুকবে না, ভাবতে ভাবতেই মল্লি তড়বড়িয়ে ঢুকে যায়৷ অমনি বাকীরাও পেছন পেছন যায়৷ ছোট্ট উঠোনটায় এককুচিও রং নেই, কিছু জংলা ঘাস, দুটো নয়নতারা গাছ, একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ আর একপাশে কুয়োতলা একদম নিঝুম৷ তিনধাপ সিঁড়ি উঠে বারান্দা৷ সিঁড়ির ডানদিকে সিমেন্টের চল্টা উঠে যাওয়া ফাঁকে কি একটা গাছের ছানা খেলছে ডালপালা নেড়ে৷ সিঁড়িতে কাদামাখা জুতোর ছাপ৷ কাদা না হয়ে গোবরও হতে পারে, কেমন একটা গোবর গোবর গন্ধও যেন পাওয়া যাচ্ছে৷ মল্লি সোজা বারান্দায় উঠে গিয়ে 'টিঙ্কুউউউউউউ' বলে চীত্কার দেয়৷ ঘরের ভেজানো দরজার ওপাশ থেকে খচমচ ঝটপট করে আওয়াজ হয় আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে টিঙ্কু বেরিয়ে দৌড়ে নেমে যায় উঠোনে৷ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শীলা, মুনিরাও নেমে আসে বারান্দা থেকে৷ কিন্তু মল্লির সাহস খুব, ও নামার আগে ঘরের দরজা ধরে উঁকি দেয়৷ কিছু বোঝার আগেই একটা গোবদামত হাত মল্লির ফ্রক মুঠো করে ধরে ভেতরের দিকে টান দেয়, বাইরের রোদ্দুর থেকে আসায় মল্লি চোখে কিছুই প্রায় দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু চটপটে স্বভাবের মেয়ে হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে হাত ;পা ছুঁড়ে আকাশ ফাটিয়ে চীত্কার দিয়ে ওঠে৷ হাতটা ওকে খামচে ধাক্কা দিয়ে দরজার বাইরে ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয় ভেতর থেকে৷ এরকম আকস্মিক ঘটনায় পুরো দলটা প্রায় দৌড়ে টিঙ্কুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে৷ মল্লি তখনও কাঁপছে থরথর করে, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কে? কেন? কিন্তু টিঙ্কু কোথায় গেল? টোটোন খেয়াল করে প্রথমে, টিঙ্কু একটু দূরে রাস্তার ধারে টিপকলের পশে বসে হড়হড় করে বমি করছে৷
৩
--
সেই কোন সকালে অরূপদের বাড়ি দুটো লেড়ো বিস্কুট দিয়ে এক গেলাস চা খেয়েছে ছবির মা, তারপর থেকে পেটে আর কিচ্ছু পড়ে নি, এক ঢোঁক জলও না৷ আজ সব বাড়িতেই কাজের চাপ খুব৷ মাথাটা কিরকম টাল খাচ্ছে, একটু জল খাবে ভেবে টিপকলের দিকে এগিয়ে গেল ছবির মা৷ আরে সবকটা বাচ্চা মেয়ে এখানে এসে জুটেছে কেন? 'দেখি এট্টু জল খাই, সর দিকিনি তোরা'৷ ছবির মা'র শানানো গলায় শীলা, মালা, টোটোনরা কলের ধাপি থেকে নেমে দাঁড়ায় আর অমনি দেখা যায় টিঙ্কু উবু হয়ে বসে ওয়াক তুলতে তুলতে পেট চেপে ধরে বেঁকে যাচ্ছে, তখন আর বমি আসছে না, অল্প অল্প ঘোলাটে জল উঠছে কেবল৷ ছবির মা'র ভুরু দুটো কুঁচকে ওঠে৷ এগিয়ে গিয়ে কলটা ভাল করে খুলে মুখে মাথায় জলের ঝাপটা দিয়ে পেটপুরে জল খেয়ে নেয় প্রথমে, তারপর হাতের আঁজলায় জল নিয়ে টিঙ্কুর মাথায় দেয়৷ বাচ্চাগুলো একসাথে হড়বড়িয়ে যা বলে, তাই শুনে ছবির মা'র ভুরু আরো কুঁচকে ওঠে৷ মেয়েটাকে জলটল দিয়ে একটু সুস্থ করে ওর হাত ধরে পাড়ার ক্লাবঘরের দিকে রওনা হয় ছবির মা৷ মেয়েটার মা বাবা কোথায় কে জানে! মেয়েটা কোনও কথার উত্তর দিচ্ছে না৷ এদিকে যা শুনল তাতে ওদের বাড়িতেই আবার নিয়ে যেতে সাহস হচ্ছে না৷ আজ দোলের দিন পাড়ার ক্লাবেও কজনকে ঠিকঠাক পাওয়া যাবে কে জানে!
বেলা আড়াইটে বেজে গেছে, এখনও টিঙ্কুকে নিয়ে কি করা যায় বুঝে উঠতে পারছেন না পাড়ার প্রবীণরা৷ শীলা মুনিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে পল্টুকাকু, শ্যামলকাকুরা মল্লিকে নিয়ে টিঙ্কুদের বাড়ি গিয়ে কাউকেই খুঁজে পান নি৷ যে ঘরে মল্লি ঢুকেছিল, সেই ঘরের দরজা ভেজানো, ভেতরে কেউ নেই৷ কেউ যে ছিল কিছুক্ষণ আগে, তারও কোন চিহ্ণ নেই৷ অন্য ঘরগুলো বন্ধ করা৷ টিঙ্কুকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর এইটুকু জানা গেল যে বাবা কোথায় বেরিয়েছে ও জানে না, মা তঙ্কুকে নিয়ে মামাবাড়ি গেছে৷ ওর পেট ব্যথা করছিল বলে ও যায় নি, ব্যথা কমলে দুপুরে যাবে ভেবেছিল৷ ওদের মামাবাড়ি কাছেই কালীতলা মন্দিরের পেছনে৷ ওরা যখন তখন যায় আসে৷ কিন্তু তারপর আর কিছুই বলছে না৷ শুধু কেঁপে কেঁপে উঠছে আর মাঝে শক্ত কাঠ হয়ে যাচ্ছে৷ টিঙ্কুদের পাশেই মান্তু টুনিদের বাড়ি৷ টুনির দাদা বলল সকালে টিঙ্কুর বাবার সাথে মায়ের নাকি ভীষণ ঝগড়া হয়েছে৷ তারপরই টিঙ্কুর বাবা বেরিয়ে হনহন করে হেঁটে রেললাইনের পাশের রাস্তা দিয়ে কোথায় চলে যায়৷ শেষে টিঙ্কুর মামাবাড়িতে খবর দেওয়ার জন্য দুজনকে পাঠিয়ে টিঙ্কুক্র রমণীবাবু তা`র বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন৷ বাকীরাও তাতে সায় দেয়৷ হাইস্কুলের হেডমাস্টার রমণীবাবু অবসরের পর থেকে ছোট ছোট বাচ্চাদের ইংরাজী পড়ান৷ পয়সা টয়সা নেন না, তবে যাকেতাকে যখন তখন কঠিন কঠিন শব্দের মানে বা ট্র্যানশ্লেসান জিগ্যেস করেন ন্বলে ছোটবড় সবাই ওঁকে একটু ভয়ে ভয়ে এড়িয়ে চলে৷
কিন্তু টিঙ্কু বেঁকে বসে৷ সে যাবে না৷ সবাই বুঝিয়ে বলে ভয়ের কিচ্ছু নেই৷ এখন কেউ ওকে পড়া ধরবে না৷ কিন্তু ও শক্ত হয়ে বসে থাকে৷ রমণীবাবুর নাতনী রূপাদিদি ধরে তুলতে গেলে টিঙ্কু চেয়ারটা শক্ত করে চেপে ধরে কাঠ হয়ে বসে থাকে৷ এই অবস্থা দেখে আরও কেউ কেউ তাঁদের বাড়ি নেবার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু টিঙ্কুকে নড়ানো যায় না৷ বেশী জোর করলে ওয়াক তুলে মুখ দিয়ে জল বার করে আরও শক্ত হয়ে যায়৷ এদিকে মল্লিকে ধরে পম্পামাসি, লিপিকাকীমা, তুলিমাসিরা সমানে জিগ্যেস করে চলেছে ওকে কে ধরেছিল? কিরকম দেখতে তাকে? কিন্তু মল্লির মত সাহসী মেয়েও কেমন ঘাবড়ে গেছে৷ কিছুই পরিস্কার করে বলতে পারে না, ও নাকি শুধুই একটা হাত দেখেছে; মোটা, কালো, গোবদামত আর লাল সুতো দিয়ে একটা মাদুলী বাঁধা৷ একবার বলে ওটা রঘুডাকাত আবার কখনও বলে দৈত্য৷ পম্পা, তুলিরা হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়৷ এর মধ্যে টিঙ্কুর মা তঙ্কু আর ওর এক মামাকে নিয়ে এসে গেছেন৷ তিনি জানান টিঙ্কুর পেট গরম মত হওয়ায় চান করে দুপুরে খাওয়ার সময় যাবে বলে ঘরে শুয়েছিল, বাড়িতে আর কেউই ছিল না৷ ওর বাবা নাকি কখনও সখনও এরকম রাগ করে বেরিয়ে যান আবার সন্ধ্যে নাগাদ ফিরে আসেন, তাই টিঙ্কুর মা তেমন চিন্তা করেন নি৷
কেউ কেউ বলতে যায়, পেটগরম আর তার সাথে একলা বাড়িতে থাকার মনখারাপ মিলেমিশে টিঙ্কু অমন করছে, অন্য কেউ তক্ষুণি বলে মল্লিকে টেনেই বা নিল কে আর ধাক্কা মেরে বের করেই বা দিল কে আর সে গেলই বা কোথায়? এইসব প্রশ্নের কোনও উত্তর না পেয়ে কিছুটা বিস্মিত, বিভ্রান্ত আর কিছুটা বিরক্ত হয়ে উপস্থিত যে যার বাড়ি চলে যায়৷ টিঙ্কুও এখন ওর মায়ের সাথে যেতে কোন আপত্তি করে না৷
৪
--
আজ বিকেলে আর মাঠে কেউ খেলতে আসে নি৷ রং তুলে চান করে খাওয়া শেষ হতে হতেই বিকেল গড়িয়ে গেছে; আর সকাল থেকে দৌড়ঝাঁপ, হইহই করে সবাই ক্লান্তও ছিল খুব৷ এদিকে সন্ধ্যে হলেই আবার বাবা কাকারা সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিষ্টিমুখ করবে, করাবে৷ তাই বলে সকলে কিন্তু সকলের বাড়ি যাবে না; যেমন মুনির বাবা, বড়কাকু কক্ষণো শ্যামলকাকুদের বাড়ি যাবে না, পল্টুকাকু মল্লিদের বাড়ি যাবে না; এইরকম সব আর কি৷ তা, সব বাড়িতেই আজ টিঙ্কুর কথা, টিঙ্কুর মা'র কথা, ওর বাবার কথা৷ সরকারবাড়ির অনু নিয়োগীদের তুলিকে বলে 'যাই বল, তাই বল বাপু ঐ মেয়ের সাহস দেখে আমি তাজ্জব৷ ঐটুকু মেয়ে একলা বাড়িতে রয়ে গেল কি বলে!' রায়বাড়ির পম্পা অমনি আগবাড়িয়ে বলে 'আর রইলই যদি দরজা খুলে রেখেছিল কেন শুনি?' পল্টু অরুণকে বলেন 'কিছু একটা ব্যপার আছে বুঝলে ---- নাহলে বাপটা বেরিয়ে গেল আর অমনি মা'টাও৷ ঐটুকু মেয়েকে রেখে দুজনেই বেরিয়ে যায় কি করে?' বাচ্চু পাশ থেকে বলে 'হ্যাঁ অথচ মা, মেয়ে কেউই তো মুখ খুলল না৷' ------- আলোচনা গড়ায় উলের বলের মত -- এই ঘর, সেই ঘর, এই বাড়ি , সেই বাড়ি, ওই বাড়ি, এই রাস্তা,ওই গলি হয়ে বেড়ালে খেলতে নেওয়া উলের বলের মত প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে গড়াতে গড়াতে টিঙ্কুকে, ওর মা'কে, ওদের বাড়িটাকে জড়িয়ে পেঁচিয়ে ঢেকে ফ্যালে৷ সন্ধ্যে ঘোর হতে হতেই শীলা, মুনি, মল্লি, মান্তু, রিঙ্কু, বুকু, ইলুদের থেকে টিঙ্কু একদম আলাদা হয়ে গেল৷ শীলাদের সকলকে বাড়ি থেকে পইপই করে বলে দেওয়া হল, ওরা যেন আর কক্ষণো টিঙ্কুর সাথে কথা না বলে৷ টিঙ্কু যে কোনওদিনই ওদের সাথে খেলতে, কথা বলতে চায় নি, তা আর কারুর মনেই রইল না৷
আজ সববাড়ির কাজ সেরে ফিরতে ফিরতে আরও রাত হয়েছে৷ লালবাড়ি আর মুনিদের বাড়ি সত্যনারায়ণ পুজো ছিল, দুই বাড়ি থেকেই পুজোর প্রসাদ সিন্নি, ফল, লাল কমলা মঠ, কদমা দিয়েছে৷ মুনিদের বাড়ি থেকে আবার ক'খানা লুচি আর বড় জামবাটিতে পায়েসও দিয়েছে৷ নানা সাইজের বাটি একটার ওপরে আরেকটা চুড়ার মত করে বসিয়ে ভারসাম্য রেখে চলতে গিয়ে ছবির মা আজ তেমন তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারছে না৷ পেনুদের পুকুরপাড়ে এসে দেখে কে একটা বাচ্চা