বন্ধু তোমায় এ গান শোনাবো বিকেল বেলায়

তারানা_শব্দ এর ছবি
লিখেছেন তারানা_শব্দ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৯/০৬/২০১২ - ১১:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি তখন ছোট, সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। আজকালকার ত্যাদর বাচ্চাদের মতন আমি মোটেও ত্যাদরামি করতাম না। আমার এখনো মনে আছে প্রথম দিন স্কুলে যাওয়া নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। নতুন স্কুল জামা পরে আপুদের মতন স্কুলে যেতে পারছি- এই আনন্দে আমি ছিলাম আত্মহারা। প্লে-গ্রুপে আমার ক্রমিক নং ছিল ৭৩, সেকশন বি, কেজিতে উঠে হয় ১২, সেকশন এ। তখন শিশু মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো এ সেকশনে ‘ভালো’রা আর বি তে ‘মাঝারী’রা আর সি তে ‘পঁচা’ ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে। তাই কিছুতেই এ সেকশনের বাইরে যাওয়া যাবে না, বরং এ সেকশনে প্রথম ১০ জনের মধ্যে আসতে হবে। বলা বাহুল্য, জীবনেও প্রথম ১০ জনের মধ্যে আসি নি, প্রয়োজনই বোধ করি নি। ধীরে ধীরে উপরের ক্লাসে উঠতে উঠতে টের পাই যারা ১০ এর মধ্যে তারা যেন কেমন! খালি যারা ভালো রেজাল্ট করে তাদের সাথেই মেশে। আস্তে আস্তে গ্রুপ হতে থাকে, ভালো ছাত্রীদের গ্রুপ, মাঝারী ছাত্রীদের গ্রুপ, ফাঁকিমারাদের গ্রুপ, ছেলেদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া গ্রুপ, ক্লাসের মাঝে গুট গুট করে গল্প করে টিচারদেরকে যন্ত্রণা দেওয়া গ্রুপসহ আরো অনেক গ্রুপ। আরো একটা গ্রুপ ছিল, আমার একার গ্রুপ। আমি কোন গ্রুপে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারতাম না। ভালো ছাত্রীদের সাথেও মিশি, তথাকথিত মাঝারী আর খারাপদের সাথেও মিশি। কিন্তু আমি কারো আপন হই না, কারো গ্রুপে আমি জায়গা পাই না। উপরের ক্লাসগুলোতে আমার ক্রমিক নং ১৫-২৫ এর মধ্যে উঠানামা করতে থাকে। তথাকথিত ‘ভালো’রা ভাবে আমি মাঝারী, ‘মাঝারী’রা ভাবে মনে হয় ভালোই, আর ‘খারাপ’রা ভাবে বেশ ভালো। এ কারণে পুরো স্কুল জীবনে আমার কোন প্রাণের বন্ধু হয় নি। আমার সাথে সবাই মেশে কিন্তু যখনই তাদের ছেলে বন্ধুদের নিয়ে তারা আড্ডা দেয় সেইখানে আমি গেলেই তারা চুপ হয়ে যায়। আমি চলে এলেই আবার ফিসফাস শুরু। এটা বুঝতে পেরে আমি তাদের চুপ থাকার কারণ না হওয়ার চেষ্টা করি। এটা নিয়ে অবশ্য আমার খুব একটা মাথা ব্যথাও ছিল না। স্কুলে তেমন গলায় গলায় বন্ধুভাগ্য না হলেও বাসার চিত্র ছিল অন্য রকম। আমাদের বাসার উপরের তলায় যেহেতু আমার খালারাও থাকতেন (এখনো থাকেন) আর সব খালাতো ভাই-বোন, অন্য ফ্ল্যাটের বাচ্চা-কাচ্চা মিলিয়ে আমার ছোটবেলাটা বেশ আনন্দের ছিল। আজ পেছন ফিরে তাকালে দেখি আসলে স্কুলে আমার কোন প্রাণের বন্ধুই ছিল না। ক্লাস ফাইভের বছর ‘ক’ নামের একটা মেয়ের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়। সেই আমার প্রথম বন্ধু যে আমাকে ‘তুই’ করে বলা শুরু করে। তার সাথে আমার ঠিক কিভাবে বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমি জানি না, কারণ তখন আমি তথাকথির ‘উচ্চ মাঝারি’ মানের ছাত্রী আর সে একদম পেছনের ক্রমিক নং, রেজাল্ট আরেকটু খারাপ হলেই সে ‘বি’ সেকশনে চলে যাবে এমন অবস্থা। তার সাথে কথা বলতে আমার সবচাইতে ভালো লাগলো। তার কথা বলার মধ্যে কোন ন্যাকামি ছিল না। হেসে গড়িয়ে পড়ার মতন কথা বলতো। ক্লাসের ভালো ছাত্রীদের মতন ‘করেছি, বলেছি, গিয়েছি’ না বলে বলতো ‘করসি, বলসি, গেসি’। ধীরে ধীরে আমি আবিষ্কার করলাম তার সাথে আমার একটা বিশাল মিল আছে, সেটা হচ্ছে পরীক্ষার আগের দিন পড়া। আমার কাছে তাকে সব সময় বেশ ভালো ছাত্রী মনে হলেও কোন কারণে তার ব্যাটে বলে মিলতো না বিধায় ক্রমিক নং পেছনে চলে যেত। তো তার সাথে কথা বলতাম বলে ‘বলতে গেলে ভালো ছাত্রী’ টাইপের কিছু বন্ধু ছিল তারা নাক কুঁচকে উঠলো। বস্তুতই আমি তাদের নাক কুঁচকানো দেখতে পেলাম। আমি ‘ক’ এর সাথে এক গাল হেসে কথা বললে তারা গম্ভীর হয়ে যায়। নোট দিলে বলে দেয়, ‘সবাইকে এইগুলা দিয়ে বেড়াচ্ছো কেন?’ সবাইকে??? সবাইকে কই দিলাম? ও তো আমার বন্ধু। মনে মনে এই বললেও আমি বুঝে যাই এইখানে একটা গ্যাপ আছে। পরবর্তীতে ও অন্য সেকশনে চলে যাওয়ায় তার সাথে তেমন একটা কথাবার্তা হতো না তবে তার সাথে একটা সুন্দর বন্ধুত্ব আজও টিকে আছে।

