এবড়ো খেবড়ো রং - ৫

দময়ন্তী এর ছবি
লিখেছেন দময়ন্তী (তারিখ: শুক্র, ২৬/১২/২০১৪ - ৬:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১)
দুই ক্ষেপ মিলিয়ে নয় নয় করেও পাঁচ বছর হয়ে গেল পুণেতে| বেড়ে ওঠার সেই ছোট্ট মফস্বল কোন্নগরের পরেই জীবনে সবচেয়ে বেশীদিন ত্থাকছি পুণেতে| সহ্যাদ্রির কোলে শান্ত ছোট্ট শহরটাকে প্রায় চোখের সামনেই মেট্রোসিটি হয়ে যেতে দেখলাম|

২০০৭ এর জুলাইমাসের এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে যখন পুণেতে এসে নেমেছিলাম, গুরগাঁওয়ের দাবদাহ আর কোন্নগরের ঘাম প্যাচপ্যাচে ভ্যাপসা গরমের পর মনে হয়েছিল এই শহরটাতো ভারী আরামের! এখানে বেশ কিছু বছর থাকতে পারলে বেশ হয়| অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১০ এ যখন কলকাতা ট্র্যান্সফার নিলাম তখন সত্যি ভারী মনখারাপ হয়েছিল| আর যেতে আসতে পাহাড় দেখে অভ্যস্ত চোখ কলকাতার বাক্সবাড়ীতে ধাক্কা খেতে অভ্যস্ত হতেও ভালই সময় নিয়েছিল| ২০১২র মাঝামাঝি কলকাতা অফিসের প্রজেক্ট গেল ভীষণ কমে, ক্লায়েন্টরা অনবরত বিলিং রেট কমাচ্ছে, এমনকি ইনসোর্সও করছে কিছু কাজ ---- তখন মোটামুটি টিঁকে থাকাই সমস্যাবিশেষ| অগত্যা ডিসেম্বরে আবার পুণে প্রত্যাগমন| আর সত্যি সত্যিই প্রায় ঘরে ফেরার অনুভুতিই হল খানিকটা, যেটা কিন্তু কলকাতা গিয়ে হয় নি| তার কারণ অবশ্য কলকাতা কোনোদিনই আমার স্থায়ী বাসস্থান ছিল না তার আগে| ছিল আরো কিছু কারণ, যেমন কথা দিয়ে কথা না রাখার টিপিক্যাল পশ্চিমবঙ্গীয় অভ্যেস, অগ্রিম টাকাপয়সা বুঝে নিয়ে সার্ভিসটুকু না দেবার অভ্যেস --- দীর্ঘকাল বাইরে থেকে এসব মেনে নেবার অভ্যেস চলেই গেছিল প্রায়|

ফেরত এসে যে বাড়ীটি ভাড়া নিলাম, তার অবস্থান বড়ই মনোহর| দশ তলার পূর্বমুখী কর্নার ফ্ল্যাট| বারান্দা কিম্বা শোবার ঘরের জানলায় তাকালে দূর দূরান্ত পর্যন্ত চোখ চলে যায়, যতক্ষণ না কোনও পাহাড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে| সক্কাল সক্কাল উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়ালে পাহাড়ের কোণা থেকে লাল টুকটুকে সুজ্জিমামাকে উঠতে দেখা যায়| ঠিক এই সূর্য ওঠার সময়টায় কতগুলো ছোট ছোট পাখী চক্রাকারে উড়তে থাকে| এদের আর সারাদিনে দেখতে পাই না, আবার সূর্য ডোবার সময় পশ্চিমের বারান্দা থেকে তাদের দেখা যায়| আমার বারান্দাটি যেহেতু পূর্বমুখী, তাই দিনে একবারই এদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়| বৃষ্টিবাদলার দিনে এদের মোটেই দেখতে পাওয়া যায় না| কী পাখী এরা কে জানে!? বাড়ীওলা ভদ্রলোক ভারী সজ্জন, আমি প্রায় চড়াও হয়ে তাঁর বাড়ীটি ভাড়া নিতে চেয়েছিলাম এবং পরেরদিন থেকেই ঢোকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম| তিনি কিছুতেই সম্মত হতে পারেন নি, কারণ তখনও 'পুজন' হয় নি গৃহের| পরের সপ্তাহে পুজা করে আমাকে হস্তান্তর করবার আগে তিনি মডিউলার কিচেন, এক্সস্ট পাখা ইত্যাদি লাগিয়ে দিতে কিন্তু ভোলেন নি| না চাইতেও তুলনা এসেই যায়| কলকাতার শেষ বাড়ীটির বাড়ীওলা 'দিদিভাইইই' করে আতাডলা, পাতাডলা দিয়ে হাজারো গপ্পো করেও এগারো মাস সময়কালে একটি হাতমুখ ধোবার বেসিন লাগিয়ে উঠতে পারেন নি|

'শাইনিং ইন্ডিয়া'র মানুষজন ঠিক কবে থেকে শাড়ি কেনার মত করে বাড়ী কিনতে শুরু করল, খেয়াল করি নি| হঠাৎই একদিন দেখলাম আশেপাশের সবাই অনবরত কিনে চলছে ফ্ল্যাট, জমি, ভিলা, বাংলো, ফার্মহাউস| এত ভাল রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান নাকি আর হয় না| পুকুর বুজিয়ে, চাষের জমি ভরিয়ে তো অনেকদিনই শুরু হয়েছিল এখন মোটামুটি পাহাড় গুঁড়িয়ে, জঙ্গল পুড়িয়ে, নদী বুজিয়েও হাউসিং প্রোজেক্ট বানানো শুরু হয়ে গেছে| আর এতকিছু আয়োজন সবই 'লাক্সারি অ্যান্ড কমফোর্টেবল লিভিং'এর জন্য| 'অ্যাফোর্ডেবল হাউসিং' এক মরীচিকা বিশেষ| এই নিয়ে পরে কখনও বিস্তারিত লেখা যাবেখন| আপাতত এইটুকু বলে রাখি আমার অতি সজ্জন বাড়ীওলা, সরকারী চাকরি করেন, আমাদের এই ক্যাম্পাসটাতেই তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক, উল্টোদিকের ক্যাম্পাসেও সম্প্রতি একটির 'পজেশান' পেলেন, বাসিন্দা মুম্বাইয়ের, সেখানেও নিশ্চয় আছে দু চারখান|

২)
'পশ্চিমবঙ্গ' অরাজকতার আর এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে| রাজনীতি করা লোকজনের অসভ্য ইতরামো, দাঙ্গাকরা, খুন, ধর্ষণ এসবই অনেকটা চোখে সয়ে এসেছে আজকাল| কিন্তু যাদের আমরা মানুষকে বাঁচানোর কারিগর বলে জানি, সেই ডাক্তাররা যখন নিছক আমোদের জন্য কাউকে পিটিয়ে মেরে ফ্যালে, তখন কিরকম যেন অসম্ভব এক নিরাপত্তাহীনতা আর হতাশা ঘিরে ধরে| কিঞ্চিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক খুব সকালে ডাক্তারি ছাত্রদের হোস্টেলের দরজায় উঁকিঝুঁকি মারার অপরাধে 'গণপ্রহারে মৃত' হয়ে যান| হোস্টেলের হবু ডাক্তারদের বাঁচাতে সুপার অবিরাম মিথ্যে বলে চলেন, পুলিশকে সহায়তা তো করেনই না, উল্টে সামনেই পরীক্ষা এই অজুহাতে ছাত্রদের সাথে দেখাও করতে দিতে চান না| কী পরীক্ষা দেবে এই দুপেয়ে জীবগুলো? এরা হিপোক্রেটিক ওথ নিয়েছে মানুষ মারার জন্য?! মৃত কোরপান শাহের পুরুষাঙ্গ সহ দেহের বিভিন্ন অংশে এমনভাবেই আঘাত করা হয়েছে যাতে দ্রুত রক্তপাত হয়ে মৃত্যু ঘটে| এরা তো জানে, শিখেছে কোথায় এবং কীভাবে আঘাত করলে তা প্রাণঘাতী হয়, তারই সফল প্রয়োগ করেছে| আচ্ছা এদের মা, বাবা, ভাই, বোন, প্রেমিকা, বন্ধুদের ভয় করছে না এদের সাথে থাকতে? এদের মুখোমুখী হতে? মনে হচ্ছে না এই দানবগুলো নিজেদের অতি সামান্য প্রয়োজনে বা নিছকই বিনোদনের জন্য তাদেরও মেরে ফেলতে পারে? অক্সিজেন সিলিন্ডার টেনে খুলে নিয়ে দেখতে পারে কেমন লাগে? কী ভরসায়, কোন বিশ্বাসে এদের কাছের লোকেরা এদের সাথে দিনযাপন করছে?

