পেরিয়াসে সপ্তাখানেক কাটলো জাহাজে ছোটখাট মেরামতের কাজে। এবার আমাদের যাত্রা বেশ দুরে। নাইজেরিয়ার ওয়ারি পোর্টে। কোন এক সকালে বন্দর ছাড়লো জাহাজ। ঘুমিয়ে ছিলাম ভোর চারটের ডিউটি শেষে, জেগে দেখি মাঝ সমুদ্রে আমরা। সমুদ্র সামান্য উত্তাল। এবার জিব্রাল্টার পেরুবো, দেখব ভুমধ্যসাগর আর আটলান্টিকের সঙ্গমস্থল, পেরুবো জিব্রাল্টার প্রণালী। বুকের ভেতরে গুরু গুরু উত্তেজনা। জাহাজের অন্য নাবিকদের ভেতরেও সে উত্তেজনা টের পেলাম।
চার দিনরাত্রি একটানা চলার পর পৌছলাম সকাল দশটার দিকে জিব্রাল্টারের সীমানায়। ডানপাশে স্পেন, বা পাশে মরক্কোর উপকুল। ডান পাশের জিব্রাল্টার পাহাড় এক বৃটিশ কলোনী, বাঁ’দিকের মরক্কোর কিছুটা অংশ আবার স্পেনের দখলে।শান্ত ভুমধ্যসাগর অথচ দুই সাগরের মিলনমেলায় ফেনিল উম্মত্ত ঢেউ। জাহাজের খোলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সে ঢেউয়ের পাহাড়। কেবিন ছেড়ে বাইরে আসাই বিপদজনক। ঢেউ এর চাবুক আছড়ে ফেলবে মুহুর্তেই সমুদ্রে। তারপরও এ ঢেউয়ের কোন ছন্দবদ্ধতার প্রভাবেই জাহাজ তরতর করে এগিয়ে চললো ঢেউ কেটে কেটে। ডান দিকে বন্দর, প্রাসাদ আর জনপদ, বাঁ’দিকে নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্রতট আর ধুধু মরুভুমি।জিব্রাল্টার পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে কেন জানিনা মন খারাপ হলো খুব। মনে মনে ভাবলাম, সুযোগ হলে, সময় ভাল হলে, একদিন আমি এই পাহাড়ে বসে প্রণালী বেয়ে জাহাজ পার হতে দেখব।
প্রনালী পেরিয়ে পড়লাম আটলান্টিকে। সমুদ্র শান্ত হয়ে এলো ধীরে ধীরে। আমরা বাঁয়ে দিক পরিবর্তন করে আফ্রিকার উপকুলকে বাঁয়ে রেখে দক্ষিনে এগিয়ে চললাম। নাইজেরিয়ার পথে রসদ নেবার জন্যে আমাদেরকে থামতে হবে সিরিয়ালিওন এর রাজধানী ফ্রিটাউনে। ফ্রিটাউন এখনো প্রায় দশদিনের পাড়ি। ততদিন অবধি শুধু চলা আর চলা। এরই মাঝে একবার বিকল হলো জেনারেটর। বিদ্যুত বন্ধ, তো বন্ধ সব ধরণের যন্ত্রপাতি। মেরামতে সময় গেলো বারো ঘন্টা। জাহাজ বল্গাহীন হয়ে ভেসে বেড়ালো সমুদ্রে। আবহাওয়া ভাল থাকায় কোন বিপদের মুখোমুখি হতে হলো না। আটলান্টিক তখন ছোট্ট এক নদীর মতোই শান্ত। এতটা শান্ত কেউ আশা করে নি।
আমাদের মুল লক্ষ্য, টাকাকড়ি জমিয়ে উচ্চশিক্ষা। তা ভুললে চলবে কি করে! তাই ফ্রিটাউনে পৌঁছে একদিন ছুটি নিয়ে বন্ধু আর আমি গেলাম ফরাসী দূতাবাসে।স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে খোঁজখবর করা দরকার। ব্যাটারা নান কারণ দেখিয়ে হতাশ করলো। মন খারাপ করে ফিরে এলাম বন্দরে। হাতে সময় ছিল। বন্দরেই সমুদ্রের পাড়ে খোলা জায়গায় একটি বেদির উপরে বসলাম দু’জনে। আগামী দিনের কথা ভেবে তখনো চোখের সামনে অচেনা কালো মেঘ। আমাদেরকে অবাক করে আটোসাটো পোষাক পড়া এক আফ্রিকান সুন্দরী এসে দাঁড়ালো সামনে। জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম।
- আমার সাথে শুতে চাও?