আমাদের স্কুলে নতুন নিয়ম শুরু হলো ক্রমিক নং অনুসারে বসতে হবে। ১৫-২৫ এর ঝামেলায় পড়ে আমাকে ‘বলতে গেলে ভালো ছাত্রী’দের দলে ভীড়ে যেতে হলো। ক্রমিক নং দিয়ে তো আর বন্ধুত্ব হয় না, তাই আমার আসলেই বন্ধুত্ব হলো না এদের কারো সাথেই। কিন্তু আমি চলি এদের সাথে। আমার ভালো-খারাপ কোনটাই লাগে না, তবে এটা বুঝি আমি মন খুলে কারো সাথে কথা বলতে পারি না। অনেককেই দেখি মাঝারী মানের ছাত্রী হয়েও শুধু মাত্র সুবিধা লাভের ঝোঁকে ভালো ছাত্রীদের তেল দিয়ে যেতে। তাকে যে ‘ভালো’ ছাত্রীরা তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না এটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যথা নেই। পরে কিভাবে কিভাবে যেন সেও তাদের ভালো বন্ধু হয়ে যায়। হয়তো আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভুল হতে পারে, তবে আমি আসলেই টের পেতাম কেমন করে একই ক্লাসের একজনকে আরেক জন তেল দিচ্ছে, আর অবাক হতাম। আমার যে এইসব ব্যাপারে একটু নাক উঁচু ছিল তখনই টের পেয়েছিলাম। খুব ভাল মতোই বুঝতে পেরেছিলাম এদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারলে অনেক ভাল রেজাল্ট করা যাবে, কিন্তু কখনই ইচ্ছা হয় নি সেই সুযোগ নেওয়ার।

যেহেতু ক্রমিক নং অনুসারে পরীক্ষার সিট পড়তো, তাই তথাকথিত ‘ভালো’দের সাথে আমার সিট পড়তো। আমার সবচাইতে অসহ্য লাগতো সামাজিক বিজ্ঞান পড়তে। সামাজিক বিজ্ঞানের ‘ইতিহাস’ অংশকে আমার প্রায়ই পাতিহাঁস বানিয়ে জবাই করে রান্না করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করতো। স্কুল থেকে সাজেশন দেওয়া হতো এই ইতিহাসের জন্য। কিন্তু যত ছোট সাজেশনই দেওয়া হতো না কেন কিছুতেই কে কবে কোথায় জন্ম গ্রহণ করে কী কী অসাধ্য সাধন করে কার কী উন্নতি সাধন করে অমুককে মেরে ফেলে নিজে মরে গেল-- এই সব মুখস্থ থাকতো না। তো ক্লাস সিক্সের পরীক্ষায় তেমনই এক তৈল প্রদানকারীর পেছনে আমার সিট পড়ে। সামাজিক বিজ্ঞানের দিন পরীক্ষা হলে প্রশ্ন পেয়ে আমার মনে হলো কেন আমি এই ধরণীতে বেঁচে আছি? এতো কষ্ট করে কয়েকটা উত্তর মুখস্ত করলাম সারা রাত জেগে, আর প্রশ্নে আসছে অন্য একটা! ইতিহাস তো বানিয়ে লেখার কিছু নেই। তাই অনেক সঙ্কোচ করে শেষ মেষ সামনের সেই বান্দাকে গুতো দিয়ে বললাম, তুমি কি আমাকে ইতিহাসের এই প্রশ্নটার উত্তর দেখাবে? সে এমন ভাব করলো কিছু শুনে নি। আমি যেহেতু তার তুলনায় বেশ মাঝারী মানের ছাত্রী, তাই আমার কথা তার কানে না ঢোকাটা ছিল স্বাভাবিক। আমি আবারো তাকে বললাম দেখাবে কিনা। সে বললো আচ্ছা দেখাবো, যখন আমি লিখবো তখন তোমাকে দেখাবো। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম সে তার খাতা বক্স দিয়ে ঢেকে লিখা শুরু করেছে। এক লাইন লিখে, সেইটা সাথে সাথে বক্স দিয়ে ঢেকে ফেলে। আবার এক লাইন লিখে একই কাজ। আমি আর তৃতীয় কথা বাড়ালাম না। একটু পরে পাশেই আরেকজন (অবশ্যই ভালো ছাত্রী ট্যাগওয়ালা) তাকে একটা প্রশ্ন দেখাতে বলতেই যে এক্সট্রা সিট নিয়ে লেখা শুরু করে মেইন খাতাটা তার দিকে মেলে ধরলো। সেইবার আমি সামাজিক বিজ্ঞানে বেশ খারাপ করি, আগে পেতাম ৭০ এর মতন ঐবার পেলাম ৬০ এর মতন, যেখানে ‘ভালো’রা ৯৫-৯৮ এর মতন পেল। এটা নিয়ে দুঃখ নাই অবশ্য। দেঁতো হাসি

ক্লাস নাইনে উঠার পর স্কুল থেকে বলা হলো এই ক্রমিক নং এর কারণে ভালোরা খালি ভালোদের সাথে মিশে, খারাপরা খারাপের সাথে, তাই এই নিয়ম এখন ভেঙে দেওয়া হবে। ক্লাসে কোন এ বি সি বলে শাখা থাকবে না। এর বদলে ‘নীহারিকা, শুকতারা, ধ্রুবতারা’ –এমন সুন্দর সুন্দর নামের সেকশন দেওয়া হলো। ক্রমিক নং এর ক্ষেত্রে যা হলো সেটাও মজার। ১নং এর সাথে বসবে ৫০, ২ এর সাথে ৪৯ ...ইত্যাদি। ‘ভালো’ এবং ‘খারাপ’ উভয় পক্ষই সমস্বরে ‘না না না, এ হতে পারে না’ বলে উঠলেও সেই যাত্রায় কারো কথা শোনা হলো না। আমি পড়লাম এমন একজনের সাথে যে জ্যামিতির প্রমাণ লিখার পর চিত্র আঁকে। কী মুখস্থ বিদ্যারে বাবা! আমি আসলেই তার ফ্যান হয়ে গেলাম, এমন মুখস্থ বিদ্যাকে বলা হয় ‘গড গিফটেড মেমরী’। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম-তুমি কেমন করে এতো এতো জ্যামিতি মনে রাখো? এত মুখস্থ হয় তোমার? সে তেড়ে এলো, মুখস্থ মানে? আমি তো সব বুঝেই লিখি। আমি আর কথা বাড়ালাম না। নিজের চোখে দেখেছি পীথাগোরাসের উপপাদ্য পুরোটা সে আগে প্রমাণ করে তারপর ছবি আঁকলো। এর সাথে তর্কে যাওয়ার কোন মানে হয় না আর।

ক্লাস টেনে ক্লাসের ‘অত্যন্ত’ মেধাবীদের নিয়ে একটা গ্রুপ করা হলো আর সেই গ্রুপের নাম দেওয়া হলো ‘ওরা এগারোজন’। এই গ্রুপের জন্য ক্লাস শেষে আলাদা প্রিপারেশন ক্লাস নেওয়া হবে, মোদ্দা কথা এদেরকে ঘষে মেজে ‘এ প্লাস’ পাবে- এমন একটা ১০০% গ্যারান্টি দেওয়া হলো। কী তাদের যত্ন আত্তি। তখন মাত্র এ-প্লাস ত্রাস শুরু হয়েছে দেশে, তখনো মুড়ি-মুড়কির মতন ঠোঙ্গা ঝাড়া দিলেই ঝরঝর করে এ-প্লাস বেরুতো না। এটা ছিল এ-প্লাস শুরুর ৩য় বছর, তখনো অতিরিক্ত বিষয় ছাড়াই এ-প্লাস গণনা হতো। আগের বছর মাত্র ১ জন এ-প্লাস পেয়েছিল আমাদের স্কুল থেকে। এই বছর এই ১ কে ১১তে রূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই গ্রুপ এগিয়ে চললো। এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কয়েকজনকে দেখা গেল এরা মাটির দু’ আঙ্গুল উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আমার ঐ ইতিহাস-ছেকা দেওয়া ক্লাস মেটটিও এই ১১জনের একজন ছিল। গ্রুপের কারো কারো কথা শুনলে বোঝা যেত আমরা বানের জলে ভেসে এসে ক্লাস করি। আমার কাছে বরং এই এক্সট্রা ক্লাস করাটা খুবই বিরক্তিকর মনে হতো। সকাল থেকে দুপুর ক্লাস করে যখন সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে তখন এই ১১ জন আরো ২ ঘন্টার এক্সট্রা কোচিং এর জন্য তৈরি হচ্ছে। ব্যাপারটা চিন্তা করে আমি নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে করলাম এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে। অবশেষে যখন রেজাল্ট দিল তখন দেখা গেল ১৫টা এ-প্লাসের মধ্যে কেবল ৬টা ঐ গ্রুপের। আমি রেজাল্ট দেখা নিয়ে সব সময়ই বেশ ভয়ে থাকি, তাই নিজের কোন রেজাল্ট আনতে এই জীবনে যাই নি। পরের দিন তাই কয়েক বন্ধু মিলে টিচারদেরকে সালাম জানাতে গেলাম। সিঁড়িতে ঐ ‘ইতিহাস-বান্ধব’ আমাকে দেখে মুখটা বাঁকা করে বললো’ ওহ তারানা, তুমিওওও এ-প্লাস পেয়েছো? অথচ আমি পেলাম না!’ সজ্ঞানে এমন অপমানিত এর আগে আর হইনি। তাকে বললাম, ‘ কেন, আমি এ-প্লাস পেতে পারি না?’ সে একটু থতমত খেয়ে বললো, ‘না মানে সেটা বলছি না।’ আমি আর কথা না বাড়িয়ে সালামের উদ্দেশ্যে উপরে উঠে গেলাম। এরপর বহুবছর হয়ে গেছে, সে দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো পড়াশোনাই করছে। খোমাখাতায় আমার বন্ধু তালিকাতেও আছে। ভালো থাকুক সে, এই কামনাই করি।

