নিস্বনে বরাবরই লিখি। জার্মানীর ফ্রাংকফুর্ট থেকে শাহীন ও শিশিরাদ্রের হাড়ভাঙ্গা খাটুনীর ফসল এই ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা। আমি সাথে থেকেও অনেক সময়েই নেই।
সেদিন বাসায় ফোন বেজে উঠলো রাতে। ওপাশে শাহীন।
- তীরুদা, সামনের সংখ্যার জন্যে আপনার লেখা চাই।
- হ্যা, ছোটগল্প তো তৈরীই আছে। একটি ঝাড়পোছ লাগবে মাত্র।
- এবারের ছোটগল্প কিন্তু জার্মানীর জীবনভিত্তিক হতে হবে।
এবার প্রমাদ গুনলাম। অনেকবারই চেষ্টা করেছি, এখানকার জীবন নিয়ে গল্প লিখার। কিন্তু পেরে উঠিনি কখনোই। বহুবছর এদেশে আছি। অনেক দেখেছি, এখানকার সমাজের সাথেও মিশেছি ঘনিষ্ট ভাবে। এখানকার সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথেও যোগাযোগ রয়েছে বেশ। না পারার কোন কারণ তো নেই। তাই কথা দিয়ে বসলাম শাহীনকে।
কিন্তু কথা দিয়ে বিপদে পড়ে গেলাম। সকালে ভাবি, বিকেলে ভাবি, কলম হাতে নিয়ে আঁকিবুকি করি। কিন্তু গল্প সামান্যও এগোয় না। এগুবে কি, শুরুই করতে পারি না। অফিস থেকে ট্রামে বাড়ী ফেরার পথে লোকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প খুঁজি। কলিগদের মাঝেও খুজে বেড়াই গল্পের মালমশলা। অতীত হাঁতড়ে বেড়াই। ভান্ডার একেবারেই ছোট নয়। তারপরও কোন গল্প আসে না। নিজের জীবনের কাছাকাছি বলেই হয়তো। যা ভাবি, সবই জীবন কাহিনীই হয়ে যায়। কিন্তু আমাকে তো লিখতে হবে গল্প, জীবন কাহিনী নয়। হয়তো গল্প লিখতে বিষয়বস্তু থেকে যতোটা দূরত্ব দরকার, ততদুর যেতে পারছি না।
সুতরাং মেজাজ খারাপ, আর অন্যমনস্ক একটি ভাব। বউ এর চোখও এড়াতে পারলাম না। তাই খাবার টেবিলে এতদিন জিজ্ঞেস করে বসল সে,
- তোমার কি কোন সমস্যা চলছে?
চুপচাপ মাথা নীচু করে খাওয়ার মাঝেই ব্যস্ত ছিলাম আপন ভাবনায়। সাধারণত: এসময়ে নানা কথা বলে মজা করাই আমার স্বভাব। কিন্তু ক'দিন ধরেই একটু অন্যরকম আমি। চমকে গেলাম।
- না না, সমস্যার কি আছে?
- তাহলে এতো মনমরা কেন? সারাক্ষণই কি যেন ভাবছো?
- একটি গল্প লিখতে হবে নিস্বনের জন্যে। শাহীন চেয়েছে।
- তাতে কি? বেশ ক'টি গল্পই তো তৈরী আছে তোমার।
বউকে প্রতিটি গল্পই অনুবাদ করে শোনাই। সুতরাং আমার দৌড় আর ভান্ডার ভালই চেনা তার।
- এবারের গল্প একটু অন্যরকম চাইছে শাহীন।
- কিরকম?
- এখানকার জীবন নিয়ে লেখা গল্প।
খুব জোরে হেসে উঠলো বউ। আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আমার অনেক পাগলামো বউ মেনে নিয়েছে। নিজেও যোগ দেয় সাথে। কিন্তু এমনভাবে হাসতে কখনো দেখিনি তাকে। অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম তাই। বউ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- তুমি যে রাতের বেলা ঘুমের মাঝে কথা বলো, জানো?
- অবশ্যই জানি। অনেক সময় নিজের কথা শুনে নিজেই জেগে যাই, তোমাকেও জাগাই। কিন্তু এর সাথে আমার গল্পের কি সম্পর্ক?
- কি ভাষায় কথা বলো, তা জনো?
- হ্য, বাংলায়, তুমি তো অনেকবারই বলেছো!
- সপ্নগুলোর কথা মনে থাকে তোমার?
- অনেক সময়েই থাকে।
- কোথাকার সপ্ন।
- বেশীরভাগই দেশের। তোমাকে দেখলেও দেশেই দেখি, তোমাকেও বাংলাতেই কথা বলতে দেখি।
- তাহলে এবার বোঝ! যে মানুষটি এতবছর অবধি বিদেশে থেকে, এখানকার জীবন, মানুষ ও ভাষার সাথে পুরো পরিচিত হয়েও সারাজীবন বাংলাদেশের সপ্নই দেখে যায়। যে মানুষ সপ্নের মাঝে শুধুমাত্র বাংলাই বলে, সে কি করে এখানকার জীবন নিয়ে গল্প লিখবে? ভেবে দেখেছো একবার?
