লক্ষস্থির করতে গিয়ে কেঁপে উঠলো হাত। এমন তো আগে কখনো হয়নি! অনভ্যাস মানুষকে এতোটাই অযোগ্য করে ফেলে? এটা ঠিক, বহুদিন নিজেকে দুরেই রেখেছিলাম। এক অবশ করা গ্লানি অষ্টপৃষ্ঠে ঘিরে ধরেছিল সাপের মতো। নি:শ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়! তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ তো হলো কি? আবার তো ঠিকই শুরু করলাম! এখন উত্তুঙ্গ উত্তেজনায় শরীর টান টান হয়ে আছে। যা করবো বলে ঠিক করেছি, শেষ করেই ছাড়বো বলে প্রতিজ্ঞা আমার। নিজেকে পুরোনো পেশায় ফিরিয়ে আনার এই একটি মাত্রই পথ। প্রতিজ্ঞার কমতি না থাকলেও কেমন যেন গতিহীন, ম্রিয়মান মনে হলো নিজেকে। হয়তো বুড়িয়েই গেছি। এ ধরনের কাজ করার যোগ্যতা হয়তো কমেই গেছে! এসব ভাবনার পরও এক ঝটকায় নিজের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনায় প্রয়াসী হলাম।
একজনের ভালো লাগতো না আমার এই পেশা। অনেকদিন বলেছিল- ছেড়ে দাও এসব। অন্যের পেছনে লেগে, তাদেরকে ধ্বংসের মুখোমুখি করে কি লাভ? এরা যা ই করুক না কেন, দাও না ওদেরকে এদের মতো শান্তিতে থাকতে! এসব কথা ও আমাকে বলতো, বারবার বলতো। তখন নিজেকে অপরাধী মনে হতো আমার।
আমাকে ভালবাসতো সে। আমিও ভালোবাসতাম তাকে। যতটুকু ভালোবাসতো ও আমাকে, হয়তো তারচেয়েও বেশী। তারপরও ওর কথা রাখতে পারি নি। রাখতে পারা যায়না। এটা আমার পেশা। একসময় নেশায় পরিণত হয়েছে। রক্তের ভেতরে ধ্বংসের নেশা থাকলে কারো কথা রাখা যায়না। একদিকে আমার নেশা আর পেশা, অন্যদিকে ভালোবাসা। পাল্লার এদিক আর ওদিক। যে বাঘ একবার রক্তের স্বাদ পায়, সে বাঘ আর কিছুই খেতে চায়না আর।
একদিন চলে গেল ও অন্য কারো শিকার হয়ে। অনেক রাতে বাড়ী ফিরেছিল। সেরাতে আমি আমার এক শিকার নিয়ে ভীষন ব্যস্ত। অনেক সাধ্যসাধনার পর কোনভাবে হাতের মুঠোয় এনেছি মাত্র। এখন শুধু লক্ষস্থিরের পালা। তাই ওকে সময় দিতে পারিনি। বাড়ীর দরজা অবধি এসেছিল। সেখানে কেউ একজন লক্ষস্থির করে ট্রিগার টেনে দিল। জানি আমার উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে কেউ করেছে এটা। অন্যের ক্ষতি তো আমি কম করিনি! যাদের করেছি, তাদের প্রভাশালী বন্ধুরা আমাকে ছাড়বে কেন?
তারপর অনেক দিন চুপচাপ ছিলাম। খুব কষ্ট হলেও ওর জন্যে নয় একেবারে। সে তো মরেই গিয়ে মুক্ত করে দিয়েছে আমায়। আমার ভেতর শিশুশাবকের ভয় ঢুকে গিয়েছিল। যদি আবার আমাকেই শিকার বানায় ওরা। তাছাড়া নিজেরও ভাল লাগতো না আর। কিন্তু পেশা পালন না করলে জীবন তো আর চলে না। পুরোনো পেশার যে ছাপ পড়েছে আমার উপরে, নতুন কোন কাজ দিতে আমাকে সাহসী হয়না কেউ। আমার নিজেরও সাহস হয়না। আমি এই একটি কাজই শিখেছি। অন্য কোন কাজে আমি একেবারেই গাধার মতো অযোগ্য।
মনোস্থিরতার সাথে সাথে অবশেষে স্থির হলো হাত। আমাকে অনেক ভোগালো আমার দুই শিকার। নানা টালবাহার পর স্থির হয়ে পাশাপাশি বসলো। চুমু খেলো একজন আরেকজনকে। উত্তেজনায় টানটান হয়ে গেলো আমার শরীর। মাথার বা’দিকটা দপদপ করে উঠলো। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। দুজনকে একই লক্ষবৃত্তে পেয়ে বোতাম টিপে দিলাম।
অনেক দিন পর আবার সাফল্যের আস্বাদ পেলাম। পরিতৃপ্তি ছাপিয়ে উঠলো শরীর জুড়ে। তারপরও নিজেকে হালকা লাগলো না। কাল এক বাহারী পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হবে ছবিটি। দূধর্র্ষ পাপারাজো হিসেবে আবার পরিচিতি পাবো আমি।
মন্তব্য
মারাত্নক !!
- এনকিদু
দারুন গল্প। আপনাকে জাঝা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
অসম্ভব ভাল!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এই তো সেই চেনা তীরন্দাজ
উত্তম পুরুষে না বললে আরও ভালো হতো। তাপরও অসাধারণ বলছি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
অনেক ধন্যবাদ শাহীন! কি জানি, আমার মনে হলো এ গল্প উত্তর পুরুষেই ভাল। আপনার কথামতো ভেবে দেখবো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিতো ভেবেছিলাম খুন খারাবির কারবার হতে যাচ্ছে !!
দারুণ লিখেছেন।
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনার পক্ষেই সম্ভব এমন অসাধারণ গল্প লেখা।
খুব ভালো লাগলো, তীরু'দা
ফাইন !
দুই অর্থেই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অসাধারন আপনার লেখার হাত তীরন্দাজ ভাই। এখন বুঝলাম কেন আমার সচল বন্ধু আপনার প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকে।
কীর্তিনাশা
এতো প্রশংসার জবাব দেবার ক্ষমতা আমার নেই। শুধুই ধন্যবাদ জানাই।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমিও ভেবেছিলাম খুন টুনের ব্যাপার বোধহয়।
আপনার শেষ মোচড়টা সবসময়ই খুব মারাত্মক হয়, তীরুদা।
এবং অপ্রত্যাশিত...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
খুশী হলাম আপুমণি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
প্রথমে ভাবলাম তীরুদা এই রকম ভীরুদা হইলো ক্যামনে, ট্রিগার টিপতে ভয় পায়? পরে দেখি, হায় খোদা, কাহিনী প্যাচ খাইছে। উর্ধ্বশ্বাসে শেষ পর্যন্ত পৌঁছলাম। দারুণ লাগলো। অসাধারণ লাগলো। আর যায় কোথা! সাথে সাথে পাঁচ তারা। কি খুশী?
তীরুদা আর ভীরুদা! এতো মজাদার কমেন্ট সচরাচর পাওয়া যায়না। খুব খুশী হইলাম।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
গল্পের চমক শেষপর্যন্ত এসে্ও আরোপিত মনে হয়নি সেটাই স্বার্থকতা এ গল্পের।
শুভেচ্ছা।
(রন্টি চৌধুরী)
অনেক ধন্যবাদ আপনার সুচারু বিশ্লেষনের জন্যে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অসাধারণ।।
--------------------------------
অজস্র অণুগল্প পড়ে ফেলার কারণেই হয়তো আপনার গল্পের প্রথম কয়েকটি বাক্য পড়েই আমি সমাপ্তি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম
আপনি এটাকে গল্প বললে আমার কোনও আপত্তি নাই। তবে অনুগল্প বললে দুইখান কথা আছে। অণুগল্প হলে এর আকার অর্ধেকের চেয়েও কম করা যেতো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
অনেক ধন্যবাদ। সংজ্ঞা নিয়ে মাথা ঘামাই কম। হয়তো সে ক্ষমতাই কম। আপনার আপত্তি তাই মেনে নিলাম নির্দ্বিধায়।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
নতুন মন্তব্য করুন