পরবর্তীতে কলেজ জীবনেও তেমন একটা বন্ধু জুটলো না। তবে কলেজ শেষ করতেই স্কুলে প্রায় বলতে গেলে কথা না হওয়া আর কলেজে টুকটাক কথা বলা এক বন্ধু আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে গেল। তার কাছে আমার নাম হয়ে গেল তারু। সে একটা ছড়াও লিখে ফেললো- তারু আমার তারু, তোকে দিবো ঝাড়ু! তথাস্তু, রিটন ভাই ফেইল দেঁতো হাসি এরই মধ্যে জীবনে আরো অনেক বন্ধু এলো, গেল, থেকে গেল, সবার কথা এক লেখায় কুলোবে না। এক স্কুল কাম কলেজ বন্ধু ফোন দিয়ে একদিন জানালো দয়া করে যেন তার সাথে দেখা করি, তার মেডিকেলের এক বন্ধু নাকি তার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। কোন এক আড্ডায় দেখা হতেই সেই বন্ধু আমাকে ধন্যবাদে জর্জরিত করে ফেললো। জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কী? সে স্মৃতি তুমি বেদানা টেনে বললো কলেজের ২য় বর্ষে নাকি কেমিস্ট্রি ২য় পত্রের একটা কুইজে আমি প্রথম বেঞ্চিতে মিসেস মান্নান এর প্রায় নাকের উপর বসে অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব দেখিয়েছি। রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখা গেল ২০ এ আমি পেয়েছি সাড়ে ১৭ আর সে সাড়ে ১৮। অথচ সে এক বর্ণ প্রিপারেশন নিয়ে আসে নি। এবং এই জন্য সে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিল। তাই প্রায়শই আমার সেই স্কুল কাম কলেজ বন্ধুটি তাদের মেডিকেল আড্ডায় আমার কথা তুললেই সে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কথা বলে আমার বন্ধুটির মাথা ধরিয়ে দিত।

আমার নিজের ভার্সিটি লাইফে অনেক ভালো কিছু বন্ধু হয়। সবার সাথে আপাতত নেটে যোগাযোগ রয়ে গেছে, যদিও সবাই নিজের লাইফ/সংসার/বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত। পড়াশোনার ব্যতিরেকেও আমার অনেক বন্ধু হয় পরবর্তীতে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি অনেক ভালো বন্ধু পাই। একটা সময় মনে হতে থাকে এতো বন্ধু কেন আমার? মাঝে মাঝে বন্ধুদের ভালোবাসায় দম আটকে আসে, এতো ভালোবাসা, এতো শুভকামনা সব কিছু পেয়ে নিজেকে অনেক বেশি দামী মনে হয়। এমনিতে আমি একটু রিসার্ভ টাইপের হলেও একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে কলকলানি থামে না আমার। ভীনদেশি বন্ধুদের সাথে আমার তেমন কোন গলায় গলায় বন্ধুত্ব নেই, যদিও একজন আমাকে তার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ এর আখ্যা দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। আমি মৃদু হাসি। একদিন ল্যাবে এক ইন্দোনেশিয়ান ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
-‘তারানা, আমি লক্ষ্য করেছি তুমি ক্লাসে খুব বেশি মেশো না কারো সাথে, কথাও বলো কম।’
-‘তো?’ [আমি অবশ্যই সবার সাথে মিশি, কিন্তু একটা লিমিট রেখে, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমি এমনই।]
-‘ডোন্ট ডু দ্যাট এনিমোর। ইউ উইল ফিল লোনলি।’ [এই একটা প্রব্লেম মানুষের, সুযোগ পাইলে একটা উপদেশ দিবে! অসহ্য!]
-‘বাট আই ডোন্ট ফিল লোনলি।’
-‘নো নো ইউ উইল ফিল লোনলি। আমি যখন প্রথমে এইখানে আসি আমিও এমন করতাম, কারো সাথে কথা বলতাম না। এখন আমি সবার সাথে মিশি।’
-‘আমিও তো সবার সাথে মিশি।’ [আর মনে মনে বলি- সবার সাথে মেশা আর গায়ে পড়ে কথা বলা-দুইটা দুই জিনিস। তুমি যেমন গায়ে পড়ে ‘সেক্স, মিল্ক, বানানা’ এই সকল শব্দ ব্যবহার করে সস্তা রসিকতার চেষ্টা করো, সেটা দিয়ে মনে হয় না খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়! সো তুমি এইটা বুঝবা না,তাই তোমাকে বোঝাতেও যাচ্ছি না।]
-‘কই আমি তো দেখি না। তুমি একটু আলাদা থাকো।’
-(আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলি) ‘তুমি কি ক্লাসে খালি আমার দিকে তাকিয়ে থাকো নাকি? যাই হোক, আমার অনেক বন্ধু, আমি লোনলি ফিল করি না।’
এরপর সে আর কথা বাড়ায় না। এর আগে আমার আরেক ইন্দো ফ্রেন্ডের থেকে শুনি সে আমাকে নিয়ে আরেক ইন্দো ছেলের সাথে হাসাহাসি করে, কী নিয়ে হাসাহাসি করে সেটা আমি আর শুনতেও চাই নি। আমি আমার বন্ধুটাকে বললাম, ‘কারো হাসির কারণ হতে পারাটাও কিন্তু খারাপ না!’


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

আপনি কখনো ত্যাদরামি করতেন না!! এও শুনতে হবে গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারানা_শব্দ এর ছবি

রেগে টং পরমাণু, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, পজিট্রন হাহ !!!

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

ক্রেসিডা এর ছবি

ভালো লাগলো। আমিও এই ভালো আর খারাপের মাঝামাঝি ছিলাম, এভারেজ গ্রুপের। সুবিধা এই যে, স্কুল পালালেও তেমন ধরা খেতাম না দেঁতো হাসি

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

তারানা_শব্দ এর ছবি

স্কুল যে পালানো যায় সেটা স্কুল পার করে জেনেছিলাম শয়তানী হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

শাব্দিক এর ছবি

আমিও ইয়ে, মানে...

ইশতিয়াক এর ছবি

ছেলেদের নিয়ে গল্প করা গ্রুপ এ ঢুকলেন না কেন? এটা তো ভালো গ্রূপ। চোখ টিপি

তারানা_শব্দ এর ছবি

আহ বললামই তো, ছেলেদের নিয়ে গল্প শুরু হলে আমি গেলে থেমে যেত। ত্রাণা পেম-ভালুবাসা একদম্লাইকর্ত্না! চাল্লু

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

সাইদ এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমার এক সহপাঠী আমার খাতা দেখে ঠিক মত অঙ্কটা করল, কিন্তু আমার একটু ভুল ছিল সেটা সে বলে নাই। আমি পেলাম ৮৩, আর ও পেল ৯৬। হাহাহাহাহাহাহ
জীবনে একটাই শান্তি কেউ কখনও স্বার্থপর বলে নাই।

তারানা_শব্দ এর ছবি

ফাজিল তো বড়! রেগে টং

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

স্কুলে ত্যাদরামি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- যে না করছে
সে পস্তাইছে- খাইছে
ছাত্তর... অ্যাঁ আছিলাম আর কী
ত্যাদর... আর বলতে হবে- দেঁতো হাসি
...ওক্কে- স্মৃতি রোমন্থন করি...

কড়িকাঠুরে

তারানা_শব্দ এর ছবি

হাততালি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

পিলিস- পিলিস- একতা পশ্ন কলুম...
"এপাস পাওয়াল দন্য তুমি তত গন্তা পলতে- কাল অবদান থবতেয়ে বেসি..."
আলেকটা- আলেকটা...
"বল হয়ে তুমি কী হবে..."

কড়িকাঠুরে

তারানা_শব্দ এর ছবি

আমি দৈনিক ২৮ ঘন্টা পড়তাম। চাল্লু
আমার হাত-পা, চোখ-কান এদের অবদান সবচেয়ে বেশি! ম্যাঁও
বড় হয়ে আমি ত্রাণা হপো! চোখ টিপি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

কৌস্তুভ এর ছবি

তা খুকি তুমি কোন কেলাসে পড়ো? খাইছে

তারানা_শব্দ এর ছবি

দাদুভাই আমি পলি ১৭তম কেলাসে। লইজ্জা লাগে সামনের পলিক্কায় পাশ কল্লে ১৮তম কেলাসে উঠতে পাব্বো। আল না পাল্লে মাস-টাস এর খেতা পুলে আমি বাতায় তলে দাবো! দেঁতো হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

কৌস্তুভ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সুমাদ্রী এর ছবি

মেয়েলি ত্যাদরামি তবু ভাল। আমাদের স্কুলে ক্লাস সেভেন-এইটেই আমাদের হাতে চলে এসেছিল আরএমজি'র পুস্তিকাগুলো। তোর লেখা পড়ে কতজনের কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের বয়েজ স্কুলের কাছেই ছিল দুটো গার্লস স্কুল, অপর্ণাচরণ আর কৃষ্ণকুমারী তাদের নাম। কয়েক বন্ধুকে দেখতাম স্কুল ছুটি হলে ছুট লাগিয়ে ঐ গার্লস স্কুলের রাস্তার কাছে চলে যেত। তারপর মেয়েদের রিক্সা ওদের সামনে দিয়ে ছুটে গেলে ওরা একটা একটা চিরকুট ছুঁড়ে দিত। অধিকাংশ সময়ই চিরকুটগুলো রিক্সার বাইরে রাস্তায় পড়ে যেত। একদিন একটা কুড়িয়ে নিয়ে দেখলাম ওতে লেখা আছে, '' I love you. স্বপন " ঐ ইন্দো কি হেকিম নাকিরে? হালায় এখনও যায় নাই?

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

তারানা_শব্দ এর ছবি

আইলাভিউ স্বপ্পন ছিল না সুমাদ্রী ছিল? চোখ টিপি ইতিহাস বিকৃত করিতেছেন!! ছে! রেগে টং

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অমি_বন্যা এর ছবি

প্রথমত আপনার লেখার হেডিং দেখে চন্দ্র বিন্দু ব্যান্ডের গানটির কথা মনে পড়ে গেলো। গানটা তাই অনেক দিন পর শোনার উপলক্ষ্য করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

চিত্র না একে উপপাদ্য লেখার বন্ধু আমারও ছিল বেশ। আমার কলেজ লাইফটা অর্থাৎ এইচ এস সি গেছে আপনার মত। ভালো স্টুডেন্ট এর একটা দল ছিল কলেজে একেবারেই ব্রাহ্মণ । কথা বলতে গেলেও যেন একটি বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামুলক। মাটিতে পা না পড়ার মত অবস্থা। এদের দুই একজন আবার স্ট্যান্ড করা। কাজেই বুঝতে পারছেন তাদের ব্যাপারটা।
ওদের সাথে কথা বলা হয়ে উঠত না। এই গ্রুপের সংখ্যা ছিল ৭-৮ জন। আমি বরাবরি মাঝামাঝি। কিন্তু ফাইনালে আমি ওই গ্রুপের একজন ছাড়া বাকি সবাইকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সবাই বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি হয়েছিল। সবার সাথে পরে বিশ্ব বিদ্যালয়ে একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পরে অনেকেই আগের ওই নোসন থেকে বের হতে পেরেছিল। অনেকের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে। আপনার এই লেখা আবার সেই সব দিনে নিয়ে গেলো আমাকে।

ভালো থাকবেন। লেখা অনেক ভালো লাগলো।

তারানা_শব্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আমি বরাবরের ব্যাকবেঞ্চি। কখনো কখনো কিছু চিহ্নিত শিক্ষক এসে আমার গানে কিংবা কানে ধরে টেনে এনে সামনে বসিয়ে দিতেন বটে। কিন্তু পরবর্তী সুযোগেই আবার যথাযথ গন্তব্যে আমাকে খুঁজে পাওয়া যেতো। যাদের আশেপাশে বসতাম তাদের একজনের কথা আমার সবসময়ে মনে থাকে। আলতাফ। ফাইভের পুরোটা বছর ধরে সে খালি মাইরই খেয়ে গেলো ক্লাসে বেঞ্চিতে মাথা রেখে ঘুমানোর কারণে। 'অসংখ্য নৌকা নদীতে ভাসে'- তার রচিত এক অমর কাব্যকথা। যেকোনো শিক্ষক এসে তারে প্যাঁদানোর তালে তালে তার এই কাব্যকথা আবৃত্তি করতেন। প্যাঁদানি খাওয়াতে আমার আর আলতাফের মধ্যে ব্যাপক মিল ছিলো। তবে, ও প্যাঁদানি খেতো পাঠ্যপুস্তকের সহিত সামঞ্জস্যহীন সাহিত্যচর্চার কারণে আর আমি খেতাম পাঠ্যপুস্তকের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ বান্দ্রামিচর্চার কারণে।

সিক্স থেকে টেন পর্যন্ত লাস্ট বেঞ্চিতে সঙ্গ দিয়ে গেছে ফরহাদ। এই শ্যালক-দৌহিত্রের গলা অসাধারণ রকমের ভালো ছিলো। তারে খালি বললেই হইতো, 'ধর দেহি দোস্ত, ঐ গানটা'। ব্যস, শুরু করে দিতো। এইটে উঠে প্রথম ক্লাস থেকে বেরুনোর বিজ্ঞানসম্মত উপায় জানা হলো তাপইস্যার কল্যানে। তারপর থেকে আর পায় কে!

