অণুগল্প এক: পথ
একটি ছোট্ট থলি কাঁধে এগিয়ে যাচ্ছে লোকটি কোন এক বিশেষ ঠিকানায় । পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ। পায়ের তলায় বেশ শক্ত এবড়ো থেবড়ো মাটি। কেউ নেই আর আশেপাশে। সে শক্ত পথে সেই একমাত্র পথিক। একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালো পথিক। পাহাড়ের দু’পাশ পাশ ঘেসে চলে গেছে দু’টি পথ দু’দিকে। “এখন কি করি?”, ভাবলো সে। “কোন পথটি নেবো, ডানদিক না বাঁ’দিক!”
বেশ অনেকক্ষন অপেক্ষা করলো পথিক। যদি কেউ আসে! কিন্তু এলোনা। একটি ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে ডানদিকের পথে এগিয়ে গিয়েও ফিরে এলো আবার। মনে হলো, ভুল করছে সে। ফিরে এসে আবার কারো জন্যে অপেক্ষা করে বা’দিকের পথ বেয়ে এগিয়ে গেলো। অনেকটা এগিয়ে আবার ফিরে এলো সে। এই পথও যদি ভুল পথ হয়!
হতাশা ঘিরে ধরলো পথিককে। অন্য কারো দেখা নেই, অথচ অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক। এই পাহাড়ী এলাকায় কোথায় কি জন্তু জানোয়ার থাকে, কে জানে? বেশ ভয় ভয় করতে লাগলো তার। একসময় পেছন দিক থেকে একজন বুড়ো লোককে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে দেখতে পেলো সে। যেন প্রাণ ফিরে পেল পথিক। নিজেই দৌড়ে গেল পেছন দিকে। পথদু’টোর দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,
- সারাদিন হন্যে হয়ে আছি পথের খোঁজে, বলতে পারেন কোন পথটি ঠিক?
বুড়ো মৃদু হাসলেন তার প্রশ্নে। তার আত্মিক উজ্জলতা তার চেহারার ক্লান্তিকে ছাড়িয়ে যায়। এই মৃদু হাসিতেই সে উজ্জলতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
- তুমি সারাদিন অপেক্ষা করলে? অথচ দু’টো পথই ঠিক। আরেকটু সামনে এগিয়ে দু’টো পথই একসাথে মিলেছে। দুরত্বের বিচারেও দু’টো পথই সমান। কোন পথটি সহজ. কোন পথটি কঠিন, সে বিচারেও দু’টোকে তেমন আলাদা করা যাবে না। কিন্তু আজ তোমার জন্যে এখন আর একটি পথও খোলা নেই। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই বনবিভাগের কর্মিরা বন্ধ করে দেয় পথটি।
অণুগল্প দুই: ইচ্ছেপূরণ
ফানজি ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আহা, সে যদি উড়তে পারতো! আকাশের ওই পাখীদের মতো ডানা মেলে বাতাসে গা ভাসিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিতে পারতো। এসব ভাবতে ভাবতে একটি ঘাসের ডগা বেয়ে বেয়ে অনেকটাই উঁচুতে উঠে গেল সে। ডগাটি তার শরীরের ভারে অনেকটা বাঁকা হয়ে গেলেও ভয় পেলো না সে। নিজেকে আকাশের অনেক কাছাকাছি মনে হলেও উড়ার ইচ্ছেটি দমলে না তাতে।
ইচ্ছেপূরণ কিছুটা হলো তার। অবশেষে উড়লো বটে ঘাসফড়িং ফানজি। একটি পাখির ঠোঁটে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে।
মন্তব্য
প্রথম গল্পটি তো একেবারে অসাধারণ! মানুষের ভেতরকার এক আদি অকৃত্রিম মানুষকে নাড়া দেয় যে ধরনের গল্প, এটি হচ্ছে সেটি। ক্লাসিক মানের।
দ্বিতীয় গল্পে ফানজী পরে সানজি হয়ে গেছে, একটু ঠিক করে নেবেন?
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
অনেক ধন্যবাদ! ঠিক করে নিয়েছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
১ম গল্প টা দারুণ!!
==
স্পর্শ
বেশ শিক্ষণীয় গল্প। প্রথমটা বেশি ভালো।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
দুইটাই ভাল লাগলো।
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
- প্রথমটায় তাহলে ভদ্রলোক একা নন একেবারে গহীন আঁধারে! অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক লোকটি তো আছেনই। ব্যবস্থা নিশ্চয় একটা হবে।
আর দ্বিতীয়টা, ভালো লেগেছে বেশি। কেনো লেগেছে বুঝতে পারছি না। খুব সম্ভবত সবসময় কৌতূহল না মেটানোর শিক্ষা! নাকি অন্যকিছু...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সুলিখিত!
তুমি পথিক, যাবে বিকেল অথবা সন্ধ্যা অবধি...।
আমি পথ, যাবো মহাকাল ব্যাপী ... ।
এইতো চিরন্তন সংলাপ পথ ও পথিকের ...।
অনেক ভাল-গল্প।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
আপনার মন্তব্য তো আমার লেখার চাইতেও সুন্দর! অনেক ধন্যবাদ শাহীন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
প্রথমটা অনেক অনেক বেশি ভালো।
আর দ্বিতীয়টা পড়ে কোথায় যেন একটু কষ্ট হলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
সুন্দর। দুইটাই।
প্রথমটা পড়ে মাথায় ঘুরছে যে, পথ যেহেতু বন্ধ, বুড়ো তাহলে কি করছে ওই অসময়ে! হা হা হা। মজা করলাম। আসলেই খুব সুন্দর গল্পটা। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে যে দ্বিধা-দ্বন্দের দোলাচলে ভুগি আমরা, তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে আপনার লেখনীতে।
দ্বিতীয়টাও সুন্দর লাগল খুব। কেন, তা জানি না। হয়ত আপনি লিখেছেন বলেই!
বুড়ো এই ভর সন্ধ্যায় কি করে কি জানি! নিজেই জানিনা! জানলে তো লিখেও ফেলতাম। বুড়োর বাড়ী হয়তো কাছাকাছি..., বা এটা হাওয়া থেকে আসা হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া কেউ...!
ভাল লেগেছে বলে অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অনুপম দুটো গল্প।
তবে প্রথমটিকে অণু বলতে আমার মন সায় দিচ্ছে না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সাধু সাধু
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বরাবরের মতোই চমৎকার। কোনটার চেয়ে কোনটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তার মানে দুইটাই ভালো!
দুটোই অসাধারণ!
প্রথমটা বেশি।
তবে দ্বিতীয়টাও কম না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন