মোল্লার সাথে প্যারিস ভ্রমণ। পর্ব- ০
মোল্লার সাথে প্যারিস ভ্রমণ। পর্ব- ০
সন্তিয়ের স্টেশনে মেট্রো থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আর বের হওয়ার রাস্তা পাচ্ছিলাম না। টিকিট কাউন্টারের মহিলাকে হাত নেড়ে মাত্র জিজ্ঞেস করতে যাবো -কেমন করে বের হতে পারি -তার আগেই ভদ্রমহিলা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে ইশারা করলেন -‘এইদিকে এসে বলুন কী বলতে চান!’ ভদ্রমহিলার অঙ্গুলি নির্দেশনার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু থতমত খেয়ে গেলাম, আমাকে কেন স্টিলের আলামারির ভিতরে ঢুকতে বলছেন?
খানিকটা ইতস্ততঃ করে আলমারির হ্যান্ডল ধরে ধাক্কা দিতেই খুলে ওপাশ দেখা দিল। ওহ! এটা তাহলে আলমারির দরজা না! এটাই বের হওয়ার রাস্তা! কাউন্টারের কাছে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে এলাম আমি আসলে বের হওয়ার রাস্তাটাই খুঁজছিলাম। এরপর কাউন্টারের ওপর পাশে অপেক্ষা শুরু। প্রচন্ড ঠান্ডা। একটু পর পর নিচে একটা মেট্রো আসছিল, সাথে করে নিয়ে আসছিল ঠান্ডা বাতাসের দমকা হাওয়া। মেট্রো এলে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াই। ঐদিকে বাতাস আসলে আবার অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াই। পরে খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিল নিজের উপর। একটু বুদ্ধি করে বের হয়ে আশে পাশে একটা রেস্টুরেন্ট এ বসলেই পারতাম। কিন্তু ভয়ে ছিলাম যদি হারিয়ে যাই তাহলে মল্লিকাও আমাকে খুঁজে পাবে না।
বান্ধবীকে এসেমেস করে যাচ্ছি - আর কতক্ষণ? সে উত্তর দিল আর ২ স্টেশন পর ট্রেন থেকে নেমে আমার মেট্রো স্টেশন খুঁজে বের করা পর্যন্ত একটু যেন ধৈর্য্য ধরি। বেচারি ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছে ধৈর্য্য নামক শব্দ সে আমার ভান্ডারে নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ২ ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম প্যারিসের কর্ম ব্যস্ত মানুষের আপিস যাওয়া দেখতে দেখতে। অমুকের মেট্রো কার্ড কাজ করছে না, তমুকের ব্যাগটা পাস করছে না এই সব দেখতে দেখতে দেখি ৩ জন ঠোলা আমার দিকে এগিয়ে এলো। বুঝতে পারছিলাম আমাকে এতোক্ষণ এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই এগিয়ে এসেছে। ব্যাটারা যে ইংরেজি কিছু বুঝবে না চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম। বঁজু বলে ফ্যাক ফ্যাক করে ফ্রেঞ্চে একটা কিছু বললো সেটা যাই হোক না কেন আমি মনে মনে ধরে নিলাম আমার কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি এইটাই জানতে চাইলো। আমি ইংরেজিতে বললাম যে আমার ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছি, ও এইখানে আমাকে নিতে আসবে। ব্যাটাগুলা আবার ফ্রেঞ্চে কী জানি বললো। তখন বললাম যে আমার ফ্রেন্ড ট্রেনে করে আসছে, তাই লেইট হচ্ছে। কী বুঝলো কে জানে? এরপর ‘ওকে ওকে’ বলে চলে গেল!
