বাজে গল্প

অদৃশ্য ভগবান এর ছবি
লিখেছেন অদৃশ্য ভগবান (তারিখ: শুক্র, ২৮/১২/২০০৭ - ১০:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে এক ভদ্রলোক ব্যবসার কারনে চিনে গিয়েছিলেন । সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার ফলে তিনি চিনা ভাষা ভালোই বলতে ও বুঝতে পারতেন কিন্তু পড়তে বা লিখতে পারতেন না ।

চিনে সেই ভদ্রলোক এক মাঝারি শহরে একটা বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে কিছুদিন ছিলেন । সেই বাড়ির পাশের বাড়িতে এক চিনা তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ভাড়া থাকত ।

পাশাপাশি থাকতে থাকতে সেই সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে ভদ্রলোকের বেশ ভালোই ভাব জমে উঠল । ভদ্রলোক ভাবতে লাগলেন এখানেই এই মেয়েটিকে বিয়ে করে থেকে গেলে ভালোই হয় ।

ক্রমে দিন কাটতে লাগল । এরপর ভদ্রলোক একবার অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে ফিরলেন । তারপর যখন আবার চিনে ফিরে গেলেন তখন দেখলেন যে সেই তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে । ভদ্রলোক ব্যস্ত হয়ে মেয়েটির অনেক খোঁজ খবর করলেন । কিন্তু কেউই তাদের কোন খবর বলতে পারল না ।

কিছুদিন বাদে ভদ্রলোকের কাছে একটা চিঠি এসে পৌছাল । আগেই বলেছি যে ভদ্রলোক চিনা ভাষা কিছুই পড়তে পারতেন না । কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে এই চিঠিটা সেই মেয়েটাই তাকে লিখেছে । কারণ তিনি এই রকমের খাম আর কাগজ মেয়েটির ঘরে দেখেছিলেন আর মেয়েটি যে সেন্ট ব্যবহার করত তার গন্ধও চিঠিটা থেকে পাওয়া যাচ্ছিল । ভদ্রলোক বেশ আশান্বিত হয়ে উঠলেন । যাক এবার খবর পাওয়া যাবে খালি চিঠিটা কাউকে দিয়ে পড়াতে হবে ।

ভদ্রলোক এবার তাঁর বাড়িওলার কাছে গেলেন । বাড়িওয়ালা হলেন এক মধ্যবয়স্ক মোটা আর রাগী ভদ্রমহিলা । ভদ্রলোক চিঠিটা তাঁর হাতে দিয়ে খুব বিনীত ভাবে তাঁকে অনুরোধ করলেন চিঠিটা পড়ে দেবার জন্য ।

ভদ্রমহিলা চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলেন । কিন্তু একি পড়বার আগেই তাঁর মুখ কুঁচকে উঠল । তিনি হঠাৎ বিরাট চিৎকার আরম্ভ করলেন । যার বাংলা করলে হয় বজ্জাত ছোকরা তুই আমার কাছে এই চিঠি পড়াতে এনেছিস । বেরো শিগ্গির আমার বাড়ি থেকে ।

ভদ্রলোক কোনভাবেই বুঝিয়ে তাঁকে শান্ত করতে পারলেন না । ভদ্রমহিলা কোনভাবেই শান্ত হলেন না । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিলেন ।

ভদ্রলোককে মালপত্র নিয়ে অগত্যা একটা হোস্টেলে আশ্রয় নিতে হল ।

হোস্টেলে থিতু হয়ে তিনি একজন বোর্ডারকে চিঠিটা দেখাতেই সেও ভদ্রলোকের উপর ক্ষেপে উঠল । বলা যায় কেবল মারতে বাকি রাখল । ভদ্রলোক কিছুই বুঝতে পারলেন না কি হচ্ছে ।

