ন্যায্যমূল্যের চালের দোকান ও তিনটি অণুগল্প

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৪/২০০৮ - ৭:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অণুগল্প এক:
"আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যাবো। কোন ফাঁকফোকড় রাখবো না। একটা পিপড়েও যেনো আমাদেরকে গলে না বেরুতে পারে! মনে রাখবে সবাই" বললো সর্দার গোছের লোকটি।

"একেবারেই না! কাউকে এগুতে দেবনা সামান্যও। এটা আমাদের বাঁচা মরার লড়াই!' বললো আরেকজন।

"আমরা জয় করার জন্যে এসেছি, জয়ী হয়েই বাড়ী ফিরতে চাই! জান দেবো, তবু হার মানবো না!' চেচিয়ে বললো আরেক জন।

দলের সবাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। প্রত্যেকেরই চোখেমুখে প্রত্যয়ের ছাপ। দৃঢতায় সংকল্পবদ্ধ চোয়াল।

এমন সময় নড়ে চড়ে উঠলো মানুষের ভীড়, যেন যুদ্ধপ্রস্তুতি। একটি গুরুগম্ভীর গুঞ্জন শোনা গেল সবার মাঝে। এক অস্থিরতা এসে যেন ভর করলো সবাইকে। সর্দার গোছের লোকের দলটিও উঠে দাঁড়ালো তার সাথে সাথে।

ন্যায্য মূল্যের চালের দোকানের দরজা নাকি খোলা হবে এক্ষুনি!

অণুগল্প দুই:
অনেকবারই দু'জনকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেছি। স্কুলে বা খেলার মাঠে। বড়টির বয়েস নয়ের কাছাকাছি, ছোটটির ছয়। বারবারই দেখেছি বড়জন ছোটজনকে খোঁচাখুচি করতে ও গায়ে হাত তুলতে। ছোটটি চেঁচাতো, কাঁদতো, প্রতিবাদ করতো, কিন্তু লাভ হতোনা তাতে।

একদিন জানালা দিয়ে একই দৃশ্য দেখে চেঁচিয়ে বড়টাকে মারতে নিষেধও করেছি। কাজ হলেও কতোক্ষনের জন্যে, তা বলতে পারব না।

একদিন দুজনকে দেখলাম মায়ের সাথে এক পার্কে। মা পার্কের বেঞ্চে বসে সেলাই করছে। একই দৃশ্য। বড়টি অযথাই জ্বালাতন করছে ছোটটিকে। একসময় ছোটটি কেঁদে দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ জানালো। মা দৌড়ে গেল বড়জনের কাছে। আমি ভাবলাম মা এবার অবশ্যই তাকে পথে আনতে চেষ্টা করবে। কষে চড় লাগালো ছেলেটির গালে। চেঁচিয়ে বললো, 'তোকে কতোবার নিষেধ করেছি, ছোটভাইকে জ্বালাতন না করতে! তারপরও তুই করিস, পাজী কোথাকার!"

এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম, বড়জন কেন বারবার এরকম করে!

অণুগল্প তিন:
সকালে বাগানে এসেই লাশটি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। এমন ভাবে পড়ে আছে জবাফুল গাছটির কাছে, দেখে মনও খারাপ হয়ে গেল খুব। আবারও সেই লাশ! জানা কথা, প্রতিবেশীরই কুকর্ম। আরো অনেকবারই করেছে, কয়েকবার ঝগড়া করেছি। পুলিশ ডেকেছিলাম একবার। কোন প্রমান না থাকায় কিছুই করতে পারেনি প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। নিজেকেই হয়রানী হতে হয়েছিল।

এবারও তার অন্যথা হবার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। ঘর থেকে একটি ঠোঙ্গা এনে মৃত পাখিটিকে ফেলে দিলাম রাস্তার ডাষ্টবিনে। আর বিড়বিড়িয়ে অভিসম্পাত করলাম প্রতিবেশীর খুনে বিড়ালটিকে।


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

বাহ!
তিনটিই চমৎকার। তবে দুই নম্বরটা আমাকে বেশি করে ছুঁয়ে গেল। সেটা হয়ত এ কারণে যে, জীবনে বড়োদের অত্যাচার অনেক সইতে হয়েছে এবং হয়ত এ কারণেও যে, আমিও এখন ছোটদের অত্যাচার করে চলেছি। মানে কি এই যে, এতে আমি আমাকেও খুঁজে পেলাম?

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শাহীন হাসান এর ছবি

বড় ছেলেটি হয়তো বাঙালি বয়োজেষ্ঠো প্রভু ...
খুনে বিড়ালটি হয়তো মানুষের চেয়ে উত্তম ....
দৃঢ়তায় সংকল্পবদ্ধ চোয়াল / প্রতিবাদের ভাষা ...

ভালোলাগলো....।

....................................
বনের বেঞ্চিতে ওম শান্তি!

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ক্ষুদে গল্পগুলি চমৎকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

চমত্কার লাগলো তিনটি গল্পই। সচলায়তনে অণুগল্পের জোয়ার দেখে বড়োই আমোদিত হচ্ছি। চলুক!

পুনশ্চ: বানান ভুল আমরা সকলেই অল্পবিস্তর করি। তবে শিরোনামে ভুল বানান চোখকে বেশি পীড়া দেয়।
অনুগল্প বানানটি অণুগল্প করে দিতে অনুরোধ জানাই।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! বানান ঠিক করে নিলাম।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার............তিনটি গল্প!!!
প্রথম গল্পটিতে কি ন্যায্য মূল্যের চালের দোকার লুট হবে নাকি কেবল ন্যায্য দামে কেনার জন্যই এত শত প্রস্তুতি?

কালবেলা

তীরন্দাজ এর ছবি

কিনতে পারলেই খুশী!...আবার লুঠ!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

হিমু এর ছবি

স্বাদু, স্বাদু ...!


হাঁটুপানির জলদস্যু

তীরন্দাজ এর ছবি

কেমেন আছেন হিমু? আমাদের এদিকে কবে ?
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

হিমু এর ছবি

অচিরেই একদিন হানা দেবার বদমতলব পোষণ করছি মনে। আপনার হারমোনিয়ামের কপালে দুঃখ আছে মনে হচ্ছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রানা মেহের এর ছবি

তৃতীয় টা বেশী বেশী সুন্দর।
আপনার অনুবাদ পড়া হয়না অনেকদিন।
করুন না একটা

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তীরন্দাজ এর ছবি

ঠিক আছে, শুরু করছি তাড়াতাড়িই!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তীরন্দাজ এর ছবি

খবর কি? দলে বলে মিলে একদিন আসেন বেড়াতে!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

তিন নম্বরটা বেশি ভাল লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তীরন্দাজ এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্বপ্নাহত এর ছবি

দুই নাম্বার

(ডরাইয়েন না।লেখা পুরা এক নাম্বার।বাট দুই নাম্বারটা সবচে বেশি ভাল্লাগসে দেঁতো হাসি)

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

তীরন্দাজ এর ছবি

ডরাইছিলাম! বাঁচছি....!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।