ঠান্ডায় আর থাকতে পারছিলাম না। আম্মুর কথা মনে পড়ে গেল। টিকিট কাটার সময় আম্মু বলেছিল ‘এতো ঠান্ডায় ঘুরাঘুরি না করে ঘরে আরাম করে ঘুমালেই ভালো, রেস্ট হবে।’ আমি আগুন গরম দৃষ্টি দিয়ে স্কাইপে আম্মুর মনিটর জ্বালিয়ে দিতেই আম্মু আবার বলে উঠলেন, ‘না, মানে একা একা যাচ্ছো তো, তাই চিন্তা হচ্ছে কেমন করে যাবা!’ ঐ মূহুর্তে মনে হচ্ছিল কেন যে আম্মুর কথা শুনলাম না! আসলেই তো, সারা রাত না ঘুমিয়ে এখন এই ঠান্ডায় ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে কাঁপাকাঁপির কোন মানেই হয় না।
অবশেষে আমার প্রিয় বান্ধবী আমাকে জানালো সে অনেকক্ষণ ধরেই আশে পাশে ঘুরঘুর করছে কিন্তু স্টেশন খুঁজে পাচ্ছে না। আমি তাই স্টেশন থেকে বের হয়ে তাকে ফোন দিয়ে আশে পাশের কিছু বর্ণনা দেওয়া শুরু করলাম আর এক সময় তাকে পেয়েও গেলাম।
ছবিঃ ১-বান্ধবী মল্লিকার (ডান দিকের জন) সাথে আমি।
এই হলো আমার ছোট্টবেলার মল্লিকা বান্ধবী, ছোট বেলায় আমরা এইভাবে কাঁধে হাত রেখে মাঠময় ঘুরে বেড়াতাম। আর মাঠে ছোট কোন বাচ্চাকে সামনে দেখলেই দাঁড় করিয়ে বলতাম, “এই ছেলে, তোমার বড় বোন তো ক্লাসে আমাদেরকে আজকে মারসে, এখন তোমাকে আমরা পিটাবো, পিটানি খাইতে না চাইলে দৌড় লাগাও।” পিচ্চিগুলা ভয়ে দৌড় লাগাত, এটা দেখে আমরা পৈচাশিক আনন্দ পেতাম। একদিন এক পিচ্চিকে এইটা বলতেই যে চোখ বাঁকিয়ে বললো, ‘আমার তো কোন বড় বোন নাই’। এটা শুনে আমরা দু’জন দৌড় লাগিয়েছিলাম।
প্যারিসের সকাল বেলায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ হুড়মুড় করে এত্তো এত্তো স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো। মল্লিকা আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। এখানে পরিচয় হলো উপমার সাথে। উপমা, মল্লিকা আর প্রিয়াঙ্কা আপু এরা ৩ জন বাংলাদেশ থেকে এক সাথে ইতালী এসেছিল। উপমা আর মল্লিকা ইরাস্মাস এক্সচেইঞ্জ কোর্সে এসেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে, উপমা মল্লিকার এক বছরের জুনিয়র। আর প্রিয়াঙ্কা আপু ঢাকা ভার্সিটির, এসেছেন মাস্টার্স প্রোগ্রামে, যাকে তখনো দেখি নি।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখলাম ওয়াই-ফাই আছে নাকি। পেয়ে গেলাম আর খোমাখাতায় স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম ‘প্যারিস হ্যাজ সেইফ্লি রিচড ইন তারানা।’ কথা তো সত্যি! প্যারিস এর জীবন সার্থক আমি তার মাটিতে পা দিলাম বলে! B-)
প্ল্যান হলো এখন প্রিয়াঙ্কা আপুর বান্ধবী শেলী আপুর বাসায় যাবো যেটা কিনা মূল শহর থেকে অনেক দূরে। ট্রেন বাস মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টার মতন লাগে। এরপর সবাই মিলে নাস্তা করে বের হয়ে পড়বো। কথায় যাবো তা বার বার পরিবর্তিত হচ্ছিল। ওদের প্ল্যান জানতে চাইলাম। এখানে আসার আগে সুমাদ্রিদা পই পই করে বলে দিয়েছিলেন অমুক জায়গায় যাবি, তমুক জায়গায় যাবি, এটা কিছুতেই বাদ দেওয়া চলবে না, আর ওটা তো মাস্ট, আর সেটা না দেখলে তো তোর খবরই আছে! কী কঠিন কঠিন নামরে বাবা! এতো আমার মনে থাকে নাকি? আমি দাঁত কেলিয়ে বলেছিলাম, ধুর ধুর, আমি কিছু জানি না, ওরা যেখানে যাবে সেইখানেই ঘুরবো। সুমাদ্রিদা ক্ষেপে গিয়ে বললো, ‘আশ্চর্য! তোর নিজের একটা প্ল্যান থাকবে না?’ এই লোকটা দুই পাতা ফ্রেঞ্চ জানে বলে আর আঁলিয়স এর টিচার ছিল বলে খুব ভাব নিলো প্যারিস নিয়ে। আবার আমার ইংরেজি নিয়ে কী তামাশাটাই না করলো! বলে কিনা ‘চিন্তা নিস না বুড়ি, প্যারিসে ইংরেজি বলা নিয়ে তোর কোন সমস্যা হবে না, ফ্রেঞ্চরা তোর মতই অশুদ্ধ ইংরেজি বলে!’ আমি চোখ পাকিয়ে মনে মনে বললাম, “হেহ! আসুক রটারডামে, ততদিন পর্যন্ত থাকলে আমিও দেখাচ্ছি মজা!”