ক্লাসের এলিট পোলাপাইনদের দুই চক্ষের বিষ ছিলাম আগাগোড়াই। ক্যানো, কইতাম পারি না! বস্তুত, আমি যে কোন দলের ছিলাম সেইটা এখনও জানি না। ক্লাশে বসতাম এক দলের সাথে, পরীক্ষা দিতে বসতাম আরেক দলের সাথে আর রেজাল্ট বের হলে দেখা যেতো এলিটরা আছে সঙ্গে!

'১৩৩৯ সালে ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ নিজেকে স্বাধীন নবাব বলে ঘোষণা করেন...'- লাইন দিয়ে শুরু ফাইভের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের একটা প্যারা আগের রাতে মুখস্ত করার পরেও সময়মতো বলতে না পারার কারণে প্যাঁদানি খেয়ে মনের দুঃখে প্রতিজ্ঞা করছিলাম, এই ইতিহাসের এক পাতাও আর না!

উপপাদ্য! হে হে হে, এইটাতে বুঝার কী আছে, সেইটা আমি আজও বুঝি নাই। 'তাহার মনের কথা বুঝিবার আশা দিয়াছি জলাঞ্জলি'। পীথাগোরাসের ব্যাপারে বলি। সুতরাং ঠাডা মুখস্ত। খালি তাই না। নাইনে উচ্চতর গণিতে পঁচিশ পাওয়ার পর আর রিস্কে যাই নাই। দুইটা অংকের বইই ঝাড়া মুখস্ত করে ফেলছিলাম। পাটিগণিত, বীজগণিত, উপপাদ্য, সম্পাদ্য- সঅঅব।

একটা মজার ঘটনা হলো, আমাদের স্কুলের হেড স্যারের রুমে কেবলমাত্র আমাদের ব্যাচেরই একটা বিশাল গ্রুপ ছবি বাঁধানো আছে। টেস্টের পরে তোলা ঐ ছবিতে আমারে সামনের কাতারে খাড়া করানোর অনেক চেষ্টা করেও খাড়া করানো যায় নাই। এবং সবার পিছনে বেঞ্চিতে খাড়ায়ে রুবেলের লড়াকু পোজ মারার কারণে পরপর তিনটা শট বাতিল করে চতুর্থ শটটা বড় করে বাঁধানো হইছে। এরপরে যতোবারই ঐ ছবিটা দেখছি, ততোবারই খ্যা খ্যা করে হাসছি। এই মন্তব্য পড়ার পরে কোনো পাঠকের (কিংবা পাঠিকার) যদি কখনো সুযোগ হয় আমাদের স্কুলের হেড স্যারের রুমে ঢুকার, সেখানে ঐ ছবিটা দেখলে, ঐ ছবিতে আমাকে খুঁজে পেলে নির্ঘাত তিনিও খ্যা খ্যা করে হেসে উঠবেন।

মরুদ্যান এর ছবি

চাল্লু ভাল ছাত্তর ধু গো।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ল্যাও, উপরের সাত খণ্ড মন্তব্যায়ন পড়ে আপনার এই ধারণা পোক্ত হলো অবশেষে ওয়েসিস ভাই! চিন্তিত

তারানা_শব্দ এর ছবি

ছবিটা স্ক্যান করে পোস্টান, খ্যাক খ্যাক করি! দেঁতো হাসি

আর উপপাদ্য বুঝে যে উল্টায় ফেলতাম সেটা আমিও বলতেসি না। তবে পীথাগোরাস বেশ বড়সড় একটা উপপাদ্য ছিল যদ্দুর মনে পড়ে। শুধু এ বি সি হলে হয়তো মনে রাখাটা সহজ হতো, কিন্তু চিত্রটার মধ্যেই অনেক আঁকিবুকি, আমি না বুঝে লিখতে পারতাম না। ইনফ্যাক্ট আমি ছবিটাই মনে রাখতাম। মানে ছবির কোন দিন থেকে কোন দিকে যেতে হবে-সেইটা মাথায় রেখে দিতাম। এই জন্য অবাক হয়েছিলাম ওর এতো বড় প্রমাণ লিখে তারপর ছবি আঁকা দেখে। এমন কী সে জ্যামিতির একস্ট্রাগুলাও মুখস্ত লিখতো, ঐগুলা কিন্তু তেমন কঠিন ছিল না। অ্যাঁ

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ছবিটাতো আমার কাছে নাই, আছে আমাদের স্কুলের হেড স্যারের রুমে। আর, ডিলিটেড কপিগুলো হয়তো কণিকা স্টুডিওর ভাগার খুঁজলে পাওয়া যাবে।

ছবিটার মধ্যকার অনেকেই নেই, চলে গেছেন না ফেরার দেশে। হেড স্যার রিটায়ার করেছেন বহু আগেই। যে সুন্দর, ছিমছাম ষোড়শী বালিকাদের মুখচ্ছবি ঝিলিক দিচ্ছে ছবিতে, তারা একেকজন ৩২-৩৩ বছরের পৃথুলা মহিলা আজ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটা আমাদের দেখতে দেন, আমরাও একটু খ্যা খ্যা করে হাসি। চোখ টিপি

মরুদ্যান এর ছবি

দেঁতো হাসি ওয়াল্লা আপ্নি এ-প্লাস ওয়ালা লোক!! খাইসে আমারে!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তারানা_শব্দ এর ছবি

আমি লোক? কস্কি মমিন!

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

মরুদ্যান এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি ওয়াল্লা আপ্নি এ-প্লাস ওয়ালা বালিকা!! খাইসে আমারে!

(আন্নের ইয়াহু প্রো পিক টা আমার এখনও মনে আছে, ইয়া সব দাঁত কেলানো এক দানব)

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তারানা_শব্দ এর ছবি

আফনি কিডা? চিন্তিত

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো লাগল। সুন্দর এবং অকপট একটা স্মৃতিচারণ। হাসি

যদিও খোমা খাতার পাতায় অনেককে আপনার অগ্নি-মূর্তির বাক্যবানে জর্জরিত হতে দেখেছি। খাইছে

তারানা_শব্দ এর ছবি

আমি তো ভালু-মেয়ে, লইজ্জা লাগে ফেইসবুক কি প্রথমালু হয়ে গ্যাল নাকি আমার নামে মিছা কথা ছড়ায়! ছেঃ !

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

তাপস শর্মা এর ছবি

হ। ফেবু মনে লয় কাওরান বাজারের কাছে বিক্রি হয়ে গ্যাচে। এখান থেকেই এখন মহামান্য মতিচুর ফেবুকে বলেন - 'ওঠ'। দেঁতো হাসি

তারানা_শব্দ এর ছবি

ইয়ে, মানে... বুঝি নাই কী কইলেন! দেঁতো হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

বন্দনা এর ছবি

অসাধারন লাগ্লো, অনেক অনেক কথা মনে পড়ে গেলো। আমার নিজের স্কুলের বন্ধুরা আমার সাথে সব শেয়ার করতো শুধু তাদের পেম পিরিতির কাহিনী বাদে, আমি সামনে গেলেই চুপ করে যেতো, আমাকে বলতে চাইতোনা, আমার তখন ও এগুলা বুঝার মত বয়স ছিলনা তাই।

তারানা_শব্দ এর ছবি

খাইছে পেম্পিরিতিকরাভালুনা! লইজ্জা লাগে

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

অনেক ভাল লাগলো। সেই কতকাল আগের কথা মনে করিয়ে দিলেন।

তারানা_শব্দ এর ছবি

শয়তানী হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বান্ধবীদের ছবি নাই! এইটা কীরকম লেখা হলো! সচলায়তনের নীতিমালা মেনে লিখুন!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারানা_শব্দ এর ছবি

নিয়ম মানমু না, এলা কিরবেন করেন!!! চাল্লু

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

রুমঝুম ১ এর ছবি

মনে পড়ে গেল নিজের ইস্কুল বেলার কথা ওঁয়া ওঁয়া সবসময় লাস্টবেঞ্চার আর লাড্ডু রেজাল্ট ছিল। সগর্বে এই কথা বলতে পারি।

তারানা_শব্দ এর ছবি

হাততালি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

মৌনকুহর এর ছবি

ইতিহাস বান্ধবের পাতিহাঁস হবার দৃশ্যটা কল্পনা করে কেমন নিষ্ঠুর একটা আনন্দ হল। নিজেরও এমন অভিজ্ঞতা আছে কিনা!

স্মৃতিচারণে চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

তারানা_শব্দ এর ছবি

চিন্তিত এইরাম আনন্দ করা এক্কেরেঠিকনা! শয়তানী হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

স্কুল জীবনে টুকটাক ত্যাঁদাড়ামো না করলে সে স্কুল জীবনকে সফল বলা যায় না। হাসি

দেব মুখার্জি
[db.dev.m@gmail.com]
--------------------------------------------------------------
দেব এর উঠোনফেইসবুকগুগলপ্লাস

তারানা_শব্দ এর ছবি

আমি স্কুল জীবনে স্কুলে ত্যাদড়ামি না করলেই বাসায় অনেক করসি, আমার মা-বাবা আর আপুরা আমার যন্ত্রণায় অস্থির ছিল। লইজ্জা লাগে

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

শাব্দিক এর ছবি

জ্যমিতির প্রমাণ লেখার পর চিত্র আঁকে

হো হো হো
লেখা খুব ভাল লাগল। নিজের স্কুল কলেজের অনেক স্মৃতির পাতা ঘুরিয়ে আনল আপনার লেখা।

তারানা_শব্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।