জলের দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ পেনুদের বাড়িতে এত ছোট বাচ্চা নেই; এত রাতে তো কোনও বাচ্চার বাইরে থাকার কথাও নয়, ছবির মা গলা তুলে হাঁক দেয় 'কে র্যা ওখানে, এত রাতে ডাঁইড়ে আচিস? ' বাচ্চাটা চমকে উঠেই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে আর অমনিই ছবির মা আরও জোরে বলে ' একদম নড়বিনি বলচি, জলে পড়লে টেনে তুলে নাইনের ধারে পুঁতে দিয়ে আসবো এই বলে রাকলুম'৷ বাচ্চাটা আর নড়াচড়া করে না৷ ছবির মা'র ডাকহাঁকে পেনু আর ওর বাবা বেরিয়ে এসেছে৷ পেনু এগিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে বলে 'আরে টিঙ্কু!! তুমি এতরাতে এখানে কি করছ?' পেনুর বাবাও অবাক হয়ে টর্চটা জ্বেলে এগিয়ে যান৷ ছবির মা'ও এগোয়৷
দুইছেলে, ছবি আর খুকুর সাথে টিঙ্কুকেও কদমা, মঠ আর সিন্নি ভাগ করে একটা রেকাবে করে দেয় ছবির মা৷ মেয়েটা এখনও কেমন কাঠমত হয়ে আছে৷ ওর গালে পাঁচ আঙুলের দাগ আর হাতে সরু সরু লাল লাল মারের দাগ ফুটে রয়েছে৷ চোখে একটু দিশেহারা দৃষ্টি৷ ছবির মা ঠান্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে আস্তে আস্তে থুপে থুপে মারের দাগগুলোর উপরে দিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে রেড়ির তেল লাগিয়ে দিয়েছে৷ মেয়েটা তখন অল্প দু একটা কথা বলে, ওর বাবা ফেরার পর মা আর বাবার আবার খুব ঝগড়া হয় ---- এইটুকু বলে টিঙ্কুর ঠোঁট কেঁপে কেঁপে ওঠে৷ ছবির মা তাড়াতাড়ি একটা গোলাপী মঠ দেয় ওর হাতে৷ মেয়েটা খুশী হয়ে কট্কট করে কামড়ে কামড়ে খায়৷ খাওয়াদাওয়া শেষ হলে ছবি টিঙ্কুর সাথে খেলনাবাটি নিয়ে বসতে গেলে ছবির মা বাধা দিয়ে টিঙ্কুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে বেরোয়৷ পাশের বুলির মা'কে বলে যায় ঘরটার দিকে, ছেলেমেয়েগুলোর দিকে একটু নজর রাখতে৷ রাস্তায় অল্প একটু যেতেই টিঙ্কুর বাবার সাথে দেখা হয়, মেয়েকে খুঁজতে বেরিয়েছেন৷ ছবির মা'র কাছে শুনে মেয়েকে এক চড় তুলেও কি ভেবে যেন থেমে যান৷ ছবির মা খরখরিয়ে বলে 'অত মারবেননি বাবু৷ ঐটুকু মেয়ে কতখানি দু:খু হলে অতরাতে গিয়ে পুকুরপাড়ে ডাইঁড়ে থাকে ---- পড়ে গেলি আর পেতেন নি মেয়েরে৷' টিঙ্কুর বাবা অস্ফুটে কিছু একটা বলে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে চলে যান৷
ফিরতি পথে থালার মত চাঁদটা একেবারে সোজাসুজি চোখে পড়ে ছবির মা'র৷ ছবির বাবা এমন রাতে ওকে বলত 'ও পরীবৌ আজ রাতে দাওয়ায় শোব চল৷ ঐ চাঁদের চোখে চোখ রেখে দ্যাক দিকিনি, ছিষ্টির নোংরাকিষ্টি সব ভুলে যাবি৷' অনেকদিন পরে ছবির বাবার কথা মনে পড়ল; মনে পড়ল ঐ মানুষ বলত 'পরীবৌ' ---- ওর নাম 'পরীবালা' --- সেই বা আজ আর কার মনে আছে! ওর নিজেরই তো মনে ছিলনা৷ পরীবালা মনে মনে ভাবে অনেকদিন ধরেই করবে করবে করছে--- কিন্তু আর দেরী নয়, সামনের মাসেই কিছু ধারধোর করে বাড়িটার চারদিকে ইঁটের পাঁচিল দিয়ে একটা কাঠের দরজা লাগাবে, শক্ত খিল দেওয়া৷ ও সারাদিন আর সন্ধ্যেরাতটা বাইরে বাইরে থাকে ---- ছবি, খুকু ঘরে থাকে ---- দিনকাল ভাল নয় ----- ধার শোধ দিতে হয়ত আরেকটা কাজ ধরতে হবে৷ তা শুধু বাসনমাজা আর কাপড়কাচা ধরবেখনে, ঘরমোছা নেবে না, ঘরমোছায় বড় খাটনি হয়৷ মনে মনে ঠিক করে ফেলে মনটা ভাল হয়ে যায় পরীবালার৷ দাওয়ায় ওঠার আগে চোখ তুলে চাঁদের দিকে একবার ভাল করে তাকায়, মনে হয় চাঁদ যেন অল্প একটু প্রশ্রয়ের হাসি হাসছে, পরীবালাও ফিক করে হেসে ঘরে ঢুকে যায়৷
মন্তব্য
কি চমৎকার! মনে হলো পেন্সিলের টানে একটার পর একটা ছবি একেই চলেছেন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
খুবই ভাল লেগেছে দময়ন্তীদি। আপনি কেন যে গল্প এত কম লিখেন!
গল্প লিখতে ঠিক সাহসে কুলায় না বইখাতা
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
যে আচার-অনুষ্ঠান এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না। কিন্তু লেখনীর কারণে যেন চোখের সামনে ছবি ভেসে উঠল। টিংকুর রহস্য উদ্ধার হলে হয়তো আরেকটু ভাল লাগত, তবে লেখিকার উপসংহারে আদর্শ ছোট গল্পের 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ' এর একটা রেশ আছে যা ভাল লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ অতিথি৷
জীবনে এক আধটা রহস্য থাকা ভাল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
(গুড়) (গুড়) (গুড়) (গুড়) ...
কিন্তু আপনার লাল-সবুজ নিয়ে একটা লেখা দেবার কথা ছিল না?
হ্যাঁ ছিল তো৷ ৭৫ ভাগ লিখেও ফেলেছি৷ দিয়ে ফেলব শীগগিরই৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
চমৎকার!
এবং চমৎকার!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ
এবং ধন্যবাদ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
একে গল্প বলছেন ঠিক আছে, কিন্তু আমি যে এর ভেতরে উপন্যাসের গন্ধ পাচ্ছি দিদি! কেউতো এমন দিব্যি দেয়নি যে উপন্যাসটা লেখা যাবে না।
বর্ণনা, ভাষা, চিত্রকল্প, কাহিনীর গতিপ্রবাহ সিম্পলি অসাধারণ!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
না না কেউ অমন কোনও দিব্বি দেয় নি৷ শুরু করে দিন, শুরু করে দিন৷
অনেক ধন্যবাদ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ঠিক্, ঠিক্! কেউ অমন কোনও দিব্বি দেয় নি৷ শুরু করে দিন, শুরু করে দিন৷
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শুরু করে দিন।
আর যা- ই হোক এটা কোন এলেবেলে গল্প অবশ্যই নয়
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অনেক ধন্যবাদ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনি কেন এত কম লেখেন? খুব খারাপ। আগে পড়েছিলাম, মন্তব্য করা হয়নি, খুব ভাল লেগেছিল
নতুন মন্তব্য করুন