প্ল্যান শুনতে শুনতে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলাম। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মল্লিকা আমাকে বার বার বলছিল ভালোমত চিনে রাখ, আসার দিন তোকে একা এই পথ চিনে আসতে হবে। শুনে তো আমার কলিজা কেঁপে উঠলো। একা?! কেমনে?! এই রাস্তা?! দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্যারিস দেখায় মনোনিবেশ দিলাম। ধুর, হবে কিছু একটা, হারালে হারাবো! কিন্তু, আয় হায়! প্যারিস কই? এটা তো ঢাকা! ফুটপাত জুড়ে দখল করে আছে দোকানদারেরা, হাঁটার জায়গা পাচ্ছি না। রাস্তায় নেমে হাঁটা ধরলাম। সিগনালে লাল বাতি জ্বলছে, একটা গাড়ি ভুস করে বেরিয়ে গেল। আমি হা করে মল্লিকার দিকে তাকালাম, এটা কী হলো রে? হাঁটার জন্য যে সবুজ সিগনাল সেটাও খুঁজে পেতে বেশ বেগ হলো। অন্নদাশঙ্কর রায়ের পারী নগরীর সেই যে ঘোড়দৌড় এর রাস্তা, তারপর আবার রাস্তা, আবার ফুটপাত আবার রাস্তা- সেগুলোর কোন দেখা পেলাম না। এতো রাস্তা তাইলে গেল কই? ফুটপাতেও হাঁটার জায়গা পেলাম না। মনে মনে ধরে নিলাম অন্য কোন দিকে আছে নিশ্চয়ই।
প্যারিস সম্পর্কে কেবল লোক মুখে শুনেছি অনেক; এখানে না আসতে পারলে জীবন বৃথা। আমি অবশ্য জীবন সার্থক করতে বা জীবনের সার্থকতা লাভের সন্ধানে প্যারিসে যাই নি। ঘুরাঘুরি, টাইম পাস করাটাই আসল ছিল। তবে প্যারিস নিয়ে তেমন পড়াশুনাও হয়নি আর পরিচিতদের মধ্যে কেউ তেমন একটা প্যারিসেও যায়নি!
তো যা বলছিলাম, হেঁটে যেতে যেতে ভালো মতন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছি প্যারিস এর রাস্তাঘাট। চোখ কান একদম খোলা, এতোটাই খোলা যে এই সময়ই কোন একটা জায়গায় আমার প্রিয় হাতমোজার একটা হারিয়ে ফেলি। যা বাবা! আসতে না আসতেই একটা জিনিসও হারিয়ে ফেললাম। এ কী শুভ সূচনা!
ট্রেন খুঁজে পেতে দেখি আর বেশিক্ষণ নেই, উঠে পড়লাম ট্রেনে। বাইরে তাকিয়ে প্রথম যা মনে হলো, আরে এটা তো কমলাপুর রেলস্টেশন! ট্রেন চলতেই দেখি একদম হুবহু কমলাপুর ট্রেন স্টেশন। ঠিক যেমন ঢাকার রেইল লাইনের পাশে উঁচু উঁচু বাড়ি ঠিক তেমন। কেন যেন মনে হচ্ছিল প্যারিসের মধ্যে আমি ঢাকাকে খুঁজে পেলাম। অবচেতন মনেও হতে পারে, ঢাকাকে দেখার জন্য মনের মধ্যে একটা আকুলতা রোজ টের পাই। ( এক্সামে ফেইল মারলে অবশ্য এই সব আকুলতা বাপ বাপ বলে পালাবে! ) ট্রেন চলছে মাঝারি গতিতে। একটু পর আর ঢাকা মনে হচ্ছিল না। দূরে দূরে বাড়ি দেখা যাচ্ছিল যেটা ঢাকায় দুরূহ। একটা একটা স্টেশনে ট্রেন এসে থামে, আর আমি মুগ্ধ হই। কী দারুণ ব্যবস্থা। কত সুন্দর করে সব স্টেশনের নাম লেখা আছে, অটো দরজা খুলছে, কিছুক্ষণ পর ওয়ার্নিং দিয়ে দরজা আবার বন্ধও হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মানুষ নিজ নিজ ব্যস্ততা নিয়ে উঠে পড়ছে।
ছবিঃ ২- একদম ঢাকার মতন যখন লাগছিল তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ট্রেনের বাইরে থেকে, ঐ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে পারি নি।