একেবারে সরাসরি প্রস্তাব ! আর আমার জীবনে এ ধরনের প্রস্তাব এই প্রথম। ভড়কে গেলাম ভীষন, তাই কোন কথা জোগালো না মুখে। কিন্তু আমার বন্ধু একটু হেসে উত্তর দিল
- না
তারপরো মেয়েটি বসলো এসে আমাদের পাশে। প্রমাদ গুনলাম। শুনেছি বন্দর, এলাকায় দেহ ব্যাবসায়িনিদের খুব আনাগোনা। এক্ষুনি হয়তো জোরজারিই শুরু করবে।
- তোমাদের দেশ কোথায়?
- বাংলাদেশ।
- বাংলাদেশ কোথায় ? ইন্ডিয়ার কাছে ?
- হ্যা, পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার মাঝামাঝি।
উত্তর শুনেই পাল্টে গেল মেয়েটির চেহারা। মনে হলো কোন এক সপনপুরী জেগে উঠেছে তার চোখের সামনে। অনেকটা সপ্নের ঘোরেই যেন বললো
- তোমাদের দেশের কথা, ইন্ডিয়ার কথা বেশী জানিনা। আমাদের কাছে যেন এক রূপকথার রহস্যপুরীর মতো। আমাদের যত কিছু অজানা, সব যেন লুকিয়ে আছে তোমাদের ওখানেই। তেমাদের কামরুপ, কামাখ্যার কাহিনী আমরা শুনেছি।ছোটবেলা বাবা-মায়ের কাছে সেসব গল্প শুনে শিহরিত হয়েছি। জীবনে সুযোগ হলে একবার ঘুরবো এ’দেশগুলোতে।
আরো অনেক কিছুই বললো মেয়েটি। এমনকি বলিউড সিনেমার কথাও। এই বলিউডের প্রভাবেই ভারত আফ্রিকাতেও বেশ পরিচিত। আফ্রিকান ইংরেজীর উচ্চারণে অনেককিছুই অবোধ্য রয়ে গেল। জাহাজী আমরা, কঠিন প্রতিটি দিন, প্রায় কুড়ি দিন একটানা কাটিয়েছি জলের উপর। তারপরেও আফ্রিকার এক বারবনিতার আশা-সপ্নের শুনে এক নরম অনুভুতি নিয়ে ফিরে এলাম জাহাজে।
একটানা দশদিন সমুদ্র পাড়ির ওয়ারী পোর্ট থেকে বাহান্ন মাইল দুরে এক সমুদ্র নদীর মোহনায় এসে পৌঁছলাম আমরা। এই পথ নদীপথে পেরিয়ে বন্দরে পৌঁছাব।কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হলো এখানে। এক পাইলট আমাদেরকে নিয়ে যাবে ওয়ারীতে। এটাই নিয়ম। বন্দরসীমানায় আসার পর জাহাজের দ্বায়িত্ব এই তথাকথিত পাইলটের হাতেই কর্তায়। মোহনা পেরিয়ে নদীর ভেতর ঢুকতেই মাটির মিষ্টি গন্ধ পেলাম। এ গন্ধ সমুদ্রে নেই, মাটি আর মানুষের যেখানে বাস, এ গন্ধের স্থান সেখানেই। এ গন্ধ যেন নিজেরই মাটির গন্ধ। দেশের জন্য আনচান করে উঠলো বুকের ভেতর। নদীর ঘোলা জল, নৌকা, দুই পারের বসতি মনে করিয়ে দিল, আমরা ঘুধুমাত্রই জাহাজী নই, আমরা স্থলেরই মানুষ। নদীর দুই পারে আমাদের দেশের মতোই গ্রাম আর গ্রাম। ছোট ছোট বাড়ী, অনেকটা আমাদের দেশেরই কুড়েঘরের মতো।
ভোর চারটায় ডিউটি শেষ করে ঘুমোতে গেলাম। দশটায় থেকে জেগে দেখি নদীর কোন এক চড়ায় আটকে আছে জাহাজ।কফির কাপটি হাতে নিয়ে একটু চোখ খুলে এদিক সেদিক তাকাতেই হৈচৈ শুনে চমকে উঠলাম। দেখি এক আফ্রিকান বিশাল এক ছোরা হাতে নিয়ে ছুটছে ব্রিজের দিকে। ডাকাত পড়লো নাকি! ভয় পেলাম খুব।একটু পরই আসল ঘটনাটি জানা হলো। প্রথম যে পাইলট এসেছিল, সে নাকি মিথ্যে পরিচয়ে জাহাজে উঠেছে টাকা হাতানোর জন্যে। খবর পেয়ে সত্যিকারের পাইলট এসেছে ছোরা হাতে। পুরো বিষয়টা খুনোখুনির পর্যায়ে যাবার আগেই আগের পাইলট ঝাপিয়ে পড়লো নদীতে। আমরা হাপ ছেড়ে বাঁচলাম।
জোয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। জাহাজের চারপাশে সারি সারি ডিঙ্গি নৌকো। নৌকোয় আশে পাশের গ্রামের গরীব শিশু। সবাই জাহাজ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় এসেছে। তাদেরকে নিয়ে আমাদের মায়রা (জাহাজের বাবুর্চী) খেলছে এক মজার খেলা। জাহাজে পুরোনো নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সাবানের প্যাকেট ছিল। সে একটি একটি করে সাবান নদীতে ছুড়ে ফেলছে। শিশুগুলো ভাল সাঁতার জানে, নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহুর্তেই তুলে আনছে সে সাবান। মায়রা সহ আরো অনেকেরই তাতে মহানন্দ।তৃতীয় বিশ্বের মানুষ আমি। এই নির্দয় খেলা আমারই দেশের মতো আরেক দেশের গরীব শিশুদের সাথে। রক্ত চড়ে উঠলো মাথায়। আগের পর্বে কোথাও লিখেছিলাম, মায়রা জাহাজে কাজ করলেও সাঁতার জানে না, তাই জলকে তার বেজায় ভয়। চেপে ধরলাম গিয়ে তাকে। জোর ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম,