রাজ্য প্রশাসনের কাছে তো সুবিচারের আশা প্রায় নেইই, এর আগে আমরা দেখেছি আক্রান্ত ব্যক্তি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশের পাশের চেয়ারে বসে অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগপত্র ছিঁড়ে ফেলে দেয়, তার কোনওই প্রতিকার হয় না| কিন্তু যেটাঅসম্ভব অবাক করছে সেটা হল কলকাতার ছাত্রমহলে এই নিয়ে প্রতিবাদ নগন্য বললেই হয়| খুব মুষ্টিমেয় কিছু ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ দেখিয়েছে, বিচার চেয়েছে, গলা তুলেছে| তার চেয়ে অনেক বেশী করে শোনা যাচ্ছে 'খুব খারাপ ঘটনা বটে, কিন্তু মোবাইল ল্যাপটপ চুরি এত বেড়ে গেছে যে এরকম কিছু একটা না হলে আর চলছিল না'| শুনে শুনে চার অক্ষর উচ্চারণ করতে ইচ্ছে করে, আশ্চর্য্য! একটা প্রাণ এত তুচ্ছ, এতই তুচ্ছ! আরও আলোচনা চলে যে মৃত কোরপানের মাত্র ২৮ বছর বয়সেই ৪টি সন্তান, আরো একটির আগমন সম্ভাবনা তাঁর স্ত্রীর দেহে পরিস্ফুট| কিন্তু কেন ৪-৫ টি সন্তান? কেন তাঁকে বা পরিবারকে কন্ডোমের উপকারীতা বোঝানো যায় নি, কোথায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, আমাদের মত তথাকথিত সভ্য লোকদের এই 'গন্ডা গন্ডা বাচ্চা পাড়া' মানুষদের প্রতি তাচ্চিল্য ও এড়িয়ে থাকা গোটা সমাজকেই কোন অতলে ঠেলে নামাচ্ছে তা নিয়ে একছত্রও আলোচনা দেখি না| কেউ করতে আগ্রহীও নয়|

৩)
সারদা কেলেঙ্কারির আগুন মোটামুটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অবধি পৌঁছে গেছে| রাজ্যের ক্রীড়া ওঅ পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেপ্তারের পর মমতা ব্যানার্জীর চিলুবিলু রাগ দৃশ্যতই বিহ্বল ও ভীত চেহারা এমনিতে যথেষ্ট খোরাক যোগালেও রাজ্যবাসী হিসেবে মাথাটা একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে| এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কোনও পূর্ণমন্ত্রীকে এইভাবে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হতে হয় নি| এমনিতে সি আই ডিই বলি বা সি বি আই কেউই তদন্ত করে খুব কিছু ফাঁসটাস করে না, একটা নির্দিষ্ট গন্ডী পর্যন্ত ধরপাকড় করেই ছেড়ে দেয়| কিন্তু সারা ভারতে বিজেপীর তুমুল উত্থানের পর মোদির টার্গেট এখন পশ্চিমবঙ্গ| আর পশ্চিমবঙ্গে গত বছর পর্যন্তও মমতাই সর্বেসর্বা ছিলেন| নীচের তলার সিপিএম সমর্থকদের তৃণমূল এমন মেরেছে এবং সেই সময় রাজ্যস্তরের অথর্ব নেতারা আলিমুদ্দিনে বসে রুটিন শলা পরামর্শ করেই কাটিয়েছেন, নীচুতলার সিপিএম কর্মী দ্রুত কমতে শুরু করেছিল গত লোকসভার আগে থেকেই| আর লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম 'যা শত্রু পরে পরে' নীতিতে বিজেপীকে আক্রমণ না করে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে, ফলে বিজেপী আস্তে করে গুঁড়ি মেরে ঢুকে পরে রাজ্যে| এমনিতেই সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে দুষ্কৃতিদের অবাধ প্রবেশ ও প্রস্থান ঐ অঞ্চলের লোকদের প্রশাসনের ওপরে ক্ষেপিয়ে রেখেছে| এরপরে সারদায় লক্ষ লক্ষ লোকের কপর্দকশূন্য হওয়া ও খাগড়াগড় বিস্ফোরণ একেবারে চরম হয়ে দাঁড়ায়| বাংলাদেশে জামাত ও উগ্রপন্থী গ্রুপগুলো যত কোণঠাসা হয়, পশ্চিমবঙ্গে মমতার নির্বুদ্ধিতা ও দাক্ষিণ্যে ততই তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে থাকে| লোকে বড় বিপদ আঁচ করে বিজেপীর দিকে ঘেঁষতে থাকে| বিজেপীর জন্য এ একেবারে লোপ্পা বল|

মুখে সুশাসনের স্বপ্ন্ব দেখানো মোদি সারদার ব্যপারে সিবিআইকে ফ্রী হ্যান্ড দেওয়ায় কেঁচোর গর্ত থেকে বড় বড় গোখরোর কঙ্কাল বেরোতে শুরু করেছে| এখন মোটামুটি অনুমান করা যায় যে ২০১১র ভোটে লড়ার জন্য তৃণমূলের যাবতীয় খরচ সারদা গ্রুপ তথা সুদীপ্ত সেনই যুগিয়েছিলেন| এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল ২০১১র নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছাবি নাকি ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় বিক্রী হয়েছে| সেই শুনে একটি বাংলা ফোরামে আমি জিগ্যেস করেছিলাম কে বা কারা কিনেছেন? তাঁদের নাম কেন গোপন? কী তাঁদের ইন্টারেস্ট? তাতে এক তৃণমূল সমর্থক আমাকে 'সিপিএম সমর্থক' বলে উল্লেখ করে জানান যেআমি নাকি সিপিএমের হার মেনে নিতে পারছি না| ঘটনাটি হাস্যকর হলেও একটা জিনিষ লক্ষ্য করার মত| সেটা হল কোনও বিশেষ দলের সমর্থক হলে তা সে সিপিএম, তৃণমূল বা বিজেপী, যাইই হোক না কেন, ভ্যালিড প্রশ্নগুলো নিজের নজর এড়িয়ে যায় তো বটেই, অন্য কেউ করলেও তার প্রতি একধরণের আক্রোশ জন্ম নেয় এবং তাকে অন্য কোনও অপছন্দের দলের সমর্থক বলেই মনে হয়| প্রসঙ্গত এতদিনে জানা গেছে সুদীপ্ত সেনই কিনেছিলেন সেই ছবি| নিজের বোধবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে কেমন করে লোকে কাউকে বা কোনও দলকে সমর্থন করে এ বোঝা হল না বলেই আমার আর কোনও দলকে নির্দিষ্টভাবে সমর্থন করা হল না,হায়!

৪)
এই এতকিছুর মধ্যে আনন্দবাজার গ্রুপের ভূমিকাটা বেশ কৌতুহলোদ্দীপক| আবাপ গ্রুপ এখন নির্লজ্জভাবে মোদি ও বিজেপীকে সমর্থন করে যাচ্ছে| এমনিতে আ-বাজার চিরকালই বাজারের পক্ষে, কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়, বর্তমানের এই 'বিজেপীকে টেনে খেলানো'র পেছনে অন্য আরো একটা কারণ আছে বলে শোনা যাচ্ছে| বামফ্রন্ট আমলে আবাপ গ্রুপ ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের ধারে একটা বেশ বড় জমি অনেক কম দামে পেয়েছিল ওখানে একটি প্রিন্টিং এক্সেলেন্স সেন্টার গোছের কিছু তৈরী করবার শর্তে| বুদ্ধবাবুর 'শিল্পবন্ধু' ভাবমূর্তি তৈরীর প্যাকেজের অংশ ছিল এটা| যাই হোক ওরা প্রথমে অনেকদিন ফেলে রাখে জমিটা| এরমধ্যে ঐ অঞ্চলের জমির দাম কোটি ছাড়িয়ে গেছে| আবাপ গ্রুপ এবারে ওটায় হাউসিং প্রোজেক্ট তৈরী করতে চায়, বামফ্রন্ট রাজী হয় না স্বাভাবিক কারণেই| এরপরে জমানা বদলায়| আবাপ গ্রুপ এবারে আবার হাউসিঙের প্রোপোজাল দেয়| তৃণমূল পরিচালিত সরকার বা পুরসভাও রাজী হয় না| বেশ কিছুদিন টানাপোড়েন চলে, এরপরে আবাপকে জানানো হয় যে হয় তোমরা যে বাবদ জমি নিয়েছিলে, তাই বানাও নয়ত সরকারকে জমি ফেরত দাও| এরপরেই নাকি আবাপ বলে এর পরের ইলেকশানে বিজেপীকে আনবো আর তৃণমূল বলে যা যা এ কি বাংলা বানান নাকি যে আবাপ'র রাজ চলবে!

শেষমেষ কমরেড গীতশ্রীকে একটা লালে লাল লাল সেলাম দিয়ে নিই| যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মঞ্চে উঠে আচার্য্য রাজ্যপালের চোখে চোখ রেখে উপাচার্য্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবীতে পদক ও শংসাপত্র নিতে অস্বীকার করেন গীত্শ্রী| রাজ্যপাল তাঁকে আঙুল তুলে 'গেট আউট' বলেন| এরপরেও বহু ছাত্রছাত্রী মঞ্চে উঠে পদক ও শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করে নমষ্কার করে নেমে যান| ইতিমধ্যেই গীতশ্রীর এসএফআই (সিপিএমের ছাত্র সংগঠন) করা নিয়ে কটাক্ষ ও কটুক্তি শুরু হয়ে গেছে| তৃণমূল তো করবেই, প্রত্যাশিতই ছিল| কিন্তু রাজ্যপাল কেশরীনাথ সিং বিজেপীর লোক, বলতে গেলে আর এস এসের একেবারে ঘরের লোক| কাজেই তেনার অবমাননায় বিজেপীও চটেছে| আনন্দগ্রুপ যদিও শুরুতে গীতশ্রীকে যথেষ্ট তারিফ করেছে, শংসাপত্র প্রত্যাখ্যানের ঘটনাকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে, তবে আমার ধারণা এরপরে আস্তে আস্তে সুর বদলে আইন শৃঙ্খলা, রাজ্যপাল, কাম আচার্য্য পদের অবমাননা ইত্যাদি নিয়ে মিহিসুরে গান শুরু করবে|
দেখা যাক|
কিন্তু আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট এই মেয়েটির জন্য অনেকখানি শ্রদ্ধা রইল| এই ছেলেমেয়েগুলোর জন্যই ভরসা হারিয়েও হারায় না|


মন্তব্য

shamik এর ছবি

[restrict:সচল][/restrict]
Protibrader o branding lage tai na ? Er aage aaro onek nyakkarjonok ghotona ghoteche , tokhon JU er students ra kotha chilo ? JU-er tokhon mone hoyni protibad kora uchit ? Nakira oto kulin noy bole, thik media khabe na tai na ? Poschimbonge JU-er students ra chara bakira manush na ?Etoi jodi protibad tahole JU er ENgineering er students campussing-a bosche keno ? Oi meyeti Exam er aage protest korte parto, sudhu sudhu monche uthe natok dekhano ? That girl is from SFI. SFI je ki cheese janen na. Ei sedin TMC er GUNDA ra BURDWAN UNiversity te sobaike dhore marlo ? SEDIN JU protibadi sotta kothai chilo ?TMC Bongar kono college- marle বা North Bnegal er kono college- hamla korle, seta news hoy na ? Okhane chotoloker chelemeyera pore bole ?

দময়ন্তী এর ছবি

উরিন্নাঃ পাগলা খাবিক্কি, ঝাঁজেই মরে যাবি।

তা শমীকবাবু, বর্ধমানের মারপিটের জন্য, নর্থবেঙ্গলের গুন্ডাগর্দির জন্য, যাদপ্পুরের ছেলেমেয়েদেরই পোতিবাদ জানাতে হবে? ক্যানে? যাদপ্পুরকে এরা সব পোতিবাদের কাজটা আউটসোর্স করেছে?

দিনের শেষে নিজের প্রতিবাদটা নিজেকেই করতে হয় আর নিজের কাজের দায়িত্বও নিজেকেই নিতে হয়।

আর আপনার বক্তব্য আপনি ব্লগ লিখে জানান না, কে মানা করেছে?

তবে হ্যাঁ সচলায়তনে লিখতে গেলে হয় পুরো বাংলায় নয় পুরো ইংরাজীতে লিখতে হবে। এই হযবরল বাংলিশ চইলবেক নাই।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। এটা ঠিক যে লোকে বাড়ি কিনছে, জমি কিনছে, নিদেন পক্ষে ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট কিনছে। আমি এই মানুষগুলোকে দেখতে পাই, কিন্তু চিনতে পারি না। লোকে লাখ-কোটি টাকার জিনিস কিনে ফেলে কী করে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি আজো। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যায় চাকুরিজীবির ক্ষেত্রে মাসিক বেতন হাজার টাকায় আর ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে মাসিক আয় ঠেলেঠুলে লাখ দুই-তিন হয়। মনে হয় ওদের পকেটে আলাদীনের চেরাগ আছে, অথবা জ্বীনটা ওদের ঘরের কাবার্ডের ভেতরে থাকে। এমনটা ভাবার কারণ নেই যে এই লোকগুলো সংখ্যায় খুব কম। ভূমিদস্যুরা যেভাবে মাঠ, জলাভূমি, বন, প্রাচীন নিদর্শন, পাহাড় সব গ্রাস করে বাক্সবাড়ি তুলছে আর সেগুলো মুড়িমুড়কির মতো বিকিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হয় আমার মতো হাভাতে-হাঘর লোকের সংখ্যাই কম।