অবশেষে ট্রেন এসে নামলো করবেইল এসোনেস (corbeil essonnes) নামে একটা জায়গায়। হালকা রোদ গায়ে লাগছিল, কিন্তু প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস, এর মাঝে আমরা এগিয়ে গেলাম। এরপর একটা বাসে করে শেলী আপুর বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো। এইখানেই আমাদের প্রথম হারিয়ে যাওয়ার শুরু। এরপর কত অসংখ্য বার হারিয়েছি প্যারিসের রাস্তায়! বাস থেকে এক জায়গায় নেমে গেলাম ভুল করে। এরপর আর বাসা খুঁজে পাই না। আমার চোখ ঢুলু ঢুলু করছে, আর পারছিলাম না, তখনো জানতাম না আরো কী দুরবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি।
অবশেষে ভুল করে সঠিক বাসাটা খুঁজে পেলেও মল্লিকারা এটা ভুলে গেল যে কোন জায়গা দিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল আমাকে নিতে আসার জন্য। ইন্টারকমে রিং দিতে গিয়ে দেখা গেল শেলী আপুর বরের নাম কারো জানা নেই। শয়তানী বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ইচ্ছে মতন বেল টিপি দেওয়া শুরু করলাম আমরা। প্রথমবার কেউ একজন হ্যালো বলে উঠতেই আমরা পালালাম। এরপর অনেক চিন্তা ভাবনা করে বের করলাম কোন নামটা চাকমা নাম হতে পারে। আবার একটা বেল দেওয়া হলো, তবে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না, দরজা খুলে গেল। উপরে উঠে জানলাম তারা আমাদের কোন বেল শুনতে পান নি, দরজাও খুলেন নি।
হালকা একটু নাস্তা করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য আইফেল টাওয়ার দেখতে যাওয়া। যদিও প্ল্যানে তা ছিল না কিন্তু শেলী আপু বললেন আজ রোদ আছে, ওখানে ঘুরে আসুন, কাল পরশু বৃষ্টি হবে আর টাওয়ারের উপরে উঠতে পারবেন না। তাই আমরাও প্ল্যান চেইঞ্জ করে আইফেল মিয়ার উঁচা টিলাকে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। শীতের বিরক্তিকর জোব্বাজাব্বা পরে বের হয়ে গেলাম আবার।
ছবিঃ ৩ – বাম দিক থেকে উপমা, মল্লিকা আর প্রিয়াংকা আপু, তাদের সাথে আমিও এখানে রৌদ্রজ্জ্বল সকালে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখানে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক চোট হিহি হাহা হয়ে গেল। প্রিয়াংকা আপুর রম্য আলোচনায় না হেসে থাকা যায় না। হাসির মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল নিচের ছবিটি।
এমন ‘গাতা গুতা’ দেওয়া ট্রেনে কেন উঠতে হবে এই বিষয়ে বেশ এক চোট আলোচনা হয়ে গেল। এর কিছুক্ষণ আগেই আমরা একটা ভুল স্টেশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্যারিসের মেট্রো আর ট্রেনের ম্যাপগুলো আসলে বেশ সহজ। শুধু একটু সময় লাগে বুঝে উঠতে, একবার বুঝে গেলে আমার কোন সমস্যা নেই। মল্লিকা আর উপমা ছিল ম্যাপ দেখায় বস, আর প্রিয়াংকা আপু কোন জায়গায় একবার গেলেই মনে রাখতো পারতো কেমন করে এসেছে। এক মাত্র আমি ছিলাম অকর্মার ঢেঁকি। হা করে তাকিয়ে দেখতাম ওরা কেমন করে এই জটিল সমস্যা সমাধান করে ঠিক ঠিক ট্রেন ধরে ফেলছে।
ট্রেন থেকে নেমে মেট্রো নিয়ে মেট্রো স্টেশন থেকে বের হতে হতে প্রিয়াংকা আপু বললেন যে আগে আইফেল টাওয়ার দেখতে পাবে তাকে অন্যরা দুপুরে লাঞ্চ করাবে। সিঁড়ি দিয়ে মোটে উঠতে নিয়েছি, না দেখেই আমরা ৪ জন চিৎকার দিয়ে দিলাম, দেখসি দেখসি দেখসি! আসলে কিছুই দেখি নাই। ফ্রেঞ্চ লোকজন আমাদের দিকে ভ্রুঁ কুচকে তাকাচ্ছিল হয়তো, পাত্তাই দিলাম না, হাহ! B-) এদিকে উপমা খুবই লজ্জা পেয়ে গেল কেন আমরা এমন করে চিৎকার দিলাম, ব্যাপারটা মোটেও শোভন ছিল না... কিন্তু এইসব আর কে পাত্তা দেয়? কথা ঘুরে গেল কারণ সবার আগে প্রিয়াংকা আপুই দেখতে পেল আইফেল টাওয়ার, যদিও তাকে আমরা লাঞ্ছিত করি নি, মানে লাঞ্চ করাই নি। রাস্তা পেরিয়ে পুরো টাওয়ার এর দেখা পেলাম। এ কী জিনিশরে বাবা! কবি-লেখকদের ভাষায় এর সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করতে পারবো না, আজীবন কাটিয়েছি মোঃপুরের বাসায় পাশে ২টা লোহা লক্করের দোকান রেখে। দেখেই প্রথম যা মনে হলো- বডি পুরা ইশটিল!
ছবিঃ ৪- এই সেই ‘বডি পুরা ইশটিল’!
ছবিঃ ৫- টাওয়ারের সামনে আমি, যথারীতি কেলাচ্ছি।
আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই আরো সৌন্দর্য্য নজরে আসতে লাগলো। হেঁটে যাচ্ছি টাওয়ারের দিকে। কয়েকটা বধির মেয়ে কাগজ হাতে অনুরোধ করছিল সাইন করার জন্য। ভাগ্যিস অনুরোধে ঢেঁকিটি গিলিনি। বন্ধু ইনানের কাছে পরে শুনেছি এক বার সাইন দিলে ৫০ ইউরো পকেট থেকে নিয়েই ছাড়তো। ( শালার ভাই ইনান, আগে বলিস নাই কেন? , ইনানের এই ঝাড়িটা প্রাপ্য ছিল, লোকসম্মুখ্যে দিয়ে দিলাম! )
ছবিঃ ৬-টাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম, ছোটবেলা থেকেই আমার সমস্যা আছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। যাইহোক, খুব ভালো লাগছিল উপরের দিকের লোহা-লক্কর দেখতে। এই বস্তু বানানোর আইডিয়া আসলো কেমন করে? আমার আর্কিটেক্ট বন্ধুদ্বয় (মল্লিকা আর উপমা) নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছিল কেমন করে এসেছিল। তবে বেশিক্ষণ উপরের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না, মাথা ভন ভন করে উঠে। দুপুরের খাবার কিনে নিয়ে টাওয়ারে উঠার লাইনে দাঁড়াবো বলে ঠিক করলাম। খাওয়া কিনতে আর খেতে লেগে গেল প্রায় ২ ঘন্টা।
ছবিঃ ৭ – এতো মোটা কাক, হটডগ খায় আর ড্রিংকস করে তো, তাই মনে হয়
ঠান্ডায় আমদের এক এক জনের বেহাল অবস্থা। যতো না ঠাণ্ডা তার চাইতেও বেশি বাতাস। মোটাসোটা কাউকে খুঁজে পেলে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়াই যদি একটু বাতাসকে অবরুদ্ধ করা যায়। তেমন একটা লাভ হয় না, সবদিক দিয়েই বাতাস বইছে।
উপমা কিছুতেই উপরে উঠবে না। আমি আর মল্লিকা নানা ভাবে বুঝাতে লাগলাম, আর কবে আমরা আসবো? কোন দিন কী আদৌ আসা হবে আর? এইটা মিস করা যাবে না। কিন্তু তার মধ্যে কোন ইন্টারেস্টই গ্রো করাতে পারলাম না। রীতিমত জোর করে ওকে নিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু উপরে উঠে সবচাইতে বেশি লাফালাফি সেই করলো, শুধু তাই না আরো যেই কান্ডটা করলো সেটা না হয় পরের পর্বে বলবো।
(চলবে)
মন্তব্য
ভালো হোচচে।।।।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
গাট্টা গোট্টা মোটা এলবো
গাট্টা কেমা পল
সারা ধীরে চল
মানে কী?