আমি আর কি বলবো? খাওয়া ভুলে হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মন্তব্য
বলেন কি তীরুদা? আপনার আর ভাবীর কিভাবে দেখা হলো, সেই কাহিনী শোনার শখ তো আমাদের অনেকদিনের ,,,আর আপনি বলেন জার্মানলাইফের গল্প নাই!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এ তো জীবন কাহিনীই হয়ে যাবে!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ডায়েরি ই গল্প হয়ে গেলো । বাহ !!!
খুব ভালো লাগল।
ইদানীং আপনার লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি(।
আরো লিখেন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
অনেক ধন্যবাদ....!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
যে মানুষ সপ্নের মাঝে শুধুমাত্র বাংলাই বলে, সে কি করে এখানকার জীবন নিয়ে গল্প লিখবে? ভেবে দেখেছো একবার?
ভাল-লাগলো। মূলসুরটা করুন হলেও বাস্তব ...
....................................
বনের বেঞ্চিতে ওম শান্তি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
বাস্তব তো সবসময়েই করুন...! তাই না?
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমার এক বন্ধু অবশ্য আছেন যিনি স্বপ্ন দেখেন ইংরেজীতে। স্বপ্নের মধ্যে কথাও বলেন ইংরেজীতে।
এটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে আজ অবধি, কুল কিনারা পাওয়া যায় নাই।
আপনার গল্পগুলো বেশ লাগে।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
গল্পটি পড়ে একটা পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। সইত্য কাহিনী।
আমাদের স্কুলের ইংরেজীর স্যার বলতেন যে যেদিন আমরা ইংরেজীতে স্বপ্ন দেখবো সেদিন বুঝবো যে আমরা ইংরেজী শিখেছি। প্রতিদিন বড় আশা বুকে নিয়ে ঘুমাতে যাই, কিন্তু ইংরেজীতে স্বপ্ন দেখা আর হয়না। তাহলে কি ইংরেজী শেখা শেষ হয়নি আমার? শেষমেশ একদিন। স্বপ্ন দেখি যে আমি আমেরিকায় গিয়েছি, একদম সোজা হোয়াইট হাউসে। আমাকে অভ্যর্থনা করতে এসেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট রেগ্যান। আমি মনে মনে উত্তেজিত হয়ে ঠিক করছি যে কি বলবো তাকে, এমনি সময় রেগ্যান সাহেব আমার হাতটি ধরে হাসিমুখে শুধোলেন,"খিতা খবোর?"
রাগের চোটে ঘুম ভেংগে গিয়েছিল সেদিন।
স্বপ্ন এখনো ইংরেজীতে দেখা হোলনা আমার।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আরে, এটাও তো দেখি একটা অণুগল্প। আফনেও খিতা সিলটি নি?
হাঁটুপানির জলদস্যু
সপ্নভঙ্গ! তেব রেগান সাহেব যদি 'খিতা খাবার' বলেন, তবে আমি নে সপ্ন দেখতেও রাজী....!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভাই গল্প শুনবার চাই। জ্বীনের বাদশা ভাইয়ের মত,আপ্নের আর ভাবীর পরিচয়ের গল্প।নিরাশ কইরেন না প্লীজ
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
- অফ টপিক তীরুদা, নিস্বন ছাড়া আর কি কি পত্রিকা আছে জার্মান ভিত্তিক (ফ্রাঙ্কফুর্ট, বার্লিন বা মিউনিখ ভিত্তিক)! সংবাদ পেলে বাকী ব্যাপারে আলোচনা এগুনো যাবে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মিউনিখে আমরা অনেক অনেক আগে 'ডেলটা' নামে ইংরেজী ও জার্মান ভাষায় রাজনীতি ও সাহিত্য পত্রিকা বের করতাম। এখন তার কোন খবর নেই। তখন কম্পিউটারে বাঙলা ছিল না।
ফ্রাংকফুর্ট থেকে বের হয় নিস্বন আর অরিত্র।
বার্লিন বা অন্য কোন শহর থেকে কোন খবর জানা নেই। তবে গ্যটিংয়েন থেকেও একটা বের হয়, নাম জানা নেই।
আরো খোজ পেলে জানাবো। ভাল থাকবেন!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা, বাংলায় স্বপ্ন দেখা আর অন্য ভাষায় স্বপ্ন দেখা - তিনটে আলাদা জিনিস।
রুশ ভাষা শিক্ষার শুরুর দিক থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ওই ভাষায়। দিনে সাড়ে চার ঘণ্টা রুশ ভাষার ক্লাস, একগাদা হোমওয়ার্ক, রুমমেট রুশ, দোকানপাটে ব্যবহার করতে হচ্ছে রুশ ভাষা, রেডিও-টিভিতে চলছে ঢালাও রুশ...। এমন পরিস্থিতিতে রুশ ভাষায় স্বপ্ন না দেখাটাই তো অসম্ভব।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনার সাথে একমত। স্বপ্ন দেখার সাথে দেশ, জাতি বা ভাষার তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
দারুণ তো!
তাইত একে প্রবাস বলে গো দাদা
কেন যে এদেশ এত পরাধীন------কেন যে আমাদের-ই ছাড়তে হয় দেশ---------!
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
নতুন মন্তব্য করুন