২। গোষ্ঠীতান্ত্রিক দুনিয়ায় কোন গোষ্ঠী কাউকে বাগে পেলে ঠিকই ছ্যাঁচামার দিয়ে দেবে। এতে কিছু হবে না। কারণ, তাদের অপরাধগুলো ধামাচাপা দেবার জন্য অমন অন্যায় করা অন্য গোষ্ঠীরা আছে। প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা পাবার আশা অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণের মতো ফলের সাথে সম্পর্কবিহীন উক্তিমাত্র।

৩। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনেক বেশি দাম দিয়ে মমতা, বিজেপি সংক্রান্ত শিক্ষাটা নিচ্ছে। তাও ঠিকঠাক নিতে পারছে কিনা সন্দেহ আছে। আমার তো মনে হয় আগামী নির্বাচনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শনৈ শনৈ গতিতে আগাবে। এতে বাংলাদেশে তাদের বেরাদর জামায়াতের আসার পথ সুগম হবে।

আজ পর্যন্ত কাউকে 'ওপেন চেক' বা 'অন্ধ ভালোবাসা' বা 'প্রশ্নাতীত আনুগত্য' দিতে পারলাম না বলেই তো কোন রাজনৈতিক দলের নেতা/কর্মী, কোন পীর/সাধুর মুরীদ/শিষ্য অথবা একনিষ্ঠ প্রেমিক হতে পারলাম না।

৪। আবাপ-এর গল্পটা খুব চেনা। একটা কথা আমার মাথায় অনেক দিন ধরে ঘুরছে। আবাপ আসলে কারা? কারা শুরু করেছিল? এখন স্টেকহোল্ডার কারা?

৫। একবার ঢাকার ফুটবল লীগের প্রধান দুই দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আর আবাহনী ক্রীড়াচক্র পর পর দুই লেগ ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়নশীপের ফয়সালা করতে পারেনি। তখন মাঠে দুই দলের অধিনায়ক - মোহামেডানের রণজিৎ রায় আর আবাহনীর শেখ আসলাম গ্যালারী আর বাইরে থাকা সমর্থকদের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে নিজেদের যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে। পরদিন খবরের কাগজগুলো তাদের সেই সিদ্ধান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার দু'দিন পর ফুটবল ফেডারেশন এমন সিদ্ধান্ত নেবার দায়ে রণজিৎ আর আসলামকে কঠোর শাস্তি দেয়। সাথে সাথে পেপারওয়ালারা নিজেদের সুর পালটে এদেরকে গালাগালি শুরু করে দেয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দময়ন্তী এর ছবি

দীর্ঘকাল উত্তর ও পশ্চিম ভারতে থাকার ফলে এখন এই ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টটা কিছু কিছু বুঝি। খুবই সামান্য যদিও। আগে একটা ধারণা ছিল যে অনেক লোকেই বোধহয় বেশ অসৎ কোনও উপায়ে অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়। কিন্তু এখন বুঝি যে কৈশোর বা যৌবন থেকেই অত্যন্ত যাকে বলে 'মানি মাইন্ডেড' হওয়ার ফলে এরা বেশ অল্পবয়সেই ভালমত বিত্তের অধিকারী হয়, তার অনেকটাই কোনও অসৎ উপায়ে নয়।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে সম্ভবতঃ আরো অনেক দাম দিতে হবে। বেশ কিছু কিছু জিনিষ দেখেশুনে রীতিমত ভয় হয়।

আবাপ তো বরাবরই সরকারবাড়ীর। এখনও তাই আছে। আর ওরা চিরকালই প্রো-কেন্দ্রীয় সরকার, প্রো-ওপেন মার্কেট। নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ খেলায় অনেক ভাল লেখাপত্র, প্রবন্ধ ছাপায় বটে, তবে সরকারদের আসল বক্তব্যের হদিশ পাওয়া যায় ঐ সম্পাদকীয় পাতায় বাঁ দিকের দুইখান শুদ্ধ ভাষায় লেখা বক্তব্যে।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।