ট্রেনের নাম এগুলা।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
আপনার মোল্লাটি বড় মিষ্টি দেখতে, আমাদের দেশের মোল্লাগুলো নেহায়েত কাঠখোট্টা।
আইফেল টাওয়ার এর মহিমা আপনার মতোন করে কেউ বলতে পারে নি, "বডি পুরা ইশটিল"
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বাহ বাহ! কাপু খান কে তো কঠিন দেখাচ্ছে, যদিও ইটালীর পিজ্জা পাস্তায় একটু ফুলসে... তারানা মোল্লার এই নামটা জানো তো? তোমার ভ্রমণ কাহিনী তো মাশাআল্লাহ কঠিন হচ্ছে...
হ্যাঁ আপু, জানি
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ঘোর কলিকাল চলে আসলো রে! মানুষ মানুষের ভাল করতে চাইলে সে সেটারে পাত্তা দিবেনা, উলটা জনসম্মুখে তারে পচাই ছাড়বো। মজা পাইছি লেখা পড়ে।চালায় যা।
পঁচানো শুরুই করলাম না !
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
চমৎকার। ভ্রমণ পর্ব জলদি আসুক পরেরটা
ডাকঘর | ছবিঘর
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
প্যারিসের প্রথম ছবিটা দেখেই মুগ্ধ! সুবাহানাল্লাহ! (আপ্নে স্কাইপে তে আছেন? )
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ আসি তো। আপ্নে তো এইডস নিয়া আইসেন। আমার বান্ধবীর থিকা দূরে থাকেন
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
খ্রান! পরের পর্বে দুনিয়া থেকে এইডস উঠায়া দিতেছি!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পুরা বডি ইশটিল খুবই ভালো লাগসে কথাটা। তুই এতো ভালো লিখতে পারিস তাই তো জানতাম না।
তোর কল্লা মোল্লা
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
পেরু থেকে শুভেচ্ছা ।
facebook
রটারডাম থেকে গৃহীত শুভেচ্ছা!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বেশি ভ্রমন করা ভালা না ।
কথা সঠিক, আমিও করতে পারি না
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
হি হি। লেখা অতি মজারু হইছে।
ইশটিল বডিতে উঠে কি করলেন তাড়াতাড়ি জানান।
সে এক বিরাট ইতিহাস-হোক আগে, তাপ্পর বল্বো
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ট্রেনের নামের এই অবস্থা কেন?
এইডা আমারে জিগায় কুন ফায়দা আসে ভাই ?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
লেখা মুচমুচে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপ্নেও দেখি খানাপিনা করেন বেশি !
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
দিনের বেলায় আইফেল টাওয়ার দেখে মুষড়ে পড়েছিলাম, অবশ্য রাতের বেলায় দেখে পুষিয়ে নিয়েছিলাম সেটা। রাতের বেলায় বোটট্রিপে প্যারিস দেখতে অসাধারন লেগেছিলো। সামনে নিশ্চয় সেগুলা আসবে।
বেশি কিছু দেখতে পারি নাই। আবার যাইতে হবে
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
দারুণ!!!
তবে
এইটা আর বলতে হবে না, আমি জানি, আমি প্রিপারেটরিতে ওয়ান আর টু পড়েছিলাম। বড়ই দুষ্ট মেয়েদের ইশকুল ছিলো ওইটা। এমনকি আমাদের সাথের মিষ্টি ভদ্র নরমস্বভাবের মেয়েগুলোও ওদের শয়তান বড় বোনদের পাল্লায় পড়ে আমাদের সাথে গিয়ানজাম করত।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
হিহিহিহি! আমি খুবই শান্তশিস্ট ছিলাম বলে রাখলুম আপনি কোন ব্যাচ?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ত্রানার লেখা খুব সুইট...এক্কেবারে শুগার ইন আ প্লাম
নেও, একটা ট্রালালা বেঙাডেঙ গান শুনো
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ট্রা লা লা লা ... ট্রা লা লা লা ... দারুণ গান হ্যাঙ্কু
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
য়্যু আর হয়েলকাম
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
সুন্দর। মিস হয়ে যাচ্ছিল, আগেরটা পর্ব-০ ছিল সেটা লক্ষ্য করি নি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন