হোক্কলরব গ্লোববরাবর

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: রবি, ২৮/০৯/২০১৪ - ৯:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'হোক্কলরব' নামে এই যে শ্লোগান এবং হ্যাশট্যাগটা এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও দিব্বি জায়গা করে নিয়েছে, তার শুরুটা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এই পচাগলা রাজনীতির আর পাঁচটা ঘটনার মতই হয়েছিল| পশ্চিমবঙ্গে 'শ্লীলতাহানি' আর 'ধর্ষণ' আজকাল 'হাসি' আর খুশী'র মতই হরহামেশা খবরের কাগজের পাতায় বা মানুষের আলোচনায় থাকে| তো সেই নিত্যনৈমিত্তিক প্রাত্যহিকতায় 'যাদবপুরের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি'র অভিযোগকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে ফলো করার কথা অনেকেই ভাবেন নি| বরং বিশ্বভারতীর যে ছাত্রী ধর্ষণের বিচার চেয়ে না পেয়ে পড়া ছেড়ে সিকিমে ফেরত চলে গেল, তাকে নিয়ে কিছু আন্দোলন হল না কেন সেই নিয়েই আলোচনা চলছিল কোথাও কোথাও| তো, আসুন প্রথমে একটু ঘটনাক্রমটা দেখে নিই

২৮ আগস্ট-- যাদবপুরের উৎসব 'সংস্কৃতি ' চলাকালীন ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী কিছু ছাত্রের হাতে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। 'ইউথ কি আওয়াজ' এ সৃষ্টি দত্ত চৌধুরির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযোগকারিণী বাথরুমের অভাবে ছেলেদের হস্টেলে ঢুকেছিলেন, তাঁর এক 'বহিরাগত' পুরুষবন্ধুর সঙ্গে। বেরোনোর সময় হস্টেলের একদল ছেলে কটুক্তি করে। বচসা হয়, এবং, টেনে নিয়ে যাওয়া হয় হস্টেলের ভিতরে। পুরুষবন্ধুকে মারা হয়। মেয়েটিকে মারধন ও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।

২৯ আগস্ট -- য়েটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। ভিসির সঙ্গে মিটিং হলে তিনি জানান, বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হলে ১৫ দিন সময় লাগবে। ততদিন নিরাপত্তাজনিত কারণে যেন মেয়েটি কলেজ থেকে দূরে থাকেন।

২ সেপ্টেম্বর -- মেয়েটি যাদবপুর থানায় এফ আই আর করেন| এখানে উল্লেখ করে রাখা যাক ছাত্রীটি তৃণমুল ছাত্র পরিষদের হয়ে প্রাথী হয়েছিলেন|

৩ সেপ্টেম্বর -- ত্র-ছাত্রীরা একটি সাধারণসভা করে ডিন অফ স্টুডেন্টের কাছে একটি ডেপুটেশন দেয়। সেখানে একটি "নিরপেক্ষ" তদন্ত কমিটির দাবী করা হয়। তদন্ত কমিটির মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন মানবাধিকার কর্মী থাকবেন, এরকম সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়। সাতদিনের মধ্যে এই অনুযায়ী কাজ করে সকলকে অবহিত করারও দাবী জানানো হয়।

৫ সেপ্টেম্বর -- ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে যাদবপুর থানা পর্যন্ত যায়| মেয়েটি হামলাকারী বলে একজনকে চিহ্নিত করেন| পুলুশ বলে ব্যবস্থা নিতে আরও সময় প্রয়োজন|

৮ সেপ্টেম্বর -- -আই-পি-ডাব্লিউ-এ ও সাধারণ ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিদল প্রো-ভিসির কাছে যান। কিন্তু কোনো খবর পান না। একটি মিছিল হয় ক্যাম্পাসে। আইসিসি (ইনটারনাল কমপ্লেন কমিটি) থেকে কলা বিভাগ ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি পদত্যাগ করেন। আইসিসি সদস্যদের আটকে রাখা হয়।

৯ সেপ্টেম্বর -- বাংলা সংবাদপত্র 'এই সময়' এ আইসিসির একজন সদস্যের বয়ান প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ছাত্রছাত্রীরা একটি সাধারণ সভা ডাকে। যেহেতু ঘটনাটা পুরোটাই সিসিটিভির আওতায় ঘটেছে, তাই সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়ে অভিযোগের প্রমাণ দাবী করা হয়।

১০ সেপ্টেম্বর -- অরবিন্দ ভবনের সামনে ধর্ণা শুরু হয়|

১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা -- লিশ, র‌্যাফ, এবং শাসকদলের লোকজন জড়ো হয় ক্যাম্পাসে। বড়ো গন্ডগোলের আশঙ্কায় ছাত্রছাত্রীরা ফেসবুকে সকলকে জড়ো হবার আহ্বান জানান। পুলিশকে জানানো হয় ভিসি একটি বিবৃতি দিলেই তাঁরা এলাকা ছাড়বেন। পুলিশ ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যায়।

রাত ১১টা -- প্রেসিডেন্সির একটি দল যাদবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়| ছাত্ররা বিভিন্ন উপায়ে জানান, সংঘর্ষ শুধু সময়ের অপেক্ষা। পুলিশ শুধু প্রেসের এলাকা ছাড়ার অপেক্ষা করছে।

১৭ সেপ্টেম্বর ভোর ২টো --- পুলিশ সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসে আবার প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরেই আক্রমন শুরু হয়। হঠাৎ অরবিন্দ ভবন এলাকার সমস্ত আলো নিভে যায়| লাঠি চলে। মারধোর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় কিছু ছাত্রকে, একজনকে তৎক্ষণাৎ আইসিইউতে নিতে হয়। গ্রেপ্তারও হন কিছু ছাত্র। ছাত্রদের পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, ৩৬ জন হাসপাতালে।, ৪০ জন গ্রেপ্তার।

১৭ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টে --- ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কটের ডাক দেন, ভিসির পদত্যাগ দাবী করেন|

ঘটনার ভিডিও

এরপরে অনেককিছু একসাথে ঘটে যেতে থাকে| প্রকাশ্যে আসে ঘটনার ভিডিও| আবাপ-আনন্দ দেখায় হঠাত করে একসাথে অরবিন্দ ভবনের সামনের আলো নিভে যাওয়া আর তারপরেই পুলিশের মার, সাথে কিছু টি-শার্টপরা লোকও লাঠি নিয়ে নির্মমভাবে মারছে| এদের আনন্দ নাম দেয় 'গেঞ্জি পুলিশ'| আরো দেখায় তার আগে ছাত্রছাত্রীরা বসে বসে কেউ গান গাইছিল, কেউ মাউথ অর্গ্যান বা গীটার বাজাচ্ছিল| তৃণমুল শিবির থেকে প্রচার শুরু হয় ছাত্রছাত্রীরা এ ওর গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে - এ কি আন্দোলন না অন্য কিছু? ছাত্রীদের পরণের হটপ্যান্টের দিকে কটাক্ষ করে মুলোদের কদর্য্য সব পোস্ট আসতে থাকে ফেসবুকে| খেয়াল রাখতে হবে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুটি বিধানসভা আসনের অন্তর্বর্তী নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে| বসিরহাটে বিজেপী এবং কলকাতার চৌরঙ্গীতে তৃণমুল জিতেছে এবং সিপিএম একটিতে পঞ্চম ও অন্যটিতে চতুর্থ স্থানে আসায় পুরোপুরি জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে| ক্রমশ প্রকাশ হয় পুলিশবাহিনীতে দশ জনের একটি কম্যান্ডো বাহিনীও ছিল| ভিসি নাকি জানিয়েছিলেন ছাত্ররা তাঁকে মেরে ফেলতে চলেছে, অতএব অবিলম্বে পুলুশ নামিয়ে তাঁকে মুক্ত করা হোক| ধর্ণার সময় ছাত্রদের দাবীমত তিনি তাঁদের সাথে কোনও আলোচনায় বসেন নি কেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে ভিসি জানান ছাত্রদের সাথে কথা বলতে তাঁর ডিগনিটিতে বাধে, এর জন্য তাঁকে রাখা হয় নি| তাছাড়া ছাত্ররা তাঁর 'চামড়া গুটিয়ে নেবে' বলে শাসিয়েছে| ডিজি সুরজিত কর পুরকায়স্থ জানান ছাত্ররাই আসলে পুলিশকে মেরেছে, কোনও ছাত্রকেই মারা হয় নি আর ছাত্ররাই সমস্ত লাইট ভেঙে দিয়েছিল| আনন্দ বারবার ভিডিও ক্লিপ দেখায় হঠাৎ একসাথে সমস্ত আলো নিভে যাবার, সমস্ত আস্ত বালবের, জানায় আলোর স্যুইচ আছে ভেতরে, ছাত্ররা যেখানে বসেছিল ধর্ণায়, তাদের আওতার বাইরে| ডিজি জানান ছাত্রদের সাথে বহিরাগত মাওবাদীরা ছিল হাতে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে| টিভি চ্যানেলগুলোতে বারবার দেখানো হয় গীটার মাউথ অর্গ্যানের ছবি ছাত্রদের হাতে|

সমাজের সর্বস্তরে এই নিয়ে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়| প্রতিবাদ আসে শঙ্খ ঘোষ, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, মীরাতুন নাহার, বিভাস চক্রবর্তী, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট্ট গুণীদের তরফ থেকেও| ২০শে সেপ্টেম্বর মিছিলের ডাক দেওয়া হয়| শ্লোগান ওঠে হোক্কলরব গ্লোববরাবর| অর্ণবের একটি গান থেকে নেওয়া 'হোক হোক হোক কলরব' শব্দগুচ্ছ| ১৯ তারিখ রাতে অভিষেক ব্যানর্জী ফেসবুকে লেখে(ইচ্ছে করে ন বাদ দিলাম) 'মদ গাঁজা বন্ধ তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ'| উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, আন্দোলন আসলে মদ গাঁজা বন্ধের প্রতিবাদে হচ্ছে, এটাই দেখানোর চেষ্টা| এই অভিষেক ব্যানার্জী হল মমতা ব্যানার্জীর ভাইপো, সেইই তার ক্লেম ট্যু ফেম| তা ছেলেপুলেরা আরো ক্ষেপে ওঠে, অনেকে গিয়ে অভিষেকের প্রোফাইলে মদ-অন'এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেও আসেন| এখানে সচলের পাঠকদের জানিয়ে রাখি পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র সম্পর্কে কথিত আছে যে বিকেল চারটের পর থেকে ওঁর কথার গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকে, সন্ধ্যে সাতটার পর আর কোনও কথাই ধরতে নেই| ২০ তারিখ সকাল থেকে আকাশ উপুড় করে আঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়, আর কলকাতা দেখে এক অবাক মিছিলের| পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত, কলকাতার প্রায় সমস্ত কলেজ থেকে ছাত্রছাত্রী এসে পা মেলায় মিছিলে, আসে অজস্র সদ্য পাশ করা না-ছাত্রছাত্রীরা, আসেন অনেক বিশিষ্ট গুণী, আসেন মধ্যবয়সী ও প্রায় বৃদ্ধের দিকে যাওয়া নারীপুরুষ| গান গাইতে গাইতে, হাততালি দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে সুচারু শৃঙ্খলায় সব হাঁটতে থাকেন রাজভবনের দিকে, উদ্দেশ্য রাজ্যপালের সাথে দেখা করা| মেয়ো রোডে পুলিশ আটকে দেয় মিছিল| সবাই ওখানেই রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে বসে পড়েন, গান গাওয়া, শ্লোগান দেয়াঅ চলতে থাকে| ৮ জনের এক প্রতিনিধিদল গিয়ে রাজ্যপালের সাথে দেখা করে তাঁদের দাবীদাওয়াগুলি জমা দিয়ে আসেন| মুখ্য দাবী হল বিশাখা গাইডলাইন অনুযায়ী নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে মেয়েটির অভিযোগের বিচার করে তার ফল জানাতে হবে| পুলিশে করা এফ আই আরের এগেইনস্টেও চার্জশীট জমা দিয়ে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করতে হবে| ভিসির পদত্যাগ চাইই চাই| আরো বেশ কিছু ন্যায়সঙ্গত দাবী| রাজ্যপাল অনেকক্ষণ ধরে মন দিয়ে ছাত্রদের কথা শোনেন, আশ্বাস দেন ব্যবস্থা নেওয়ার| প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি রাজ্যপালই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য|

২২ তারিখ কলকাতায় পাল্টা মিছিলের ডাক দেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং কুখ্যাত শঙ্কুদেব পান্ডা| সেই মিছিলে টিভি চ্যানেলের লোকজন আসার কারণ জিগ্যেস করলে অনেকেই জানান যাদবপুরে পুলুশ ঢুকে ছাত্রদের পেটানোর প্রতিবাদে তাঁরা এসেছেন| এই নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে চ্গলে তুমুল খিল্লী, তাতে অবশ্য শঙ্কুপান্ডার বা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোনও কিছু আসে যায় না| সেই মিছিল নিয়ে গিয়ে শঙ্কু পান্ডাও চেষ্টা করে খুব রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার| রাজ্যপাল কিন্তু দেখা করেন না| স্বভাবতই ২০র মিছিলের উদ্যোক্তারা ছাত্রছাত্রীরা খুবই উল্লসিত হন| এর মধ্যে রবিবার রাতে আবার পার্থ চট্টো এবং শঙ্কুপান্ডা গিয়ে সেই মেয়েটির বাড়ীতে দেখা করে কথাবার্তা বলে আসেন| যে বাবা শনিবার ২০ তারিখে ছাত্রদের মিছিল দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন এরা ওঁর মেয়ের জন্য, ন্যায়বিচারের দাবীতে লড়ছে, সেই তিনিই এবারে বিবৃতি দিয়ে জানান তিনি মনে করেন রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ঠিকই ন্যায়বিচার দেবে, ছাত্ররা যেন আর ক্লাস নষ্ট না করে ক্লাস শুরু করে দেয়| কিছু লোক আবার শুরু করে মেয়েটি ও তাঁর বাবা বিক্রী হয়েছেন ইত্যাই| এবারে আবার হোক্কলরব টিম রুখে দাঁড়ায়, বিবৃতি দিয়ে জানায় কেউ যেন ওঁদের একটিও কটুবাক্য না বলে, কারণ আমরা কেউ জানি না ঠিক কি পরিস্থিতিতে উনি কী বলেছেন| আর সবচেয়ে বড় কথা এতদিন বাদে শিক্ষামন্ত্রী বাড়ী এসে উপস্থিত হলে একজন নির্বিরোধী ভালমানুষ, হঠাৎ করে মিডিয়ার অনাকাঙ্খিত অ্যাটেনশান পেয়ে যাওয়া নিরীহ মানুষ কী-ই-বা করতে পারেন!

২৫ তারিখ থেকে বিশ্বজুড়ে 'হোক্কলরব'এর ডাক দেওয়া হয়| সাড়া আসছে সমস্ত্ অঞ্চল থেকে| মূলত যাদবপুরের প্রাক্তনীরাই উদ্যক্তা, কিন্তু আন্দোলনে সহমর্মিতা জানাচ্ছেন বহু বহু মানুষ| ২০ তারিখ মিছিলের কিছু শ্লোগান
এই ভিসিকে চিনে নিন/ ওএলএক্সে বেচে দিন

পুলিশ পেলে জাপটে ধরে/গান শোনাব বিশ্রী সুরে (বোধহয় রোদ্দুর রায়ের গান শোনাবে বলে ভেবেছিল)

ভিসি তুমি বাজে লোক/তোমার মাথায় উকুন হোক

আরো বেশ কিছু মজার মজার ছিল| আর চলছে পোস্টার বানান| ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন, ক্লাস বয়কট চলছে| এরমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী একটি নতুন তদন্ত কমিটি বানিয়ে দিয়েছেন, বিশাখা গাইডলাইনের ধার না ধেরেই| আর নিরপেক্ষতার বদনাম তাঁর কোনওদিনই নেই| কাজেই সেই কমিটি নিয়েও শুরু হয়ে গেছে তুমুল বিক্ষোভ| এই নতুন কমিটি আবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে একটা রিপোটর্ও জমা দিয়েছে| দুজন ছাত্রকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে, বলাবাহুল্য ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য এটা আসল দোষীদের আড়াল করা ও বিক্ষুব্ধদের টাইট দেওয়া জন্য একটি চাল এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ভুল লোকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে|

ব্যক্তিগতভাবে ছাত্ররাজনীতির অতি দেউলিয়া চেহারা দেখে কলেজ লাইফ কাটানো আমি এই আন্দোলনের শুরুতে যথেষ্ট সিনিক ছিলাম| কিন্তু পরে এদের ম্যাচিওরিটি দেখে নিজেদের বক্তব্যে অবিচল থাকা দেখে, অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবনাচিন্তা দেখে একেবারে অবাক ও মুগ্ধ|

শেষে ওদের সাথে গলা মিলিয়েই বলি হোক হোক হোক্কলরব

সংযোজনঃ
এই মুহূর্ত্তে তদন্তের কী অবস্থা

http://www.epaper.eisamay.com/epaperimages/2992014/2992014-md-em-6/3244265.jpg

## খুব তাড়াহুড়োয় লেখা পরে কিছু ভুল চোখে পড়লে সংশোধন করে দেব| আর সময় করে বিশ্বের বিভিন্ন কোণে যে প্রতিবাদের ঝড়্ উঠেছে তার কিছু ছবিছাবা জুড়ে দেব|


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১৯ তারিখ রাতে অভিষেক ব্যানর্জী ফেসবুকে লেখে(ইচ্ছে করে ন বাদ দিলাম) 'মদ গাঁজা বন্ধ তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ'| উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, আন্দোলন আসলে মদ গাঁজা বন্ধের প্রতিবাদে হচ্ছে| এই অভিষেক ব্যানার্জী হল মমতা ব্যানার্জীর ভাইপো, সেইই তার ক্লেম ট্যু ফেম|

ইন্টারেস্টিং! শাহবাগের রেপ-ড্রাগস হওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। চোখ টিপি

ব্যক্তিগতভাবে ছাত্ররাজনীতির অতি দেউলিয়া চেহারা দেখে কলেজ লাইফ কাটানো আমি এই আন্দোলনের শুরুতে যথেষ্ট সিনিক ছিলাম| কিন্তু পরে এদের ম্যাচিওরিটি দেখে নিজেদের বক্তব্যে অবিচল থাকা দেখে, অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবনাচিন্তা দেখে একেবারে অবাক ও মুগ্ধ|

এমন মুগ্ধতার নতুন নতুন ক্ষেত্র আসুক, শুভকামনা! চলুক

তবে আর কি? হোক কলরব!

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দময়ন্তী এর ছবি

হুঁ যেকোনও আন্দোলন বা ক্ষোভের ক্ষেত্রেই সেটাকে বদনাম করে দমিয়ে দিতে চাওয়ার চেষ্টা বা জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাটা কমন।

দেখা যাক।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার লেখা। ঘটনাবলী খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আমিও বলি হোক হোক হোক কলরব।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

সময় উপ‌যোগী দারুণ লেখা! চলুক

-আনন্দময়ী মজুমদার

দময়ন্তী এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। নিগ্রহকারীদের দলীয় পরিচয় আর নিগ্রীহিতা দলীয় পরিচয় তো অভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা এমন হলো কেন?
২। বিশাখা গাইডলাইন অনুযায়ী সমাধানের পদ্ধতিটা কী ছিল?
৩। যাদবপুরে উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিটা কী? উপাচার্য নিয়োগে (বা অপসারণে) রাজ্যের শাসক দলের প্রভাবিত করার সুযোগ আছে কী?
৪। শঙ্কু দেব পাণ্ডা কে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তার সম্পর্ক কী?
৫। মদ-অন মিত্র কি এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট? ভাইপোর সাথে তার সম্পর্ক কী?
৬। সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?

সব জায়গাতেই অধিকাংশ সময়ে কেমন করে যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিগ্রহকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। আর হত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্য ফৌজদারী অপরাধের ঘটনাগুলোও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঘটলে কী করে যেন আর ফৌজদারী অপরাধের মতো হ্যান্ডেল করা হয় না। এমনসব ঘটনায় তদন্ত কমিটির কর্তারা সুন্দর গোল গোল কথা বলে 'স্থগিত বহিষ্কারাদেশ', 'সাময়িক বহিষ্কারাদেশ', 'স্থগিত অর্থদণ্ড' ইত্যাদি দুষ্টু-মিষ্টি শাস্তির ব্যবস্থা করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।

পুনশ্চঃ টাইপোগুলো ঠিক করে দিন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

১) হুঁ তার কারণ অন্তর্দ্বন্দ্ব হতে পারে কিম্বা আমার ব্যক্তিগত ধারণা কিছু মরাল পুলিশ উদয় হয়ে পুলিশগিরি ফলাতে গিয়ে শেষপর্যন্ত এই দাঁড়িয়েছে।

২) বিশাখা গাইডলাইন এখানে পাবেন।

৩) আগের উপাচার্য্যকে যেতে বাধ্য করে এঁকে শাসক দল ৬ মাসের জন্য বসিয়েছে অনেক যোগ্যতরকে বঞ্চিত করে।

৪) তৃণমুল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পান্ডা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

৫) মদ-অন এখন সারদায় এই ফাঁসে কি সেই ফাঁসে। উৎকন্ঠা রোগে ভুগে ভুগে বেলভিউতে ভর্তি হয়, বেলভিউ থেকে রিলিজ করলে বেরোতে চায় না, পাছে সিবিআই ধরে নিয়ে যায় ---- মুখ্যম্ন্ত্রী মদনের ছায়াও মাড়াচ্ছেন না, কাজেই মদনা এখন প্রায় অন্তরালে। এই ঘটনায় কোনও যোগ নেই মদনার। কিন্তু লোকে বলেছে কারণ ঐ অভিষেকের মদ গাঁজা নিয়ে আন্দোলনকে কটাক্ষ করায় ক্ষেপে গিয়ে।

৬) ব্বেশ কয়েকজন গোল্ড মেডেল রিনাউন্স করে ফেরত দিয়ে, ব্ভিসির পদত্যাগ দাবী করেছেন।
প্রো-ভিসি পদত্যাগ করেছেন, আরো দুজন অধ্যাপকও করেছেন
শ্লীলতাহানির অভিযোগে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে, এদিকে ছাত্রদের একটা বড় অংশ বলছে ইচ্ছে করে ভুল লোকদের ধরা হয়েছে যাতে আসল লোকেরা ছাড়া পেয়ে যায়।
পুজোর মধ্যেও আন্দোলন চলবে। অষ্টমীর দিন ম্যাডক্স স্কোয়ারে 'হোক্কলরব'। ভিসি ভয়ে পুজোর ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবচেয়ে মজা হল, যাদবপুরের ভিসি পূর্বনির্ধারিত বিদ্যাসাগর ইউনি'র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গেলে ১৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন ওনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে আসে, বাকী ১৫ জন গরহাজির।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হোক কলরব

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দময়ন্তী এর ছবি

হোক হোক

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

হোক কলরব !!

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

দময়ন্তী এর ছবি

হোক

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।