- সাবানগুলো যে ভাবে ফেলছিস, আমি তোকেও এবার সেভাবেই পানিতে ছুড়ে ফেলব। ভয় পাস না! মরণ হবে না তোর। দেখছিস না ওরা ভাল সাঁতার জানে। তোকেও সাবানের মতো ঠিকই তুলে আনবে।
ভীষন ক্ষেপে গেল মায়রা। জাহাজের অন্য নাবিকরা না থাকলে দুজনের মাঝে ভয়ংকর একটা মারামারি বেঁধে যেতো। সারাক্ষণ আমাকে গালাগালি করলেও খেলা বন্ধ করল মায়রা। খালাসীদের বসম্যান এসে বিলিয়ে দিল সাবান শিশুদের মাঝে। মায়রা ক্ষিপ্ত আমার উপর, তাই দুপুরের খাবারও ভাল জুটলো না। আমার নিজেরও মনও বিষন্ন ও বিক্ষিপ্ত মন। তাই কিছু না খেয়েই এককাপ কফি হাতে জাহাজের খোলে ডিউটিতে ঢুকলাম।
চলবে…..
মন্তব্য
গত কয়েক দিন ধরে ব্লগের পরিবেশ কেমন জানি ঝিম মেরে আছে সবাই বেশ সিরিয়াস এর মাঝখানে এই প্রিয় সিরিজ টি পেয়ে ভাল লাগল । নামিয়ে দিন কিছু তীরন্দাজীয় অণু গল্প তাইলে এতসব সিরিয়াস বিষয় থেকে বের হয়ে শুধু মাত্র বিনোদনের জন্য কিছু পড়া যাবে ।
নিবিড়
অনুগল্প মাথায় আসছে না ভাই! সময় নিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বরাবরের মতোই ভালো লাগলো, তবে একটু সংক্ষিপ্ত, আরেকটু বেশি করে লিখুন না।
অনেকে আবার বড় লেখা পড়তে চাননা... তাই...!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
পড়ছি আর পড়ছি ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! কেমন আছেন আপনি?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ইশ্... আমি বড় হয়াও তীরুদা হইতে পারুম না... আহ্... কি জীবন ছিলো দাদা আপনার
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ্যা, আসলেই ছিল! এখন আর নাই...!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরূদা, ৩ বাংলাদেশী নাবিক নিয়ে এই খবরটা দেখেছেন কি?
আগে দেখিনি, আপনার লিংক ফলো করে দেখলাম। ... আমি খালাসী ছিলাম মাত্র এক বছর!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
এই পর্বটার কথাই শুরুতে বলেছিলাম ।
পড়া হয়েছিল বেশ আগে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পড়ে যাচ্ছি। মায়রাটাকে সাইজ করতে পারলে ভালো লাগতো আরকি।
আপনি সাথে থাকলে অবশ্যই করতাম! একা একা সাহস হয়না যে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
পড়ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। *****
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
**********************
লেখা বরারবরের মতআ ভাল। তবে পর্ব আর একটু বড় হতে পরতো।
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আমি ভাই আইলশার হদ্দ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আরে দাদা, তোর পেটে পেটে যে এত অভিজ্ঞতা.....আগে বলিস নি কেনরে। ভাললাগো। কিন্তু কালো মেয়েটাকে ভালো না বাসাটা ভালো লাগল না।
দাদাভাই, তুই খুব সুন্দর করে মন্তব্য করেছিস যে, ভাল লাগলো! ভালোবাসলে কি কাহিনী শোনা হতো?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
মুগ্ধ পাঠক
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
মিস করছি না, জানান দিয়ে রাখি।
দৌড়োক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
নিয়মিত পড়ছি সিরিজটা, মুগ্ধ হয়ে।
_______________
বোকা মানুষ
আপনাকে অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
চলতে থাকুক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! পরের পর্বেই শেষ..., তবে আরো কাহিনী আসবে....!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
শেষদিকে এসে কেমন মন খারাপ লাগলো... মাটির গন্ধ কেমন তীরুদা?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
নতুন মন্তব্য করুন