দিন কয়েক বাদে ভদ্রলোক তাঁর একজন খদ্দের কে চিঠিটা দেখালেন । এবারেও একই কান্ড । সেই খদ্দের তো চটে উঠলই তক্ষুনি ভদ্রলোকের সাথে সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করে দিল । আর তার অফিস থেকে ভদ্রলোককে চরম অপমান করে বের করে দিল । আরো হুমকি দিল যে এবার থেকে যদি তাকে ত্রিসীমানায় দেখা যায় তবে পুলিশে দেবে ।

বার বার তিনবার নাস্তানাবুদ হয়ে ভদ্রলোক ঠিক করলেন না এই চিঠি আর কাউকে দেখানো যাবে না । চিন দেশের আইন খুব কড়া কে জানে এবার হয়ত জেলে পুরে ফাঁসিই দিয়ে দেবে ।

তাই ভদ্রলোক ঠিক করলেন যে তিনি দেশে ফিরে আসবেন মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার আশা ছেড়ে দিয়ে । আর মেয়েটি নিশ্চই ভালো কথা কিছু লেখেনি চিঠিতে যা দেখে সবাই চটে উঠছে ।

ভদ্রলোক চিন থেকে জাহাজ পথে দেশে ফিরতে লাগলেন । জাহাজে তিনি খুবই বিমর্ষ মুখে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । তাই দেখে এক ফুর্তিবাজ আমেরিকান ছোকরা তাকে জিজ্ঞাসা করল কিহে তোমার ব্যাপারটা কি যখনই দেখি তখনই মুখ হাঁড়ি ।

ভদ্রলোক তখন তাকে ব্যাপারটা খুলে বললেন । ছোকরাটি বলল দেখি তো তোমার চিঠিটা । আমি চিনেতেই বড় হয়েছি । তাই আমি ভালো মতই চিনা ভাষা পড়তে পারি । ভদ্রলোক বললেন দেখ যেই এই চিঠি পড়েছে সেই আমার উপর ক্ষেপে উঠে মারতে বাকি রেখেছে । তুমি হয়তো এই চিঠি পড়ার পর আমাকে হয়তো জাহাজ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেবে ।

ছোকরাটি হেসে বলল – না না তোমার ভয় পাবার কিছু নেই । চিঠিতে যতই খারাপ কথা লেখা থাক না কেন আমি তোমার উপর রাগ করবো না । তুমি তো আর এই চিঠিটা লেখোনি ।

ভদ্রলোক তখন আশ্বস্ত হয়ে চিঠিটা পকেট থেকে বের করে ছেলেটির হাতে দিলেন ।

ছেলেটি চিঠিটা নিয়ে ডেকের রেলিঙের উপর ঝুঁকে পড়তে যাবে এমন সময় একটা দমকা হাওয়া এসে চিঠিটাকে ছেলেটির হাত থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মাঝসমুদ্রে ফেলল ।

ফলে ভদ্রলোকের আর কোনদিনই জানা হয়নি যে চিঠিটাতে কি লেখা ছিল ।

(গল্পটা একজনের মুখে শোনা । আমি একটু রঙ চড়িয়ে বললাম মাত্র)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সাহস তো কম নয় আপনার! আপনি এই চিঠির গল্প সচলায়তনে কী বুঝে লিখলেন? আপনাকে ধরে ধোলাই করা দরকার মশাই! অ্যাই কে আছিস এই ভগবান্টাকে পেঁদিয়ে দৃশ্যমান করে দে তো!


হাঁটুপানির জলদস্যু

শামীম এর ছবি

এই জন্যই ছোটগল্প পছন্দ করি না...

হিমুকে পূর্ণ সমর্থন চলুক
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নিঝুম এর ছবি

ধুর!!!টাইম টাই নষ্ট করলাম।
দেখি আরেকবার পইড়া দেখমু।তখন নিশ্চয়ই পোলাটার হাত থেইকা চিঠিটা পড়বো না!!!
ইনফ্যাক্ট পড়তেই থাকমু...
---------------------------------------------------------
যাগায় খাইয়া যাগায় ব্রেক...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুভ জন্মদিন

নজমুল আলবাব এর ছবি
মুগ্ধ বাংলা এর ছবি

এইবার আপনাকে ধরে জাহাজ থেকে ফেলে দেব...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।